দুই সন্তান নিয়ে গ্রামের বাড়ি বগুড়ায় ঈদ করতে যাচ্ছিলেন সানজিদা আক্তার ওরফে শ্যামা (৩৫)। কিন্তু তাঁর আর ঈদ করা হলো না। আজ শনিবার সকালে রাজধানীর কমলাপুরে সন্তানদের সামনেই বাসের চাপায় মর্মান্তিক মৃত্যু হয় তাঁর।
নিহত সানজিদা র্যাব-৮-এর উপপরিদর্শক (এসআই) হিসেবে কর্মরত আবু সাইদের স্ত্রী। মতিঝিল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফিরোজ আলমগীরের কাছে জানা যায়, বরাবরের মতো এবারও বাস নিয়ে চালক পালিয়ে গেছেন।
তিনি বলেন, বাস ও চালককে শনাক্ত করা যায়নি।
শানক্ত করার জন্য কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে এসআই বলেন, ‘পরিবার তো কিছু বলতে পারছে না। ’
এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর একই এলাকায় শিশু সন্তানের সামনেই মিনিবাসের চাপায় নিহত হয়েছিলেন রোকসানা বেগম ওরফে লায়লা নামের এক নারী। পুলিশ মিনিবাসটি আটক করলেও চালক ছিলেন পলাতক।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্র জানায়, নিহত সানজিদা দুই সন্তান নিয়ে মতিঝিলের এজিবি কলোনি এলাকার এক বাসায় থাকেন।
বড় ছেলে আবু সাদী শীতল ঢাকা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ছাত্র। ছোট মেয়ে সাদিয়া সিথী মতিঝিল মডেল স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে। পেশাগত দায়িত্ব থাকায় সানজিদার স্বামী আবু সাইদ এবার ঈদে ছুটি পাবেন না। তাই সন্তানদের নিয়ে গ্রামের বাড়ি বগুড়ার শেরপুরে যাওয়ার জন্য ভোর পাঁচটার দিকে বাসা থেকে বের হন সানজিদা। সঙ্গে ছিলেন সানজিদার ভাই মো. শরীফ।
কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে ট্রেনে বগুড়া যাওয়ার কথা ছিল তাঁদের।
মো. শরীফ সাংবাদিকদের বলেন, এজিবি কলোনি থেকে তাঁরা দুটি রিকশায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের দিকে রওনা দেন। একটি রিকশায় ছিলেন তিনি ও আবু সাদী। অন্য রিকশায় ছিলেন সানজিদা ও সাদিয়া। শরীফ বলেন, তাঁদের রিকশাটি ছিল সামনে, পেছনে সানজিদাদের।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের কাছে বিআরটিসি বাস কাউন্টারের সামনে পৌঁছালে হঠাত্ একটি বিকট শব্দ হয়। তিনি পেছনে তাকিয়ে দেখেন, তাঁর বোন সানজিদা রিকশা থেকে ডান পাশে সড়কে ছিটকে পড়েছে, আর বাম পাশে সাদিয়া। কিছু বুঝে উঠার আগেই দ্রুতগতির একটি বাস সানজিদার ওপর দিয়ে চলে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, খবর পেয়ে সানজিদার স্বজন ও পরিচিতরা হাসপাতালে ছুটে যান।
স্বজনদের কান্নায় হাসপাতালের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।
সানজিদার আত্মীয় সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, সানজিদা ও তাঁর স্বামী আবু সাঈদের মূল বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার পৃথক দুটি ইউনিয়নে। নদীভাঙনের পর সানজিদার পরিবার বগুড়ার শেরপুরে বসতবাড়ি করেছে। সেখানেই এবার ঈদ করার কথা ছিল সানজিদার।
পারিবারিক সূত্র জানায়, আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
লাশ বগুড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
র্যাব-৮-এ যোগাযোগ করে জানা গেছে, অল্প কিছুদিন আগে র্যাব-৮-এ যোগ দিয়েছেন নিহত সানজিদার স্বামী আবু সাইদ। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ছুটি নিয়ে তিনি ছুটে গেছেন বগুড়ায়।
।অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।