সত্য কাঁদে নিভৃতে, সাথে তার থাকে শুধু মহাকাল। সত্যের দ্বীপশিখা চিরদিন জ্বলে । সত্য কখনো মিথ্যাকে করে নাকো ক্ষমা। লোকাল ট্রেন এ করে বাসায় ফিরছিল তমা। ট্রেন এ যে এতো ভিড়
হবে ভাবতেই পারেনি।
রাস্তা খারাপ হওয়াতে বাসে যেতে কয়েক
ঘন্টা লাগে তাই ট্রেন এ যাওয়া আসা করে তমা। তমাদের একটা
গ্রুপ আছে। গ্রুপে ছোট ,বড়, সম বয়সি সবাই আছে। আজ এতো
ভিড় ছিল যে কয়েকজন এ বগীতে আর কয়েকজন অন্য বগীতে
উঠেছিল। এতো ভিড় ছিল যে তমা, তমার এক বান্ধবি একদম দরজার কাছাকাছি ছিল।
যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল তমা, সেখানে অনেকটা জায়গা জুড়ে পুরুষ মানুষ দাঁড়িয়ে ছিল। তমা আর তমার বান্ধবি মিম এই দুজনই শুধু মেয়ে ছিল । ওখানে কিছু অল্প বয়স্ক ছেলে ছিল যারা ওদের কে দেখে কেমন বিশ্রী ভাষায় কথা বলছিল। তমার সামনে একটা ছেলে ছিল যে খুব ভদ্র ছিল। আর সে এমন ভাবে দাঁড়িয়ে ছিল যাতে কোন ছেলে তমার কাছে আসতে না পারে।
তমা খুব কৃতজ্ঞ হল।
কয়েকবার তমা চেয়ে দেখল ছেলেটাকে । ছেলেটা আর তমা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ছিল। তমা এমন একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল যে সব পুরুষগুলো কেমন করে যে তাকাচ্ছিল কিন্তু এই একটি পুরুষকে সে তাকাতে দেখিনি । আর লজ্জায় তাকায়নি তমা।
ছেলেটা দেখতে মিষ্টি।
একটু পর সামনের ইষ্টিশনে তমা ও মিম সিট পেল । আর সেই ছেলেটা দরজার ওখানেই দাঁড়িয়ে রইল কারন সে সিট পায়নি
তমা এবার চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে ছেলেটা তাকিয়ে আছে। তমাও তাকিয়ে থাকল কৃতজ্ঞতা চোখে। খুব ইচ্ছে করল তমার যে তাকে ধন্যবাদ জানাতে।
কিন্তু তমা তা করতে পারেনি।
কেমন যেন ছেলেটার জন্য তমার মায়া লাগছিল। ছেলেটা এভাবে কেন তাকিয়ে আছে? সে কি কিছু বলতে চায় এইসব ভাবছিল তমা। তমার অনেক ভালো লাগল ছেলেটা কে। এমন করে তমা কখনো কোন ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকেনি।
তমা চোখ নামাতে পারছিল না। একটা কথা মনে হল তমার প্রথম দেখায় মানুষ যেভাবে প্রেমে পড়ে ঠিক সেরকম কিছু ঘটছে নাতো?
প্রথম দেখায় মানুষ যে সত্যি প্রেমে পড়ে আজ তমা তা হারে হারে টের পেল। বেশ কিছুক্ষন দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে রইল। একটু পর কিছু লোক উঠাতে ছেলেটা কে আর দেখা যাচ্ছিল না। তমার খুব খারাপ লাগছিল।
তমা তাকিয়ে দেখছিল যে ছেলেটাকে দেখা যায় কিনা? আজ সে নির্লজ্জ হতে রাজি। ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থাকতেই ইচ্ছে করল। এমন কেন করছে তমা নিজেও জানেনা। কিছুক্ষন পর ছেলেটা কে দেখা গেল। আর মজার কথা হল ছেলেটাও দেখতে চাইছিল।
কেমন যেন লুকোচুরি লুকোচুরি খেলা চলছিল।
তমা ভাবছিল ছেলেটা নিশ্চয় সে যেখানে নামবে সেখানেই নামবে। ট্রেন এর গন্তব্য যেখানে শেষ সেখানেই তমা নামবে। কিন্তু না তা আর হল না। তমার আগের স্টেশনে ছেলেটা নেমে গেল।
আর নামার আগে ছেলেটা আবার তাকাল।
তমার খুব খারাপ লাগছিল। ট্রেন যেপাশে থামল ছেলেটা তার অপর পাশে যাচ্ছিল। তমা শুধু তাকিয়েই থাকল। কিছুদূর গিয়ে ছেলেটাও আবার তাকাল আর এটাই ছিল শেষ তাকানো।
ট্রেনও ছেড়ে দিল। ট্রেন চলছে আর তমা ভাবছে। এই ছেলের সাথে যেভাবেই হোক কথা বলবে। হোক না একটু বেহায়া। কথা বললে কি ছেলেটা খুব খারাপ ভাববে? যা ইচ্ছে ভাবুক তাও কথা বলবে তমা।
আজ যেহেতু বৃহস্পতিবার শুক্র শনি তো অফিস বন্ধ । রবি বার নিশ্চয় দেখা হবে ছেলেটার সাথে।
শুক্র, শনি গেল রবি বার আসল কিন্তু তমার আর ট্রেনে যাওয়া হল না। তমার খুব খারাপ লাগছিল। ভাবছিল যে নিশ্চয় ছেলেটার দেখা পেত! বুধ বার তমা ট্রেন এ গেল কিন্তু ছেলেটা কে আর দেখতে পেল না।
চোখ দুটি অনেক খুঁজল সেই ছেলেটাকে। কিন্তু না হতাশ হয়েই ফিরে আসে বার বার।
আর কোনদিনই দেখা হয়নি সেই ছেলেটার সাথে তমার। ছেলেটার চেহারাটাও এখন ঝাপসা হয়ে গেছে।
সেই প্রথম দেখায় তমা ছেলেটার প্রেমে পরেছিল।
ছেলেটা কি তমা কে খুজেছিল? তারও কি এমন খারাপ লেগেছিল? তারও কি তমাকে ভালো লেগেছিল? এই সব প্রশ্নগুলো মাথায় আসে তমার।
ক্ষনিকের ভালো লাগাটাই ভুল। তবে তমা ভুলেনি সেই দিনের
কথা। অদ্ভুত একটা অনুভূতি হয়েছিল এই মনে। তার হৃদয়টাকে
নাড়া দিয়ে গেছে।
এমন অনুভূতি তার কখনো হয়নি। কখনো সে
এভাবে কারো জন্য উতলা হয়নি । এমন করে কারো চোখের পানে
চেয়ে দেখেনি। সে চোখে যে না বলা কিছু কথা ছিল। ছিল কিছু
আবেগ , কিছু মায়া।
সে চোখের গভীরতা যে ছিল অনেক বেশি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।