আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শুভ জন্মদিন বটবৃক্ষ !! তোমার জন্য ছোট্ট এই লেখাটি!

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !!

-কবিতা শুনবে বাবু ? -তোমার লেখা ? -হুম । হৈম আমার গায়ের সাথে হেলান দিয়ে বসে ছিল । আমার ডান হাতটা দুহাত দিয়ে ধরে ছিল । বাচ্চা মেয়েদের মত আদুরে গলায় বলল -তোমার লেখা হলে শুনবো । অন্য করোটা শুনবো না ।

আমার হৈমর এই বাচ্চাদের মত আদুরে কন্ঠটা শুনতে খুব মজা লাগে । আমি কবিতা বলতে শুরু করলাম তুমি আমি পুরো মন রাজ্য সেই রাজ্যের রানী । একটু আগে ঝালমুড়ি খেয়েছি এখন খাওয়া দরকার পানি ! -কি ? হৈম আমার গায়ের সাথে হেলান দিয়ে বসে ছিল । সোজা হয়ে বসলো । ওর মুখ দেখে মনে হল আমার উপর রাগ করেছে ।

রাগ মুখেই বলল -তোমার সাথে কথা নাই । তুমি পচা ! -আরে শুনো না । -না শুনবো না । তুমি আমার সাথে কথা বলবা না । আমি তোমার সাথে থাকবো না ।

এই বলে হৈম উঠে চলে যেতে চাইলো ! -আরে আরে যাও কই ! শুনবা তো ! তোমার জন্য সাত সমুদ্দুর আর তের নদী এই করেছি পার ! কখনও চলেছি পালে আর কখনও টেনেছি দাড় ! ছুটে এসেছি ঘোড়ায় চড়ে, হেটেছি খালি পায়ে ! ..... -এই চুপ ! -আরে চুপ কেন ? -তুমি আবার উল্ট পাল্ট কিছু বলবা ! -না বাবু ! এসব কি বল ?শুনো না । ছুটে এসেছি ঘোড়ায় চড়ে হেটেছি খালি পায়ে কখনও চলেছি শুক্ন ডাঙ্গায় কখনও উঠেছি নায়ে ! তোমার জন্য এই এসেছি, এনেছি আমার মন হৃদয়ের রানী ধরা দাও তুমি ভালবাসা কর গ্রহন । হৈম মুখ ভেঙ্গিয়ে বলল -ইস ! আমার বয়েই গেছে গ্রহন করতে ! যাও যাও ! এই টুকুতে চিড়ে ভিজবে না । -চিড়ে ভেজাতে হলে আয় কি কি করতে হবে ? -আরো অনেক অনেক কিছু ! তুমি চাইলেই আকাশের চাঁদ আনবো আজকে পেড়ে ! তোমার জন্য লক্ষ টাকার চাকরী দিবো ছেড়ে । তুমি যদি বল ঢাকা শহরটা করবো মরুউদ্যান ।

তুমি চাইলেই আরিফিন রুমী গাইবে না আর গান ! -হয়েছে ! তোমার পচা কবিতা আমি শুনবো না । কপট রাগ দেখানোর চেষ্টা । আমি যদিও জানি আজকে ও কিছুতেই রাগ করতে পারবে না । মন খারাপ করতে পারবে না । একটু একটু করে স্বপ্ন দেখেছি ! একটু একটু করে স্বপ্নটাকে সাজিয়েছি ! শুধু এমন দিনে ! তোমার মুখে একটুকরো হাসি ফোটাবো বলে ! বল তুমি কিভাবে মন খারাপের সাথে সন্ধি করবে ? সকাল বেলা যখন হৈমকে ফোন দিয়েছি তখন ওর কন্ঠস্বর কেমন ঠান্ডা হয়ে ছিল ।

ঘুম কাতর কন্ঠে যখন হ্যালো বলল বুঝতে মোটেই কষ্ট হল না ওর মন খারাপ । কেবল খারাপ না । অনেক খারাপ । আর কেনই বা হবে না ? কোন মেয়ের জন্মদিনে যদি তার প্রিয় মানুষটি উইস করতে ভুলে যায় তাহলে তো মন খারাপ হওয়ার কথা ! আমি জেগে জেগে দেখেছি সবাই ওর ফেসবুক ওয়ালে কিভাবে শুভেচ্ছা জানাচ্ছিল । কেবল মাত্র আমি জানাই নি ।

কেন ? কারন তো অবশ্যই আছে ! হৈম হ্যালো বলেই চুপ করে রইলো । আমি বললাম -হ্যালো বাবু ! হৈম আরো শীতল কন্ঠে বলল -বল ! -ঘুমাচ্ছিলা ? -না ঘুমাবো কেন ? আইফেল টাওয়ার উপর বসে আছি ! -হেহেহে । মন খারাপ ? কোন উত্তর নাই । মুখটি কেন গোমড়া, তোমার মুখটি কেন ভার ? কার কারনে এমন হল ? এই দোষটি কার ? মন খারাপের ইস্যুতে তাই হরতাল দিবো আজ । বন্ধ সকল কারখানা বন্ধ সরকারি কাজ ।

আমি আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলাম হৈম আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল -কি বলবা বল ? আমার খুব ঘুম আসছে । -হুম । সারা রাত জেগে থাকলে তো এখন ঘুম আসবেই । যাক একটু জানলার কাছে আসো । দেখো বাইরের সকালটা কি চমত্‍কার ? -আমি এখন বিছানা থেকে উঠতে পারবো না ।

-আহা ! উঠো না ! প্লিজ । আমিও জানলা দিয়ে সকাল দেখছি । দেখো প্লিজ । বুঝলাম অনিচ্ছা সত্তেও হৈম বিছানা থেকে উঠছে । আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম ।

একটু পরে মোবাইলে হৈম একটু শব্দ করে উঠল । মানুষ হঠাত্‍ করেই কিছু দেখে বিশ্মিত হলে যেমন শব্দ মুখ থেকে আপনা আপনি বের হয়ে যায় ঠিক তেমন শব্দ । এই মেয়ে কি ভেবেছে ? ভুলে গেছি আমি সব । ভুলে গেছি বলে ভুল বুঝে তুমি দিয়ে ছিলে আড়ি ! কি মনে হয় ? এই দিনটির কথা আমি কি ভুলতে পারি ? হৈমর ঘরটা দুই তলায় । ঘরটার পাসের একটা ছোট সজনে গাছ আছে ।

কিন্তু হৈম ঐটাকে বলে কড়ুই গাছ । যাক সেই কড়ুই গাছের ডাল চলে গেছে একেবারে ওর জানালার কাছে । ঐ ডালেই একটা ঝুড়ি ঝুলছে । তার ভিতর থেকে একটু ছোট্ট ম্যাও বার বার উকি দিচ্ছি । বাইরে বের হতে চাচ্ছে কিন্তু আবার একটু ভয়ও পাচ্ছে ।

আমি এখান থেকেই হৈর মুখটা দেখতে পাচ্ছি । চোখ জুরে আনন্দময় বিশ্ময় । আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু কন্ঠে বলল -থ্যাঙ্কিউ । শুভ জন্মদিন বাবু ! তোমার টিংকুর গার্লফ্রেন্ড দিয়ে গেলাম । উপহার পছন্দ হইছে ? -খুউব ।

-আচ্ছা শুনো । এখন আমি কেটে পড়ি । তোমার আম্মা যে কোন সময় চলে আসবে । -দাড়াও প্লিজ ! আরে না না । দেখে ফেললে উপায় আছে ! শুনো ঠিক তিনটার সময় বাইরে বের হবা ! তোমাকে এক জায়গায় নিযে যাবো ।

ঠিক আছে ? -আচ্ছা । -আর এখন একটা ঘুম দাও । সারা রাত ঘুমাও নি । তোমার ঘুমের দরকার আছে । তোমার কি মনে আছে সেই লাইনটার কথা ! আঙ্গুল আর কিবোর্ডের চাপে লেখা ! পিসি মনিটরে কালো গোটা গোটা অক্ষরে, তোমার কারনে বুকের পা পাশটা কাঁপতে শুরু করেছিল আবার ! জানো কি মেয়ে এখন কাঁপে সেটা ! কখনও মৃদু অথবা প্রবল ভাবে ।

যখন তুমি কাছে আসো, হৃদয়ের খুব কাছে ! এপাশ ওপাশ প্রবল বেগে কেঁপে ওঠে । অথবা যখন দুরে যেতে চাও আমায় ফেলে ! তখন কাঁপে খুব জোরে ! মেয়ে শুনতে কি পাও সেই কাঁপন ? মেয়ে একটু দেখ স্পর্শ করে বুকের বাঁ পাশ টাতে ! এখনও ! হৈম আমার হাতে রেখে হাটছে ! আর চোখ বন্ধ করে কবিতা শুনছে । -এই চুপ করলে কেন ? -কবিতা শেষ ! -শেষ ? না হবে না । আরেক টা শোনাও ! -জীবন বাবুর কবিতা শুনবে ? -না । আমি জীবন বাবুর কবিতা শুনবো না ।

আমি আমার বাবুর কবিতা শুনবো ! বল বল । জলদি বল । -আহা বলছি । দেখো একটু সামনে তাকিয়ে ! হৈম সামনের ইটের রাস্তাটার দিকে তাকালো । কিছু অবশ্য বুঝতে পারলো না ।

বোঝার কথাও না অবশ্য ! -জানো । খুব ছোট বেলা থেকে আমার একটা দারুন স্বন্ন আছে । এই যে ইটে বাঁধানো রাস্তা । দুপাশে গাছের সারি । আমি তোমার পাশে হাটছি প্রিয় মানুষটির হাত ধরে ।

সারা জীবন এমন দিনের জন্য । জানো কতবার কল্পনায় হেটেছি এমন রাস্তায় ! চল সামনে । দেখি সামনে কি আছে । আমি হাটতে থাকি হৈমের হাতটা ধরে । -এই ঐ দিকে কেমন গ্রাম মত দেখা যাচ্ছে ।

-আরে তাই তো ! চল অনেকক্ষন ধরে হাটছি । ঐ দোকানটার একটু বসি । ইট বিছানো গ্রামের রাস্তা দিয়ে আমরা সামনের দোকানটার দিকে হাটতে লাগলাম । ইট বাঁধানো হেড়িং আর গাছের ঘেরা এই পথে, হাটছি দুজন তুমি আর আমি হাত রেখেছি হাতে । -কি খাবা বল ? দোকানটার অবস্থা অবশ্য খুব বেশি ভাল মনে হল না ।

মাটির একটা ঘর । সামনের দিকটা খোলা । ভিতরে অল্প কিছু জিনিস পত্র । দোকানের সামনে একটা বাঁশের মাচা রয়েছে । হৈম ঐ মাচার উপর গিয়ে বসেছে ।

দোকানের আশেপাশে কয়েকটা পোলাপাইন খেলা করছিল । এখন আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে । আমার দিকে তাকিয়ে বলল -এখানে আর কি থাকবে ? দেখো তো প্যাকেট জাতীয় কিছু পাও নাকি ? -আরে এমন বলা ঠিক না । এসব দোকানে মাঝে মাঝে ভাল ভাল জিনিস পাওয়া যায় ? -তাই ? -হুম । দোকানের ভিতর একজন মহিলা বসে ছিল ।

-চাচী ভাল আছেন । কিছু পাওয়া যাবে ? -হ ! কি লাগবো ? আমি হৈমর দিকে তাকিয়ে বললাম -দেখলে তো ? কি খাবা বল ? হৈম কিছুক্ষন ভেবে বলল -তুমি তো জন্মদিনে গিফট সেই সকাল বেলা দিয়েছ । কিন্তু কেক তো খাওয়াও নি । কেক খাব । -গিফটও আমি দেব আবার কেকও আমি খাওয়াবো ।

যাও । তুমিও মনে রাখবে । আমি চাচীর দিকে তাকিয়ে বললাম -চাচী কেক পাওয়া যাবে ? চাচী একটু ফিক করে হেসে দিয়ে বলল -হ যাইবো । বাড্ডে কেখ পাউয়া যাইবো ! এই বলে চাচী একটা কেকের প্যাকেট আমার দিকে বাড়িয়ে দিল । আমি যখন কেকের প্যাকেট নিয়ে হৈমর দিকে ফিরলাম ও খানিকটা অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইল ।

তারপর বলল -আমার সাথে ফাজলামী কর না ? এই জায়গায় তোমার বার্থডে কেক থাকবে ? -আরে থাকতে পারে না । -হুম খুব পারে । আমার তো মনে হচ্ছে কেকের উপর আমার নামও লেখা আছে । হৈময চেহারাটা আনন্দে ঝলমল করছে । ওর আনন্দ মাখা মুখটা দেখে আমার নিজেরই খুব আনন্দ হচ্ছে ।

হঠাত্‍ করেই হৈম আমার দিকে একভাবে তাকিয়ে রইলো । ওর চোখে পানি জমতে শুরু করেছে । -এই খবরদার । চোখে পানি যেন না আছে । চোখে কাজল দিয়েছ ।

চোখ দিয় পানি বেরুলে কিন্তু পেত্নীর মত লাগবে । বাচ্চারা পাবে ! হৈম হেসে ফেলল । -একটা মাইর খাবা ! একসাথে কেক কাটলাম । কোথা থেকে অনেক গুলো ছেলেপিলে এসে হাজির । কেক খাওয়ার পর সেই গাছে ঘেরা রাস্তাটায় আবার ফিরে এলাম ।

দুজন মিলে সুর্য অস্ত যাওয়া দেখলাম পাশাপাশি বসে । সারাটা সময় ও আমার হাত ধরে ছিল । একটু সময়ের জন্যেও আমার হাত ছেড়ে দেয় নি । হাতটা ধরে আছি, তুমিও হাতটা ধরে রেখো । শত ঝঞ্ঝাট ঝড় আসুক তবু একটু হাসি একো ।

সবাই যদি ছেড়ে চলে যায় আমি পাশে থেকো । আমি ছিলাম, আছি, থাকবো যেন কভু যাবো ছেড়ে যাবো নাকো ! ওকে বাসায় পৌছে দিতে দিতে রাত হয়ে গেল । বাসায় যখন পৌছালাম একটা মেসেজ এসে হাজির । সেখানে কেবল একটা লাইন লেখা "এমন একটা দিনের জন্য আমার কত অপেক্ষা ছিল । আই লাভ ইড ।

"

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।