আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

when Refugees of Palestine go back their home

writer

উদ্বাস্তু ফিলিস্তিনেরা কবে তাদের স্বভূমিতে ফিরে যাবে[/sb গাজী সাইফুল ইসলাম বর্তমান বিশ্বে সম্ভবত একটাই সবচেয়ে অনিস্পন্ন বিষয়-তাহলো উদ্বাস্তু ফিলিস্তিনিরা কোনদিন তাদের উৎখাতকৃত স্বভূমিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে? কোনো সুস্থচিন্তা থেকে এ রহস্যের কোল কিনারা করা যায় না। কল্পনাও করা যায় না। কারণ এটা স্পষ্ট যে, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশের মদদপুষ্ট হয়ে থাকায় দখলদার পক্ষটি কখনোই চায় না ওই অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা হোক। কারণ, গোলযোগপূর্ণ এলাকায় লুঠতরাজ করাটা সহজ। একটু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলেই এটা পরিস্কার হয়ে যায় যে, আমেরিকার নেতৃত্বে শান্তির যত উদ্যোগ এ পর্যন্ত গৃহিত হয়েছে বেশিরভাগই লোক দেখানো।

আমেরিকার এই যে কত পরিবর্তন হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট যাচ্ছে আসছে, বৈদেশিকনীতিতেও যোগ-বিয়োগ হচ্ছে, কিন্তু ইসরাইল নীতিতে কখনোই কোনো পরিবর্তন ঘটে না। ইসরাইলের প্রতি ব্রিটেশ-আমেরিকার এই পক্ষপাতিত্ব রাষ্ট্রটির জন্মলগ্ন থেকে। একটু পেছনের দিকে তাকালে দেখতে পাই, অটোম্যান শাসনের সময়ে, ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে, ফিলিস্তিন গ্রেট ব্রিটেনের দখলভুক্ত হয়। এরও ছাব্বিশ বছর পূর্ব থেকে ইহুদিরা পশ্চিম তীরসহ ফিলিস্তিনের অন্যান্য এলাকায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এসে একটি ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের উদ্দেশ্যে সমবেত হতে থাকে। শুরুতে এই প্রক্রিয়ার একটি গোপন নাম ছিল-মুসা অভিযান (Mossess Operation)।

আর তখন ব্রিটেনকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছিল সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ। একই বছর (অর্থাৎ ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে) ব্রিটেন এবং আমেরিকার চাপে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ অফিসিয়ালি ফিলিস্তিনকে ইহুদিদের পছন্দের আবাসভূমি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। এরপর ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে জাতিসংঘ ফিলিস্তিনে ইহুদি ও মুসলমানদের জন্য পৃথক দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব ঘোষণা করে। এর মাত্র একবছর পরেই ব্রিটেন তার সেনাবাহিনী ফিলিস্তিন এলাকা থেকে প্রত্যাহার করে নেয় এবং ইহুদিরা শুরু করে সশস্ত্র কর্মকাণ্ড। তারা নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে গ্রামের পর গ্রাম গুড়িয়ে দেয় এবং সেই ধ্বংসাবশেষের ওপর গড়ে তুলে তাদের নিজেদের আবাসভূমি।

উল্লেখ্য, ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে ফিলিস্তিনের মোট জনসংখ্যা ছিল ৭,৪৭,০০০। তাদের মধ্যে ৫,৯০,০০০ আরব মুসলমান। ৭৩,০০০ খ্রিস্টান আর ৮৪,০০০ ইহুদি। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে যখন জাতিসংঘ কর্তৃক ফিলিস্তিন দ্বি-খণ্ডিত হয় ততদিনে সেখানে পৌঁছে গেছে ৭,০০,০০০ ইহুদি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ইহুদিদের আগ্রাসী মনোভাব।

একটি বিশাল ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আমেরিকা-ব্রিটেন ওসব ইহুদিদের হাতে অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র তুলে দিয়ে তাদের আগ্রাসী মনোভাবকে ভয়ঙ্করভাবে উস্কে দেয়। ফলে সংঘাত তীব্রতর হয়। ইহুদিরা সশস্ত্র আর ফিলিস্তিনিরা নিরস্ত্র। ব্রিটেন-আমেরিকার প্রত্যক্ষ মদদে দখলদার ইহুদিরা মহান ইসরাইল রাষ্ট্র (?) প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অগ্রসর হতে থাকে। মোটামুটি ষাটের দশক পর্যন্ত ইসরাইল এই লক্ষ্যে তাদের পাগলা ঘোড়া ছুটিয়েছে বল্‌গাহীন।

এরপর ১৯৬৯-এ পিএলও-এর নেতৃত্বে ইয়াসির আরাফাতের নাটকীয় আবির্ভাবে কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে তাদের এই দখলদারিত্বের অভিযান। কিন্তু বাধাগ্রস্থ হলেও থামেনি। সমানতালে আজও চলছে পরভূমি দখল ও বসতি নির্মাণের কাজ। এই দখলদারিত্ব চালিয়ে যাওয়ার জন্য ইসরাইল হত্যা করেছে অগণিত মানুষ। সাধারণ থেকে প্রতিবাদী নেতা, কবি লেখক, বুদ্ধিজীবী।

বিশেষ করে, যাদেরকেই তারা তাদের অগ্রাভিযানের পথে প্রতিবন্ধক মনে করেছে, হত্যা করেছে। গুপ্ত হত্যা, প্রকাশ্যে কিংবা রাতের অন্ধকারে ক্ষেপনাস্ত্র মেরে ঘুমন্ত অবস্থায় ঘরবাড়ির নিচে কবর দেয়া, রাস্তার ওপর শিয়াল কুকুরের মতো গুলি করে ফেলে রাখা, সে শিশু, বৃদ্ধ যাই হোক ইসরাইলিদের জন্য এটা কোনো ব্যাপার না। আর না হলে দলে দলে হাতকড়া পরিয়ে জেলের অন্ধকার খুপরিতে আবদ্ধ করে দেয়া। পরিসংখ্যানে হয়তো সব মানুষের নাম পাওয়া যাবে না। প্রযুক্তি ও মিডিয়ার প্রভূত উন্নতির কারণে এসব হত্যাকাণ্ডের সংবাদ ইসরাইল ইচ্ছে করলেও গোপন করতে পারে না।

ফলে বর্বরোচিত এসব হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে বিশ্ব জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। প্রতিবাদ ও সমালোচনায় মুখর বিশ্বকে দেখানোর জন্য সেই ১৯৬৭ থেকে একটি চূড়ান্ত শান্তি চুক্তি সম্পাদনের লক্ষ্যে কাজ করছে আমেরিকান বিভিন্ন লবিং গ্রুপ। কিন্তু ১৯৬৭-এর সেই সিক্স ডে ওয়ার-এর সময় ইসরাইল ফিলিস্তিনের জন্য আমেরিকার মধ্যস্থতায় যে সীমান্ত নির্ধারণ করা হয়েছিল-সে সীমান্ত রেখা পরে আর মেনে চলেনি ইসরাইল। যদিও ফিলিস্তিন সে সীমান্ত রেখা মেনে চলার জন্য দাবী জানিয়ে আসছে, সংগ্রাম করে যাচ্ছে। কিন্তু ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করে বারবার সে দাবী প্রত্যখ্যান করছে এবং ভূমি দখল করে নতুন বসতি স্থাপন করে যাচ্ছে।

আর এভাবেই দিনে দিনে সংঘাত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংঘাতে নিশ্চিন্ত পরাজয়ের সম্ভাবনা আর সজন হারানো শোক একে একে আন্ডারগ্রাউন্ডে জন্ম দিয়েছে বহু মুসলিম সংগঠনের, ফিলিস্তিনে কিংবা ফিলিস্তিনের বাইরে। পরে নানাভাবে তারা জড়িয়ে গেছে সশস্ত্র ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে। হ্যাঁ, নির্ভেজাল সত্য হলো প্রথম প্রথম এসব কর্মকা ছিল শুধুই আত্মরক্ষামূলক। ইংরেজি ১৯৬০ থেকে এ পর্যন্ত আমেরিকায় যত প্রেসিডেণ্ট নিবাচিত হয়েছে, ব্রিটেনে যত প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছে, এমন কি হালের বিল ক্লিনটন, জর্জ ডব্লিউ বুশ, বারাক ওবামা, জন ম্যাজর, টনি ব্লেয়ার, গর্ডন ব্রাউন পর্যন্ত কেউই কখনো গলা উঁচিয়ে ইসরাইলকে বলেনি, অনেক হয়েছে, ইতোমধ্যেই ৮০% দখল করে নিয়েছ, এবার থামো।

তারা বরং সেই গ্রাম্য মাতবরের মতো, ফিলিস্তিনকে আশান্বিত করে, বলে বিষয়টা আমরা দেখছি, অপরদিকে ইসরাইলকে ইশারা করে দখল চালিয়ে যাওয়ার জন্য। ফলে শান্তির জন্য যখন যত উদ্যোগ গৃহিত হয়েছে সবই ব্যর্থ হয়েছে। আসলে আমেরিকা, ব্রিটেন কিংবা ইসরাইল কখনোই চায়নি শান্তি প্রতিষ্ঠা হোক। যদি চাইত তাহলে ফিলিস্তিনের নতুন নতুন এলাকায় তারা হরদম দখলদারিত্ব চালিয়ে যেত না। এখন, এই ২০০৯-এর শেষ প্রান্তে এসে বারাক ওবামা ও হিলারি ক্লিনটন শান্তি প্রতিষ্ঠার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তা আরও হাস্যকর।

কারণ আগে অনেকবার শান্তি আলোচনা শুরু করার আগে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ইসরাইলিদের বসতি নির্মাণ বন্ধ রাখার এবং ফিলিস্তিনি এলাকায় সব ধরনের উত্তেজনামূলক উগ্র আচরণ ও আক্রমণ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হতো। বহুবার এসব নির্দেশ কড়াকড়িভাবে পালিত হয়েছে আমরা দেখেছি। কিন্তু এবার আমেরিকার পক্ষ থেকে বসতি নির্মাণে শুধু সংযম প্রদর্শনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এটা কি হাস্যকর নয়? যদিও আমেরিকাকে খুশি করার জন্য ফিলিস্তিনের প্রেসিডেণ্ট মাহমুদ আব্বাস সবধরনের সহযোগিতামূলক আচরণ করেছেন, প্রস্তাব মেনে চলেছেন কিন্তু ইসরাইল একদিনের জন্যও নির্মাণকাজ বন্ধ রাখেনি। আগেও আমরা বহুবার দেখেছি, আমেরিকার সাধারণ নির্দেশ ইসরাইল কখনোই মান্য করে না বরং কখনো এসব বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে উদ্ধত্য প্রকাশ করে।

একবার সিরিয়ার সঙ্গে সীমান্ত সমস্যা নিয়ে সৃষ্ট উত্তেজনা নিরসনে একটি সম্মলনে যোগদানের আগে এহুদ বারাক নিউজউইক সাময়িকীকে বলেছিলেন, সিরিয়ার সঙ্গে আমি যে আলোচনা করতে যাচ্ছি, আমি বলব স্থিতিশীলতা বিধানে, কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়নে কিংবা আর্থিক নিরাপত্তাজাল বিস্তারে আমেরিকার অবদান সত্যি অতি অল্প। এহুদ বারাকের এ বক্তব্যই প্রমাণ করে আমেরিকার বিশাল আর্থিক সাহায্য, অস্ত্র-সাজ-সরঞ্জাম পাওয়ার পরও ইসরাইল যে, আমেরিকার প্রতি খুব বেশি নতজানু নয়। থাকলেও তারা তা কখনো বাইরে প্রকাশ করে না। তবু একবার এহুদ বারাকের সময় একটু আশার আলো দেখা দিয়েছিল। ফিলিস্তিনের অবিসংবাদিত নেতা ইয়াসির আরাফাত তখনও বেঁচে আছেন।

শান্তি প্রক্রিয়ায় তিনিও একটি পক্ষ। এহুদ বারাক নিজে থেকেই উদ্যোগী হয়েছিলেন। তাঁর বক্তব্যও যথেষ্ট জোর ছিল। নিউজউইক সাময়িকীর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি চালর্স দ্য গলের উক্তি উদ্ধৃতি করে বলেছিলেন, সাহসীরাই শান্তি প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু তাঁর পদক্ষেপও শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি, কারণ তখনকার নির্বাচনে তিনি হেরে গেলেন।

আর ২০০৪-এর ১১ নভেম্বর অসুস্থ হয়ে ফ্রান্সের একটি হাসপাতালে মারা যান আরাফাত। ওইসময় কিছু দিনের জন্য হলেও ভূমি দখলের কাজ বন্ধ ছিল। তাই বলা যায়, প্রকৃত শান্তি উদ্যোগ অতীতে কখনোই গৃহিত হয়নি। আমেরিকা-ইসরাইল বরাবরই চায় গোলযোগ থাকতে থাকতে ফিলিস্তিনের সবটুকু ভূমি ইসরাইলের দখলে চলে যাক। এটাই তাদের বহু বছরের গোপন পরিকল্পনার অংশ।

এ আলোচনার পরিসর একটু বাড়ালে দেখা যাবে, সেই ১৯৭০-এর দশক থেকেই আরব ও ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ইসরাইলের সংঘাত চরম আকার নেয়। এ প্রসঙ্গে http://en.wikipedia.org/wiki/Israeliâ থেকে একটি উদ্ধৃতি দিতে পারি আমরা। The peace process in the Arab-Palestinian-Israeli conflict has taken shape over the years, despite the ongoing violence in the Middle East and an “all or nothing” attitude about a lasting peace, “which prevailed for most of the twentieth century.” প্রিয় পাঠক, এ বক্তব্যটা সেই ১৯৭০-এর দশকের শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে। তবে ১৯৭০ এর পরে ফিলিস্তিনি ছাড়া আরবসহ অপরাপর যে সকল দেশের সঙ্গে ইসরাইলের সংঘাত নিরসনের উদ্দেশ্যে শান্তি চুক্তি (peace treaties) হয়েছিল, যেমন মিসর-ইসরাইল শান্তি চুক্তি (১৯৭৯), জর্ডান-ইসরাইল শান্তি চুক্তি(১৯৯৪), কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওসব চুক্তি এখনো কার্যকর রয়েছে। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে কোনো চুক্তিই শেষ পর্যন্ত সফলতার মুখ দেখেনি।

কারণ একটাই, ইসরাইল অন্য কোনো দেশের ভূ-খ দখল করে আবাসভূমি গড়ে তুলেনি। যাহোক, একটি চূড়ান্ত শান্তি চুক্তির পক্ষে যে সকল বাধা রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়ার জন্য ইসরাইল, ফিলিস্তিন ও মধ্যস্থতাকারী দেশ আমেরিকার উদ্দেশ্যসমূহ (Views) সম্পর্কে একটি সম্যক ধারণা আমাদের পাওয়া দরকার। প্রথমেই দেখা যাক ইসরাইলের বক্তব্য কী? ইসরাইলিদের একটি বক্তব্য হলো, সংঘাতের সূচনা হয়েছে ১৯৬৭ সালের ছয়দিনের যুদ্ধ (six days war) থেকে এবং সেই যুদ্ধ ও সংঘাত বন্ধ করার জন্য উভয়পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে দখলিকৃত ভূমির ওপর ইসরাইলিদের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা প্রদান করা হয়। কট্টরপন্থীদের অভিমত হলো যে, দখলকৃত (আগে-পরে) ভূমি কিছুতেই ফেরত দেয়া হবে না বরং পুরো এলাকার ওপর সার্বভৌম ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হবে। তবে আলেচানা সন্তুষজনক বা ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হলে গাজা স্ট্রিপ ছেড়ে দেয়ার বিবেচনা করা যেতে পারে।

ইসরাইলিদের আরেক পক্ষের প্রধান মনোভাব এমন যে, শান্তি প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ এবং নিকট ভবিষ্যতে তা সম্পন্ন হওয়ার কোনো সম্ভবনা নেই। অন্যতম কারণ ফিলিস্তিনিদের সন্ত্রাসী আচরণ। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনি নেতৃত্বের প্রতিও তাদের কোনো আস্থা নেই। এক্ষেত্রে আত্মঘাতী বোমা হামলার ভয়ে পশ্চিম তীর থেকে সৈন্য প্রত্যাহারে ইসরাইলিরা উৎসাহবোধ করে না। ১৯৯৯-এর অসলো অ্যাকর্ড ও ২০০০-এর দি ক্যম্প ডেভিড সম্মেলনের আপস-মিমাংসা আলোচনা থেকে ইসারইলি নেতৃত্ব শান্তির জন্য সম্ভাব্য পদ্ধতি হিসেবে দুটি রাষ্ট্রের অস্তিত্ব মেনে নিতে রাজি হয়েছিল।

কিন্তু দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সন্ত্রাসী কর্মকা সে সম্ভাবনাকে নসাৎ করে দেয় এবং ধরে নেয়া হয় শান্তি আলোচনা এবং দুটি রাষ্ট্র পদ্ধতি কার্যকর কোনো সমাধান নয়। এ পর্যায়ে আবার গণভোটে ২০০৬-এ ফিলিস্তিনের ক্ষমতায় আসে চরমপন্থী দল হামাস। স্বাভাবিক কারণেই দেখা যায়, শান্তির জন্য ফিলিস্তিনিরা খুব বেশি দাবী করছে কিন্তু বিনিময়ে দিতে চাচ্ছে খবুই কম। এবার দেখা যাক আমেরিকার বক্তব্য কী? শান্তি প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার জন্য আমেরিকারও কিছু বক্তব্য আছে। এসব বক্তব্য এসেছে আমেরিকান অফিসিয়াল, অধিবাসী এবং লবিং গ্রুপের পক্ষ থেকে।

আমেরিকান সরকারের পক্ষ বলা হয়, যুগ যুগ ধরে তারা ইসরালকে আর্থিক ও সামরিক সাহায্য দিয়ে আসছে। ইউএস অ্যাইড টু ইসরাইল অর্থাৎ ইসরাইলে জন্য আমেরিকার সাহায্য বিশ্বের অপরাপর সকল দেশের জন্য আমেরিকার মোট সাহায্যকে অতিক্রম করেছে। কাজেই তাদের আদেশ-নির্দেশ-উপদেশ ইসরাইলকে মানতে হবে। অবশ্য ২০০২ থেকে আমেরিকা আবার ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষকেও সীমিতমাত্রায় (১০০ মিলিয়ন ডলার) আর্থিক সাহায্য দিয়ে আসছে এবং ইউরোপীয়ান দেশসমূহকে সাহায্য দেয়ার জন্য উৎসাহিত করছে যাতে এই সাহায্য বছরে এক বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। তবে ফিলিস্তিনে ইসরাইলের সকল মারণাত্মক ও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের যে কোনো নিন্দা প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভেটো দেয়ার ক্ষমতা সংরক্ষণ আসছে দেশটি।

সামপ্রতিক সময়ের সকল আমেরিকান প্রেসিডেণ্ট এই একটি নীতি মেনে আসছে যে, শান্তির জন্য ইসরাইল ১৯৬৭তে দখল করে নেয়া কিছু ভূমি ছেড়ে দেবে। বিনিময়ে ফিলিস্তিনিদের সকল প্রকার সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে এবং অধিকৃত এলাকায় ইসরাইলেদের থাকার অধিকার নিঃশর্ত মেনে নিতে হবে। ইসরাইল-আমেরিকার প্রধান উদ্দেশ্যসমূহ সংক্ষেপে একত্র করলে যা দাঁড়ায়, তাহলো : ১। উভয় পক্ষকেই পরস্পরের প্রতি সহনশীল হতে হবে। ২।

ফিলিস্তিনকে ইসরাইলি সেটেলমেন্ট মেনে নিতে হবে এবং ছেড়ে দেয়া ভূমি নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। ৩। সন্ত্রাসী কর্মকা, সীমান্ত নিরাপত্তা, উত্তেজনা, নৃশংসতা নিরসনে ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীর হস্তক্ষেপ মেনে নিতে হবে ইত্যাদি। অপরদিকে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে পক্ষ দুটি। মধ্যপন্থী পক্ষটি, যাদের নেতৃত্বে ছিলেন ইয়াসির আরাফাত, বর্তমানে মাহমুদ আব্বাস।

তাদের সঙ্গেই ফিলিস্তিনের বেশিরভাগ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আত্মিক সম্পর্ক। তারা চান ইসলাইলের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে থাকার জন্য। শান্তির জন্য এটা বড় জরুরি। তারা চান, সব ধরনের সন্ত্রাস বন্ধ হোক। কিছু ছাড় দিয়ে হলেও বন্ধ হোক ইসরাইলিদের অন্যায় দখলদারিত্ব ও আক্রমণ।

কিন্তু অপরপক্ষ হামাস, ইসলামি জিহাদ ও আল আস্কা মারটায়ার ব্রিগেডস ইসরাইলের অস্তিত্ব মেনে নিতে নারাজ। তাদের বিরোধীতার মূল কথাই হলো আরব ভূমিতে ইহুদী রাষ্ট্রটির অস্তিত্ব মেনে না নেয়া। তাদের এই বিরোধীতার জন্য ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের বহু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ বিফল হয়েছে। জীবন দিতে হয়েছে ফিলিস্তিনের বহু নিরপরাধ মানুষকে। আমেরিকা-ইসরাইলের চাপে হোক আর শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে হোক আরাফাত এসব চরমপন্থী সংগঠনের সদস্যদের বহুবার গ্রেফতার করিয়েছেন।

ইতোমধ্যে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস আগামী ২৪ জানুয়ারি ফিলিস্তিনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠানের তারিখ ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু তার এ ঘোষণার বিরোধিতা করেছে হামাস। তারা আব্বাসের এ ঘোষণাকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক বলে অভিহিত করেছে। কোনো কোনো পক্ষ বলেছে, ২০০৬-এর জানুয়ারি নির্বাচনে আব্বাসের দল ফাতাহ হারার পর থেকে দলটি কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে। এই অবস্থায় ক্ষমতাসীন হামাসের সঙ্গে ফাতাহর বৈরি সম্পর্কেরও অবসান ঘটেনি।

আবার নিজের দলের মধ্যেই আব্বাসের অবস্থান খুব জোরালো না হওয়ায় নির্বাচন আদৌ হবে কি-না এখনো নিশ্চিত নয়। এ অবস্থায় ওবামা-হিলারি নতুন করে শান্তি আলোচনা শুরু করতে বৈঠক শুরু করেছেন। তাদের ভাষায়, শান্তির অবশিষ্ট আলোচনা তারা করবেন। কিন্তু আগেই বলা হয়েছে, পশ্চিম তীরে নতুন বসতি নির্মাণ বন্ধের জন্য ইসরাইলকে তারা নির্দেশ দেননি। ফলে মাহমুদ আব্বাস হিলারিকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, বসতি নির্মাণ বন্ধ না হলে কোনো আলোচনা নয়।

ইসরাইল ও আমেরিকা অবশ্য আব্বাসের বক্তব্য প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এই বলে যে, শান্তি আলোচনায় না আসার জন্য আব্বাস এই শর্ত দিয়েছেন। এ অবস্থায় একমাত্র ভবিষ্যতই বলতে পারবে হাস্যকর এ আলোচনা-উদ্যোগের পরিণতি কী হবে। এই আলোচনা শেষ করার আগে ১৯৩৯ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত ফিলিস্তিন-ইসরাইলে হতাহতের একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরা হলো, যাতে সব পক্ষেরই টনক নড়ে। সবাই যেন যুক্তিযুক্ত ও প্রকৃত শান্তি আলোচনার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলায় মনযোগী হন। OCHAoPt-এর পরিসংখ্যান : ২০০৫ থেকে ২০০৮এর ২৬/১২/০৮ তারিখ পর্যন্ত ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতের কারণে নিহত হয়েছে ফিলিস্তিনি ১৭৫৪ জন, ইসরাইলি ১১৭ জন।

এই মৃত্যুর ফলে পিতৃহীন হয়েছে ফিলিস্তিনের ৩০৯ এবং ইসরাইলের ১২ শিশু (১৮ বছরের নিচে যাদের বয়স)। আহত হয়েছে ফিলিস্তিনি ৬২৯৭ আর ইসরাইলি ১১৮৩ জন। আহতদের মধ্যে শিশুর পিতা ফিলিস্তিনের ৮৬৪ এবং ইসরাইলের ১৪ জন। ইসরাইলি মানবধিকার গ্রুপ বিটিসালেম(B’Tselem)-এর পরিসংখ্যান: ২৭ ডিসেম্বর ২০০৮ থেকে ১৮ জানুয়ারি ২০০৯ পর্যন্ত গাজায় সামরিক অভিযানে ১৩৮৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৭৭৩ জনই বেসামরিক নাগরিক।

অপরদিকে ওই সময়, ইসরালি নিহত হয়েছে ১৩ জন, তাদের মধ্যে বেসামরিক নাগরিক ৩ জন। ২০০০-এর সেকেন্ড ইন্তিফাদার পর থেকে ২০০৪ পর্যন্ত ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতের কারণে নিহত হয়েছে ফিলিস্তিনি ৩১৯৪ এবং ইসরাইলি ৯৪৬ জন। উল্লেখ্য যে, এই পরিসংখ্যানের কাজ শুরু হয় ২৯/০৯/২০০০ তারিখ থেকে। বিটিসালেমেরই আরেকটি পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ০৯/১২/১৯৮৭ থেকে ২৯/০৯/২০০০ পর্যন্ত ফিলিস্তিনের ১৫৪৯ এবং ইসরাইলের ৪২১ জন নিহত হয়েছে। গ্রেট আরব রিভল্টের এক পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় ১৯৩৬ থেকে ১৯৩৯ পর্যন্ত ফিলিস্তিনের ৩০০০ থেকে ৬০০০ এবং ইসরাইলের কয়েকশ লোকের মৃত্যু হয়েছিল।

গাজী সাইফুল ইসলাম কবি, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ১২/১১/০৯ বিঃ দ্রঃ প্রিয় পাঠকদের প্রতি আহ্বান আমার সব লেখা পড়ুন, ডিটেলস মন্তব্য লিখুন:

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।