আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুই দলে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ছে

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের ডাকা টানা ৬০ ঘণ্টা হরতালের দ্বিতীয় দিন গতকাল প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে।

প্রায় সব জেলায়ই ঘটেছে সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও গুলির ঘটনা। জেলা সদর থেকে শুরু করে সহিংসতা পৌঁছে গেছে উপজেলা, ইউনিয়ন, এমনকি গ্রাম পর্যন্ত। এসব সহিংসতায় নিহত হয়েছেন পাঁচজন। ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতে প্রকাশ্যে বোমা হামলা ও উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে হত্যার শিকার হয়েছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি।

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে নিহত হয়েছেন যুবদলের উপজেলা যুগ্ম-সম্পাদক। জামালপুরের ইসলামপুরে নিহত হয়েছেন আওয়ামী লীগের এক কর্মী। চাঁদপুর শহরে আওয়ামী লীগ, যুবলীগের ছুরিকাঘাত ও পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন ছাত্রদল কর্মী। চট্টগ্রাম মহানগরে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানের মিছিলে গুলি ও সাতকানিয়ায় হরতাল সমর্থকদের ছোড়া পাথরে নিহত হয়েছেন এক ট্রাকচালক। এ ছাড়া সারা দেশে পুলিশের গুলি, সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় আহত হয়েছেন পাঁচশ'র বেশি।

গ্রেফতার হয়েছেন দুই শতাধিক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কয়েকটি স্থানে ১৪৪ ধারা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। নিজস্ব প্রতিবেদক ও জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

ঝিনাইদহ : হরিণাকুণ্ডু উপজেলা বিএনপি সভাপতি আবুল হোসেনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও বোমা মেরে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। উপজেলার দখলপুর বাজারে গতকাল দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ৫৬ বছর বয়সী আবুল হোসেন উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নে একাধিকবার নির্বাচিত জনপ্রিয় চেয়ারম্যান ছিলেন।

তিনি মহারাজপুর গ্রামের মৃত গফুর বিশ্বাসের ছেলে। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ বিএনপি নেতা-কর্মীরা বেলা ১টার দিকে হরিণাকুণ্ডু আওয়ামী লীগ অফিসে ভাঙচুর চালিয়ে তা আগুনে পুড়িয়ে দেন। এ সময় তারা উপজেলা পরিষদ মোড়ের ১০-১২টি দোকান ভাঙচুর চালিয়ে তাতে অগি্নসংযোগ করেন। সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় বেলা ২টার দিকে বিজিবি মোতায়েন করা হয়। হত্যার প্রতিবাদে ঝিনাইদহের ছয়টি উপজেলায় বুধবার সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে জেলা বিএনপি।

হরিণাকুণ্ডু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিবুল ইসলাম জানান, দুপুর ১২টার দিকে আবুল হোসেন ইউনিয়ন পরিষদ থেকে স্থানীয় দখলপুর বাজারে আসছিলেন। বাজারে পৌঁছামাত্র ওত পেতে থাকা একদল সন্ত্রাসী তার ওপর বোমা নিক্ষেপ করে। পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে শত শত লোকের সামনে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে বীরদর্পে স্থান ত্যাগ করে সন্ত্রাসীরা। প্রতিবাদে উপজেলা ও জেলা বিএনপি লাশ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে। এ সময় পুলিশ বাধা দেয়।

বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপি সভাপতি মসিউর রহমান হরিণাকুণ্ডু আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও কাপাসাটিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মশিয়ার জোয়ার্দ্দারের নেতৃত্বে দলীয় সন্ত্রাসীরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে দাবি করেছেন। অনির্দিষ্টকালের জন্য হরিণাকুণ্ডুতে ১৪৪ ধারা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। এদিকে দুপুর ১২টার দিকে ঝিনাইদহ শহরের প্রাণকেন্দ্র পোস্ট অফিস মোড় থেকে যুবলীগ-ছাত্রলীগ রামদা মিছিল বের করে। তারা হাটের রাস্তা, পায়রা চত্বর, আদর্শপাড়াসহ কয়েকটি এলাকায় পুলিশের উপস্থিতিতে মহড়া দেয়। এ সময় বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়ি লক্ষ্য করে ১০টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় তারা।

এ ছাড়া শহরের আদর্শপাড়ায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষে ছয়জন আহত হন। সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য-গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কনককান্তি দাসের বাসায় দুটিসহ আটটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা। এসব ঘটনায় জড়িত অভিযোগে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান পপ্পু, সদর পৌর প্যানেল মেয়র ও বিএনপি নেতা তোফাজ্জেল হোসেন এবং ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেরেকুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

টাঙ্গাইল : মির্জাপুর উপজেলায় হরতাল সমর্থকদের হামলায় নিহত হয়েছেন যুবদলের এক নেতা। ২৮ বছর বয়সী নিহত আবদুল আলীম উপজেলা যুবদলের যুগ্ম-সম্পাদক।

এ ছাড়া গোপালপুরে হরতাল সমর্থক ও পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রদলের চার কর্মী গুলিবিদ্ধ ও তিন পুলিশসহ ১০ জন আহত হয়েছে। মির্জাপুর থানার ওসি গোলাম মোস্তফা জানান, হরতালের সমর্থনে সকালে পিকেটিং করার সময় বিএনপির আজাদ গ্রুপের এক কর্মীকে মারধর করে ফিরোজ হায়দার খান গ্রুপের কর্মীরা। এ ঘটনার জের ধরে বেলা ১টার দিকে সোহাগপাড়া নামক স্থানে সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী গ্রুপের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে ফিরোজ গ্রুপের আবদুল আলীমকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। এদিকে গোপালপুর উপজেলায় হরতাল সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন চারজন।

এ সময় আহত হন অন্তত ১০ জন। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ শামছুল আলম তোফা জানান, হরতালের সমর্থনে একটি মিছিল গোপালপুর পৌর এলাকা পালপাড়ায় পৌঁছলে পুলিশ এতে বাধা দেয়। এতে শুরু হয় সংঘর্ষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ফাঁকা গুলি ও টিয়ার শেল ছোড়ে। এ সময় সাইফুল, মিলন, গোলাপ ও মোস্তফা নামের ছাত্রদলের চার নেতা-কর্মী গুলিবিদ্ধ হন।

হরতাল সমর্থকদের ঢিলের আঘাতে ইব্রাহীম নামে এসআইসহ তিন পুলিশ কনস্টেবল আহত হয়েছেন। এ সময় হরতালকারীরা পুলিশের একটি জিপ ভাঙচুর করেন।

জামালপুর : ইসলামপুর উপজেলায় আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে নিহত হয়েছেন শাহাজাদা (৩০) নামের এক যুবলীগ কর্মী। আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন।

আহতদের ইসলামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের রামভদ্রা বাজারে সকালে হরতাল চলাকালে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের শুরু হয়। এ সময় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান যুবলীগ কর্মী শাহাজাদা। জেলা পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম বলেছেন, হরতাল নয়, পুরনো গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের জের ধরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে শাহাজাদার মৃত্যু হয়েছে। এদিকে মাদারগঞ্জ উপজেলায় হরতালের দ্বিতীয় দিনের শুরুতে পিকেটিং করার সময় উপজেলা জামায়াতের আমির আমিনুল ইসলামসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

ভোররাতে মিলন বাজার আওয়ামী লীগ অফিসের দরজা ভেঙে আসবাবপত্র পুড়িয়ে দিয়েছেন বিএনপি ও জামায়াত কর্মীরা। এ ঘটনার জের ধরে সকালে উপজেলা ও পৌর বিএনপি অফিস ভাঙচুর করেন আওয়ামী লীগ কর্মীরা। অন্যদিকে সরিষবাড়ীর বাউসী ব্রিজ এলাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ১২ রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়ে। এ সময় ছাত্রদলের এক কর্মী আহত হন।

চাঁদপুর : শহরের পুরানবাজার নতুন রাস্তায় হরতাল সমর্থকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় পুলিশের রাবার বুলেটে আহত হয়ে মারা গেছেন আরজু ঢালী ওরফে পল্টু মিয়া (১৬) নামে এক ছাত্রদল কর্মী। নিহত আরজু পুরানবাজার রিফিউজি কলোনির মুকবুল ঢালীর ছেলে। সংঘর্ষে এক মহিলা, দুই পুলিশসহ উভয় দলের কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ যুবদল কর্মী হাকিম আলীকে (২২) ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাঁদপুর শহরে ১৪৪ ধারা জারি করেছে জেলা প্রশাসন।

মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বহাল থাকবে এ আদেশ। নিহত পল্টু পুরান বাজারের মোম ফ্যাক্টরি এলাকার মুকবুল হোসেনের ছেলে। পুলিশ জানায়, সকালে লোহারপুল এলাকায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় পল্টু ছুরিকাহত হন। তাকে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

তবে ওই হাসপাতালের চিকিৎসক সিরাজুল ইসলাম জানান, পল্টুর গায়ে দুটি গুলির চিহ্ন ছিল। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, হরতাল সমর্থকদের সঙ্গে সকাল ১০টার দিকে অস্ত্রধারী যুবলীগ কর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। পুলিশ এসে ফাঁকা গুলি ছুড়লে উভয় পক্ষ ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে উভয় দলের কর্মীরা আবার সংগঠিত হয়ে পুরানবাজার রিফিউজি কলোনি এলাকায় নতুন রাস্তার দুই মাথায় অবস্থান নেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ।

পরিস্থিতির অবনতিতে বেলা ১টা থেকে পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ সিদ্দিক। পুলিশ সুপার কার্যালয়ের ডিআইওয়ান মিজানুর রহমান জানান, পুরানবাজারের সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৬ রাউন্ড গুলি, তিন রাউন্ড রাবার বুলেট ও তিন রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এদিকে আরজু ওরফে পল্টু হত্যার প্রতিবাদে বুধবার হরতালের ডাক দিয়েছে জেলা ছাত্রদল।

বিভিন্ন স্থান থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

রংপুর : হরতালে ১৫টি গাড়ি ভাঙচুর এবং ১০টি অটোরিকশায় আগুন ধরিয়ে দেন হরতাল সমর্থকরা। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন এলকায় ৫০টি ককটেল বিস্ফোরিত হয়।

ছাত্রদল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ করে দিলে ব্যবস্থাপনা, মার্কেটিং ও ইংরেজি বিষয়ের পরীক্ষা হয়নি। মিঠাপুকুরে গাছ কেটে রংপুর-বগুড়া মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা নগরীতে হরতালবিরোধী মিছিল ও শান্তি সমাবেশ করেছেন। সিলেট : জামায়াত মীরবঙ্টুলায় সমাবেশ করে। পরে মিরবঙ্টুলা থেকে ১৮-দলীয় জোটের মিছিল কোর্ট পয়েন্টে এসে সমাবেশ করতে চাইলে পুলিশ বাধা দিলে শহীদ মিনারের সামনে সমাবেশ করে।

শহীদ মিনার থেকে মেয়র আরিফের নেতৃত্বে বিএনপির মিছিল হয়। আওয়ামী লীগ হরতালবিরোধী মিছিল-সমাবেশ করে। বরিশাল : সকালে মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার এমপির নেতৃত্বে মিছিলে পুলিশ বাধা দেয়। বগুড়া রোডে বাংলাদেশ ব্যাংক মোড় থেকে সিটি মেয়র আহসান হাবিব কামালের নেতৃত্বে মিছিল করে জেলা (দক্ষিণ) বিএনপি। সকালে সদর রোডে হরতালবিরোধী মিছিল বের করে আওয়ামী লীগ।

রাজশাহী : মহানগরীর দড়িখড়বনা এলাকায় অটোরিকশা ভাঙচুরের চেষ্টা করেন হরতাল সমর্থকরা। এতে পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সময় মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলনসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হন। এর আগে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব, মহানগর সভাপতি মিজানুর রহমান মিনুর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। এদিকে, হরতালবিরোধী মিছিল করে মহানগর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ।

খুলনা : পুলিশের সঙ্গে ছাত্রশিবিরের সংঘর্ষে এসআইসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। হরতালকারীরা সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে শ্রমিক লীগের কার্যালয় ভাঙচুর করেন। মহানগর বিএনপি সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু এমপির নেতৃত্বে মিছিল বের হয়। জামায়াত পিকেটিংসহ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, ১৪ দলের সমন্বয়ক মিজানুর রহমান মিজানের সভাপতিত্বে দলীয় কার্যালয়ে হরতালের প্রতিবাদে সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ হয়।

বাগেরহাট : মোরেলগঞ্জে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের অফিস এবং বিএনপি নেতা ও স্থানীয় আন্দোলন-সংগ্রাম কমিটির সদস্যসচিব কাজী খায়রুজ্জামান শিপনের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি মিছিল বের করলে আওয়ামী লীগের হামলায় ২০ নেতা-কর্মী আহত হন। কাজী শিপন জানান, পুলিশের ছত্রছায়ায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা মিছিলে হামলা, দলের অফিস ও তার বাড়িতে ভাঙচুর চালায়। হামলায় কেয়ারটেকার বাবলা ও তরিকুল আহত হন। তার ব্যবহৃত স্পিডবোটটিও ভাঙচুর করা হয়।

ফকিরহাটের বিশ্বরোড মোড়, রামপালের ফয়লা ও চেয়ারম্যানের মোড়, সদরের দশানীসহ খুলনা-বাগেরহাট ও খুলনা-মংলা মহাসড়কের ১৫-১৬টি স্থানে হরতালকারীরা টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। বগুড়া : শহরের মোড়ে মোড়ে পিকেটিং করেছেন হরতাল সমর্থকরা। এ সময় একটি অ্যাম্বুলেন্স, রিকশা, মোটরসাইকেল ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ ও সড়কে টায়ারে অগি্নসংযোগ করে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। দুপুর ১২টায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে যুবলীগ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। সাতমাথায় জেলা ১৮ দলের আহ্বায়ক ভিপি সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশ হয়।

এদিকে, নন্দীগ্রামে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষের জেরে প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে। জয়পুরহাট : শহরের জিরো পয়েন্টে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষে উভয় পক্ষের গুলিবিনিময় ও অস্ত্রের আঘাতে বিএনপির এমপি ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফাসহ ২০ জন আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ দুজনকে আটক করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৪৪ ধারা জারি ও শহরে অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব, বিজিবি মোতায়েন করা হয়। কুমিল্লা : মহানগরীর কান্দিরপাড়ের রামঘাটলায় পুলিশ ও হরতালকারীদের মধ্যে সংঘর্ষে চার পুলিশসহ ১০ জন আহত হয়েছেন।

পুলিশ হরতালকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ১১০ রাউন্ড রাবার বুলেট, ৩৫ রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। হরতালকারীরা পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানে ককটেল ছোড়ে। পুলিশ এ ঘটনায় ১০ জনকে আটক করেছে। বিএনপি নেতা-কর্মীদের ৮-১০টি দোকান ভাঙচুর করেন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। এখানে পাঁচজন আহত হন।

পুলিশ ১২ জনকে আটক করেছে। নাটোর : শহরের কানাইখালী কালভার্ট এলাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সংঘর্ষে আরটিভির প্রতিনিধি গুলিবিদ্ধ ও জিটিভির ক্যামেরাম্যান, ছাত্রদল নেতা শাহীদুজ্জামান খোকনসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় একটি ব্যাংক, বাড়ি ও কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করা হয়। রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) : ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতা-গোলাকান্দাইলে পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ত্রিমুখী সংঘর্ষে ১১ জন গুলিবিদ্ধ ও ৭ পুলিশসহ ৩৫ জন আহত হয়েছেন। দুপুরে এশিয়ান হাইওয়ে সড়কের কাঞ্চন মায়ারবাড়ি এলাকায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী মনিরুজ্জামান মনির সমর্থিত নেতা-কর্মীরা রাস্তা অবরোধ করেন।

পরে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বেলা দেড়টায় দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বরাব এলাকায় বিএনপির সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় ভাঙচুর করেন। যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বরাব বাজারে বিএনপি কর্মী মজিবরের ইলেকট্রনিক্স দোকানে হামলা করেন। কাজী মনিরুজ্জামান মনির বলেন, বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর যতই হামলা, মামলা হোক না কেন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রূপগঞ্জ বিএনপি মাঠে থাকবে।

লালমনিরহাট : সংঘর্ষ, ভাঙচুর. হামলা, পিকেটিংয়ের মধ্যে হরতাল পালিত হয়েছে। বিকালে জেলা বিএনপির সভাপতি, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলুকে গ্রেফতার করা হবে গুজবে সদর উপজেলার বড়বাড়ি এলাকায় প্রায় লক্ষাধিক বিএনপি কর্মী-সমর্থক রাস্তা অবরোধ করেন। পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাই ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফেনী : পুলিশের সঙ্গে ছাত্রশিবিরের সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৩০ রাউন্ড টিয়ার শেল ও শটগানের গুলি ছোড়ে।

কিশোরগঞ্জ : বাজিতপুর বাঁশমহালে সাবেক এমপি মজিবুর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বে পিকেটারদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে পুলিশসহ উভয় দলের শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন। কুলিয়ারচরে পিকেটাররা ইটপাটকেল ছুড়লে কনস্টেবল শামীম আহত হন। সংঘর্ষে অন্তত ছয়জন পিকেটার আহত হয়েছেন। নেত্রকোনা : বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে সাংবাদিক, পুলিশসহ ২১ জন আহত হয়েছেন।

সদরসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে আটক করা হয়েছে প্রায় ২০ জন। হামলায় কমপক্ষে অর্ধশত বাসাবাড়ি, দোকানপাট, চেম্বার ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। যশোর : শহরের চাঁচড়া মোড়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ বিএনপি ও জামায়াতের দুই কর্মীকে আটক করেছে। পাবনা : রাস্তা অবরোধ, আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আগুন ও পিকেটারদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে।

বেড়া উপজেলার কৈটলা বাজারে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে পুলিশসহ ১৫ জন আহত হয়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া : সশস্ত্র মিছিল করেছে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। ছাত্রদলের কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিল করেছেন। সাতক্ষীরা : কলারোয়ায় জামায়াত-বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনায় উপজেলা সদরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। এদিকে হরতাল সমর্থকরা দেবহাটা উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফার বাড়ি ও গাড়ি ভাঙচুর করেন।

বিভিন্ন স্থানে মিছিল-সমাবেশ করেছে ১৮ দল। দিনাজপুর : পিকেটারদের হামলায় কোতোয়ালি থানার এসআই মুখলেসুর রহমান আহত হয়েছেন। পিকেটাররা বড়তলী মোড়ে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর করেছেন। কুষ্টিয়া : কুমারখালীতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে এক সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় স্থানীয় বিএনপি কার্যালয়সহ আটটি গাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ কর্মীরা।

নরসিংদী : সকালে জেলা বিএনপি সভাপতি খায়রুল কবীর খোকনের নেতৃত্বে ভেলানগরে মিছিল ও বিক্ষোভ করার সময় পুলিশ তা ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা চালালে সংঘর্ষ বাধে। রাঙামাটি : কাপ্তাইয়ে রাইখালী কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে ভাঙচুর করেছেন হরতালবিরোধীরা। এ সময় হামলার শিকার হন ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হারুনুর রশিদ। নীলফামারী : অটোরিকশায় পেট্রল ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন হরতালকারীরা। এতে দুই নারী যাত্রী গুরুতর আহত হন।

নড়াইল : কালিয়ায় হরতালবিরোধী মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। সাভার : রাজফুলবাড়িয়ায় পুলিশের সঙ্গে হরতাল সমর্থকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও গুলিবিনিময় হয়েছে। এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ হয়েছে।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।