আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

“ তুমি তোমার গর্ভে আর কোন সন্তান ধারণ করো না...........................



গাড়িতে জানালার পাশে বসে যে বাহিরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করছিলাম, তা নয় । অবচেতন মনে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছি আর কি । টিকেট কেটে একজন আমার পাশে এসে বসল। স্বভাবতই আমি নড়েচড়ে বসলাম । ক্লান্ত দেহে কিছুই ভাল লাগছিলো না ।

চোখে ঘুম ঘুম ভাব । কি নিয়ে যেন লোকটা অন্যদের সাথে কথা বলছিল, বুজতে পারছিলাম না । পাশ ফিরে দেখি লোকটার চোখ দিয়ে টল টল করে জল পড়ছে । তার ভিতর থেকে একটা বুক ফাটা কান্না যেন বের হয়ে আসতে চাইছে । একটা হৃদয় বিদীর্ণ হাহাকার আর বোবাকান্নার ভিতর দিয়ে লোকটা কি যেন একটা বলতে চাইছে ।

কাউকে জরিয়ে ধরে হাওমাও করে কাঁদতে চাইছে । লোকটা সারা বছর সঞ্চয় করে হাজার ত্রিশেক টাকা নিয়ে মালপত্র কিনতে এসেছিল । তার সকল সঞ্চয় টেম্পু থেকে পকেট কেটে নিয়ে গেছে । আমি লোকটার মুখ পানে তাকাতে পারছিলাম না, আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছিল। এই একটি বছর কেমন করে তার ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের মুখে আহার তুলে দিবে ? ভাবতেই আমার চোখ আবার ঝাপসা হয়ে আসছিল ।

কিছুতেই মনকে প্রবোদ মানাতে পারছিলাম না । লোকটার কোন অভিযোগ নেই, আছে শুধু নীরব কান্না আর বুক ফাটা দীর্ঘশ্বাস । আজ তোমরা যারা ন্যায় ও সুশাসনের কথা বল, মানবাধিকারের কথা বল , আজ কোথায় তোমাদের মানবিকতা ? ফিরিয়ে দাও তার সারা জীবনের সঞ্চয় । আজ যারা তোমরা আইনের শাসক , আইনের মহান পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করে মানবতার কল্যাণ করতে চাইছ, তোমাদেরকেই বলছি, তার জীবিকা তাকে ফিরিয়ে দাও । আজ যারা মানবাধিকারের কথা বলছ , তাদেরকে বলছি তাকে ও তার ছোট ছেলেমেয়েদের পৃথিবীতে বাঁচার সুযোগ করে দাও ।

যদি না পার , তাহলে তোমাদের এই আইন আর মানবাতার ঝুলি নিয়ে সামনে এসো না । আজ যারা সমাজে শান্তি - শৃঙ্খলা ও মানুষের জান-মালের নিরাপত্তার দায়িত্ব কাধে তুলে নিয়েছো , তাদেরকে বলছি সেই অসহায় মানুষটির জীবিকা ফিরিয়ে দাও। যদি না পার , তাহলে খুলে ফেল সেই পোশাক যা তুমি পরিধানের সময় শপথ নিয়েছিলে, “ মানব কল্যাণই আমার ব্রত । ” “ওগো মা তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ভরে, তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে । ” “ডান হাতে তোর খড়্গ জ্বলে, বাঁ হাত করে শঙ্কাহরণ, দুই নয়নে স্নেহের হাসি, ললাটনেত্র আগুনবরণ ।

” কই ‘ মা ’ আজকে তো খড়্গ হাতে আসিস নি সেই দুষ্কৃতিকারী, ঠক, প্রতারকদের বিনাশ করতে । তুমি না আমাদের মা ? “দেশ মাতা” কই আজ তো তুমি আসোনি সেই সর্বস্বহারা সন্তানের চোখের জল মুছিয়ে দিতে। কই তুমি তো তাকে বুকে টেনে নাওনি । “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি, চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস আমার প্রাণে, ওমা আমার প্রাণে..........................................। ” যখন বিদেশের মাটিতে, কোন অর্জনে , কোন গৌরবে এই সুর বেজে ওঠে , তখন তোমায় অন্তর দিয়ে অনুভব করি ।

দু’ চোখ জলে ভিজে যায় । কোন ভাল কাজের শুরুতে, কোন অর্জনে সদা তোমার গুনগান করি । তাহলে কেন আমাদেরকে এমনি করে ভালোবাসো না ? তাহলে আজ কেন আমাদেরকে এতো কষ্ট দিচ্ছ ? এভাবে আমাদেরকে তিল তিল করে মারার চেয়ে একেবারেই মেরে ফেল । আজ মনে হচ্ছে তোমার কোলে জন্ম নেয়ার চেয়ে কোন যুদ্ধ-বিগ্রহ দেশে জন্ম নেয়াই ভাল ছিল । তাহলে আর এতো কষ্ট পেয়ে মরতে হত না, একেবারেই মরে যেতাম ।

যখন তুমি পরাধীনতার শৃঙ্খলে বন্দী ছিলে, তখন তোমার স্বাধীনতার জন্য কত শত ছেলে বুকের তাজা রক্ত ঝরিয়েছে , নিজেদেরকে তোমার চরণে বলি দান করেছে । আজ তোমার স্বাধীন কোলে কেন আমরা অবাধ বিচরণ করতে পারি না, আজো কেন তোমার কোলে এতো সন্তান বুকের রক্ত ঝরাচ্ছে, এতো শত প্রাণ হারাচ্ছে ? আজো কেন তোমার সন্তানের মুখে দু মুঠো অন্ন তুলে দিতে পার না, আজো কেন এতো লোক জীবিকার তাগিদে তাদের রক্ত, ঘাম ঝরাচ্ছে ? আজো কেন প্রতি দিন কোন না কোন মায়ের বুক খালি করে তার সন্তানকে কেড়ে নিয়ে যাচ্ছ ? আজো কেন এতো হতাশাগ্রস্থ যুবক পথে পথে ঘুরে বেড়ায় ? আজ কেন তোমার সন্তানরা বিপথগামী ? আজো কেন তোমার সন্তানরা শিক্ষা অর্জন করতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছে? আজো কেন কিছু কালপ্রিট তাদের বিষাক্ত ছোবল দিয়ে তোমার বক্ষ ছিন্ন ভিন্ন করছে ? “আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি, তুমি এই অপরূপ রূপে বাহির হলে জননী !” “এমন দেশটি কোথাও খুজে পাবে নাকো তুমি সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি। ” “পুষ্পে পুষ্পে ভরা শাখি, কুঞ্জে কুঞ্জে গাহে পাখি গুঞ্জরিয়ে আসে অলি, পুঞ্জে পুঞ্জে ধেয়ে তারা ফুলের উপর ঘুমিয়ে পড়ে ফুলের মধু খেয়ে । ” “ভাইয়ের মায়ের এতো স্নেহ, কোথায় গেলে পাবে কেহ ও মা তোমার চরন দুটি, বক্ষে আমার ধরি আমার এই দেশেতে জন্ম যেন, এই দেশেতেই মরি। ” তোমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই, নেই কোন অনুযোগ ।

শুধু এইটুকু বলব মা, যে সন্তানের জীবনের নিশ্চয়তা তুমি দিতে পার না, যে সন্তানকে ঘুম পাড়ানির গান শুনিয়ে ঘুম পাড়াতে পারো না। সন্তানের চোখের জল তুমি মুছিয়ে দিতে পারো না । তাহলে, শুধু এইটুকু বলব ‘ মা ’, “তুমি তোমার গর্ভে আর কোন সন্তান ধারণ করো না.......................................................... ..................................................................”

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।