আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে মজার স্মৃতি

হুমায়ূন আহমেদের অনেক নাটক-সিনেমায় নিয়মিত কুশীলব অথবা কাছের মানুষ তাঁরা। শুনিয়েছেন হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে মজার অভিজ্ঞতা।

 

হুমায়ূন ভাই বললেন, ‘আসো, আম খাই’

জাহিদ হাসান
হুমায়ূন ভাইয়ের সঙ্গে একেক সময়ে একেক রকম সম্পর্ক ছিল। কখনো পিতা-পুত্রের মতো, কখনো বন্ধুর মতো আবার কখনো বা বড় ভাই-ছোট ভাইয়ের মতো। ১৯৯৭-৯৮ সালের কথা।

তখন আমরা সবুজছায়া নাটকটির শুটিং করছি গাজীপুরের হোতাপাড়ায়। রাতে সাপের প্রচণ্ড ভয়। হুমায়ূন ভাই বুদ্ধি দিলেন পায়ে লাইফবয় সাবান মেখে ঘুমাতে। পায়ে সাবান কেন? হুমায়ূন ভাই বললেন, ‘সাবানে কার্বলিক অ্যাসিড থাকে। পায়ে সাবান মাখলে সাপ আর ধারেকাছে ঘেঁষবে না।

’ যে-ই বুদ্ধি সে-ই কাজ। এবং বুদ্ধিটা বেশ কাজেও দিল। ওখানেই এক রাতে, রাত ১২টার দিকে হুমায়ূন ভাই জানতে চাইলেন, ‘এখন কী খেতে চাও?’ আমি বললাম, ‘আম। ’ হুমায়ূন ভাই তাঁর এক সহকারীকে পাঠালেন গাজীপুরে। রাত পৌনে একটার দিকে তিনি আম নিয়ে এলেন।

হুমায়ূন ভাই খুশি খুশি গলায় বললেন, ‘আসো, আম খাই। ’

 

গভীর রাত পর্যন্ত সবাই জ্যোৎস্না দেখলাম

এজাজুল ইসলাম

হুমায়ূন আহমেদ স্যারের সঙ্গে শুটিং করতে গিয়েছিলাম বনুর গল্প নাটকের। এক বাসে আমরা সবাই। স্যার সামনের দিকে বসা, আমি পেছনে। কিছুক্ষণ পর স্যার আমাকে ডাকলেন, তাঁর পাশের সিটে বসতে বললেন।

বসলাম। স্যার বললেন, ‘আমার খুব ইচ্ছা একটা সুন্দর বাগানবাড়ির। তোমাকে দায়িত্ব দিলাম, তুমি সব করবে। ’ শুরু করলাম জায়গা খোঁজা। নির্ভেজাল জায়গা পাওয়া খুব কঠিন কাজ।

অবশেষে বাড়ির জায়গা পেয়ে গেলাম। স্যারকে জানালাম। স্যার দেখতে এলেন। এত মুগ্ধ হতে স্যারকে আমি কখনো দেখিনি। পুরো জায়গা দেখার পর স্যার আমাকে কাছে ডাকলেন, পিঠে হাত বুলিয়ে বললেন, ‘তুমি আমার জীবনের একটা বড় স্বপ্ন পূরণ করে দিলে।

’ আমার চোখে তখন পানি।

নুহাশপল্লী হওয়ার পরে প্রথম ঘর বানানো হলো; বনের মাঝে কাঠের বাংলো।   গভীর রাত পর্যন্ত সবাই জ্যোৎস্না দেখলাম। তারপর স্যার ঘুমাতে গেলেন। ঘরে যাওয়ার আগে আমাকে ডেকে বললেন, ‘ডাক্তার, ঘর তো একটা, তোমরা থাকবে কোথায়?’ আমি বললাম, ‘কোনো অসুবিধা হবে না, স্যার।

আমরা থাকব এক জায়গায়। ’ আকাশের নিচে, খোলা মাঠে শুয়ে পড়লাম আমরা। জ্যোৎস্না দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়লাম। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি, স্যার ঘরের বারান্দায় বসা। মহাবিরক্ত তিনি! কেন আমরা সারা রাত খোলা আকাশের নিচে থাকলাম।

 

‘বই উৎসর্গ করেছি বলে ফুল নিয়ে এসেছ!’

ফারুক আহমেদ

হুমায়ূন ভাইয়ের সঙ্গে অনেক দিন ধরে কাজ করি। একদিন হঠাৎ মনে হলো—হুমায়ূন ভাই আমাকে কোনো বই উৎসর্গ করেননি। এই চিন্তাটা খুবই স্বাভাবিক ছিল। এমন যখন ভাবছি, তখন ফেব্রুয়ারি মাসে হঠাৎ একদিন স্বাধীন খসরু ফোন করলেন, ‘ফারুক ভাই, হুমায়ূন স্যার আপনাকে একটা চমৎকার বই উৎসর্গ করেছেন। ’ কথাটা শুনেই আমি তুমুল রোমাঞ্চিত।

খোঁজ নিয়ে দেখলাম হুমায়ূন ভাই আমাকে তাঁর লিলুয়া বাতাস বইটি উৎসর্গ করেছেন। সঙ্গে সঙ্গে ঠিক করলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করব। তখন তিনি দখিন হাওয়া বাসায় ছিলেন। কিন্তু তাঁর জন্য কী নিয়ে যাই! হুমায়ূন ভাইয়ের ডায়াবেটিস, মিষ্টি খাওয়া নিষেধ। তাই ফুল নিয়ে বিপুল উৎসাহে গেলাম দখিন হাওয়ায়।

দোরঘণ্টি বাজালাম। হুমায়ূন ভাই দরজা খুললেন। আমাকে দেখেই বলে উঠলেন, ‘ও, বই উৎসর্গ করেছি বলে ফুল নিয়ে এসেছ! জীবনে তো একটা ফুলের পাপড়িও দিলে না!’ আমি খুব বিব্রত। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম খানিকক্ষণ। হুমায়ূন ভাই শেষে বাসার ভেতরে ঢোকালেন আমাকে।

হঠাৎ জড়িয়ে ধরলেন। বললেন, ‘তোমাকে আগেই একটা বই দেওয়া উচিত ছিল। যাক, এত দিন পরে খুব পছন্দের একটা বই দিতে পারলাম। ’

 

নুহাশপল্লীতে গিয়ে আমার চক্ষু চড়কগাছ!

এস আই টুটুল

আমার ভাই একদিন ফোন করে জানালেন, আমাদের কুষ্টিয়ায় দুজন লোকের সন্ধান পেয়েছেন। দুজনের সঙ্গেই নাকি জিন আছে।

এবং জিনওয়ালা দুজন মানুষের হাত দেখে অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ নির্ভুলভাবে বলে দিতে পারেন। বিনিময়ে কিছুই নেন না, শুধু পাঁচ কেজি গরুর মাংস রান্না করে খাওয়ালেই হয়। আমি এই ‘আবিষ্কারের’ কথা জানালাম হুমায়ূন আহমেদকে। স্যার বললেন, ‘ওদের আমার কাছে নিয়ে আসো। ’ তথাস্তু, অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে দুই গণককে নুহাশপল্লীতে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করলাম।

নুহাশপল্লীতে গিয়ে আমার চক্ষু চড়কগাছ! প্রায় ৫০ জনের মতো অতিথি এসে বসে আছেন স্যারের নিমন্ত্রণে। তাঁরা সবাই গণকদ্বয়ের কেরামতি দেখতে উদগ্রীব! কে নেই সেখানে! হুমায়ূন স্যারের আম্মা থেকে নায়ক রিয়াজ, নুহাশও এসেছে দেখলাম। আর আমাদের পরিচিতজনেরা তো ছিলেনই। স্যার এরই মধ্যে পাঁচ কেজি গরুর মাংস রাঁধিয়ে বসে আছেন। গণক দুজন আরাম করে খেল।

খাওয়ার পরে সবাই বসেছি। গণকেরা বললেন, ‘ঘরের বাত্তি নেভান। ’ বাতি নেভানো হলো। স্যার বললেন, ‘প্রথমে কে হাত দেখাবে?’ নায়ক রিয়াজ বললেন, ‘আমি। ’ প্রথমজন রিয়াজের হাত পর্যবেক্ষণ শেষে দ্বিতীয়জন কী কী মন্ত্র আওড়ালেন।

তারপর বললেন, ‘আপনি তো বিশাল বড় অফিসে কাজ করেন। আপনার আব্বা আজকে সকালে ৭০০ টাকা দিয়ে একটা বিরাট ইলিশ মাছ কিনেছেন। আপনার আম্মা তো বছর দুয়েক আগে ইন্তেকাল করেছেন। তিনি সবার কাছে দোয়াপ্রার্থী। ’ সবার চোখে-মুখে বিস্ময়।

রিয়াজের মা যে পাশেই বসা! এবং আগের কথাগুলোও পুরোপুরি ভুল। স্যার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘হুম!’ আমার এদিকে কালো ঘাম ছুটে যাচ্ছে! আমার মান-ইজ্জত আর রাখল না!

রিয়াজের পরে নুহাশের পালা। তার বেলায় তো আরেক কাঠি সরেস! নুহাশ নাকি ২৩ বছর বয়সে ডিগ্রি ‘পাস দিয়েছে’! খুব শিগগির ‘বিবাহ’ করতে যাচ্ছে। আমি তখন পালানোর রাস্তা খুঁজছি। স্যার ততক্ষণে খেপে টং! চিৎকার করে ধমক দিলেন দুই গণককে, ‘ভণ্ডামি করার জায়গা পাও না! পাঁচ কেজি মাংস খেতে চাও, খাও।

তাই বলে এত বড় বাটপারি!’ গণকদ্বয়ের অবস্থা একেবারে নাজেহাল। ফাঁক বুঝে চম্পট দিল গুণধর গণকদ্বয়! অনেক কষ্টে তাদের খুঁজে বের করে দিলাম আচ্ছা বকুনি, ‘আমার মান-ইজ্জত কিছুই তো রাখলেন না!’ গণকদ্বয়ের উত্তর, ‘আমাদের কী দোষ! স্যারের কাছে একটা শক্তিশালী জিন আছে। ওই জিনের কারণে আমাদের জিনটা ঘরেই ঢুকতে পারে নাই, কেরামতি দেখাব কেমনে!’  

গ্রন্থনা: মাহফুজ রহমান

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     বুকমার্ক হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.