আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

God শব্দটি কী ‘আল্লাহ’র য়থার্থ অনুবাদ?

আমরা এমন একটা পরিবেশ চাই, যেখানে শিশুরা তাদের পছন্দ-অপছন্দের ধাপগুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নিয়ে বড় হবে।

==ফয়সল সাইফ== আল্লাহ’তায়ালা হলেন মুসলিম সম্প্রদায়ের বিশ্বাস মতে সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা। এই ধর্মে আল্লাহ’তায়ালার সংজ্ঞায়ন করা হয়েছে এভাবে, যেটার উল্লেখ আছে সূরা ইখলাস, আয়াত ১-৪: “বলুন, তিনি আল্লাহ, এক ও অদ্বিতীয়। আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন। তিনি কাউকে জন্ম দেননি, কেউ তাঁকে জন্ম দেয়নি।

এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই”। সাধারণতা আরবীয় মুসলিম’রা আল্লাহ’তায়ালাকে ডাকে ‘আল্লোয়াহ’ নামে। আমরা বাঙালী মুসলিমরা আল্লাহ’তায়ালাকে ডাকি ‘আল্লাহ’ নামে। এটা নিতান্তই ভাষাগত টানের পার্থক্য। তবে, সেটাকে কিছুতেই ‘আল্লোয়াহ’ এর অনুবাদ ‘আল্লাহ’ বলে বিবেচনা করা যাবে না।

এমনিতে মানা হয়, যে ‘আল্লাহ’ শব্দটির কাছাকাছি কোনো শব্দ নেই। এর কোনো অনুবাদ হয় না। এর সমার্থক শব্দর তো প্রশ্নই আসে না। আল্লাহ’র একত্ববাদকে ঘোষণা করার জন্য এটা এক বচনের একটা শব্দ। এর কোনো বহু বচন হয় না।

এই শব্দটি কোনো নির্দিষ্ট লিঙ্গও নির্দেশ করে না। তাই এই প্রশ্ন আসাই অযৌক্তিক, যে আল্লাহ’তায়ালা নারী না পুরুষ। বরং তিনি এমন এক সত্বা; যাঁর সম্পর্কে আমরা ধারণাও করতে পারি না। এগুলো হলো সংক্ষেপে আল্লাহ’তায়ালা সম্পর্কে ইসলাম ধর্মের অবস্থান। এখন দেখা যাক, ‘God’ শব্দটিও কী তেমন? এমনিতে ডিকশনারীতে ‘God’ এর অনুবাদ ‘আল্লাহ’ লেখা থাকে।

তবে, আরবী ভাষায় ‘আল্লাহ’ শব্দটির যে গুণাবলী; ইংরেজী ভাষায় ‘God’ শব্দটির সেই গুণাবলী নেই। এই দুই শব্দের মধ্যে গুণের দিক দিয়ে একটাই মাত্র মিল, সেটা হলো দুটোকেই উপাস্যর নাম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তা ছাড়া God শব্দটির নানা রুপান্তর ঘটানো সম্ভব। যেটা আল্লাহ শব্দটির ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। যেমন: Godson=ধর্মপুত্র, Godmother =ধর্মমা, Godfather=ধর্মপিতা ইত্যাদি।

তবে, এসবের চেয়েও গুরুতর হলো ‘Goddess শব্দটি। যেটার অর্থ হলো ‘দেবী’। এটা ‘God’ এর লিঙ্গ নির্দেশ করে। কিন্তু আল্লাহ শব্দটি নির্দিষ্ট কোনো লিঙ্গ নয়। এসব বিবেচনায়, ‘God’ শব্দটিকে কিছুতেই ‘আল্লাহ’ শব্দটির সঠিক অনুবাদ ধরে নেওয়া যায় না।

তবে, এখানে প্রশ্ন আসে ‘আল্লাহ’ শব্দটিকে কমন নাউন হিসেবে বিবেচনা করা যায় কিনা? যেহেতু ইংরেজী ভাষার খ্রিস্টানরা তাদেঁর উপাস্যকে ‘God’ বলে ডাকে; এবং সেই শব্দটি কমন নাউন। একই ধর্ম বিশ্বাসী আরবীয় খ্রিস্টানরা, মিশরীয় কপটিক খৃস্টান ও মালয়শিয়া/ইন্দোনেশিয়ার খৃস্টান সম্প্রদায়ও তাঁদের উপাস্যকে ‘আল্লাহ’ নামে ডাকে। সেক্ষেত্রে ‘আল্লাহ ‘শব্দটি ঈংরেজী ‘God’ বা বাংলায় ‘ঈশ্বর’ এর সমতূল্য কমন নাউন বা জেনেরিক শব্দ হিসাবেও গণ্য করা যায় কী? যাঁরা আরবে বসবাস করে, তাঁরা তাঁদের উপাস্যকে ‘আল্লাহ’ বলে ডাকে। তাহলে সেটা কী কমন নাউন নয়? কেননা ‘আল্লাহ’ শব্দটি শুধুই মুসলিমদের একার সম্পত্তি হবে কেন? তবে, এখানে এটাও বিবেচনায় রাখা যায়, যে ‘আল্লাহ’ শব্দটি প্রপার ও কমন নাউন উভয় অর্থেই ব্যবহৃত হওয়া সম্ভব কি না? মুসলিমরা যখণ তাঁদের উপাস্য ‘আল্লাহ’কে স্মরণ করে, তখন তা প্রপার নাউন (একটি নির্দিষ্ট সত্বাকে নির্দেশ করছে)। কিন্তু আবার অন্যরা যখন একই শব্দ ব্যবহার করে তখন, সেটা কমন নাউন।

এক্ষেত্রে দেখা যাক, আরবী ইহুদী ও খৃস্টান, মিশরীয় কপটিক খৃস্টান ও মালয়শিয়া/ইন্দোনেশিয়ার খৃস্টান সম্প্রদায়ও তাঁদের উপাস্যকে যে ‘আল্লাহ’ নামে ডাকে, সেটা কোন নাউন বিবেচনায় ডাকে? যদি কমন নাউন বিবেচনায় ডাকে, তাহলে মেনে নিতে হবে ‘আল্লাহ’ শব্দটি প্রপার এবং কমন উভয় নাউন। ফলে এর অনুবাদ ‘God’ করা যায়। কিন্তু যদি তাঁরাও প্রপার নাউন বিবেচনায় ডাকে, তাহলে ‘আল্লাহ’ শব্দের অনুবাদ ‘God’ নয়। এ উত্তর পেতে হলে আমাদের দেখতে হবে, ইহুদী এবং খ্রিস্টানদের ধর্মগ্রন্থ পবিত্র বাইবেলের ওল্ড ও নিউ টেস্টামেন্ট কী বলে? এখানে ইংরেজী ভাষার খ্রিস্টান বা ইহুদীরা, তাঁদের ইশ্বরকে কী নামে ডাকে সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়। কারণ বাইবেল ইংরেজী ভাষায় নাযিল হয় নি।

এটা হিব্রু ভাষায় নাযিল হয়েছিল। ইহুদী ধর্ম: ইহুদীদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ হলো বাইবেলের ওল্ড টেষ্টামেন্ট। এটাকে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকেরাও তাঁদের সৃষ্টিকর্তার বাণী বলে বিশ্বাস করে। মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকেরাও বিশ্বাস করে এটা আদিতে তাঁদের সৃষ্টিকর্তার প্রেরিত পবিত্র ধর্মগ্রন্থ ছিল। যদিও তাঁরা এখন এটার অনেকাংশই বিকৃত করে ফেলা হয়েছে বলে বিশ্বাস করে [দ্রঃ বোখারী: ৬৮৫৯]।

তার মানে এখন এটাতে সৃষ্টিকর্তার বাণী থাকতেও পারে আবার না-ও থাকতে পারে। যাইহোক, দেখা যাক পবিত্র বাইবেলের ওল্ড টেষ্টমেন্ট সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে কি বলে: এটার উল্লেখ আছে বুক অফ ডিটরনমি, অধ্যায় ৬ অনুচ্ছেদ ৪: “(মুসা বলছেন) হে ইস্রায়েল বাসী, আমাদের প্রভু মাত্র একজন”। তারপর আরও উল্লেখ আছে, বুক অফ ডিটরনমি, অধ্যায় ৫ অনুচ্ছেদ ৭-৮: “(ইশ্বর বলছেন) আমার পাশাপাশি তোমরা আর কারও ইবাদত করবে না। তোমরা মহান ইশ্বরের কোনো প্রতিমূর্তি বানাবে না। যাঁকে তুলনা করা যায় আকাশের ওপরে কিছুর সাথে, নিচের পৃথিবীর কিছুর সাথে অথবা পানির নিচের কিছুর সাথে।

তোমরা তাঁদের সামনে নতজানু হবে না। তাঁদের সেবা করবে না। কারণ তোমাদের প্রভু খুবই প্রতিহিংসা পরায়ন”। ওপরের অনুচ্ছেদগুলো থেকে এটা স্পষ্ট বুঝা যায় যে, ইহুদীদের ধর্মগ্রন্থ পবিত্র বাইবেলের ওল্ড টেষ্টামেন্ট অনুযায়ী সৃষ্টিকর্তা একজনই। এ নিয়ে দ্বিমত পোষণের কিছু নেই।

খ্রিস্টান ধর্ম: বর্তমান বিশ্বে ক্যাথলিক ও প্রোটেষ্ট্যান্ট মিলিয়ে খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা সর্বাধিক। এবং এই ধর্মের অনুসারী বৃদ্ধির সংখ্যা ইসলাম ধর্মের পরেই দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। যদিও পার্থক্যটা বিশাল। এই ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ হিসেবে পবিত্র বাইবেলের ওল্ড এবং নিউ উভয় টেষ্টামেন্টকেই মানা হয়। তবে, ওল্ড টেষ্টামেন্টের অনুসারী ইহুদীরা খ্রিস্টানদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেলের নিউ টেষ্টামেন্টকে স্বীকৃতি দিতে নারাজ।

ইসলাম ধর্মের অনুসারী মুসলমানরাও মানে বাইবেলের ওল্ড টেষ্টমেন্টের মতই বাইবেলের নিউ টেষ্টামেন্টও সৃষ্টিকর্তার বাণী ছিল। তবে, সময়ের সাথে সাথে এটারও অনেকাংশই বিকৃত করে ফেলা হয়েছে। এখন এটাতে সৃষ্টিকর্তার বাণী থাকতেও পারে আবার না-ও থাকতে পারে। দেখা যাক, পবিত্র বাইবেলের নিউ টেষ্টামেন্ট সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে কি ধারণা দেয়। এটার উল্লেখ আছে গসপেল অফ ম্যাথিও: অধ্যায় ৪ অনুচ্ছেদ ১০: “তখন যীশু তাকে (শয়তানকে) বললেন, দূর হও, শয়তান।

পাক কিতাবে লেখা আছে-প্রভু যিনি তোমার ইশ্বর, তাঁকে তুমি সেজদা করবে। তাঁরই কেবল সেবা করবে”। খুবই সাধারণ ভাবে আমরা এই অনুচ্ছেদ থেকে বুঝতে পারি যে যীশু প্রভুকে মানে সৃষ্টিকর্তাকে একজনই বলে উল্লেখ করেছেন। এবং শুধু তাঁরই উপাসনা করতে বলেছেন। তবে, এখানে খ্রিস্টানরা ভিন্নমত পোষণ করবে।

যদিও আমি মনে করি তাঁদের চার্চের কথা নয়, বিচারের জন্য আমার কাছে বাইবেলই যথেষ্ট। এক্ষেত্রে তাঁরা যদি বাইবেল দিয়ে সৃষ্টিকর্তার সংখ্যা প্রমাণ করতে আসে, তাহলে আমি এ নিয়ে ইতিমধ্যে এটা পোষ্ট দিয়েছি। এখান থেকে স্পষ্ট বুঝা যায়, ইহুদী এবং খৃস্টান ধর্ম পালন করা অবস্থায়, কোনো ব্যাক্তি বা সম্প্রদায় যদি তাঁদের উপাস্যকে ‘আল্লাহ’ নামে ডাকে, সেটা অবশ্যই একটামাত্র সত্বাকে ডাকছে। কোনো সন্দেহ নেই, এটা প্রপার নাউন। ফলে ‘God’ শব্দটি ‘আল্লাহ’র সঠিক অনুবাদ নয়।

আর এর কোনো অনুবাদ হতে পারে না।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।