আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভাইরাসের মতো ছড়াচ্ছে 'চাইল্ডপর্নোগ্রাফি'

অনলাইন পর্নোগ্রাফি বা সেলফোন পর্নোগ্রাফি সম্পর্কে এখন কমবেশি সবাই অবগত। পর্নোগ্রাফি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব-এর সর্বাপেক্ষা লাভজনক ব্যবসার অন্যতম। আর শুধু ‘চাইল্ডপর্নোগ্রাফি’ থেকেই প্রতি বছর তিন লাখ বিলিয়ন ডলার আয় হয়ে থাকে। তাই শিশু হোক আর প্রাপ্ত বয়স্ক, সবার জন্যই পর্নোগ্রাফি হচ্ছে নৈতিক অবক্ষয়ের মোক্ষম হাতিয়ার। শুধু মাত্র শিশুরা নয়, উঠতি বয়সের কিশোর, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে এটি ভাইরাসের মতো ছড়াচ্ছে।

ধনাঢ্য গৃহবধূ, স্কুল-কলেজ ছাত্রী ও টিনএজ তরুণীরাও এ ক্রাইমের শিকার। কিন্তু বন্ধ হচ্ছে না সাইবার ক্রাইম।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু ঢাকা শহরের বিভিন্ন সাইবার ক্যাফে থেকে প্রতি মাসে তিন কোটি টাকার পর্নোগ্রাফি ডাউনলোড করে বিভিন্ন বয়সের মানুষ। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু, কিশোর ও তরুণ-তরুণীরা। যাদের বড় একটা অংশ স্কুলগামী শিক্ষার্থী।

নগরীর অধিকাংশ এলাকায় সাইবার ক্যাফের দোকানের মাধ্যমে অল্প টাকায় ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে। কিন্তু সব বয়সীদের প্রবেশাধিকার উন্মুক্ত থাকায় ছোট ছোট শিশুও ভিড় করে সেখানে। তারা শুধুই পর্নোভিডিও দেখতে ক্যাফেতে যায়। পর্নোছবির দর্শকদের ৭৭ শতাংশ শিশু। এখনকার শিশুরা অতি সহজেই হাতের নাগালের মধ্যেই পর্নোওয়েব সাইটগুলো পেয়ে যাচ্ছে।

  

ইন্টারনেটের এমন কিছু সাইট রয়েছে, যেগুলো বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পর্নো প্রচার করে থাকে। আর এ ফাঁদে শিশুরাই প্রথম ধরা পড়ে। পিতা-মাতার অজান্তেই যখন খুশি তখন ইন্টারনেটের পর্নোসমুদ্রে সাঁতার কাটতে পারছে শিশুরা। এর ফলে ভবিষ্যত প্রজন্মের কোমলমতি শিশুদের যে ধ্বংসাত্মক সর্বনাশ ডেকে আনছে তা অপূরণীয় ক্ষতি।

যৌনানুভূতি মানুষের চিরন্তন শাশ্বত একটি বিষয়।

আর কিশোর বয়সে এটা আরো বেশি তীব্র আকার ধারণ করে। শিশুদের এটা নিয়ন্ত্রণ কৌশল শেখানোর দায়িত্ব সমাজের। কিন্তু আমাদের সমাজে সেটা হয় না। নিয়মিত ইন্টারনেট ব্যবহারকারী শিশুদের ১৯ শতাংশ কোনো না কোনোভাবেই যৌনাবেদনের মুখোমুখি হয়েছে। ফলে ইন্টারনেট মাধ্যমটি উভয় সংকটে ফেলেছে সচেতন অভিভাবকদের।

ইন্টারনেট একদিকে শিশুদের দিচ্ছে জ্ঞানের অবারিত দরজা, অন্যদিকে পর্নোসাইডের ফাঁদে পড়ে চারিত্রিক অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত হয়ে তৈরি হচ্ছে সমাজ ও নৈতিকতা বিধ্বংসী দানব। ইন্টারনেট ওয়াচ ফাউন্ডেশনের (আইডব্লিউএফ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিশুদের যৌন নিপীড়নের ছবি রয়েছে-ইন্টারনেটে এমন ওয়েবসাইটের সংখ্যা গত বছর বেড়েছে। সংগঠনটি তিন হাজার ওয়েবসাইটের ১০ হাজারেরও বেশি পাতায় শিশুদের যৌন নির্যাতনমূলক উপাদান খুঁজে পায় এবং ১২ বছরের নিচের শিশুদের ছবিই এসব ওয়েবসাইটে বেশি স্থান পেয়েছে। এ হার শতকরা ৯১ ভাগ।

সাইবার অপরাধী ও পর্নো সন্ত্রাসীরা কৌশলে কিংবা ফাঁদে ভিডিও ধারণ করে তা ইন্টারনেটে এবং মোবাইলে ছড়িয়ে দিচ্ছে।

সিডি ভিসিডি বানিয়ে বিক্রি করছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গোপন ভিডিও ক্যামেরার মাধ্যমে করা হচ্ছে।

পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১২-তে বলা আছে, যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী কোন অশ্লীল বই, সাময়িকী, ভাস্কর্য, কল্পমূর্তি, মূর্তি, কার্টুন বা লিফলেট, অভিনয়, অঙ্গভঙ্গি, অশ্লীল সংলাপ, নগ্ন বা অর্ধনগ্ন নৃত্য যা চলচ্চিত্র, ভিডিও চিত্র, অডিও ভিজ্যুয়াল চিত্র, স্থির চিত্র, গ্রাফিকস বা অন্য কোনো উপায়ে ধারণকৃত ও প্রদর্শনযোগ্য এবং যা কোন শৈল্পিক বা শিক্ষাগত মূল্য নেই তার সবই পর্নোগ্রাফি। এসব পর্নোগ্রাফি উৎপাদন, সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ, বহন, সরবরাহ, ক্রয়, বিক্রয়, ধারণ বা প্রদর্শন করা যাবে না।

যারা এ আইন মানবে না তাদের দুই থেকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা থেকে পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড ভোগ করতে হবে।

অথচ এই আইনের প্রয়োগ না হওয়ায় দেদারছে আইন লংঘন করে চলছে এক শ্রেণির মুনাফালোভীরা। চোখের সামনে পর্নো আইনকে লংঘন করে নিয়মিত ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার কারণে অপরাধীরা প্রতিদিন প্রযুক্তির পরিবর্তন নিয়ে আসছে। ফলে তাদের পক্ষেও সাইবার ক্রাইমকারীদের শনাক্ত করা সহজে সম্ভব হয় না। শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহার থেকে যেমন বিচ্ছিন্ন করা যাবে না, ঠিক তেমনি ইন্টারনেটকে সম্পূর্ণ পর্নোমুক্ত করাও সম্ভব নয়।

আর এ আগ্রাসন থেকে শিশুদের বাঁচাতেই হবে। সব জায়গায় সর্ব প্রকারের ইন্টারনেট পর্নো ওয়েবসাইট সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। এটা অবাস্তব কিছু নয়, করলেই করা যায়। আইনের যথাযথ প্রয়োগের পাশাপাশি পরিবার ও সামাজিকভাবে সবাইকে সচেতন হতে হবে।

পাঠ্য বইয়ে এ সম্পর্কে সচেতন করার ব্যবস্থা থাকতে হবে।

তবে এ অপরাধ রোধে পরিবারের ভূমিকাও কম নয়। শিশুর হাতে তুলে দিতে হবে নিরাপদ ইন্টারনেট। প্রতিটা শিশুর নৈতিক শিক্ষার ভিত্তি মূলত পরিবার থেকেই আসে। আর নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত একটি মানুষ কখনই এতো খারাপ হতে পারে না। সচেতনতা হতে পারে সাইবার ক্রাইম রোধের শক্তিশালী হাতিয়ার।

 

সূত্র: বাসস

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।