আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

“ সৈকতের বিষণ্ণতা ”



বাবলু অনেকক্ষণ যাবত মেয়েটিকে লক্ষ্য করছে । কারণ মেয়েটি তাকে বিস্ময়ের পর বিস্ময় উপহার দিচ্ছে । আগামীকাল হরতাল , তাই পুরো সমুদ্র সৈকত খালী হয়ে গেছে । ব্যাপারটা খেয়াল করে বাবলু আনন্দে চৌদ্দখান হয়ে গিয়েছিলো । জীবনের প্রথম সমুদ্র দর্শনেই সে পুরো সমুদ্রটাকে সৈকতসহ একা পাবে , অন্য কাঊকে ভাগ দিতে হবে না ।

আহা কী আনন্দ । অথচ দিতে হচ্ছে , আরও দুজনকে । একজন গভীর মনোযোগে বালি দিয়ে ঘর বানাচ্ছে । বাবলু তাকে দেখতে পাচ্ছে না । শুধু তার কোমর অব্ধি ছড়িয়ে পড়া ঘন কালো চুল দেখতে পাচ্ছে ।

অন্যজন গভীর মনোযোগে ঘর বানানো দেখছে । তাকে বাবলু দেখতে পাচ্ছে , সেও বাবলুকে । বাবলুর খুব ইচ্ছে করছে নীরব সমুদ্র সৈকতে সিনেমার মতো এই দৃশকল্পে ঢুকে পড়তে । কিন্তু পারছেনা ; কারণ ভয় । তাও ঘর বানানো কারিগরের ভয় যতটুকু কাটানো যায় কিন্তু তার সামনে বসা দর্শক ?? একটা জলজ্যান্ত জার্মান ডোভার !! বাবলু ছোটো বেলা থেকেই কুকুর বড় ভয় পায় ।

ছোটো বেলায় নাভির গোড়ায় সেই ১৪টি ইনজেকশনের স্মৃতি এখনও তার অমলিন !! তা ছাড়া শুরু থেকেই এ কুকুরটা বাবলুর দিকে অপছন্দের দৃষ্টিতে তাকিয়েছে । সুতরাং রিস্ক নেয়া ঠিক হবেনা । “এই! এদিকে আসেন । ” বাবলু চমকে উঠলো । মেয়েটি তাকেই ডাকছে ।

বাবলু দ্বিধায় পোড়ে গেলো । মেয়েটির ডাক অস্বীকার করা মুশকিল আবার সামনে জলজ্যান্ত জার্মান ডোভার । “আপনি কী আমাকে একটু সাহায্য করতে পারেন ?” “জী বলুন । ” “বিলির খুব তেষ্টা পেয়েছে । আপনি ওর জন্য ডাবের পানি নিয়ে আসতে পারেন ?” “এই কুত্তার জন্য ডাবের পানি !! ?? ” বাবলু অবাক হয়ে জানতে চাইলো এবং ভুলটা করলো ।

মেয়েটির ঠোট রাগে কাঁপছে , চোখে পানি চলে এসেছে । চিবিয়ে চিবিয়ে বলল- “আপনি বিলিকে কুত্তা বললেন কেন ?? !!” বাবলু আতংকিত হল । কারণ রাগে শুধু মেয়েটি গজরাচ্ছে না , বিলিও আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে । তাকে কুত্তা বলায় সেও অপমানিত , শুধু সবুজ সঙ্কেতের অপেক্ষা । “আপনি সরি বলেন !” “কাকে সরি বলবো !!??” “বিলিকে সরি বলবেন ।

” “মানে !! ?? একটা কুত্তা, ওহ! কুকুরকে সরি বলবো !!??” “হ্যাঁ , বলবেন । শুধু সরি বললে হবে না , আপনি হাসি হাসি মুখে দাঁড়াবেন আর বিলি আপনার পায়ে একটা কামড় দেবে । ” বাবলু তোতলাতে শুরু করলো । আতংকে বাবলুর ফাঁকা ফাঁকা লাগছে । “আমি মারা যাবো তো !!” “মৃত্যু অতো সহজ না ।

কুকুরের একটা কামড়ে মানুষ মারা যায় না ?” পরবর্তী ঘটনা অতি সাধারণ । বাবলু দেখল একটা অতিকায় কুকুর তার দিকে মুখ হা করে এগিয়ে আসছে । বাবলু আর্তনাদ করে মূর্ছা গেলো । অবন্তিকা যদিও এতক্ষণ রেগে ছিল কিন্তু এখন ভড়কে গেলো । ছেলেটি মারা যায়নি তো ?? একটা কুকুরকে এতো ভয় পায় কেউ !! যদিও সে জানে সবাই তার মতো কুকুরপ্রেমী না ।

“বিলি , বলতো এখন কী করি ? হোটেল তো এখান থেকে অনেক দূরে । বীচেও কেউ নেই । সব তোর কারণে !! তুই অল্প ভয় দেখালেই পারতি । তা না , একেবারে তেড়ে গেলি । ” বিলি কুঁইকুঁই করতে লাগলো ।

সম্ভবত বলতে চাইছে , ওর হার্ট এতো দুর্বল তা আমি কিভাবে জানব । বাবলু নড়েচড়ে উঠলো । “বিলি দ্যাখ , ছেলেটি মরেনই ; নড়ছে । ” বিলি উৎসাহ পেল । সে সৈকত কাঁপিয়ে চিৎকার করতে লাগলো ।

বাবলু জেগে উঠে দেখল সেই পুরনো বিভীষিকা তার সামনে । তার মানে মূর্ছা গিয়ে লাভ হয়নি । “আপনি ভয় পাবেন না । বিলি আপনাকে কামড়ে দেবেনা । ইনফ্যাক্ট সে আপনাকে জাগানোর চেষ্টা করছিল ।

” “মানে !! আমাকে জাগানোর চেষ্টা............... । ডগ সাহেবকে এখান থেকে সরান । ” “আপনি একটা মহাভীতু । বলছিনা, কামড়াবেনা । অবশ্য কামড়ালেও আপনি মরবেন না !! ওর অ্যান্টিভাইরাল ইনজেকশণ দেয়া আছে ।

” বাবলুর টাশকী লাগবার জোগাড় । এ মেয়ে বলে কী !!! অবন্তিকা হাসতে হাসতে বলল, “আপনাকে না কামড়ে বিলি ভালই করেছে !! আপনি যা ভীতু , আপনাকে কামড়ালে বিলিও ভীতু হয়ে যেতো !!” এই প্রথম বাবলু হেসে ফেললো । “এই রে ! সন্ধ্যা হয়ে গেলো । আমি যাই, মা বকবে । চল বিলি ।

” সৈকতে বাবলু একা , যেভাবে সে চেয়েছিল । তার আনন্দিত হবার কথা । কিন্তু হচ্ছে না । বুঝতে পারলো , বালির ঘর নির্মাণে নিমগ্ন কারিগর আর একটা জার্মান ডোভার ছাড়া সৈকতটাকে বড় অসম্পূর্ণ , বিষণ্ণ লাগছে । বিষণ্ণ সৈকতের জন্য বাবলুর বড় মায়া লাগলো ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।