আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বলদ জামাইয়ের কান্ড কারখানা

জীবন থেকেই নেই, জীবন নিয়েই লিখি :)

এক গ্রামে এক বোকা জামাই ছিল। বুদ্ধিসুদ্ধি কিছুই ছিল না। বাপের বাড়িই থাকত সে। একদিন তার মা এসে বলল, "কতদিন শ্বশুর বাড়ি যাস না। কাল সকালে তাদের বাড়ি থেকে দেখা করে আসবি।

আর এই নে টাকা। যাওয়ার সময় দোকান থেকে কিছু টিছু কেনে নিয়ে যাস যা তারা পছন্দ করে। " জামাই রাজি হল। পরদিন সকালে মায়ের দেওয়া টাকা নিয়ে রওনা হল সে। সে একটা দোকানে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,"ভাই কিছু টিছু আছে???" (মা বলে দিছে কিছু টিছু মানে কিছু একটা কিনে নিয়ে যেতে বোকা ছেলে ভেবেছে কিছু টিছু মনে হয় কোন জিনিসের নাম) দোকানদাররা তো বুঝেই না কি চাচ্ছে এই লোক।

এক চালাক দোকান্দার শেষে লোকটাকে নিয়ে আসলো তার দোকানে এবং সব টাকা নিয়া হাতে একটা কচু ধরাইয়া দিয়া বলল, "এই নিন কিছু টিছু" জামাই বাবাজি খুব খুশি হয়ে রওনা দিল শ্বশুরবাড়ি। সকালে কিছু না খেয়ে বের হয়েছে জামাই। তাই পথে যেতে যেতে প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে তার। কি খাবে কি খাবে করতে করতে হাতে রাখা কচু খাওয়া শুরু করল সে বেচারা কচু খেয়ে অবস্থা কাহিল। মুখ থেকে লালা পড়া শুরু করেছে।

সে মুখে হাত দিয়ে লালা আটকানোর চেষ্টা করছে আর অত্যন্ত দুঃখের সাথে জোরে জোরে চিৎকার করে বলছে, "পড়িস নাহ.....পড়িস নাহ........!!!" সে একটা জঙ্গলের মধ্য থেকে যাচ্ছিল এই কথা বলতে বলতে। সেখানে এক শিকারি ফাঁদ পেতে রেখেছিল। হঠাৎ সেই শিকারি দেখে কে একজন তার পাতা ফাঁদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় জোরে জোরে বলছে "পড়িস না......পড়িস না......." শিকারি ভাবছে যে তার ফাঁদে পাখি যেন না পড়ে সে জন্য লোকটা এভাবে চিৎকার করছে। সে তখন জামাইকে ধরে আচ্ছা করে ধোলাই দেয়। জামাই তো ভয়ে শেষ!!! কি হইল??? শিকারি তখন তাকে বলে,"এখন থেকে শুধু বলবি,সব ফাঁদে পর.....সব ফাঁদে পর!!" জামাই বলল ,"আচ্ছা" তারপর সে তার মুখ থেকে লালা পড়ছে তা আটকাচ্ছে ও বলছে,"সব ফাদে পর!!সব ফাঁদে পর!!" সে যাচ্ছিল এক জমিদারের বাড়ির পাশ দিয়ে।

সেখানে তখন কিছু চোর চুরি করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এমন সময় সেই বলদ জামাই সেখান দিয়ে যাচ্ছিল ও বলছিলঃ "সব ফাদে পড়!!! সব ফাদে পড়!!!!!" চোরগুলো এই কথা শুনে রেগে যায়। আচ্ছা মত মাইর দিয়ে দেয় জামাইকে। মাইর খেয়ে আধমরা হয়ে পড়েছে। "তুই যদি এই কথা বলিস তাইলে তোরে খাইসি" বলদ জামাই বলে,"তাইলে আমি কি বলব???" "বলবি যে এই ঘটনা(চুরি) যেন বারেবারে হয়" জামাই তখন উঠে আবার রওনা দেয়।

আর মুখের লালা আটকে রাখতে রাখতে বলে, "এই ঘটনা যেন বারেবারে হয় এই ঘটনা যেন বারে বারে হয়" জামাই তখন যাচ্ছিল এক লাশবাহী দলের পাশ দিয়ে। যাচ্ছিল আর বলছিল "এই ঘটনা যেন বারেবারে হয় এই ঘটনা যেন বারেবারে হয়" সেই লোকজন এই কথা শুনে জামাইকে আরেক প্রস্থ ধোলাই দেয়। জামাইকে তারা বলে, "এই কথা আর বলবি না" "তাইলে কি বলমু???" " বলবি এই ঘটনা যেন আর হয় না" জামাই এরপর এই কথা বলতে বলতে যাচ্ছে। পথে যেতে যেতে সে পরে এক নতুন বিয়ে হওয়া এক দলের সামনে। জামাই বলছে, "এই ঘটনা যেন আর হয় না এই ঘটনা যেন আর হয় না!!" এই কথা শুনে কি ভেবে বিয়ের লোকজন তারে মাইর দেয়।

বলে এই অলুক্ষনে কথা আর বলবি না। জামাইর অবস্থা শেষ। সে বলে,"তাইলে কি বলব???" "কিছু বলার দরকার নাই। যা বাড়ি যা" জামাই কিছু না বলে চুপচাপ বাড়ি দিকে রওনা দেয়। এতবার মার খেয়ে ও এত পথ হেঁটে জামাইর ক্ষুধা লাগে খুব।

সে সময় পাশে দেখে এক বুনো আমড়া গাছ। বুনো আমড়া সহজে হজম হয় না। বুনো আমড়া দেখে তা ই পেটে চালান করে দেয় ক্ষুধায়। তারপর বাসায় ফেরে সন্ধ্যায়। জামাই এসেছে বাড়ি এই নিয়ে আনন্দের শেষ নেই।

শাশুড়ি এনে পিঠা খাওয়ায় জামাইকে। জামাই পিঠা খেয়ে তো পাগল হয়ে যায়। এত মজা হয় কিভাবে!!! সে শাশুড়িকে জিজ্ঞেস করে,"আম্মা! এই পিঠা কি দিয়ে বানিয়েছেন???" শাশুড়ি বলেন,"চালের গুড়া দিয়ে। " জামাই মনে মনে ভাবে," যে পিঠা এত মজা,তাহলে যে চালের গুড়া দিয়ে এটা বানানো হয়েছে সেটা না জানি কত মজা!!" সে শাশুড়ির কাছ থেকে জেনে নেয় যে চালের গুড়া রান্না ঘরের মাচার উপর রাখা। এরপর রাতে ঘরের সবাই ঘুমায় যায়।

তখন জামাই লোভ সামলাতে পারে না। সে তখন সেই মাচার উপর হাতরে হাতরে চালের গুড়া খুঁজতে থাকে। এমন সময় সেই বাসায় একদল চোর সিঁধ কেটে চুরি করতে ঢোকে। মাচার উপরে খুঁজতে খুঁজতে হাত দিয়ে কুলা ও তার উপরে হাড়ি পাতিল যা রাখা ছিল সব ফেলে দেয়। সেগুলো সব যেয়ে পড়ে পিঠের উপর।

এমনিতেই শরীর এর অবস্থা খারাপ,তার উপর বুনো আমড়াগুলো তখনও হজম হয় নাই সব। এমন অবস্থায় পিঠে এত ভারী ভারী জিনিস গুলো পড়ে। বুনো আমড়া গুলো গুলির মত বের হয়ে আসতে থাকে পেট থেকে। তার উপর পশ্চাৎদেশ থেকেও হতে থাকে শব্দ। ঠুস ঠাস ঢুস ঢাস শব্দ হতে থাকে সারা বাড়ি জুড়ে।

মনে হয় যেন গোলাগুলি শুরু হয়েছে। সে এক ভয়াবহ অবস্থা। চোরের দল ভয়ে অবস্থা খারাপ। বুনো আমড়া ছুটে এসে ২ জনের অবস্থা আশংকাজনক। সারা গ্রাম জেগে উঠেছে।

কি হইল??? কি হইল??? এদিকে গ্রামের পুলিশ চলে এসেছে ঘটনাস্থল এ। এসে চোরদের ধরে নিয়ে যায়। আর জামাইকে আবিষ্কার করে রান্নাঘরের মাচার নিচে গায়ের উপর হাড়িপাতিল ফালানো বেহুঁশ। কেউ কোথাও কোন অস্ত্র খুঁজে পেল না। কেউই বুঝল না এত গোলাগুলির রহস্য কি।

শুধু অনেক বুনো আমড়া খুজে পায় সবাই সারাঘরে। জামাই ও বা কি করছিল রান্নাঘরে আর এত আমড়াই বা আসলো কোথা দিয়া....... কেউ জানে নাই আর।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।