আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জামাতের অর্থায়নে বের হয় কুমিল্লার কাগজ! ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত রয়েছে সম্পাদক হৃদয়

মানব সেবাই আমার মূল ধর্ম

আবুল কাশেম হৃদয় সম্পাদিত কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত দৈনিক কুমিল্লার কাগজ পত্রিকাটি স্বাধীনতা বিরোধী ষড়যন্ত্রকারী জামাতের অর্থয়নে বের হয়, এমন অভিযোগ উঠেছে। একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে কুমিল্লার কাগজ প্রকাশনার খরচের ৭৫ ভাগ জামাত বহন করে। জামাত শিবিরের নেতা কর্মীদের উস্কে দেয়ার মতো অনেক সংবাদ এ পর্যন্ত ছাপা হয়েছে কুমিল্লার কাগজে। সম্পাদক হৃদয় মুক্তিযুদ্ধের গবেষক দাবি করলেও প্রকাশ্যে জামাতের পাবলম্বন করার কারণে কুমিল্লার কাগজের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টির প্রতি গভীর দৃষ্টিপাত করে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পত্রিকা প্রকাশের বিপুল অর্থ জোগানে ব্যর্থ হয়ে মুক্তিযুদ্ধের গবেষক দাবিকারী হৃদয় সুকৌশলে কুমিল্লার কাগজ প্রকাশে জামাতের অর্থায়ন নিশ্চিত করে।

পরবর্তীতে পুরোপুরি জামাতনির্ভর হয়ে পরে হৃদয় ও তার কুমিল্লার কাগজ। কুমিল্লা জামাতের যাবতীয় কর্মকান্ডে অর্থ লগ্নীকারী একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক এক জামাত নেতা জানান, কুমিল্লায় আমাদের পরিচালিত বেশ কয়েকটি পত্রিকা রয়েছে, তবে কুমিল্লার কাগজের চাহিদা থাকায় আমাদের প্রচারণার জন্যে হৃদয়কে অর্থ দেয়ার বিষয়ে আমরাও কৌশল অবলম্বন করেছি। জামাত পরিচালিত কুমিল্লার বেশ কয়েকটি ডেভেলপার কোম্পানী, হাউজিং কোম্পানী, ব্যাংক, কো-অপারেটিভ প্রতিষ্ঠানের সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠে হৃদয়ের। এ সকল প্রতিষ্ঠানের সাথে হৃদয় নিজে দেন দরবার করে অর্থ আদান প্রদানের কাজটি করাতো তার পত্রিকায় নিয়োগ দেয়া কর্মীদের দিয়ে। জামাতের কাছ থেকে লোভনীয় পরিমাণে অর্থ পেয়ে আবুল কাশেম হৃদয় ও কুমিল্লার কাগজ পুরোপুরি জামাতনির্ভর হয়ে পড়েছে।

কুমিল্লার কাগজ জামাত নির্ভর এবং জামাতের অর্থায়নে বের হয়-এই বিষয়টি আলোচনায় আসার কারণ হচ্ছে আবুল কাশেম হৃদয় নিজেকে মুক্তিযুদ্ধের গবেষক দাবি করে এবং বেশ কিছুদিন কুমিল্লার কাগজের সেøাগান ছিল ‘যুদ্ধাপরাধী জামাত শিবিরকে ঘৃণা করুন। ’ নিজেকে স্বাধীনতার পরে লোক দাবি করে আড়ালে স্বাধীনতা বিরোধীদের কাছ থেকে অর্থ সহযোগিতা নেয়ার কারণে প্রত্য ও পরোভাবে হৃদয় এবং তার কুমিল্লার কাগজ স্বাধীনতা বিরোধীদেরই বিভিন্ন স্বার্থ নিয়মিত সংরণ করে যাচ্ছে। কিন্তু এবিষয়ে বিভ্রান্ত কুমিল্লার সাধারণ মানুষ। হৃদয়কে অর্থ সহযোগিতার বিষয়ে এক জামাত নেতা জানান, দলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কুমিল্লার কাগজকে অর্থ সহযোগিতা করা হয়েছে। ওই নেতা আরো জানান, আমরা বিজ্ঞাপন দিয়েছি ঠিক, তবে বিল পরিশোধ করেছি হৃদয়ের চাহিদা মতো দুই থেকে তিনগুণ অর্থমূল্যে।

আর এই অর্থের লোভ সামলাতে না পেরে জামাতের অর্থের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে হৃদয়। ধীরে ধীরে কুমিল্লার কাগজ হয়ে পড়ে জামাতনির্ভর। প্রকাশিত কুমিল্লার কাগজের বেশ কয়েকটি সংখ্যায় ৫০ থেকে ৬০ ভাগই থাকতো জামাতের সংবাদ ও বিজ্ঞাপন। সময়টি ছিল যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামাতের শীর্ষ নেতাদের আটকের সময়। সাড়া কুমিল্লায়ই জামাতের নেতাকর্মীরা যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তির দাবিতে পুলিশের বাধার মুখে লুকিয়ে মিছিল মিটিং করে।

সমস্ত দেশের সংবাদপত্রগুলো যখন যুদ্ধাপরাধী জামাতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, তখন নির্লজ্জভাবে মুক্তিযুদ্ধের গবেষক দাবিদার হৃদয় কৌশলে এবং ব্যবসায়িক স্বার্থে জামাতের প নিয়েছিল। এই পাবলম্বনে ছিল কৌশল ও চতুরতা। কিছু সংবাদ ছিল এমন- কুমিল্লায় জামায়াতের বিশাল শো-ডাউন। জামাতের সমাবেশে দলে দলে যোগ দিন। জামাত কর্মীদের হামলায় পুলিশ আহত।

জামাত শিবিরের সড়ক অবরোধ। এ সমস্ত হেড লাইন সংবাদ করে কুমিল্লার কাগজে ছাপা হয়েছে, যা প্রশাসনসহ জামাত বিরোধীরা সংগ্রহে রেখেছে। নিজামী, সাইদী, গোলাম আজম মুজাহিদসহ জামাতের শীর্ষ নেতাদের মুক্তির দাবিতে নগরীতে সমাবেশ করে জামাত। এর আগের দিন ও সমাবেশের দিন কুমিল্লার কাগজের অর্ধাংশ জুড়ে ছাপা হয় ‘জামাতের সমাবেশে দলে দলে যোগ দিন। ’ তখন ছাত্র ইউনিয়নের এক কর্মী আমাকে ফোন দিয়ে জানতে চায় যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তির দাবিতে জামাতের সমাবেশ হবে, কুমিল্লার কাগজ ছেপেছে জামাতের সমাবেশে দলে দলে যোগ দিন।

তিনি জানতে চান, কুমিল্লার কাগজ কাকে দাওয়াত দিয়েছে বিষয়টি স্পষ্ট নয়। ওই বাম রাজনীতির কর্মী উপহাস করে বললেন, আমরাও যাব নাকি। সেই সময়ে জেলা আইনশৃংখলা কমিটির বিশেষ এক সভায় জেলা আওয়ামীলীগ নেতা কুমিল্লার কাগজের এই অবস্থানের জন্যে ােভও প্রকাশ করেন। সেখানে হৃদয় ছিল, আমিও (এই প্রতিবেদক) ছিলাম। উচ্চ বাক্যের এক পর্যায়ে জেলা প্রশাসক মোঃ রেজাউল আহসান সবাইকে চুপ করান।

তবে কুমিল্লার কাগজের জামাত নির্ভরতার বিষয়টি সম্পাদক হৃদয়ের কর্মকান্ডের উপরই বুঝা যায়। ইসলামী ব্যাংক কুমিল্লা শাখার কর্মকর্তাদের সাথে হৃদয়ের রয়েছে আত্মিক সম্পর্ক। ইসলামী ব্যাংক জোনাল হেড আব্দুর রহমান ব্যানার্জীর সাথে তার রয়েছে গভীর সখ্যতা। বিগত সময়ে জামাত পরিচালিত এই ব্যাংকটির নিজস্ব অনুষ্ঠানগুলোতে হৃদয়ের অংশগ্রহণ ছিল প্রাণবন্ত। ছাত্রলীগের কর্মীরা যখন ইসলামী ব্যাংকের এটিএম বুথ ভেঙ্গে দেয়, তখন প্রতিষ্ঠানটি আশ্রয় নেয় কুমিল্লার কাগজের ছায়ায়।

কুমিল্লার কাগজ জুড়ে ছিল ইসলামী ব্যাংকের বিজ্ঞাপন, যা কুমিল্লার অন্য কোন পত্রিকা পেতো না। আইসিএলের সফিকুর রহমানের সাথে তার ছিল গভীর সুসম্পর্ক। পত্রিকাটির সামনে পেছনে ছিল শুধু আইসিএল আর আইসিএল। চাহিদা মতো অর্থ দিতেন সফিকুর রহমান। চলতি বছরের জুলাইয়ের দিকে অন্যায়ভাবে দাবি করা অর্থ না পেয়ে আইসিএলের বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ ছাপে কুমিল্লার কাগজ।

চ্যালেঞ্জ করে আদালতে মামলা করে দেয় আইসিএল। পরে জানা যায়, হৃদয়ের দেয়া মনগড়া বিল পরিশোধে আইসিএল অপারগতা প্রকাশ করায় এই মিথ্যা সংবাদ ছাপা হয়। এই ঘটনায় তখন জামাতের অনেক প্রতিষ্ঠান ুব্ধ হয়ে হৃদয়ের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে। কুমিল্লার কাগজের অর্থ জোগানদাতা জামাত নেতা পরিচালিত এফ আই সি এল এর পরিচালক শামিম কবিরের সাথেও ছিল হৃদয়ের মধুর সম্পর্ক। শামিমের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্যের বিনিময় ছিল জামাতের সাথে সখ্যতা।

কর্নফুলি হাউজিংয়ের মজিবুর রহমান, মজুমদার গ্রুপের সানাউল্লা মজুমদার, ফেইথ লিভিং এর ইকবাল মজুমদার, পপুলার গ্র“পের রেজাউল এবং শীর্ষ জামাত নেতা আব্দুল্লা মোঃ তাহেরের মালিকানাধীন কুমিল্লা মেডিকেল সেন্টারের সুদৃষ্টি রয়েছে কুমিল্লার কাগজের প্রতি। গত এক বছরের সংরতি কুমিল্লার কাগজের প্রতি দৃষ্টি দিলেই এ অভিযোগের সত্যতা মিলবে। জামাতের আমীর দ্বীন মোহাম্মদ, সেক্রেটারিসহ কুমিল্লা জেলা জামাত নেতা মুজিব, শিবিরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ জামাতের ডজনখানেক নেতার সাথে হৃদয়ের সখ্যতা কুমিল্লার অন্য অনেক সম্পাদক ও সাংবাদিকদের চেয়ে আরো কাছের। তাই সুশীল মহলে অভিযোগ উঠেছে, অত্যন্ত ব্যয়বহুল প্রকাশনা দৈনিক কুমিল্লার কাগজ ও ব্যক্তিগত জীবনে সম্পাদক হৃদয়ের বিলাসী জীবনযাপনের নেপথ্যে অর্থ যোগানদাতা স্বাধীনতা বিরোধী জামাত শিবির চক্র। তাহলে কি কুমিল্লার কাগজ প্রচারিত ‘ রাজাকারদের ঘৃণা করুন’ শ্লোগানটি শুধুই ব্যবসায়িক সুবিধা আদায়ের ল্েযই প্রকাশিত হয়?


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.