আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বয়স যখন কুড়ি, তখন কী করবেন?

বসন্তে মাতাল আমি এক অপূর্ণতা ...

কুড়ি থেকে ঊনত্রিশ বছর বয়স, এই দশ বছরকে বলা হয় বিশের কোঠা। আপনার এই দশক কিন্তু মোটেও স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়ার সময় নয়। কিভাবে আপনার জীবন সুন্দরভাবে যাপিত হবে সেটা নির্ধারণ করতে হবে এই দশকেই। আধুনিক সভ্যতায় ক্রমবর্ধমান আয়ু, দেরি করে বিয়ে, দেরি করে বাবা-মা হওয়ার প্রবণতার কারণে অনেকেই মনে করেন যে হাতে অনেক সময় আছে। তাই কি? এ ব্যাপারে ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোচিকিৎক ড. মেগ জে বলেন, এ ধরনের চিন্তা আমাদের বিশের কোঠাকে সমান্তরালভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

পড়াশোনা শেষ করতেই দশ বছরেরও অনেক বেশি সময় ব্যয় হয়, এমনকি কারো কারো বিশ বছরও লেগে যায়। মিরর পত্রিকার এক ইমেইল সাক্ষাতকারে তিনি তাঁর যুক্তি দেখান, বিশের কোঠাই হচ্ছে জীবনের প্রথম ধাপ যেটা মোটেও হেলা ফেলা কিংবা তাচ্ছিল্য করবার মতো সময় নয়। এটা অন্য ভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে তার দীর্ঘ গবেষণার কার্যকারিতাও পাওয়া গেছে। এই দশকে আমরা কি করতে পারি আর কি না করতে পারি এর প্রতিক্রিয়া ও পরিণাম কি হতে পারে তা তাঁর Defining Decade গ্রন্হে তিনি উল্লেখ করেছেন।

বিশের কোঠার পাঠকের জন্য এখানে তাঁর পরামর্শগুলো তুলে ধরা হলো : ভালো বন্ধু নির্বাচন ভালো বন্ধু মানে এই নয় যে, আপনার প্রয়োজনে বন্ধু আপনাকে এয়ারপোর্টে রেখে এলো, আপনার সাথে বসে মদ্যপান করলো অথবা আপনার রোমাঞ্চকর নেশার সঙ্গী হলো। অন্যদিকে আপনি যদি এই সময়টা কোনো অন্তর্মুখী থাকেন তাহলে আপনি যেখানে চাকরি করেন সেখানকার সহকর্মীরা আপনাকে কিভাবে জানবে, কিভাবে চিনবে! যদি নতুন চাকরি এবং অফিসে নতুন লোকজনের সাথে মিশতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে বহির্মুখী হতে হবে। তাহলে যেখানে আপনি কাজ করবেন সেখানে কোন পদ না থাকলেও শুধু বসের সাথে ভাল সম্পর্কের কারণে আপনারই জন্য পদ সৃষ্টি করা হবে। এটা প্রতারণা নয়, প্রতিভার বিচ্ছুরণ কীভাবে আশপাশকে প্রভাবিত করে তারই বিজ্ঞান। যৌনতাই শেষ কথা নয় ইদানিং অনেকে যৌন সম্পর্ক স্হাপন করার পেছনে অনেক সময় ব্যয় করেন।

যেটা ভুল এবং এর হার বেড়েই চলেছে। মনে রাখতে হবে, যৌনতা সম্পর্কের একটা অংশমাত্র। একটা বিশাল পার্টির হলঘরে কপোত-কপোতীরা শুধু শারীরিকভাবে ঘনিষ্ঠ হবার জন্য দীর্ঘসময় নিয়ে ব্যর্থ চেষ্টা করছে। অথচ, এ সময়টা অন্য অনেক কাজে ব্যয় করা সম্ভব। দীর্ঘ সময়ের সম্পর্ক কিংবা মদ্যপান আপনাকে কতটা উপকৃত করবে? উত্তর, খুবই সামান্য।

যৌথজীবনকে নিজের মতো করে গড়ুন গবেষণায় দেখা গেছে, যোগাযোগ রক্ষা একটা সম্পর্কের বন্ধনকে স্থায়িত্ব দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আপনার প্রিয় মানুষটির সাথে কথা বলুন। আপনাদের দুজনের মূল্যবোধ ও লক্ষ্য যে একই তা কি তার সাথে শেয়ার করেছেন? আপনাদের অনাগত ভবিষ্যতের চিত্র যে একই এ কথা শেয়ার করেছেন? আপনারা যে কাজে ও ভালোবাসায় এক এ ব্যাপারটি শেয়ার করেছেন? আপনাদের মতপার্থক্য কিভাবে সমাধান করবেন? একটি সুন্দর ছুটির দিন কিংবা একটি বৃষ্টি মুখর দিন কিভাবে কাটাবেন? এই সব প্রশ্নের উত্তর আপনাদের দাম্পত্য জীবনের পথকে মসৃণ করে তুলবে। সাজিয়ে ফেলুন জীবনের 'টাইমলাইন' সময় সীমিত, তাই জীবনের সময়গুলোকে স্তরে স্তরে একটি 'টাইমলাইনে' সাজিয়ে নিন। এটা আপনাকে নানাভাবে সহায়তা করবে।

২২ অথবা ২৭ বছরের দিকে এর গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারবেন। ২০ থেকে ৩০ এই বয়সটাতে অনেক কিছুই করার থাকে কিন্তু ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সটা হবে আপনার জীবনের পড়ন্ত সময়। এ সময় আপনার সংসারজীবনের কর্মকাণ্ড স্তুপ আকারে জমা হবে। 'টাইমলাইন' আপনাকে গুরুত্ব অনুযায়ী কাজ করার নির্দেশনা দেবে। অবশ্যই টাইমলাইনটা পেন্সিল দিয়ে আঁকবেন কেননা প্রয়োজন ও গুরুত্ব অনুযায়ী টাইমলাইন ঘষামাজা করতে হতে পারে।

আপনার জীবনের 'প্রথম' কঠিন কাজটির সাথে মানিয়ে নিতে গিয়ে বুঝতে পারবেন কাজের শেষ বিন্দু বলে কোন কথা নেই। এটা প্রথম ধাপ মাত্র। আপনি যখন একটি কাজ করতে করতে উপযুক্ত হয়ে উঠতে থাকবেন পাশাপাশি দিনগুলোও যেতে থাকবে। যখন বছর যাবে দেখবেন আপনার ক্যারিয়ার সুগঠিত হচ্ছে, একই সাথে প্রতিপত্তিও আসতে থাকবে। যেখানে আপনি কাজ করবেন সেখানে আপনার মূল্যায়ন হবে এমন পরিস্থিতি তৈরি করুন এবং আপনার গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে কাজে মনোনিবেশ করুন।

সবসময় পরিস্থিতি অনুকূলে রাখুন, যাতে আপনার কাজ নিজ গতিতে চলে। এমনভাবে কাজ করবেন যাতে আপনার সামনে ভালো কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়। এরপর আপনি আপনার সঞ্চয় বৃদ্ধি করে সময় সুযোগমত অন্য 'বেটার' কাজে যোগদান করতে পারেন। মাথা খাটান সম্প্রতি এক নিউরোবায়োলজিক্যাল গবেষণায় বলা হচ্ছে 'ফ্রন্টাল লোব' বা মস্তিস্কের শীর্ষভাগ যেখানে ক্রমাগত মস্তিস্কের পরিপক্বতা বৃদ্ধি পেতে থাকে সেটা বিশের কোঠার আগে পূর্ণতা পায় না। অর্থাৎ এই দশকেই মস্তিস্কের 'ফ্রন্টাল লোব' পূর্ণতা পায়।

ফলে এ সময়টা কী করছি, কী দেখছি সে বিষয়ে সচেতন থাকা দরকার। মস্তিস্কের নিউরনগুলো আমরা অকাজে নষ্ট করতে পারি না। বিশ থেকে ঊনত্রিশ -এই সময়টাই শিক্ষা নেয়ার সময়, নতুন অভ্যাস গড়ে তোলার সময়, নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তোলার সময়। আপনি যা চান তা খুব সহজে আয়ত্তে আসবে না। তবে আপনাকে এটা করতেই হবে।

পরশ্রীকাতরতা নয়, চাই প্রতিযোগিতামূলক বিশ্লেষণ আমরা ফেসবুক ব্যবহার করি। এখানে পরশ্রীকাতরতায় নিমজ্জিত হওয়ার মতো বহু উপাদান রয়েছে। এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের মধ্যে তৈরি করে সমাজের উঁচু স্তরে যাওয়ার প্রবণতা। আমাদের অপূর্ণ জীবনে নিজেকে অন্যদের তুলানায় নিছক খারাপ পরিস্থিতিতে ভেবে সোফায় বসে পার করা রাতগুলোই হচ্ছে আমাদের বড় সমস্যা। আপনাকে গভীর ভাবে ভাবতে হবে যে, কোনটা আপনার দৃষ্টি গোচর হচ্ছে আর কোনটা হচ্ছে না।

আপনাকে নিচের দিকেও তাকাতে হবে, এটা মনে রাখার জন্য যে আপনি বিশের কোঠার অনেকের অনেক ভালো আছেন। কালেরকণ্ঠে প্রকাশিত আমার এই লেখাটি- লিঙ্ক- বয়স যখন কুড়ি, তখন কী করবেন?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।