আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুই এক্কে দুই, দুই দুগুনে ইনফিনিটি -হার্ডার দ্যান চাইনিজ ক্যালকুলাস (?)

হালার এতো ক্ষিদা লাগে ক্যা, ক্ষিদার জ্বালায় মনে কয় পাথর চাবাইয়া খাই...

গ্লোবাল টপিকস হঠাৎ করেই আমার উল্টো পথে চলতে আর উল্টো কথা বলতে ইচ্ছা হল। বিষয়টা একটু বুঝিয়ে বলি। প্রতিদিন সকালে অফিসের পথে না গিয়ে ঠিক উল্টো পথে চলে গেলাম বন্ধুর বাড়ি। বন্ধুর বাড়ি গিয়ে বললাম, আমাকে রাতের খাবার দাও। অথবা বলতে শুরু করলাম সূর্য পশ্চিম দিকে উদিত হয় আর পূর্ব দিকে অস্ত্য যায়।

তাহলে কেমন হবে ব্যপারটা? হ্যাঁ তাই, এমন ভাবান্তর খুব মজার ব্যপার হওয়ার কারণ নেই। আমরা কেউ উল্টো পথে চলা অথবা উল্টো কথা বলাকে স্বাভাবিক বলে মেনে নেই না। কিন্তু আজ চলুন না কিছুক্ষণ না হয় উল্টো পথে চলে আর উল্টো কথা বলেই কাটালাম। দেখিনা ব্যাপারটা উপভোগ করতে পারি কিনা। ভাবুন না একটিবার আমার মত করে, সব উল্টো করে।

ব্যপারটা আমার কাছে বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে। আরে ভাবতে অসুবিধা কি! ভাবতে তো আর পয়সা লাগে না। শুধু চোখ দুটো একটু বন্ধ করলেই হয় ব্যাছ, ভাবনার সাগরে হাবুডুবু খেয়ে পাতাল পুরি থেকেও ঘুরে আসা যায়। আমরা যদি উল্টো পথে চলতে চলতে এটা ভাবি যে বাংলাদেশের ষোল কোটি মানুষের প্রত্যেককে বিশ লক্ষ টাকা করে দিব। তাহলে ব্যপারটা কেমন হয়? আরে না আমার মাথা খারাপ হয়নি।

ভাবতে অসুবিধা কি। ভাবতে তো আর পয়সা লাগে না। তো ভাবনায় সবাইকে লক্ষ টাকা কেন, শতকোটিও টাকাও দেয়া যায়, কি বলেন? ভাবনায় দান করতে কি কোন অসুবিধা আছে, বলুন? ঠিক আছে, আমার সাথে আপনিও একটু ভাবুন তাহলেই ব্যপারটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। আসুন না আমার সাথে, আপত্তি আছে? আজ না হয় দুজন মিলে কিছুক্ষণ উল্টো পথেই চললাম। হ্যাঁ, যা বলছিলাম।

ধরুন আমরা দুজন বাংলাদেশের সবাইকে বিশ লক্ষ টাকা করে দান করব। তাহলে আমাদের কত টাকা খরচ হবে। হুম... হিসাব করতে হবে, তাই তো? হুম... ক্যালকুলেটরে হিসাব করে বলি। কত হল বত্রিশ লক্ষ কোটি টাকা (৳৩২,০০০০০,০০০০০০০০), তাই না? হুম... তাই তো। বত্রিশ লক্ষ কোটি টাকা।

ওরে...এতো টাকা! আপনার কি কোন ধারনা আছে এই টাকা কত টাকা? আমার তো মাথা ঘুরে যাচ্ছে। হুম থাক, ভাবতে অসুবিধা কি। কিন্তু এই টাকাগুলোকে যদি ডলারে রূপান্তরিত করি। মানে যদি বত্রিশ লক্ষ কোটি টাকাকে ডলারে রূপান্তরিত করি তাহলে কত হবে। হুম..., বত্রিশ লক্ষ কোটি টাকা ভাগ পঁচাশি টাকা(১ ডলার= ৮৫ টাকা)।

তাহলে কত হয়, হুম তিন ট্রিলিয়ন, সাত শত চৌষট্টি বিলিয়ন, সাত শত পাঁচ মিলিয়ন, আট শত বিরাশি হাজার, তিন শত বায়ান্ন ডলার ($৩,৭৬৪,৭০৫,৮৮২,৩৫২ ) মাত্র!!! উল্টো পথে হিসেব করতে করতে দেখুন তো একটা ভয়ানক চিত্র পেয়ে গেলাম। ভয়ানক চিত্রটা হল, গত দশ বছরে, (২০০১ সালের ০৭ অক্টোবর থেকে) আমেরিকা ও তাঁর মিত্র দেশগুলো আফগানিস্তান যুদ্ধে সম্ভাব্য খরচ করেছে প্রায় ৩.২ – ৪ ট্রিলিয়ন ডলার Click This Link তাহলে আমাদের হিসেবটা কতটুকু ভয়ানক একটু চিন্তা করে দেখুন তো। ৪ ট্রিলিয়ন ডলার? হ্যাঁ, টাকায় কত হয় বলুন তো? হুম, চৌত্রিশ লক্ষ্য কোটি টাকা (৳৩৪,০০০০০,০০০০০০০০) মাত্র। এবারে আমি একটু সোজা কথা বলি। আমেরিকা যদি আপনাকে একটি মিথ্যা কথা বলার বিনিময়ে বিশ লক্ষ টাকা দেয়ার প্রস্তাব দেয়।

তাহলে আপনি মিথ্যা কথাটা বলবেন, নাকি বলবেন না? বুকে হাত দিয়ে বলুন তো আপনি মিথ্যা কথাটা বলবেন কি বলবেন না? আমি তো বলব। এমনিতেই কত মিথ্যা বলি। আর বিশ লক্ষ টাকার বিনিময়ে মিথ্যা বলব না! সেটা আবার একটি মিথ্যা কথা। আলবৎ বলব। তাহলে একটু চিন্তা করে দেখুন তো।

আমাদের মত দেশগুলোকে আমেরিকা এবং তার মিত্র দেশগুলো কিভাবে অনায়াসে কিনে নিতে পারে। আমাদের চোখের আড়ালে আমেরিকা ও তার মিত্ররা কি পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে। চলুন না আরও একটি অবান্তর ভাবনায় হিসাব করে দেখি। আমেরিকা প্রতিরক্ষা বিভাগের হিসেব অনুযায়ী প্রতিরক্ষা খাতে শুধু আমেরিকা নিজে খরচ করে প্রায় ১.৭৬ ট্রিলিয়ন ডলার। টাকার হিসেবে (৳১৪,৯৬,০০০,০০০০০০০০) চোদ্দ লক্ষ ছিয়ানব্বই হাজার কোটি টাকা মাত্র http://www.defense.gov আর পৃথিবীর বাকি দেশগুলো মিলে প্রতিবছর খরচ করে আমেরিকার প্রায় সমান।

তাহলে একটু চিন্তা করে দেখুন তো, পৃথিবীতে আমেরিকা যে দাদা-গিরি করে সেটা কি আর এমনিতেই করে? নাকি দাদা-গিরি করতে পারে বলেই দাদা-গিরি করে। বাংলাদেশের সবচেয়ে পয়সাওয়ালার বৈধ সম্পদের পরিমাণ হচ্ছে দুই বিলিয়ন, তিনশত পঞ্চাশ মিলিয়ন ডলার ($২,৩৫০০০০০০০)। অবৈধ সম্পদ সহ সর্বসাকুল্যে তিন বিলিয়ন ডলারের মত হবে। যদি তিন বিলিয়ন ডলারও হয় তাহলে টাকার পরিমাণে হবে পঁচিশ হাজার পাঁচশত কোটি টাকা (৳২৫,৫০০,০০০০০০০)। আমাদের নিশ্চয়ই ধারনা আছে বাংলাদেশের একজন ধনকুবের কেমন রাজকীয় জীবন যাপন করে।

কিন্তু ঐ ধনকুবেরের তিন বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ টাকা যদি আমি বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষকে ভাগাভাগি করে দেই। তাহলে প্রত্যেকে কত টাকা করে পাবে? প্রতিজনে পাবে পনের শত তিরানব্বই টাকা পঁচাত্তর পয়সা (৳১৫৯৩.৭৫) মাত্র। তাঁর মানে হল, এই টাকা একজন রিক্সা চালকের সাত দিনের আয়ের সমান!! কিন্তু সেই তিন বিলিয়ন ডলারের বাংলাদেশী ধনকুবের রাজকীয় জীবনটা সম্পর্কে একটু চিন্তা করি। যদি তিন বিলিয়ন ডলারের টাকায় বাংলাদেশের একজন ধনকুবের এমন জীবন যাপন করতে পারে। তাহলে চার ট্রিলিয়ন ডলারের টাকা দিয়ে কেমন জীবন যাপন করা যাবে।

অবশ্যই এই চিত্রটা এখন সহজেই বুঝতে পারার কথা, তাই না? নিশ্চয়ই মনে আছে উল্টো পথে চলতে গিয়ে পূর্বে আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষকে কত টাকা করে দান করেছিলাম। বিশ লক্ষ টাকা করে, তাই না? এবার আমরা বাস্তবিক জীবনটা নিয়ে একটু চিন্তা করি। মানে উল্টো পথে না, চলে উল্টো কথা না বলে এবার চলুন সোজা পথে চলি, সোজা কথা বলি। দেখুন তো এবার জীবনের হিসাবটা মিলছে কিনা। বিশ্ব রাজনীতির হিসাবটা মিলছে কিনা।

আমেরিকার মত সকল পরাশক্তি মিলে যদি আমাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। তাহলে নিয়ন্ত্রণ করা কি অসম্ভব? নিশ্চয়ই নয়। অন্তত উপরের হিসেবে তো তাই বলে, তাই না? তাহলে এই যে আমাদের মধ্যে আমরা মারামারি কাটাকাটি করছি। এটা কারা করাচ্ছে বলে আপনার ধারনা। আমেরিকা এবং তাঁর মিত্ররা মিলে যদি ইরাক, আফগানিস্তানের মত দেশকে প্রত্যক্ষভাবে নিমেষেই ধ্বংস করে মাটির সাথে গুড়িয়ে দিতে পারে।

তাহলে পরোক্ষভাবে বিনা দ্বিধায় আমাদের মত দেশকে কি তাঁরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না? আমাদের মধ্যে মারামারি কাটাকাটি বাধিয়ে দিতে পারে না?? আমার ধারনা ও বিশ্বাস অবশ্যই পারে। আরেকটি কথা, আমার ধারনা, আগামী একশত বছর ওরা কিভাবে পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করবে। তার একটা গোপন পরিকল্পনা কিন্তু ওদের আছে। তাঁরা কোন দেশকে কিভাবে ধ্বংস অথবা নিয়ন্ত্রণ করবে সেটা তাঁরাই জানে। তাঁদের গোপনীয় পরিকল্পনা কক্ষনই আমাদের পক্ষে উদ্ঘাটন করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।

তবে প্রশ্ন হল, আমরা আর কতকাল সাদাদের এই প্রভুত্ব, এ বিদ্বেষমূলক আচরণ মেনে নেব? তাঁরা আর কতকাল আমাদের মাথার ওপর এ ছড়ি ঘুরাতে থাকবে? আর আমরা কতকাল বিনা প্রশ্নে সব কিছু মাথা পেতে মেনে নেব? এবং অসভ্য আচরণের পর দুঃখ প্রকাশকেই পর্যাপ্ত বলে মেনে নেব? আমাদের এ জীবনটা কি তাহলে তাদের হাতেই সপে দিয়ে বিনা বাক্যে কাটিয়ে দিতে হবে? নিশ্চয়ই নয়। ১৪০০ বছর আগে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) তাঁর অনুসারীদের যে শিক্ষা দিয়ে গেছেন। তা হতে পারে পাশ্চাত্যের একচক্ষু নীতি ও বিদ্বেষের একমাত্র ভাল জবাব। তিনি বলেছেন, আরবরা যেন নিজেদের অ-আরবদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ না মনে করে। জাতি, বংশ বা গোত্র দিয়ে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারিত হবে না।

বরং নির্ধারিত হবে “তাকওয়া” দিয়ে। তাকওয়া’র বিচারে শ্রেষ্ঠ হলে একজন হাবসি দাসও শাসক হতে পারেন। আজকের আরব বিশ্বের ক্ষমতা লিপ্সু মুসলমান শাসকরা এটা কখনও মানেন নি সত্য। কিন্তু নবীর চিন্তাধারা ছিল প্রাগ্রসর এবং দেড় সহস্র বছর আগের ওই নির্দেশনা আজকের বিচারে অবশ্যই বৈপ্লবিক। প্রচলিত শাসন ব্যবস্থা (গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র, রাজতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র....) প্রতিটি যেহেতু পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছে।

সেহেতু ১৪০০ বছর আগের প্রমানিত বৈপ্লবিক চিন্তা চেতনাই বর্তমান পৃথিবীর সকল সমস্যার সমাধানে প্রধান ভুমিকা রাখতে পারে বলে বিশ্বাস করি৷ *পূর্বে প্রকাশিত: ২৪ জানুয়ারী ২০১২ *শিরোনাম পরিবর্তিত

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।