আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘আজ চলে যাচ্ছি কিন্তু যাচ্ছি না’

মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি' চন্দ্র সূর্য্য গ্রহ তারা ছাড়ি' ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া, উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ব-বিধাত্রীর!

উপস্থাপক মুনজুরুল করিমের মুখ থেকে কথাটা শুনে আশ্বাস পায় দর্শক। আর বারে বারে ফিরে আসে তালাশ টিম। এভাবেই দুই বছর। ১ নভেম্বর ৫০তম পর্বে পা রাখতে যাচ্ছে জনপ্রিয় এই অনুষ্ঠানটি। ৯ ডিসেম্বর ২০১১।

এই দিনেই ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনে শুরু হয় অনুসন্ধানমূলক অনুষ্ঠান ‘তালাশ’। অল্প সময়েই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় অনুষ্ঠানটি। ‘তালাশ’ মানে সাধারণভাবে খুজেঁ দেখার চেয়ে আরো বেশি কিছু, আরো গভীর কিছু। প্রতি মুহূর্তে তালাশ টিম নিজেরাই নিজেদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। একটি মানসম্মত অনুষ্ঠান দর্শকদের সামনে উপস্থাপনের জন্য নিজেদেরই ছাড়িয়ে যাওয়ার সে চেষ্টা এখনো অব্যাহত।

কিন্তু এতটা মসৃণ নয় এ পথ। নানা রকম সামাজিক অসঙ্গতি আর অপরাধের ঘটনাগুলো যেহেতু এই অনুষ্ঠানের মূল বিষয়, সেহেতু প্রতিকূলতাও পদে পদেই। তালাশের প্রথম পর্বের বিষয় ছিল ‘মুক্তিযোদ্ধা’। সেই অনুষ্ঠানেই ইতিহাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বাস্তবতার সংবেদনশীল পথে হাঁটতে হয়। সেই অনুসন্ধানেই নিজেদের আলাদা ধরন দর্শকদের সামনে উঠে আসে।

ব্যাপক আগ্রহী হয়ে ওঠে দর্শকরা। গতি বাড়ায় তালাশ টিম। এ অনুসন্ধানে সবার আগে থাকেন অপূর্ব আলাউদ্দিন, সাথে কমল, পারভেজ, সবুজ আর সনি। নকল দুধ তৈরির প্রক্রিয়া অনুসন্ধানের জন্য কখনো সিরাজগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চল, আবার অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধানে কক্সবাজারের মহেশখালীর পাহাড়ের ভাজেঁ ভাঁজে। সেসব অভিযান থেকে ফেরার পরই তালাশ টিম বুঝতে পেরেছে কতটা ঝুকিঁপূর্ণ পথে হেঁটেছে তারা।

কবরস্থান থেকে লাশ চুরি যাওয়ার ভিন্ন ধরনের ঘটনা এই তালাশেই দেখেছে মানুষ। আবার পেশাদার খুনিদের লোমহর্ষক কথাবার্তা শুনে ‘থ’ হয়ে বসে থেকেছে। তবে তালাশ টিমের চলা থামেনি। দর্শকরা সবসময়ই তালাশের সঙ্গে থেকেছে, প্রশংসা করেছে, সমালোচনা করেছে আবার পরামর্শ আর তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছে। যাদের মুখোশ উন্মোচন করেছে তালাশ তারাও আছে সঙ্গে।

কারণ, ইয়াবা নিয়ে করার পর পরই সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার মানহানির মামলা হয়েছে এর সদস্যদের বিরুদ্ধে। ‘তালাশ’ এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল অনুসন্ধানমূলক অনুষ্ঠান। ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে ম্যানেজিং এডিটর শামসুর রহমান ও হেড অব নিউজ খালেদ মুহীউদ্দিনের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান ‘তালাশ’কে প্রতি মুহূর্তে অনুপ্রাণিত করে। দর্শকরা আধা ঘণ্টার একটি অনুষ্ঠান দেখে টিভির পর্দায়। কিন্তু এর পেছনে বেশ কয়েক দিন বা কিছু ক্ষেত্রে বেশ কয়েক মাসের অক্লান্ত পরিশ্রম থাকে অনুসন্ধানকারী সদস্যদের।

ছুটি কাটানো বা সামাজিকতা করার সময়টাও খুবই বিরল হয়ে গেছে। কিন্তু দর্শকদের সাড়া পেয়ে আবার সব ক্লান্তি আর অপ্রাপ্তি দূর হয়ে যায় সবার। আসলে টেলিভিশনে দুই মিনিটের একটা নিউজে সবকিছু শেষ হয়ে যায় না। এর পেছনে থাকে আরো অনেক অজানা ঘটনা। ব্যক্তির আকাঙ্ক্ষা সেসবের দিকে।

মানুষ আরো জানতে চায়। এটা থেকেই আসলে অনুসন্ধানের বিষয়টা আসে। নতুন বার্তা ডটকমকে কথাগুলো বলছিলেন উপস্থাপক মুনজুরুল করিম। একটা বিষয়ের এ টু জেড তালাশে থাকে। আর একটা পর্বে একটা বিষয়ের অনুসন্ধানই তুলে ধরা হয়।

এ প্রসঙ্গই নিয়ে আসেন মুনজুরুল। তিনি বলেন, “একটা বিষয় সাধারণভাবে এক দৃষ্টিতে দেখার পর ভাবনা আসে- এর ভেতরে আরো কিছু থাকতে পারে কি না। এই আকাঙ্ক্ষাই কোনো সাংবাদিককে অনুসন্ধানে আগ্রহী করে তোলে। আমার ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। ” গত দুই বছরে জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠেছে তালাশ।

সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে এটি সমান জনপ্রিয়। মুনজুরুল বললেন, “আমাদের জনপ্রিয় হওয়ার আকাঙ্ক্ষা নেই। নিজেদের মান উন্নয়নের চেষ্টা করে গেছি। আর এ কারণেই দর্শকদের হয়তো সেটা ভালো লাগছে। আসলে মানের দিকে খেয়াল রাখা হয়েছে সবসময়।

” সমাজ পরিবর্তনে নয়, আসল বিষয়টি তুলে ধরতে চায় তালাশ। মুনজুরুল বলেন, “আমরা প্রতিকার করতে আসিনি। এটা তো আমাদের কাজ নয়। এটা প্রশাসনের কাজ। আর আমরা জনগণের সচেতনতা বাড়াতে কাজ করি।

” খালেদ মুহিউদ্দীন জানান, ৫০তম পর্বের পর চার মাসের বিরতিতে যাচ্ছে তালাশ। শুধু ভালো মানের অনুসন্ধানমূলক অনুষ্ঠান তৈরিই নয়, মানটাও ধরে রাখার বিষয়- এমনটা বিবেচনা করেই এ সিদ্ধান্ত। তবে বিরতির সময়টাতে নতুন নতুন বিষয় নিয়ে অনুসন্ধান করবে ‘তালাশ টিম’। এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মুনজুরুল জানান, টিমের লোকজন দুই বছর টানা কাজ করে গেছে, কোনো বিশ্রাম ছিল না। একটা মানুষের ক্রিয়েটিভিটির জন্য হলেও বিশ্রাম দরকার।

আর এ সময়টিতে প্রচুর ইনভেসটিগেশন হবে, তালাশে নতুনত্ব আনার জন্যও কাজ করা হবে। ইন্টারন্যাশনালি যেকোনো ইনটেনসিভ প্রোগ্রামের নিয়মই এরকম। অনুষ্ঠানের মান বজায় রাখা জন্য তারাও বিরতিতে যায়। “আমরা চাই না তালাশের মান কমে যাক, মান বাড়ানোর ক্ষেত্রে দিনে দিনে এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে”- এমনটাই বললেন মুনজুরুল করিম। অনুসন্ধানের মানে নতুনত্ব আনার চেষ্টা সবসময়ই অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।

তালাশের হাফ সেঞ্চুরি

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।