আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দশ মুক্তিযোদ্ধার অন্তর্বর্তী সরকার

গত পর্বে সুপ্রিয় আশরাফ গিরানীর গ্রামের বাড়ি সফরের মনোরম সময়ের কথা বলতে গিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফরের মেয়ে রাখী আঁখির কথা যেমন বাদ পড়েছিল, ঠিক তেমনি গিরানীর বড় ভাই জনাব একেএম শাহ মামুদ, তার স্ত্রী হাসিনা এবং ছোট ভাই জিন্নাহ ও মামুদের ছেলে সজীবের জায়গায় সবুজ লিখে একটি মারাত্দক ভুল করেছিলাম। গ্রাম্যজীবনে সফলতার কারণে আমার লেখা পড়ে সজীবকে নাকি অনেকেই ধন্যবাদ ও উৎসাহ দিয়েছে। তাই আজ প্রথমেই অসাবধানতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা ও ভুল সংশোধন করে শুরু করছি।

যত দিন যাচ্ছে কলাকৌশলের সময় তত কমে আসছে। মায়ের পেটে বাচ্চা এলে ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় যেমন কারীগীর্দি খাটে না, বর্তমান রাজনীতি তেমন একটা অবস্থায় চলে এসেছে।

মায়ের পেটের বাচ্চা ঠিক সময় প্রসব না হলে বাচ্চাসহ মা মারা যায়। আর সময়মতো বাচ্চা প্রসব হলে সন্তান ও মা নিরাপদ থাকে। প্রসবের আগে জটিলতা দেখা দিলে কোনো কোনো সময় আসে মা'কে বাঁচাতে বাচ্চা ত্যাগ করতে হয় অথবা বাচ্চার কারণে মায়ের আশা ছাড়তে হয়। বর্তমান অবস্থাও তাই। সব কিছু ঠিকঠাক চলার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ।

এরকম অবস্থায় বহু কাঙ্ক্ষিত দুই নেত্রীর টেলিফোন সংলাপ মানুষের মধ্যে তেমন সাড়া জাগাতে পারেনি। কথা বলার আগে দীর্ঘ নাটক খুব হৃদয়গ্রাহী হয়নি। একটা রাষ্ট্রে তার প্রধান নাগরিকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ৫-৬ ঘণ্টা চেষ্টা করতে হয়, ডিজিটাল নেত্রীর জমানায় এটা ভাবতেও বিস্ময় লাগে। আগে বলা হতো ক্যামেরার চোখ ফাঁকি দেওয়া যায় না। কত মানুষের কত কালো চুলের ফাঁকে সাদা চুল লুকিয়ে থাকে, চোখে পড়ত না।

কিন্তু ক্যামেরায় ঠিকই ধরা পড়ত। সেই সাদা কালো ছবির যে গুণমান ছিল আজকাল কালার ছবি তো আরও স্পষ্ট। সেখানে কিছুই ফাঁকি দেওয়া যায় না। বিরোধী দলের নেত্রীর বাড়ির লাল ফোন কবে থেকে নীরব সেটা কম্পিউটারে রেকর্ড রয়েছে। কেউ অসত্য বলে জোরাজুরি করতে পারবেন না, সত্য বলে প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন না।

বহু প্রতীক্ষিত আলোচনা হয়েছে, দেশের মানুষ আর কোনো আলোচনার জন্য এত বেশি আগ্রহ দেখায়নি, যতটা সেদিন দেখিয়েছিল। কিন্তু দেশবাসী যে কারণে অপেক্ষা করছিল তার কোনো কিছুই হয়নি। ৩৭ মিনিট কথা হয়েছে। এখন বাকি খাওয়া-দাওয়া। সেটাও হয়তো হবে।

কিন্তু কোনো সমাধান হবে না। দেশবাসীকে আতঙ্কিত করাও যে একটা অপরাধ, শঙ্কিত রাখা গুরুতর অন্যায়_ এটা এখন সরকার কোনো ধর্তব্যের মধ্যে নিতে চাচ্ছে না। প্রায় সবাই মনে করে দুই দল এবং নেত্রী বসে আলাপ-আলোচনা করে একজন আরেকজনের দাবি মেনে নিয়ে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন। সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন হবে, দেশ শান্তিতে-সমৃদ্ধিতে ভরে উঠবে। এখানে যদি কোনো কায়েমি স্বার্থ না থাকত তাহলে সমাধান হওয়াটা যত সহজ ছিল, কায়েমি স্বার্থের কারণে সমাধান অত সহজ নয়।

বহু পুরনো প্রবাদ, এক বনে দুই বাঘ থাকে না। নারী-পুরুষ না হলে দুই বাঘ পাশাপাশি থাকে না। কোনো বনে পুরুষ পুরুষ, নারী নারী দুই বাঘ একত্রে রয়েছে এমন দেখা যায় না। গর্ভবতী হওয়ার আগে বাঘ-বাঘিনী মিলিত হয়, তারপর তারা দূরে থাকে। বাঘের বাচ্চা বাঘ লালন-পালন করে না, বাঘিনী করে।

অনেক সময় দেখা যায় বাঘিনীর বাচ্চা বাঘেরা খেয়ে ফেলে। সে জন্য প্রসবের পর বাচ্চাদের কাছে বাঘকে ঘেঁষতে দেয় না। সুন্দরবনে অনেক বাঘ বাস করে। তাই বলে কেউ গায়ে গায়ে ঘেঁষে বাস করে না, দূরে দূরে বাস করে। আমাদেরও দুই নেত্রীর খুব একটা কাছাকাছি অবস্থান নয়, অবস্থানটা বেশ দূরে।

এটাকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কাছাকাছি করলে এক নেত্রী টিকবেন, আরেকজন ভেসে যাবেন। কয়দিন আগে ব্যাপারটা অনেকটাই খোলাসা করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ। জনাব হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে পোলাও-কোরমা খাইয়ে ঘোষণা দিয়েছেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে জনাব এরশাদ মহাজোটে থেকে নির্বাচন করবেন, আর না নিলে তাকে বিরোধী দল বানিয়ে একটা পাতানো নির্বাচন হবে। শখের আর সীমা নেই। কতখানি বেহুঁশ হলে এরকম একটি কথা কেউ জনসম্মুখে তুলে ধরতে পারে? হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সময় স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলক জননেতা আ স ম আবদুর রব ৭০-৭২ দল নিয়ে বিরোধী দলের নেতা হয়েছিলেন।

যে কারণে জননেত্রী হাসিনা এবং তার দল তাকে গৃহপালিত বিরোধী দলের নেতা বলে নিন্দা করতেন। আল্লাহর কি কুদরত সেই গৃহপালিত বিরোধী দলের নেতাকে বেগম খালেদা জিয়ার পতন ঘটিয়ে আওয়ামী লীগের ঐকমত্যের সরকারের মন্ত্রী করেছিলেন। জনাব আ স ম আবদুর রবের রাজনীতির পর্বতসমান উচ্চতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিরোধী দলের নেতা হওয়ায় অনেক ধসে গিয়েছিল। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐকমত্যের সরকারে যোগ দিয়ে ভাবমূর্তি পুরোপুরি উদ্ধার করতে না পারলেও তেমন বেশি ক্ষতি হয়নি। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও প্রায় তেমনি, স্বৈরাচার বলে যাকে টেনেহিঁচড়ে ক্ষমতাচ্যুত করেছিলেন তাকে আওয়ামী লীগ মহাজোটে নিয়ে হালাল করেছেন।

এবার হয়তো শেষ পর্যন্ত ১৮ দলীয় জোটের সঙ্গে মিলেঝিলে দেখিয়ে দেবেন আসল হিরো তিনিই। তাকে নিয়ে যারা খেলার চেষ্টা করেছেন তারাই আসলে খেলার পুতুল, তিনি নন।

কোথাও যদি কোনো খেলা থাকে, প্রতিপক্ষ দল না এলে খেলার কমিটি নিজেদের দল নামিয়ে দর্শকদের সেদিনের জন্য সান্ত্বনা দেন। এরশাদকে যখন কমিটির দল হিসেবে খেলানো যাবে না, হয় সেদিন খেলা হবে না, মাঠ ফাঁকা থাকবে অথবা প্রকৃত প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধীরা সম্মিলিতভাবে মাঠে নামলে সরকারি দল গোলের হিসাব মিলাতে পারবে না। আসলে আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা সাদা চোখে অনেক কিছুই সঠিকভাবে দেখতে পাই না।

তা না হলে এতদিনেও কি বুঝতে বাকি থাকার কথা_ আওয়ামী লীগ, বিএনপি একই দল, মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। তারা দুই দল কাছাকাছি হলে এক দলে পরিণত হবে। এক দলের নেতা তো তখন আর দুজন থাকতে পারেন না, নেতাও হবেন একজন। তখন কে নেতৃত্ব হারাবেন_ সেটাই হবে বড় প্রশ্ন। তবে এখন সাদা চোখে যা দেখা যায় আওয়ামী লীগ নেত্রীর নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব বড় বেশি হুমকির মুখে।

সেদিন বিরোধী দলনেত্রীর সঙ্গে ৩৭ মিনিট কথা বলে তারা কি পেয়েছেন? দেশ কি পেয়েছে? মহাজোট এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চেয়েছে। তারা ১৮ দলকে এক দল বিবেচনা করে সব সমাধান বেগম খালেদা জিয়ার কাছ থেকে চেয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়া তারই মতো বহু বছর একটা দলের প্রধান, দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। সাধারণ মারপ্যাঁচ তো তারও জানা থাকার কথা। তিনি টেলিফোনে বলেছেন, হরতাল প্রত্যাহার করতে।

জননেত্রীর কথায় দেশনেত্রী সঙ্গে সঙ্গে হরতাল প্রত্যাহার করলে গঙ্গা দিয়ে ভেসে বঙ্গোপসাগরে যেতেন। তার দলের নেতা-কর্মীরা আর রাজনীতি করতেন না। দেশের মানুষও মেরুদণ্ডহীন ভাবতেন। আসলে এখন আর বিএনপি এক দল নয়, তারা অনেক দলের সমাহার। পশ্চিমবঙ্গে একটানা ৩৪ বছর বামপন্থিরা ক্ষমতায় ছিলেন।

বিএনপির মতো পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমই ছিল একক দল, শক্তিশালী দল। কিন্তু তারপরও ৩০-৩৫ দলের বাম জোট টিকিয়ে রাখতে শ্রী জ্যোতি বসুকে ভীষণ সহনশীলতার পরিচয় দিতে হয়েছে। আমাদের বিক্রমপুরের মানুষ পূর্তমন্ত্রী শ্রী যতীন চক্রবর্তীকে সামাল দেওয়াই ছিল এক অসম্ভব কাজ। শ্রী যতীন চক্রবর্তীর ছবি তোলার বাতিক ছিল। যতদিন মন্ত্রী ছিলেন মহাকরণে তার প্রথম কাজ হতো সিপিএম এবং মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর সমালোচনা বা নিন্দা করা।

বামফ্রন্টে এমন কিছু দলও ছিল যাদের কোনো সদস্য নির্বাচনে জয়ী হতে পারেননি। কিন্তু তারপরও তাদের মন্ত্রিসভায় রাখা হতো। এ ছিল তাদের ফ্রন্ট অটুট রাখার কৌশল। বর্তমান যে অবস্থা ১৮ দলীয় নেত্রী সহনশীল হলে দৃঢ়ভাবে মাটিতে পা রাখলে মরা শামুকেও কখনো-সখনো পা কাটে এই প্রবাদ মাথায় রেখে পা ফেললে অক্ষত পায়ে যতদূর যেতে পারবেন ততদূর জননেত্রী যেতে পারবেন না। বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ব্যক্তিগত পর্যায়ে কথার সময় বলেছেন, যাকে দেশের মানুষ চায় না, যার কোনো জনপ্রিয়তা নেই তাকে আপনি জননেত্রী বলছেন? তাকে বলেছি, কানা ছেলের নাম মা-বাবা অনেক সময় রাখে পদ্মলোচন।

আমারও দশা তেমন। বলতে বলতে একটা অভ্যাস হয়ে গেছে। মহান নেত্রীকে জননেত্রী বললেও তিনি যে এখন একেবারে জনবিচ্ছিন্ন নেত্রী, এতে কোনো সন্দেহ নেই। জানি সবাই দুই নেত্রীর কথোপকথনের মাধ্যমে একটা সমাধান চায়। কিন্তু তা হওয়া খুবই সহজ নয়।

তাদের লক্ষ্যই যদি সমাধান হতো তাহলে একটা সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু তাদের লক্ষ্য স্বার্থ, তাই কায়েমি স্বার্থ ক্ষতি করে কেউ একচুল নড়বেন না। তাই সমাধান সুদূরপরাহত। এর মধ্যেও যদি কিছু হয় তাহলে আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনের কাছে কৃতজ্ঞতা না জানিয়ে উপায় নেই। সবই আল্লাহর ইচ্ছা।

বর্তমান জাতীয় মূল সমস্যাই নির্দর্লীয় সরকারের মাধ্যমে একটা বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন। আসলেই অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন ছাড়া বর্তমান সমস্যার কোনো সমাধান নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১৮ অক্টোবর তার বেতার ভাষণে একটা সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাব দিয়েছেন। যদিও সংবিধানে কোথাও সর্বদলীয় সরকারের উল্লেখ নেই। ২১ তারিখ বিরোধী দলের নেত্রী প্রথম ও দ্বিতীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাদের নিয়ে একটি সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

২৩ অক্টোবর প্রবীণ বলিষ্ঠ সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরীর উপস্থাপিত বাংলাভিশনের ফ্রন্টলাইনে বলেছিলাম, এই ভূখণ্ডের সবচেয়ে কঠিন ক্রান্তিকালে হানাদার পাকিস্তানি জল্লাদদের মোকাবিলা করে মুক্তিযোদ্ধারা বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছে। আর কয়েক বছর পর হাজার খুঁজেও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের একজনকেও পাওয়া যাবে না। তাই অত খোঁজাখুঁজি না করে গ্রামগঞ্জের হতদরিদ্র ১০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে উপদেষ্টার শপথ করিয়ে দিলেই হয়। আর সৌভাগ্যক্রমে আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি জনাব আবদুল হামিদ যেহেতু প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা, সেহেতু তিনি ওই মুক্তিযোদ্ধা উপদেষ্টাদের অবশ্যই দেখেশুনে রাখতে পারবেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস রাস্তা থেকে কুড়িয়ে পানের দোকানদার জোয়াহেরের মতো মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়েও যদি বর্তমান সংকটে উপদেষ্টা পরিষদ করা হয় তারা দারুণ সুন্দরভাবে জাতীয় এই সংকটের মোকাবিলা করতে পারবেন।

আমি যখন প্রস্তাবটি করি তখন প্রিয় সঞ্চালক মতিউর রহমান চৌধুরী সঙ্গে সঙ্গে বলেছিলেন, এটা হয়তো আপনার আবেগের কথা, কথার কথা। আমি ছাড়ার পাত্র ছিলাম না। সঙ্গে সঙ্গে বলেছিলাম, গ্রামগঞ্জের অবহেলিত মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে লড়াই করে হানাদারদের বিতাড়িত না করলে বাংলাদেশ হতো না, বাংলাভিশনও হতো না, আমরা ফ্রন্টলাইনের এ অনুষ্ঠানে আসতাম না। দেশবাসীর কাছে আমারও প্রস্তাব, সবাই এত মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা করেন, একবার তাদের রাষ্ট্রের ওইসব উচ্চাসনে বসাতে ক্ষতি কি? আমরা তো জানি যমুনা পার করে মোগল সম্রাট হুমায়ুনের প্রাণ বাঁচানোয় সম্রাট হুমায়ুন এক ভিস্তিওয়ালাকে একদিনের জন্য দিলি্লর বাদশাহ বানিয়ে ছিলেন। একজন সম্রাট কৃতজ্ঞতার বশবর্তী হয়ে কাউকে যদি একদিনের বাদশাহী দিতে পারেন তাহলে বাঙালি জাতি কি তাদের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের জাতীয় এই দুঃসময়ে সংকট কাটাতে উপদেষ্টার আসন দিয়ে কৃতজ্ঞতা জানাতে পারেন না? নিশ্চয়ই পারেন।

ইসলামের ঊষাকালে পবিত্র কাবা শরিফ সংস্কারের একপর্যায়ে হাজরে আসোয়াত স্থাপন নিয়ে সমস্যা দেখা দিলে হজরত মোহাম্মদ (সা.)-কে মধ্যস্থতাকারী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। সে পদ্ধতিও ছিল অভিনব। কোনোক্রমেই যখন গোত্রে গোত্রে সমস্যার সমাধান হচ্ছিল না তখন সিদ্ধান্ত হয়েছিল, আগামীকাল প্রত্যুষে কাবার সিংহদ্বারে যাকে প্রথম দেখা যাবে, তিনিই হবেন মধ্যস্থতাকারী বিচারক। সকালে আর কাউকে নয়, গোত্রপ্রধানরা রাসূলে করিম মোহাম্মদ (সা.)-কে দেখতে পেয়েছিলেন। তিনি সমস্যার সমাধান দিয়েছিলেন, একটি চাদর বিছিয়ে তার উপর হাজরে আসোয়াত রেখেছিলেন এবং সব গোত্রপ্রধান চাদর ধরে হাজরে আসোয়াত কাবাঘরে নিয়ে গেলে রাসূলে করিম (সা.) নিজ হাতে সে পবিত্র পাথর যথাস্থানে রেখেছিলেন।

ওভাবেই পবিত্র পাথর নিয়ে রক্তারক্তির অবস্থা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান হয়েছিল। তাই দেশবাসী অনেকেই মনে করেন, একেবারে অজানা-অচেনা সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে গঠিত উপদেষ্টা পরিষদ অবশ্যই নিরপেক্ষ বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের সময় সরকার পরিচালনা করতে পারবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত আর অনির্বাচিত একটা ধোঁয়াশাযুক্ত প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি সংবিধানের বাইরে একচুলও যাবেন না। সত্যি কথা বলতে কি_ বাংলাদেশের ভূখণ্ডের একচুলও সংবিধানের বাইরে নয়, সবই সংবিধানের আওতাভুক্ত।

আর নির্বাচিত প্রতিনিধি ছাড়া কোনো সরকার হতে দেবেন না এটা একেবারেই ভেক, গাঁজাখুরি ও ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়ার মতো কথা। গতকাল থেকে নির্বাচন কমিশন সংবিধানের নির্দেশ অনুসারে নির্বাচনের ৯০ দিন গণনা শুরু করেছে। যেহেতু সংসদ আছে সেহেতু নির্বাচিতরা আছে। যত টানাহেঁচড়া করুন, ২৪ জানুয়ারি সংসদের আপনা আপনি মৃত্যু হবে। ২৫ জানুয়ারি দেশে সংসদ থাকবে না।

কোনো সংসদ সদস্য জীবিত থাকবেন না, তারা প্রাক্তন হবেন। আমরা যারা কিছু প্রাক্তনরা এখনো বেঁচে আছি ঠিক তাদের মতো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী থাকবেন কিন্তু নির্বাচিত থাকবেন না। তিনি অনির্বাচিত হয়ে পড়বেন। সংবিধানের নির্দেশে তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকবেন কিন্তু তার মন্ত্রিসভা থাকবে না।

যাকেই মন্ত্রী বানাবেন তিনিই অনির্বাচিত থাকবেন। তাই তিনি সংসদ ভেঙে নির্বাচিত সরকার বানাবেন কি করে? সংসদ রেখে যদি বানাতে চান, নিশ্চয়ই স্বীকার করি নির্বাচিত সরকার বানাতে পারেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে বর্তমান সংসদ সদস্যরা ভোটে দাঁড়াবেন কী করে? এমনকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও নির্বাচনে অযোগ্য হবেন। কয়েক দিন ধরে সরকারি দলের নেতারা বলছেন, বল বিরোধী দলের কোটে। দেশবাসী তো দেখছে না যে, বল বিরোধী দলের কোটে।

বিরোধী দলের কোটই নেই, বল তাদের কোটে থাকবে কি করে? বল সব সময় সরকারি দলের কোটে বা পায়ে থাকে। সেখান থেকে কখনো-সখনো বিরোধী দল ছিনিয়ে নিয়ে গোল করে। এ যাত্রায় তেমনই হওয়া ছাড়া অন্যকিছু দেখতে পারছি না।

গতকালের তাজা খবর, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক হাইব্রিড নেতা জনাব মাহাবুব-উল আলম হানিফকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারীর পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। নিশ্চয়ই এখন দেখা যাবে তিনি কত জনপ্রিয় এবং কত বড় নেতা? গণভবন ঠিকানা না থাকলে কত পত্র পান।

কয়েক দিনেই প্রমাণ হবে কত ধানে কত চাল, পরিমাপ করতে অপেক্ষায় থাকলাম।

লেখক : রাজনীতিক।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।