আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাগলামি ও সভ্যতা:মিশেল ফুকো: বিশ্লেষণ

আমি চিন্তা করি সুতরাং আমি অস্তিত্বশীল

উন্মাদনা সম্পর্কে সক্রেটিস যে ধারণা দিয়েছেন তা থেকে আমরা তৎকালীন গ্রীকদের পাগলামি সম্পর্কে মনোভাব জানতে পারি। সক্রেটিস তার সময়ের অস্বাভাবিক/উন্মাদ আচরণ সম্পর্কে দুটি প্রধান ভাগের সম্পর্কে ধারণা প্রদান করেন। এর প্রথমটি সম্পূর্ণভাবে জৈব-গত সমস্যা থেকে আর দ্বিতীয়টি মূলত সামাজিক রীতিনীতি বিবর্জিত আচরণের পর্যায়ভুক্ত । দ্বিতীয় ধাপটিতে সক্রেটিস শিল্পী, প্রেমিক, ধর্মান্ধ, ভাববাদী অথবা নবীদের অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। পরবর্তীতে প্লেটোর বললেন, উন্মাদনা যতক্ষণ পর্যন্ত না ধ্বংসাত্মক হিসেবে বিবেচিত হয় তার আগপর্যন্ত এটি বরং সামাজিক ক্ষমতা বৃদ্ধিতেই সাহায্য করে।

অর্থাৎ এ যুগে উন্মাদনাকে আজকের মতো এতোটা খারাপ চোখে দেখা হতোনা। গ্রীক চিকিৎসক হিপোক্রেটস পাগলদের নিয়ে অনেক গবেষণা করেছেন, হিস্টিরিয়ার ক্ষেত্রে তিনি মনে করতেন বিয়ে হচ্ছে আরোগ্য লাভের সবচাইতে ভালো পদ্ধতি। অর্থাৎ আশ্রম নয় বরং বিয়ে নামক সামাজিক বন্ধন স্থাপনের মাধ্যমে পাগলামি দূর করা সম্ভব। আমাদের দেশে এখনো কেউ পাগল হলে তাকে বিয়ে দেয়ার রেওয়াজ আছে। যাইহোক, মধ্যযুগেও পশ্চিমের অনেক দেশে পাগলামিকে পবিত্র বলে গণ্য করা হতো।

তখন মনে করা হতো পাগলামি সত্যেরই একটি অংশ। অর্থাৎ তখন পর্যন্ত পাগলকে সমাজ থেকে বিতাড়িত ঘোষণা করা হয়নি। ঠিক এ কথাগুলোই ১৯৬১ সালে ফরাসি ভাষায় লেখা তার "ফলি এ দেরজঃ ইসতোয়ার দ্যা লা ফলি আ লাজ” নামক ক্লাসিক গ্রন্থে বলতে চেয়েছিলেন মিশেল ফুকো। গ্রন্থটি পরবর্তীতে ১৯৬৪ সালের দিকে "মেডনেস এন্ড সিভিলাইজেশন" নামে ইংরেজি অনুবাদ আকারে বের হয় । ফুকো বলেন, ‘পাগলামি’ ও ‘যুক্তি’ মানবসভ্যতার ইতিহাসে ধীরে ধীরে একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আজ আধুনিক সময়ে এসে শুধু নির্বুদ্ধিতা বা বোকামি রইলোনা বরং এটি এখন সাইকো-প্যাথলজি/ মানসিক অসুস্থতা যা বৈজ্ঞানিক পন্থায় চিকিৎসার মাধ্যমে উপশম ঘটাতে হয়।

যে পাগলামিগুলো ছিলো মধ্যযুগীয় ইউরোপে কেমন ‘পবিত্র মরমী রহস্য’ - মানব অভিজ্ঞতার ‘আধ্যাত্মিক’ অংশ - রেনেসাঁর সময় সেই পাগলামিগুলো হয়ে উঠলো যুক্তির উল্টো-পিঠ। রেনেসাঁর সময় থেকেই পাগলামো আর শুধু সামাজিক প্রতিবন্ধকতাই রইলোনা, সে যেন মহান ঈশ্বরের সুবিন্যস্ত জগতের সুশৃঙ্খল বিন্যাসকে ভাঙার চেষ্টা করছে। ফুকোর বক্তব্য অনুযায়ী মনে হচ্ছে যেন এই প্রি-মডার্ন পাগলেরা ফ্রেডরিক নীৎসের আগেই ঈশ্বরকে মেরে ফেলার দুরভিসন্ধিতে যোগ দিয়েছিলো। ফুকো দেখান যে, সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীর পাগলা-গারদগুলোকে ঠিক মেডিকেল-আশ্রম বলা চলে না, সেগুলো ছিলো ‘semi-juridical’ প্রতিষ্ঠান। পাগল ছাড়াও, বেকার, নিঃস্ব, ভিক্ষুক, অলস যারা ছিল মেইনস্ট্রিম সমাজ থেকে বাইরে, তাদের আশ্রয় জুটতো সেখানে।

ইউরোপের সেকালের অর্থনৈতিক অবস্থার উঠা-নামায় এই দলের মানুষদের দুই রকম অবস্থার সম্মুখীন হতে হতো। এক, অর্থনৈতিক মন্দায় তাদের আশ্রমে ঠেলেঠুলে ‘বিশ্রামে’ রাখা; এবং দুই, কর্মক্ষম প্রোডাক্টিভ সময়ে তাদের কম পয়সায় কাজে লাগানো। সপ্তদশ শতাব্দীর ইউরোপে ‘অযৌক্তিক’ মানুষদের ‘আশ্রমে’ পুনর্বাসনের এই সময়টিকে ফুকো বলছেন “The Great Confinement” । এভাবে আধুনিকতার যুগে ‘উন্মাদনা’ ক্রমান্বয়ে পরিণত হলো মনোবিদ্যার একটি সাবজেক্ট হিসেবে। আবেগ অনুভূতির তীব্র বহিঃপ্রকাশের উপর ভিত্তি করে নামকরণ করা হয় ম্যানিয়া, মেলানকোলিয়া, হিস্টিরিয়া, হাইপোকণ্ড্রিয়া ইত্যাদির।

সর্বপ্রকার ধর্মীয় আর নৈতিকতার লেবাস ছাড়িয়ে এটাকে এখন পুরোপুরি চিকিৎসাবিদ্যার তত্ত্বাবধানে আনা হোলো। ফুকোর এই গ্রন্থটির প্রকাশের পর থেকেই এর তথ্যগত অসাড়তা মধ্যযুগীয় উৎস ঘেঁটে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন পিটার সেডউইক, এরিক মিডফোর্ড সহ অনেকেই। পিটার সেডউইক বলেছিলেন " এনলাইটেনমেন্টের পূর্বেও কিছু দেশে পাগলাগারদ ছিলো"। এরিক মিডলফোর্ট সমালোচনা করতে গিয়ে বলেন “মধ্যযুগেও নির্যাতনমূলক চিকিৎসা পদ্ধতির অস্তিত্ব ছিলো আর মধ্যযুগে কোন কোন অঞ্চলে মানসিক ব্যাধিকে পাপের সাথে সম্পর্কিত বলে মনে করা হতো” আর তাদের এ কথাতেই ফুকোর উন্মাদনা বিষয়ক এমন সত্য উপলব্ধিকে ভুল প্রমাণিত করার চাইতে বরং আরো বেশি যৌক্তিক করে তুলে। সত্যটা এই যে, আজ পর্যন্ত আমরা ইতিহাসে পাগলদের উপর ক্ষমতা বিস্তার করেছে বা করছে দুটো প্রধান শক্তি, ১) চার্চ এবং ২) চিকিৎসক।

চার্চের পুরোহিত বলেছে সমাজের প্রচলিত ধর্মের বিরুদ্ধে যায় এমন আচরণ করা যাবেনা। আর চিকিৎসকরা এসে সুস্থ আচরণের জন্য উন্মাদ ব্যক্তির উপর প্রয়োজনীয় নজরদারীর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আশ্রম গড়ে তুলেন। তারা সমাজে নিজেদের একপ্রকার কর্তৃত্ব স্থাপন করতে সচেষ্ট হন। আশ্রমগুলোতে অস্বাভাবিক আচরণের চিকিৎসার নামে রোগীর উপর চলতে থাকে অকথ্য নির্যাতন। আর স্বাভাবিক আচরণের জন্য মুক্তির স্বপ্ন দেখান তারা।

এই অলীক মুক্তি খুব কম জনই পায়। পাগল হয়ে যায় আরো পাগল। আমরা দেখি যে, আমরা দেখি যে, অন্ধকার যুগে ডাইনী/ যাদুকর যখন হত্যা শুরু হয়েছিলো। তখন ডাইনী/যাদুকরদের এক প্রকার পাগল হিসেবেই ভাবা হতো। আর এমন ভ্রান্ত বিশ্বাসের কারণে অনেককেই শুধুমাত্র পাগল হওয়ার দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিলো।

১৬০৪ সালের ঐ সময়ে ইংল্যান্ডের রাজা ছিলেন প্রথম কিং জেমস। তিনি অশুভ শক্তির ভয় করতেন এবং একারণে তিনি বাইবেলের কিছু লাইনও নিজের মনমতো মত বদলে ফেলেন যেমন, “thou shalt not suffer a poisoner to live” এর বদলে তিনি লিখেন “thou shalt not suffer a witch to live”। তিনি “Witch craft act” প্রণয়ন করেন। এই আইনে ডাইনী আর ম্যাজিশিয়ানদের ফাঁসি দেয়ার কথা বলা হয়। ফাঁসির কথা বলা হলেও তাদের অনেককে অগুনে পুড়িয়ে মারার নজির পাওয়া যায়।

প্রকৃত ডাইনী/ যাদুকরদের ছাড়াও এক্ষেত্রে অনেক মানুষকে নিতান্ত তাদের অস্বাভাবিক আচরণের জন্য জ্বলন্ত আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছিলো। প্রথম কিং জেমসের কারণে বহু নিরপরাধ মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছিলো। এবং এদের মধ্য পাগলদের সংখ্যাই ছিলো বেশি। এসময় ফ্রান্সকে ইংল্যান্ডের হাত থেকে মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন জোয়ান অব আর্ক নামক এক বীরকন্যা। তাকেও পুড়িয়ে মারা হয়েছিলো।

তার সম্পর্কে তৎকালীন চার্চ অভিযোগ করেছিলো তিনি নিজেকে নবী বলে দাবি করতেন। যাই হোক, পরবর্তীতে Scot তার “the discovery of witchcraft” গ্রন্থে দেখান কোনরকম শয়তানের সাহায্য ছাড়াই সাধারণ কৌশলে শূন্যে ভাসা, মানুষ কেটে জোড়া দেয়া যায়। এভাবে একসময় ডাইনী/ যাদুকর হত্যা বন্ধ হলেও পাগলদের প্রতি নির্যাতন থেমে থাকেনি। এবার চিকিৎসকরা পাগলদের উপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এই ব্যাপার থেকে যেনো চার্চের পুরোহিতদের কিছুটা রেহাই দিলেন। আসলে অন্যান্য অনেক দেশে এর আগেও পাগলাগারদ ছিলো আর তাদের প্রতি নির্মম নির্যাতনের প্রাপ্ত এসকল ইতিহাস আরো ভালো ভাবে প্রমাণ করে যে পাগলদের পুরো দমে সমাজ থেকে আলাদা করার একটা প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছিলো।

স্কট যখন প্রমাণ ডাইনী হত্যায় বাধ সাধলেন তখন পাগলদের বিলুপ্ত করা অসম্ভবে পরিণত হলো তখন মানসিক চিকিৎসার নাম করে শুরু হলো এদের সমাজ থেকে বিতাড়িত করার ষড়যন্ত্র শুরু হলো। মধ্য-সপ্তদশ শতকে এসে খুব দ্রুত একসাথে অনেক গুলো উন্মদনাগার প্রতিষ্ঠিত হওয়া, রেনেসাঁসই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের দিকে ইঙ্গিত করে। যেমন, হিস্টিরিয়া সম্পর্কে এর আগে ভাবা হতো যে মেয়েদের জরায়ু তার স্বাভাবিক অবস্থান থেকে সড়ে গিয়ে সাড়া শরীরে ঘুরে বেড়ানোর কারণেই বুঝি এ সমস্যার সৃষ্টি। সতেরো শতকে এসে এ ধারণা ক্রমশ বাতিল ঘোষিত হলেও একে নারী ও যৌন সংশ্লিষ্ট সমস্যা হিসেবেই বিবেচনা করা হতো। আঠারো শতকের শেষের দিকে অনেকেই বলতে শুরু করেন উন্মাদনার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র শারীরিক চিকিৎসা যথেষ্ট নয়।

এখানে স্পষ্ট বোঝা যায় শুরুতেই উন্মাদনা মনোবিজ্ঞানের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হতোনা বরং দেহ ও আত্মার সম্পর্ক অস্বীকারের চেষ্টা চালানো হয়েছে নানা ভাবে। এর আগে ক্রুসেডের পরপর কুষ্ঠরোগীরা আরোগ্য লাভ করতে শুরু করলে তখন সেই যায়গাগুলো পরিণত হয় ভিক্ষুক, অলস আর পাগলদের বসবাসের স্থানে। একটু পরিষ্কার ভাবে বুঝিয়ে বলতে গেলে ব্যাপারটা ঠিক এমন যে, ভালো আর ব্যবহারযোগ্য জিনিসপত্র থেকে অপ্রয়োজনীয় আর অব্যবহার্য জিনিসগুলো আলাদা করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় । এভাবে পরবর্তীতে অষ্টাদশ শতকের দিকে নজর দিলে আরো দেখতে পাই কিভাবে আবার কিছু ময়লা আবর্জনা থেকে দরকার বুঝে এক রকম শ্রেণিবদ্ধভাবে পরিশুদ্ধ করার মাধ্যমে আবার ব্যবহার উপযোগী করার একটা পায়তারা শুরু হয়েছিলো। ইতোমধ্যেই ফুকোর ইতিহাস আলোচনার শুরুতেই দেখেছি যে, বাড়তি শ্রমের আশায় অপরাধী, ভবঘুরে, ভিক্ষুক আর অলসদের কিভাবে খুব সহজে মুক্তি মিলতো।

আর এক্ষেত্রে উন্মাদদের দুটি রাস্তা খোলা ছিলো হয় নির্মম মৃত্যুকে মেনে নেয়া অথবা সংশোধনের মাধ্যমে মুক্তি লাভ। ফুকোর মতে, সংশোধনের প্রক্রিয়াগুলো ছিলো আগের চাইতে আরো বেশি নির্মম। এপর্যায়ে ফুকো ক্ষমতা রক্ষার প্রয়োজনীয়তার দিকেও তার ঐতিহাসিক ইঙ্গিত প্রদান করেতে দ্বিধা-বোধ করেন নি। ফুকো উন্মাদনার প্রতি মধ্য-সপ্তদশ সমাজের ঐসকল আচরণকে নিষ্ঠুর বললেও তিনি মনে করেন, তখনো পাগলামিকে ভয়ংকর রোগ হিসেবে দেখা শুরু হয়নি। তখন একে মনে করা হতো অলস অসুস্থতা, দৈহিক বিকৃতি, বা প্রতিবন্ধকতার ফল।

উনিশ শতকে ইয়র্কে কোয়েকার, উইলিয়াম টিউক এবং প্যারিসে ফিলিপ পিনেলের দৃষ্টান্ত-অনুসরণে মানসিক বিশৃংখলাগ্রস্থদের খুব ভালোভাবেই অপরাধী, ভিক্ষুক, অলসদের থেকে আলাদা করার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেলো। এ দুজন মিথ সৃষ্টিকারী মুক্তিদাতা পাগলদের ঠিক করার জন্য যথারীতি ডাক্তারও নিয়োগ করেছিলেন। আর এভাবে ডাক্তারই কর্তৃত্বের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন। ডাক্তাররা ভাবতে লাগলেন চিকিৎসা একটি কঠিন বিজ্ঞান, আশ্রমে তারা আছেন বিজ্ঞানী হিসেবে, এবং রোগের সুনির্দিষ্ট সুরাহা করতে তারা সক্ষম। এবং ডাক্তাররা এ সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক সত্যতা প্রতিষ্ঠা করতে লাগলো।

কিন্তু ফুকো এতে ভরসা করতে পারলেন না, তিনি এসকল চিকিৎসা ব্যবস্থাকে বরং আরো বেশি নির্মম হিসেবে উল্লেখ করলেন। পিনেলের চিকিৎসা ছিলো ব্যাপক বিরক্তিকর, যেমন বরফ ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করানো, স্ট্রেইট জ্যাকেট ব্যাবহার। ফুকোর ভাষ্যমতে, এ সকল নিশ্রংস বিচার ও শাস্তি অনবরত চলত যতক্ষণ পর্যন্ত না রোগী কাবু হতো। এভাবেই যেনো যুক্তিবাদের দৈত্যের উপর ভর করে মানসিক হাসপাতালগুলো ধীরে ধীরে আশ্রয় নিয়েছে পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার ছত্রছায়ায়। যদিও ফুকো এক্ষেত্রে মার্ক্সবাদী দৃষ্টিভঙ্গি বাদ দিয়ে ক্ষমতার প্রয়োগ সম্পর্কে তার দৃষ্টি দিয়েছিলেন ।

ফুকোর মতে, অযুক্তিকে ক্ষমতার সাহায্যে টিকেয়ে রাখার জন্য প্রথমেই যেটা অতি-আবশ্যকীয় তা হলো অযুক্তিকে অসুস্থতা বা রোগ হিসেবে ঘোষণা করা। ফ্রয়েড সম্পর্কে ফুকো মনে করেন, ফ্রয়েড মানসিক রোগীকে আসাই-লাইমে অবরুদ্ধ করার ক্ষমতা খর্ব করলেও শেষ পর্যন্ত তাকে মনঃচিকিৎসকের কর্তৃত্বেই ন্যস্ত করেছেন। ফ্রয়েডীয় চিকিৎসা পদ্ধতিতে যারা আরোগ্য লাভ করেছেন তারা বিনা চিকিৎসায় আরোগ্য লাভ করতেন কিনা এ প্রশ্ন অনেক আগেই উঠেছিলো। ফুকোর মতে, পাগলামির ডিস-কোর্স নির্মাণ করেছেন, মনঃচিকিৎসক, মনোবিজ্ঞানী, সমাজ সংস্কারক, এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞগণ। এরা খেপামির ভূমিকা এবং নৈয়মিকতার ভূমিকা সংজ্ঞায়িত করেন যা অন্য সবাই মান্য করে।

এই ছিলো মোটামুটি মিশেল ফুকোর পাগলামি আর সভ্যতার সার সংক্ষেপ। এই গ্রন্থে তিনি দেখাতে চেয়েছিলেন পশ্চিমা সংস্কৃতি কিভাবে ক্রমশ রুড়, দমন-নীপিড়নমুখী হয়ে উঠেছে। বইটি বের হওয়ার পর সাড়া পরে গিয়েছিলো গোটা বুদ্ধিজীবী মহলে এবং সাইকিয়াট্রিক চিকিৎসা বিরোধী দলগুলোতে। এপিস্টেমোলজিস্ট মিশেল সোরেস গ্রন্থটির সমালোচনা করতে গিয়ে একে “আর্কেওলজি অফ সাইকিয়াট্রি” বলে অভিহিত করেন। ফুকোর প্রধানতম সমালোচক একজন লরেন্স স্টোন স্বীকার করেছেন “সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতকে সমস্যাগ্রস্তদের অন্তরীণ রাখা ও নিষ্ঠুর পদ্ধতিতে চিকিৎসা করার প্রবণতা ছিল মানব সভ্যতার পশ্চাৎপদতার উদাহরণ এর ফলে এনলাইটেনমেন্টের বদৌলতে সকল ব্যক্তির উত্থানের গল্পের বিশ্বস্ততা সম্পর্কে প্রশ্ন উঠে।

এই অনিবার্য ব্যতিক্রমধর্মী দৃষ্টি ও উপলব্ধ সত্য ফুকোর গুরুত্বপূর্ণ অর্জন” রেফারেন্সঃ ১। পারভেজ হোসেন সম্পাদিত, “ মিশেল ফুকো, পাঠ ও বিবেচনা”

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।