আই লাভ দ্যা স্মোক, আই লাভ দ্যা স্মোকি লাইফ। সব ধোয়াটে থাকবে। ইচ এন্ড এভরিথিং।
“নিজের সাথে লুকোচুরি করে বেশীদিন টেকা যায় না। ব্যাক টু দি ওল্ড মি...
বাই বাই ক্যামোফ্লেজ।
“
অসুস্থ অবস্থায় দিপের দেয়া চিরকুটটা এখনো রয়ে গেছে তিশার কাছে। অনেকদিন পরে সে গোপন জায়গা থেকে বের করলো দিপের লেখা এই চিহ্নটা। জাদুঘরে রেখে দেয়ার মত তেমন কোন বিশেষত্ব নেই আসলে এই ছোট কাগজটাতে। চিরকুটটা দিপ তিশাকে দিয়েছিলো একটা হলুদ খামে। তিশার বিয়ের দিন উপহার হিসেবে।
তিশা অনেকটা বিব্রত আবার অনেকটা শংকিতও হয়েছিলো। একটা ভীতু দৃষ্টি দিয়েছিলো দিপের দিকে। হলুদ দিপের প্রচন্ড অপছন্দের রং। অপরদিকে তিশার বরাবরের প্রিয় চরিত্র ছিলো হিমু। দিপ প্রায়ই রেগেমেগে বলতে “আমি হিমু না।
আমি একটা মানুষ। আলাদা একটা মানুষ। ”
কিন্তু হূমায়ুনভক্ত সব মেয়েই বোধহয় তার প্রেমিককে হিমুর মত দেখতে চায়। তিশাও দেখতে চাইতো। একটু এলোমেলো, ছন্নছাড়া, অগোছালো একটা ছেলে।
দিপ আসলে ভেতরে ভেতরে অনেক অগোছালো ছিলো যেটা বাইরে থেকে তিশা কখনোই বুঝতে পারেনি। উপরে উপরে অনেক প্ল্যানমাফিক গুছিয়ে চলা দিপের সাথে তিশার শেষ কয়েকটা দিনের কথা তিশার কাছে দু:স্বপ্ন মনে হয় মাঝেমাঝে।
আর সেই দিপের হাতে হলুদ খাম?
খামটা তিশা লুকিয়ে রেখেছিলো। পরে ভিতরে একটা টিস্যু পেপারে মোড়া এই চিরকুটটা পেয়েছিলো যার অর্থ সে কোনদিনই বোঝেনি। তিশার বিয়ের পরদিন থেকে দিপকেও আর পাওয়া যায় নি।
তখন সে আন্ডার ট্রিটমেন্ট ছিলো। তিশার বিয়ে ঠিক হয়ে যাবার পর থেকেই দিপ ভায়োলেন্ট হয়ে যায়। সাউকোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার দেখা দেয়। বাসায়ই ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। তিশা শুনে শুধু কেঁদেছিলো।
কিছু করার ক্ষমতা ছিলোনা তার। বাবা-মা হারিয়ে ছোটবেলা থেকে মামায় বাসায় মানুষ। তাই চুপচাপ বিয়েতে রাজী হওয়া ছাড়া কোন উপায় ছিলোনা।
দিপ কবি ছিলো। কবিতা লিখতো।
অসুস্থতা দিপের ভেতর থেকে সবটুকু ছন্দ কেড়ে নিয়েছিলো বোধহয়। শেষ যেদিন তিশা দিপের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো সেদিন দিপ ভাঙা ভাঙা গলায় উদভ্রান্ত দৃষ্টি নিয়ে বলেছিলো, ‘আমার না একটা অদ্ভুত ইচ্ছা হয় মাঝেমাঝে। বুচ্ছো? কোনকিছু শান্ত দেখতে ভাল লাগেনা। এই ধরো কোন গরীব রিকশাঅলা সারা সকাল রিকশা চালিয়ে দুপুরবেলা রাস্তার পাশে ভাত খাচ্ছে – এই দৃশ্য আমি সহ্য করতে পারিনা। আমার ইচ্ছা করে কষে একটা থাপ্পড় মারি।
তারপর রিকশাঅলার এক্সপ্রেশন কি হয় সেটা বসে বসে দেখি। ’
– এইটা আবার কেমন ইচ্ছা? আজিব। মাথা ঠিক আছে?
- আরে শুনো না। তারপর ধরো যে কোন টিচার সুন্দর করে ক্লাশ নিচ্ছে। খুব মনোযোগ দিয়ে পড়াচ্ছে।
কোন কথা নাই বার্তা নাই তাকে ঠাস করে একটা চড় দিলে তার এক্সপ্রেশন কেমন হবে? তারপর মনে করো রাস্তায় কোন টাক লোক হেটে যাচ্ছে। ধাম করে তার মাথায় তবলা বাজিয়ে জোড়ে জোড়ে গান ধরলাম,
“তোমার টাকে বাস করে কারা ও টাকলু জানোনা,
তোমার মাথায় চুল নাইতো চাইর আনা
টাক জানো না..”,
তখন তার এক্সপ্রেশন কেমন হয় শক খাওয়ার পর এইটা না আমার দেখার খুব ইচ্ছা।
- তোমার মাথা কি ঠিক আছে? তুমি এইসব কি বলতেসো?
প্রবল মানসিক শক পেলে মানুষের এক্সপ্রেশন কি হয় সেটা নিয়ে দিপের এই বাড়াবাড়িই তার মাথার গোলমালের প্রাথমিক লক্ষণ ছিলো। একদিন রাস্তার পাশে পুলিশের উপর এই পরীক্ষা করতে গিয়ে সোজা থানায় যেতে হয়েছিলো। পুলিশের মার খাবার পরে সমস্যা আরো বেড়ে যায়।
সাইকিয়াট্রিস্ট, হসপিটাল দৌড়াদৌড়ি। মাঝখানে কিছুটা সুস্থ হয়ে গিয়েছিলো। তখনই তিশার বিয়ে হয়ে যায় এক প্রবাসী ছেলের সাথে। বিয়ের দিন দিপকে দেখেও তিশা শকড হয়েছিলো। দিপ তার এক্সপ্রেশন দেখে কি ভাবছিলো তিশার জানা নেই।
দিপকে আর পাওয়া যায়নি। কিন্তু দিপের দুটো স্মৃতি রয়ে গেছে তিশার কাছে।
ছেলেটা সবেমাত্র স্কুলে ভর্তি হয়েছে। তাকেই আজ আনতে গিয়েছিলো তিশা। স্কুলে গিয়েই ছেলের নামে এমন এক কমপ্ল্যান শুনতে হয়েছে যার পর থেকে অসুস্থ লাগছে।
তার এইটুক ছেলেটা ক্লাশ ছুটি হওয়ার পর টিচারকে গিয়ে বলেছে, ‘মিস, কানে কানে একটা কথা বলবো। ’ টিচার মাথা নীচু করার পরপরই সে টিচারের গালে ঠাস করে চড় মেরেছে। কারণ জিজ্ঞাসা করার পর বলেছে, “আমি দেখতে চেয়েছিলাম মিসকে হঠাৎ করে মারলে মিস কি করে, কিভাবে তাকায়?”
তিশা আর কিছু ভাবতে পারছেনা। দিপের শেষ চিহ্নটা কি দিপের সেই চিরকুটের কথাই বলছে?
“নিজের সাথে লুকোচুরি করে বেশীদিন টেকা যায় না। ব্যাক টু দি ওল্ড মি ?”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।