আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের তথ্য যাচাই করছে ইসি

বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোটের প্রতিরোধের মুখেও বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে—এমনটা ধরে নিয়েই সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ জন্য কমিশন সচিবালয় ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপির করা একতরফা নির্বাচনে মাঠপর্যায়ে কী ঘটেছিল, সেসব তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করছে।  কমিশন সচিবালয় সূত্র জানায়, বিএনপি ও তাদের শরিকেরা নির্বাচন বর্জন করলেও কমিশন তাদের জন্য অপেক্ষা করবে না। বিরোধী জোটকে নির্বাচনে আনার জন্য তারা কোনো উদ্যোগও নেবে না। যে কয়টি দল নির্বাচনে অংশ নেবে, তাদের নিয়েই নির্বাচন করবে কমিশন।



কমিশন সচিবালয় এ মনোভাব নিয়ে এগোলেও তাদের মাঠ কর্মকর্তারা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। কারণ, মাঠের কর্মকর্তারা ১৫ ফেব্রুয়ারির একতরফা নির্বাচনে ভোট বর্জনকারীদের হাতে নাজেহাল হয়েছিলেন। এবারও তাঁরা সেই আশঙ্কা করছেন। কোনো কোনো কর্মকর্তা তাঁদের আশঙ্কার কথা কমিশন সচিবালয়কে জানিয়েছেনও।

সূত্র জানায়, ১৫ ফেব্রুয়ারির সেই নির্বাচনে কী ঘটেছিল, ভবিষ্যতে কী ঘটতে পারে, সেসব বিষয়ে কমিশন সচিবালয় থেকে কমিশনকে তথ্য-উপাত্তসহ কিছুটা ধারণা দেওয়া হয়েছে।

সে বিবেচনায় কমিশন নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা করছে। ইতিমধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।  জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কমিশন এখনো আশাবাদী, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে। তবে কমিশন তাদের আহ্বান জানাবে না। কারণ, বিরোধীদলীয় জোট আমাদের কথা শুনবে না।

সে জন্য তারা আসলেও নির্বাচন হবে, না আসলেও নির্বাচন করতে হবে। ’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বেশির ভাগ দল ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচন বর্জন করেছিল। তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল বিএনপি ফ্রিডম পার্টিসহ কয়েকটি দল নিয়ে নির্বাচন করেছিল। তবে সেই বিএনপি সরকার মাত্র দেড় মাস স্থায়ী হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন পাস করে তার অধীনে আবার নতুন নির্বাচন দিতে হয়েছিল বিএনপিকে।

 কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সেই নির্বাচনে মোট কেন্দ্র ছিল ২৪ হাজারের মতো। শেষ পর্যন্ত ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার সংকট দেখা দিলে কেন্দ্রের সংখ্যা ২১ হাজারে নামিয়ে আনা হয়।

তখনকার বিরোধী দলের প্রতিরোধের মুখে সারা দেশের কয়েক হাজার কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তারা ঢুকতেই পারেননি। অনেক কেন্দ্র ভোটারবিহীন থাকলেও ভোট গ্রহণ হয়েছিল। নারায়ণগঞ্জের আদমজী নগরের ছয়টি এবং সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি কেন্দ্রে চেষ্টা করে সেনাবাহিনীও ঢুকতে পারেনি।

গোপালগঞ্জেও একই পরিস্থিতি হয়েছিল।  সে বার ৩০০ আসনের মধ্যে ৪৮টি আসনের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিলেন। নির্বাচন হয়েছিল ২৫২টি আসনে। শেষ পর্যন্ত কমিশন ২৪২ আসনের নির্বাচনের ফল গেজেট আকারে প্রকাশ করেছিল। বাকি ১০টি আসনের নির্বাচনী ফল কমিশনে পৌঁছেনি।



১৫ ফেব্রুয়ারির সেই নির্বাচনে কমিশনের মোট ব্যয় হয়েছিল ৬৪ কোটি টাকা। তার মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পেছনে ব্যয় হয়েছিল ৪৮ কোটি টাকা।  কমিশন সচিবালয় সূত্র জানায়, নেতিবাচক ঘটনা ঘটতে পারে, তা বিবেচনায় নিয়ে ২১ নভেম্বর পর যেকোনো দিন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। আর ভোট গ্রহণ হবে জানুয়ারির প্রথম অথবা দ্বিতীয় সপ্তাহে। সে অনুযায়ী কমিশন সচিবালয় প্রস্তুতিমূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

গতকাল পর্যন্ত ভোটার তালিকা ছাপা এবং প্রার্থীদের জন্য ছবিবিহীন ভোটার তালিকার সিডি জেলায় জেলায় পাঠানোর কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। ৩৮ হাজার ভোটকেন্দ্রের প্রাথমিক তালিকা গত ৩০ আগস্ট চূড়ান্ত করা হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন করা হবে।

সূত্র জানায়, পুরোনো দুই লাখ ৬৫ হাজার স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের সঙ্গে এবার যোগ হয়েছে নতুন আমদানি করা ৪০ হাজার ব্যালট বাক্স। গত সপ্তাহে এসব ব্যালট বাক্স জেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে।

অমোচনীয় কালির কলম, সিল, প্যাড, মালামাল বহনের ব্যাগসহ অন্যান্য মালামাল কেনার কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে।  নির্বাচনে মোট ২২ ধরনের ফরম ব্যবহার হয়ে থাকে। এর মধ্যে মনোনয়ন ফরমসহ তিনটি ফরম বাদে বাকি ফরম ছাপার কাজ শেষ হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে বাকি ফরম ছাপার কাজ শেষ হবে। প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর ব্যালট পেপার ছাপার কাজ শুরু হবে।



সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের কপি কমিশনে এলে এবং নির্বাচন পরিচালনা বিধি ও আচরণবিধি চূড়ান্ত হওয়ার পর নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়াল ছাপার কাজ শুরু হবে। কমিশনের আজকের বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হবে।
নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা বর্তমানে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলের জন্য তৈরি করা আচরণবিধি চূড়ান্ত করার কাজ এখনো প্রক্রিয়াধীন। তবে এ সপ্তাহে আচরণবিধির খসড়া যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে এবং আগামী সপ্তাহের মধ্যে তা চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে।

 কমিশনের আজকের বৈঠকে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ নিয়েও আলোচনা হতে পারে। আগামী ১৬ অথবা ১৭ জানুয়ারি থেকে এসব কর্মকর্তার প্রশিক্ষণ শুরু হবে বলে কমিশন সচিবালয় সূত্র জানায়।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।