আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

১/১১ পরবর্তী বাংলাদেশঃ প্রেক্ষাপট এবং বাস্তবতা

জীবনের অর্থ খুজিনা,তাই জীবনকে অর্থহীন মনে হয়না অনেকদিন ধরেই ভাবছি বিষয়টা নিয়ে লিখবো। কিন্তু সময়ের অভাবে লেখা হয়ে উঠছে না। আজ সাহস করে বসেই পড়লাম,দেখি কদ্দুর লিখতে পারি। কয়েকটি ইস্যু নিয়ে কথা বলতে চাইছি,জানিনা ঠিকমত মার্জ করে লিখতে পারবো কিনা। যাহোক,আসল ঘটনায় আসি।

২০০৮ এর একদম শেষেপ্রান্তে দাড়িয়ে আমরা ফিরে পেলাম আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার তথা ভোট। ভোট দিলাম। নতুন সরকার পেলাম। শুরু হলো গণতন্ত্রের নতুনভাবে অগ্রযাত্রা। নতুন বলছি,কারণ ১/১১ এর পরে আমরা যে আমাদের ক্রান্তিকাল অতিক্রম করতে পারবো সেটা সত্যিই ভাবিনি।

যে কোনো নির্বাচনকে সামনে রেখে দলগুলির মূল লক্ষ্য থাকে তরুন ভোটারদের মত নিজের পক্ষ নেয়া। কারণ তরুণেরা সংখ্যায় একটা ফ্যাক্ট,তাদের ইমোশনালি ডাইভার্ট করা তুলনামূলক সহজ,কারণ তাদের ভেতরটা ফ্রেশ। যাহোক,এই সরকার তরুণদের ধরে রেখেছে যুদ্ধাপরাধের বিচারের ইস্যুতে। এবং তারা সেই পথে এগিয়েছে। সেটা অবশ্যই আশাব্যাঞ্জক।

কিন্তু একটু খেয়াল করলে দেকাহ যায়,সরকার আসলে মন থেকে বিচার চেয়েছে???নাকি সেটা ছিল শুধুই আরেকটি নির্বাচনী ট্রাম্পকার্ড??? সরকার শুরুতেই তরুণদের আস্থা আনতে যেয়ে যা করেছে সেটা হলো,মন্ত্রীসভায় নতুন মুখের উপস্থিতি নিশ্চিত করা। প্রবীণ এবং সংস্কারপন্থী নেতাদের এত দিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাকে রীতিমত বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে তাদের এক প্রকার অপমান করেই বঞ্চিত করেছে তাদের রাজনৈতিক চাওয়া-পাওয়া থেকে। অথচ নতুনভাবে শুরু হওয়া এই গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় এই অভিজ্ঞ ঝানু রাজনীতিবিদদের দরকার ছিল বেশী। কিন্তু শেখ হাসিনা তাদের বাদ দিয়ে প্রমাণ করেছেন,তিনি গণতান্ত্রিক সরকার চালাতে নিজের দলে একনায়ক্তান্ত্রিক অভিজান চালিয়েছেন। নতুন মুখকে আমি অসম্মান করতে চাইনা।

তাদের বিদ্যা-বুদ্ধির অভাব নাই। কিন্তু প্রজ্ঞা আর অভিজ্ঞতা অনেক বড় ফ্যাক্ট একটা সরকার পরিচালনার জন্য,যেটা তাদের নেই। কিছু নতুন আর কিছু পুরোনো লোক দিয়ে মন্ত্রীসভা গঠনের ফলে নিজেদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা হয়েছে বলেই মনে হয়। যুদ্ধপরাধীদের বিচার শুরু হতেই জামায়াত বি এন পি জোট একের পর এক হরতাল দিয়ে দেশে অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরী করে। দুইটা কারণে তারা এটা করেছে,প্রথমত তারা এর মাধ্যমে সরকারের অর্জনকে থামিয়ে দিতে চেয়েছে এবং দ্বিতীয়ত তারা তাদের নেতাদের বিরুদ্ধে যে বিচার চলছে সেটাকে বন্ধ করতে চেয়েছে।

আমাদের কাছে মতিউর রহমান নিজামী একজন যুদ্ধপরাধী হতে পারেন,কিন্তু আপনাদের মনে রাখতে হবে তিনি একটি দলের প্রধান এবং বিরোধী দলীয় জোটের অন্যতম শরীক। নিজেদের অস্তিত্ব রাখার কারণেই তারা হরতাল দিয়ে সরকারকে থামিয়ে রাখতে চাইবেন সেটাই স্বাভাবিক। দ্বিতীয় রায়ের পর থেকে শাহাবাগে শুরু হয় গণান্দোলন। সর্বস্তরের মানুষ সেখানে স্বতঃস্ফুর্ত অংশ নেয়। দুখ জনক হলেও সত্য শাহাবাগের সেই স্বতঃস্ফুর্ততা এবং নিরপেক্ষতা হারাতে বেশীদিন সময় লাগেনাই।

দুইটা বিষয় এখানে কাজ করেছে। প্রথমত,শাহাবাগের আন্দোলন যারাই পরিচালনা করুক,তাদের রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে টানা হেচড়া করে কিছু মানূষের দৃষ্টি সরিয়ে রাখার কাজ খুব ভালোভাবেই করেছে বিরোধী দল। যেমন ইমরান এইচ সরকার ছাত্রলীগ করতেন,ব্লা ব্লা ব্লা...দ্বিতীয়ত,শাহাবাগের নেতৃত্ব নাস্তিক এবং বিতর্কিত ব্যাক্তিদের ক্রমাগত সাপোর্ট দিয়ে গেছেন। যেটা মোটেও উচিত হয়নি। শাহাবাগের আন্দোলনের মূল একমাত্র ইস্যু নিয়েই পড়ে থাকা উচিত ছিল।

সেখানে জামাত কিংবা বি এন পি নিয়ে স্লোগান দেয়া উচিত হয়নি। কারণ জামাত যুদ্ধপরাধী নয়,তাদের দলের কিছু লোক যুদ্ধপরাধী। এবং এই ঘটনা কম অনুপাতে হলেও আম্লিগ বিম্পিও দায়ী। যখন বিরোধী দল শাহাবাগের কতিপয় চিনহিত ব্যাক্তিকে নিয়ে প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে আন্দোলনকে বিভক্ত করতে চাইছিল,তখন শাহাবাগ নেতৃত্ব পাল্টা কর্মসূচী ঘোষণা করে। কিন্তু তারা ভুলে গিয়েছিল,যাদের বিরুদ্ধে পাল্টা কর্মসূচী দিচ্ছেন,তারা রাজনৈতিক দল।

ফলে স্বাভাবিক ভাবেই আওয়ামীলীগ শাহাবাগের সাথে একাত্ম হয়ে যায়,এবং যথারীতি আমাদের ঐতিহ্য অনুযায়ী আমরা বিভক্ত হয়ে যায় বিম্পি আম্লিগ এ!!!! শাহাবাগ নেতৃত্ব কি করতে পারত??? ১/যেহেতু আসিফ মহিউদ্দীদের মত কিছু লোকের মুখোশ বিরোধী দল উন্মোচিত করে দিয়েছে,শাহাবাগ নেতৃত্ব নিজেদের নিরপেক্ষতা ধরে রাখার জন্য হলেও তাদের শাহাবাগ চত্বর থেকে বহিষ্কার করতে পারতেন। ২/শাহাবাগে শুরুতে ধর্ম বা এই ধরনের সেনসিটিভ ইস্যু ছিলোনা। সেই ইস্যুটাও সুকৌশলে ঢুকিয়েছে কিছু ব্যাক্তি এবং যথারীতি সেগুলি ধর্মভিত্তিক দলগুলি ধরেছে। সেই বিষয়টা শাহাবাগ কর্তৃপক্ষ ক্লিয়ার করেন নাই,বরং জগাখিচুড়ী অবস্থা করেছেন। ৩/শাহাবগ নেতৃত্বের সবচেয়ে বড় ভূল,তারা বি এন পি এবং জামাত জোটের বিরুদ্ধে কথা বলেই বিষয়টা রাজনীতি প্রেক্ষাপট বানানোর সুযোগ দিয়েছেন।

কারণ বিরোধী দল এটাকে ধরেছে,সাথে সাথে আওয়ামীলীগও এটাকে ইস্যু করে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তৈরী করেছে। যার ফলে আল্টিমেটলি শাহাবাগ আর নিরপেক্ষ থাকেনাই। ৪/শাহাগাব ইস্যু এবং তার পরের চলমান অস্থিরতার মূল কারণ অনলাইন মিডিয়া। ফেসবুক,টুইটার,ব্লগ এগুলিতে পাব্লিক ইচ্ছামত মত দিয়েছে,মতে মিলে নাই,ওমনি আশ্লীল আক্রমণ করেছে,কটুক্তিকর মন্তব্য করেছে,অনেক সিনিয়রকে ইচ্ছামত গালি দিয়েছে এবং যুক্তি তর্কের বেড়াজাল ভেঙ্গে হাইড এন্ড জেকিলের সেই হাইড চিরিত্রটাকে রুপায়িত করেছে। আমি নিজেই দেখেছি,শুরুতে অনেকেই আমার লেখা দেখে বাহবা দিয়েছেন,ইদানিং নাকি আমাকে তাদের জামায়াত মনে হয়!!!!!!!!আমি কোনোদিন বলেছি আমি জামাত করি কিংবা করিনা????শুধুমাত্র "মনে হয়" এর উপর ভিত্তি করে চলছি জন্যই আজ এত অবিশ্বাস,এত মত,এত শত্রুতা।

তবু আমরা এই মনে হয় এর পিছ ছাড়তে পারছিনা। আশা করি ঠান্ডা মাথায় নিজেদের ভূলগুলি শুধরে আমরা সামনে এগিয়ে যেতে পারবো। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।