আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারঃ শুভ উদ্বোধন ও ট্র্যাফিক জ্যামে নাকাল আমরা



গত ৩/৪ বছর ধরে আমরা যারা নিয়মিত বা মাঝেমধ্যে গুলিস্তান-সায়দাবাদ-যাত্রাবাড়ী রোডে তথা ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট হাইওয়েতে যাতায়াত করছি তারা জানি ট্র্যাফিক জ্যাম কাকে বলে? উহা কত প্রকার ও কি কি? এবং ইহা মানুষকে কিভাবে ও কতভাবে নাকানি চুবানি খাওয়াতে পারে, তা আমরা প্রতিদিন এই এলাকায় চাক্ষুষ করেছি। একটা যানজটে বিপর্যস্ত এলাকায়, একটা ছোট গর্ত বা একটা রিক্সা-ভ্যান বা একটা চাকা পাংচার হওয়া গাড়ীও যে কি লঙ্কাকাণ্ড ঘটাতে পারে এবং কি পরিমাণে কর্মজীবী মানুষকে নাকাল করতে পারে, তা একমাত্র ভুক্তভোগীরাই জানি। এই এলাকায় বসবাসকারী, চলাচলকারী প্রতিটি মানুষ সব কষ্ট, দুর্ভোগ মেনে নিয়েছে আর আশায় বুক বেঁধে অপেক্ষা করেছে, “এই ফ্লাইওভারটা একদিন চালু হবে আর তা তাদের দুঃখ কষ্ট লাঘব করবে”-এই ভেবে। মাটি ফুঁড়ে এক একটা পিলার উঠেছে আর মানুষ তা আগ্রহ নিয়ে গুনেছে, সাথে সাথে সময়ের গণনা করে আশায় বুক বেঁধে অপেক্ষায় থেকেছে, এই বুঝি ফ্লাইওভারটার কাজ শেষ হল। আজ (১১/১০/২০১৩) শুক্রবার, সেই শুভক্ষণ! গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার মানে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার উদ্বোধন হয়েছে।

হোকনা সেটা আংশিক! তাতে কি? কিছুটা উপকার তো এথেকে পাওয়া যাবে! হয়ত পুরোপুরি সুযোগ-সুবিধা পেতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে; কিন্তু মানুষ তাতেই রাজী এবং বর্তমানে যা পেয়েছে এতেই খুশি! ২০১০ সালে কাজ শুরু করে ২০১৩ সালে কাজ শেষ করাটা আমাদের মত দেশের জন্য একটা বড় নিদর্শন এবং সামর্থ্য বৃদ্ধির একটা ভাল লক্ষণ। একজন ভুক্তভোগী হিসেবে, আমি ব্যক্তিগতভাবে, ১১.৭০ কিঃমিঃ দৈর্ঘ্যের, মাল্টি লিঙ্কের এই প্রকল্পটা দ্রুত শেষ করার জন্য সরকার থেকে শুরু করে এরসাথে জড়িত সকল প্রকৌশলী-শ্রমিক ভাইদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। হ্যাঁ, পুড়ো ফ্লাইওভারটা কমপ্লিট না করে কেন দ্রুত এর উদ্বোধন হল, তা নিয়ে একটা বিতর্ক ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। এতে অবশ্য অবাক হওয়ার কিছু নেই, এটাই বাঙ্গালীর অভ্যাস এবং তা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। কোথায় যেন পড়েছিলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল পাওয়া নিয়ে সবার প্রথমে যিনি সমালোচনা করেছিলেন, তিনি ছিলেন একজন বাঙ্গালী।

আবার অমর্ত্য সেনের নোবেল পাওয়ার পরে এর বিপক্ষে আদালতে কেস ঠুকেছিলেন এক বাঙ্গালী উকিল। ভারতের পশ্চিম বাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জনাব জ্যোতি বসু’র বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছিলেন, তারই দলের এবং বহুদিনের সহযোগী দুই বাঙ্গালী সাংসদ। যার ফলে তিনি ভারতের প্রথম বাঙ্গালী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার একমাত্র ও জীবনের শেষ সুযোগটা হাতছাড়া করেছিলেন। আর ভারতের বর্তমান মহামান্য রাষ্ট্রপতি হওয়ার দৌড়ে হোঁচট খেয়ে প্রায়ই পড়ে গিয়েছিলেন, আমারদেরই জামাইবাবু জনাব প্রণব মুখোপাধ্যায়, তারই সমগোত্রীয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাঁধায়। আর আমাদের ডঃ ইউনুসের কথা না হয় আর উল্লেখই করলাম না এখানে।

চর্বিত চর্বণ হয়ে যাওয়ার ভয়ে! অনেকেই প্রজেক্ট এরিয়ার ভাঙ্গাচোরা রাস্তার কথা বলছেন, যা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। হ্যাঁ, এটা অস্বীকার করা যাবে না। তাই যতদ্রুত সম্ভব তা মেরামত করা উচিত। তদুপরি, আমি ব্যক্তিগতভাবে যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার আংশিক ওপেন হওয়াতেও খুশি। কারণ কিছু গাড়ী যদি উপর দিয়ে চলে যায় তাহলে নিচে গাড়ীর প্রেশার কমে যাবে, ফলশ্রুতিতে নিচের জ্যাম কমবে।

আর যেহেতু আমি এই লাইনে মাঝে মধ্যেই যাতায়াত করি, সেহেতু আমি নিশ্চিত করেই বলতে পারি, এই উদ্বোধনের ফল হবে “শুভ” এবং যারা এই লাইনে নিয়মিত যাতায়াত করেন তারা কমবেশি সবাই উপকৃত হবেন। এই প্রসঙ্গে, আমি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি ... কুড়িল ফ্লাইওভারের তথা কুড়িল ফ্লাইওভার প্রজেক্টের পুরো কাজ এখনো কমপ্লিট হয়নি, এপ্রোচ রোডগুলো এখনো ভাঙ্গাচোরা। তাতে কিন্তু গাড়ির চলাচল বন্ধ হয়নি বা থেমে থাকেনি। বরঞ্চ উদ্বোধনের দিন থেকেই, কষ্ট করে হলেও আমরা সবাই হাসিমুখে সেই ভাঙ্গাচোরা রাস্তায় চলাচল করছি। আর এই “হাসিমুখ”টা কেন বলুন তো? ...... সকাল বিকাল মিলে দুই অক্তে কমপক্ষে ৩ থেকে ৩.৩০ ঘন্টা সময় বেঁচে যাচ্ছে আমাদের এবং সেটা প্রতিদিন।

বিশ্বাস করুন? না হলে, পরখ করে দেখার আবেদন থাকলো! গুডলাক বাংলাদেশ !!! ১২/১০/২০১৩, রাতঃ ১২.০৯

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।