আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এই ধরনের জরিপের উদ্দেশ্য কী?

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

সম্প্রতি ডেইলি স্টার ও এশিয়া ফাউন্ডেশনের যৌথ একটি জরিপের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদপত্রে হলুদ সাংবাদিকতার নমুনা দেখার জন্য প্রায়ই পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদকীয়, খবরের শিরোনাম, খবরের বর্ণনা, ছবি যেমন এক নেত্রীর ক্লান্ত চেহারা অপর নেত্রীর মেকআপ করা উজ্জ্বল চেহারা, জনসভার ছবি- লোক সমাগমের সংখ্যা কম দেখানো, বেশি দেখানো, একেবারেই না দেখিয়ে মঞ্চের নেতা-নেত্রীদের উপস্থিতির ছবি ছাপানো ইত্যাদি কখনও কখনও পড়া ও দেখা হয়। সে হিসেবে এ জরিপটি ঠিক দেশের এ সময়ে করা ও প্রকাশ করার মধ্যে একটি উদ্দেশ্য তো অবশ্যই আছে। তাছাড়া সব কাজের একটি বা একাধিক লক্ষ্য উদ্দেশ্য থাকবেই, তাতেও কোন সন্দেহ নেই।

তবে আমার নিজস্ব মতামত প্রকাশের পাশাপাশি আমি খুবই কৌতূহলী থাকব, এ গবেষণার প্রশ্ন-উপাত্ত স্যাম্পল, উপাত্ত-বিশ্লেষণ ইত্যাদির ওপর দেশের প্রধান গবেষণা সংস্থা সিপিডির মতামত, মন্তব্য দেখার জন্য। যখন আমাদের দেশে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রথম কোয়ালিটেটিভ গবেষণা পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের অর্থে পরিচালিত সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা প্রকল্পের ফলাফল দেখার জন্য একটি গবেষণা দলে কাজ করছিলাম, তখন আমাদের আন্তর্জাতিক ত্রিদেশীয় গবেষক দলের দলনেতা রসিকতা করে একদিন বলেছিলেন- গবেষণার ফলকে তোমাদের মতাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত করা যায় এবং এটা করা যায় স্যাম্পলের অধীনে স্থান ও ব্যক্তি নির্বাচনের ক্ষেত্রে এবং মানুষের মতামত গ্রহণের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন তৈরির মধ্য দিয়ে, সবশেষে উপাত্ত বা উত্তরগুলোকে যে সারণীতে ব্যাখ্যা করবে, সেই সারণীর শিরোনাম তৈরির দ্বারা! আমরা, বাংলাদেশ, কলাম্বিয়া ও ইথিওপিয়া এই তিন দেশের সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা প্রকল্পের ওপর গবেষণা করছিলাম যাঁরা, তাঁরা এ কথা শুনে না হেসে উৎকণ্ঠিত হয়েছিলাম। যা হোক, এ জরিপটির নাম ‘ন্যাশনাল পাবলিক পারসেপশন স্টাডি। ’ ‘ন্যাশনাল পাবলিক’-এর অর্থটা স্পষ্ট নয়, তবে পাবলিক পারসেপশনাল অন ন্যাশনাল ইস্যুজ- এ রকম কিছু সম্ভবত হতে পারত। তবে ভেতরের গূঢ় উদ্দেশ্য অথবা প্রধান উদ্দেশ্য প্রথম সারণীতে প্রকাশ পেয়েছে- আগামী নির্বাচনে কোন্ দল বিজয়ী হবে- এ প্রশ্নের উত্তরের মধ্য দিয়ে এ প্রশ্নটি এবং কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থার ওপর করা তৃতীয় প্রশ্নটি থেকে জরিপের মূল উদ্দেশ্য আরও স্পষ্ট হয়।

যদিও প্রথম ও তৃতীয় প্রশ্ন জরিপের শেষে আসা উচিত ছিল- মাঝখানে হঠাৎ ‘দেশ কোন দিকে অর্থাৎ ঠিক নাকি ভুল পথে যাচ্ছে’ এমন প্রশ্ন উত্তরদাতাকে দ্বিধান্বিত করবে, এই প্রশ্ন যদি ১ নং প্রশ্ন হতো, যা হওয়া উচিত ছিল, তাহলে এর উত্তর স্বাধীন ও প্রভাবমুক্ত হতে পারত এবং গবেষণাজাত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি- এটি ১ নং প্রশ্ন হলে এর উত্তর ভিন্ন হতো, উত্তরদাতার শতকরা হিসাবও ভিন্ন হতো। যাই হোক, প্রথম জরিপটির স্যাম্পল, উপাত্ত সংগ্রহপদ্ধতি অতীব গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করা হয়েছে। যদিও এর আগে জরিপ কাজটি গ্রহণের যৌক্তিকতা, পটভূমি, উদ্দেশ্য প্রকাশ করা হয়নি। জরিপে দেখা যাচ্ছে- * জরিপটি পরিচালিত হয়েছে ৬৪ জেলার মধ্যে ১৪টি জেলায়, ৭টি বিভাগের প্রত্যেকটি থেকে ২টি জেলায়। সুতরাং ৬৪ জেলার মধ্যে ৫০টি জেলা এ জরিপের বাইরে ছিল, যার জনসংখ্যা যে কোন জরিপের ফলকে পাল্টে দেয়ার জন্য পর্যাপ্ত।

বাছাইকৃত জেলাগুলো বিএনপি প্রধান কিনা জানি না। * দ্বিতীয়ত, উত্তরদাতার সংখ্যা ১৪০০, ৭০০ শহর ও ৭০০ গ্রামীণ পেশাজীবী প্রায় ৫০ শতাংশ নারী, প্রতি জেলা থেকে মোট ১০০ জন- ৫০ জন শহরের, ৫০ জন গ্রামীণ উত্তরদাতা। এদের অর্ধেক সাধারণ, অর্ধেক অরাজনৈতিক এলিট, বয়স ১৮-২৯, ৩০-৪৯, ৫০+। * জরিপে বলা হয়েছে, গ্রামীণ স্যাম্পল ৭০০-এর চেয়ে কম, শহরের টার্গেট ৭০০-এর বেশি হওয়ায় পরে এতে সমতা আনার জন্য একটি পদ্ধতি ব্যবহার করে পাওয়া যায়- ১,০৫৪ জন গ্রামীণ (৭৫%) এবং ৩৪৬ জন (২৫%) শহুরে উত্তরদাতা, যারা এ জরিপের উত্তরদাতা। মোট স্যাম্পল হচ্ছে ১৪০০।

তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, গ্রামীণ স্যাম্পল ৭০০-এর কম বলা হলেও পরে এটি ব্যালেন্স করতে গিয়ে ৫০ শতাংশের স্থলে ৭৫ শতাংশ হয়ে গেল কেন? শহুরে উত্তরদাতাই বা ২৫ শতাংশে নেমে এলো কেন? যে কোন জরিপে উত্তরদাতা কারাÑ এটি জরিপের ফলকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করে। কেননা সব জরিপই ক্ষুদ্র স্যাম্পল নিয়ে পরিচালিত হয়, যা কোটি কোটি মানুষের মতের প্রতিফলন ঘটাতে অক্ষম, তবে গবেষকদের উদ্দেশ্য সাধনে বেশ কিছুটা সক্ষম! জরিপের এটি একটি বড় দুর্বলতা, যা এর ফলকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। * আরেকটি বিষয়, যে কোন জরিপের ক্ষেত্রে উপাত্তের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠার স্বার্থে একটি নীতি অনুসরণ করতে গবেষক বাধ্য থাকে, সেটি হচ্ছে- যখন স্যাম্পল বয়সভিত্তিক হয়, লিঙ্গভিত্তিক শহুরে ও গ্রামীণ হয়, পেশাভিত্তিক হয়, তখন অবশ্যই উপাত্ত বা উত্তরদাতাদের এ জরিপের তিনটি বয়সভিত্তিক দলে- শহুরে ও গ্রামীণ নারী-পুরুষ ভেদে উপস্থাপন করতে হতো। কেননা বয়স ভেদে মতামত ভিন্ন হওয়ারই কথা, শহর-গ্রামে লিঙ্গ ভেদেও উত্তর ভিন্ন হবে বলে অভিজ্ঞতা থেকে মনে করি। জরিপের এটি একটি বড় ধরনের দুর্বলতা, যা জরিপের ফলকে অগ্রহণযোগ্য করেছে।

* এ জরিপের গবেষকদের যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবির প্রতি দুর্বলতা রয়েছে, তা প্রশ্নটিতে প্রকাশ হয়ে পড়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কিত প্রশ্নটি হচ্ছে- ‘পূর্ববর্তী নির্বাচনের মতোই আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হওয়া উচিত বলে মনে করেন কি?’ এ রকম প্রশ্ন হচ্ছে ‘প্রত্যক্ষ প্রশ্ন’ যার মাধ্যমে জরিপকারীর কাক্সিক্ষত উত্তরটি প্রকাশিত হয়ে পড়েছে! সাধারণত, আমাদের দেশে বিশেষত গ্রামীণ উত্তরদাতারা জরিপকারী গবেষকদের কাছ থেকে উত্তর দানের জন্য অর্থ বা নাস্তাপানি পেয়ে থাকেন এবং জরিপকর্তাকে সন্তুষ্ট করার তাগিদে জরিপকর্তার কাক্সিক্ষত ‘উত্তরটি’ বুঝতে পারলে সেটিতেই ‘হ্যাঁ’ সূচক উত্তর দেন। প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, ২০০৬ সালে খালেদাকর্র্তৃক নির্বাচনী ফল দখলের প্রথম পদক্ষেপ- তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন কমিশন দখল, দ্বিতীয় পদক্ষেপ- সোয়া কোটি জাল ভোটার সংযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়ন করেই ক্ষান্ত হয়নি, সে সবশেষে দলীয় প্রেসিডেন্টকে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের পদে বসায় তখন খালেদা জিয়ার দুরভিসন্ধি দিবালোকের মতো প্রকাশ হয়ে পড়ে। এরই প্রেক্ষিতে ‘ইমার্জেন্সি’ ঘোষণা করে সেনাপ্রধান ক্ষমতা গ্রহণ করে। ড. ফখরুদ্দীনের নেতৃত্বে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়।

যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হয় একেবারের ভিন্নধর্মী, ২ বছর এটি ক্ষমতাসীন ছিল। এর মধ্যে তারা দুটি জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছিল- জাতীয় ছবিযুক্ত আইডি কার্ড তৈরি এবং ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরি করে। যার ফলে সোয়া কোটি জাল ভোটার বাদ পড়ে! এটি ব্যবহার করে ২০০১ সালের নির্বাচন সংঘটিত হয়েছিল। বলাবাহুল্য, এ সেনাসমর্থিত সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উদাহরণ হতে পারে না এবং এ ধরনের ভিন্ন প্রকৃতির উদাহরণ আর যাই হোক জরিপ কাজে বা গবেষণা কাজে ব্যবহার করা যায় না। এ তুলনাটি করার পেছনে একটি গূঢ় উদ্দেশ্য আছে বলে ধরে নিলে ভুল হবে না।

এ উদ্দেশ্য আরেকটি প্রশ্ন ও উত্তরের মধ্যে প্রকটভাবে প্রকাশিত হয়েছে। ‘দেশ কোন্ দিকে যাচ্ছে, সঠিক নাকি ভুল পথে যাচ্ছে?’Ñ প্রশ্নটির উত্তরদাতাদের অধিকাংশ, নগর ব্যতীত, পুরুষ, নারী, গ্রামীণ এবং মোট শতাংশে দেখা যাচ্ছে ‘দেশ সর্বিক পথে যাচ্ছে’-এর পক্ষে বেশি সমর্থন রয়েছে! এ পরিসংখ্যান যদি ঠিক হয়, তাহলে ‘কোন্ দল আগামী নির্বাচনে জিতবে?’ এ প্রশ্নের উত্তরের শতাংশে আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থন বেশি হওয়ার কথা, তা না হয়ে বরং দেখা যাচ্ছে সব শ্রেণী বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা যারা গণজাগরণ মঞ্চের চেতনা দ্বারা উজ্জীবিত হয়েছে, তারা অন্তত বয়স্ক নারী-পুরুষদের মতো জামায়াত-হেফাজত-মিত্র বিএনপি নির্বাচনে জিতুক, তা চাইবার কথা নয়। তারাই তো যুদ্ধাপরাধীমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে! একইভাবে বর্তমান সরকারের ওপর আস্থা আছে কি? এ প্রশ্নের উত্তরদাতার শতাংশে ‘আস্থা কম’-এর পক্ষে সমর্থন সব শ্রেণীর গ্রামীণ, নগর, পুরুষ, নারী, তরুণ-তরুণী এবং মোটের মধ্যে বেশি! এতটা পরস্পরবিরোধী উপাত্ত আগে দেখিনি! আর একটা প্রশ্ন তো উঠবেই- গ্রামীণ বা নগরের উত্তরদাতাদের মধ্যে পুরুষ, নারী, তরুণ-তরুণীরা কি অন্তর্ভুক্ত নয়? ঢালাওভাবে সব উত্তরদাতাদের, নারী-পুরুষ-তরুণ মিলিয়ে একবার গ্রামীণ ও নগরভিক্তিক উত্তরদাতার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা, আবার ভিন্নভাবে নারী, পুরুষ, তরুণ এই তিনভাগে ভাগ করলে এসব পরিসংখ্যান কি ‘নির্ভরযোগ্যতা’ প্রমাণ করতে পারে? জরিপটি যে গোঁজামিলের জরিপ, তা আরও স্পষ্ট হয় দুটি সারণীতে। একটি হচ্ছে- এ সরকারের কাজকর্ম (চবৎভড়ৎসধহপব) সুনির্দিষ্ট গবেষক কর্তৃক বাছাই করা কিছু ক্ষেত্রে সফল নাকি একেবারেই সফল নয়, তার রেটিং পদ্ধতিতে! গবেষক হাস্যকরভাবে একটি সারণীতে ৭টি ক্ষেত্রে সরকারকে পাস করিয়েছে। উত্তরদাতারা ‘পাস মার্ক’ অর্থাৎ ৩০ শতাংশের বেশি মানুষ সমর্থন দিয়েছে- এমন একটি সারণীতে যেখানে বাছাই করা ক্ষেত্রগুলোতে এ সরকার খুবই সফলভাবে কাজ করেছে বলে বাস্তবেই দেখা যায়।

ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে- শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সুপেয় পানি, স্থানীয় সরকারের কার্যক্ষমতার উন্নতি, পর্যাপ্ত সার, নতুন যোগাযোগ ব্যবস্থা, বর্তমান ভৌত কাঠামোর মানোন্নয়ন। এর বিপরীতে যে সারণীতে ‘সরকার একেবারেই সফল নয়’ দেখানো হয়েছে, সেটিতে উত্তরদাতার শতাংশ ৫৬-৬৬, যা কৌতুককর বৈকি! এর বাছাইকৃত ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে- বেকারত্ব হ্রাস, খাদ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, সরকারের ভেতরে দুর্নীতি হ্রাস, জ্বালানি মূল্যের স্থিতিশীলতা, জঙ্গী নিয়ন্ত্রণ, বিচার ব্যবস্থায় দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ। বাস্তবতা হচ্ছে- সরকারের রেটিং ‘একেবারে ভাল নয়’ হিসেবে প্রকাশ পাওয়ার ইচ্ছার প্রকাশ রয়েছে। এ ক্ষেত্রগুলোতে বয়স, লিঙ্গ, অবস্থানকে উপেক্ষা করে ‘সর্বমোট’ উত্তরদাতার শতাংশের হিসাব প্রদর্শন করা হয়েছে। যে হিসাব উত্তরদাতার বয়স, লিঙ্গ, অবস্থান, পেশা, শিক্ষিত, নিরক্ষর ইত্যাদি বিভাগে বিভক্ত হলে অবশ্যই ভিন্নরকম চিত্র তুলে ধরত।

যা হোক, মতামত জরিপ, বিশেষত মিডিয়ার দ্বারা মতামত গৃহীত হলে তা সবসময় হয়ে থাকে উদ্দশ্যপূর্ণ, এ কথা বলাবাহুল্য। সে কারণে এ জরিপটি তো অতি উদ্দেশ্যপূর্ণ, তা জরিপটি নিজেই প্রমাণ করে। সুতরাং এটি নিয়ে আর বেশি আলোচনায় যাব না। এটি একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষে প্রচারণার লক্ষ্যে নির্বাচনের আগে করা হয়েছে, তা বোঝার জন্য খুব বেশি বুদ্ধিমান হওয়ারও প্রয়োজন নেই। তাছাড়া প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে প্রতিদিন যে অনলাইনের জরিপ থাকে তাতে প্রশ্নগুলো এমনভাবে করা হয়, তাতে ৮০-৯০ ভাগ উত্তরদাতা বিএনপির সমর্থক বলে প্রমাণ হয়।

এমন কি যে প্রশ্নগুলোর উত্তর স্পষ্টতই বিএনপির বিরুদ্ধে যাওয়ার কথা, সেগুলোও যখন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যায়, তখন বুঝে নিতে হয় একটি বিএনপিপন্থী গ্রুপ গঠিত হয়েছে শুধুমাত্র অনলাইনের জরিপে বিএনপির পক্ষে সমর্থন জানিয়ে বিএনপিকে অস্তিত্বের সঙ্কট থেকে বের করে জিইয়ে রাখতে এবং জনমনে দলটি ও এর নেত্রীর স্থান শক্ত করতে সত্যি-মিথ্যার মিশেলে এক ধরনের গোয়েবলসীয় প্রচারণা চালাতে। হয়ত এরা এর জন্য অর্থ বা অন্য কোন পুরস্কারও পায়। একটি কথা বুঝতে পারি না বা মেলাতে পারি না, ডেইলি স্টার সম্পাদক ও প্রথম আলোর সম্পাদক দুজনেই শুনেছি মুক্তিযোদ্ধা। মতিউর তো আমার ব্যাচমেট, একত্রে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলাম। মুক্তিযুদ্ধে ওরা কোথায় ছিল, কি করেছিল, তা জানি না, যদিও ইচ্ছা করলে জানা যায়।

কথা হচ্ছে- মুক্তিযোদ্ধা তো দুই রকম ছিল। প্রকৃত রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে ছদ্মবেশী, যুদ্ধাপরাধীপ্রেমী গুপ্তচরও তো ছিল, যাদের চরিত্র পরে উন্মোচিত হয়েছে। যেমন জিয়াউর রহমান, আরও আছে- নাই বা বললাম নাম। তাহলে এ সম্পাদকদের কর্মকা- কি তাদের মুক্তিযোদ্ধার বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপক্ষে দাঁড় করায় না? তাহলে তরিকত ফেডারেশন আদালতে গিয়ে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার জন্য যে রিট আবেদন করেছিল, তাদের ভূমিকা এই সম্পাদকদের চাইতে অনেক বেশি ইতিবাচক মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাহী প্রমাণ হয় না কি? তরিকতের মৌলানারা যখন কলঙ্কমুক্ত করে জাতিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করছেন, তখন এই ‘মুক্তিযোদ্ধা’ সম্পাদকদ্বয় জাতিকে মিথ্যা-সত্যের মিশেল দিয়ে নানাভাবে বিভ্রান্ত করার কাজ করছেন। এর চাইতে লজ্জার বিষয় আর কী হতে পারে! জাতির একটি বড় অংশ যদি আজ বার বার জঙ্গী হরতাল দিয়ে বোমা-ককটেল-গানপাউডার দিয়ে মানুষ হত্যার নির্দেশের জন্য, শেখ হাসিনার সংলাপের আমন্ত্রণ অবভ্য আচরণে প্রত্যাখ্যান করার জন্য ৫, ৬ মে হেফাজত-জামায়াত-বিএনপির ক্যাডার দিয়ে নিরীহ ৩৯ জন মানুষ খুন করানোর জন্য, অসংখ্য কোরান-হাদিস পোড়ানোর জন্য, গরিব মানুষের জীবিকা বন্ধ করার জন্য, হিন্দু-বৌদ্ধ আদিবাসীদের ঘরবাড়ি ধ্বংস, লুট, অগ্নিসংযোগ করার জন্য, এমন কী বিডিআরের জওয়ানদের বিএনপি নেতাদের দ্বারা উস্কিয়ে দিয়ে জঙ্গীবিরোধী সেনা কর্মকর্তাদের পরিকল্পিত হত্যাকা-ের জন্য বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া কেন এখনও আইনের উর্ধে রয়েছে।

কেন এসব তা-বের জন্য নির্দেশদাতা হিসেবে তাঁর বিচার হচ্ছে না- এ প্রশ্ন অনেকেই এখন করছে। তাহলে জাতির স্বার্থে সেটি কি ন্যায়ানুগ হবে না? দুই নেত্রী যাঁরা একজন মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দলের নেত্রী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ; অপরজন যুদ্ধাপরাধী মিত্র, বঙ্গবন্ধুর খুনীদের মিত্র, জঙ্গী দলগুলোর মিত্র, এখনও যুদ্ধাপরাধীদের ’৭৬-এর মতোই বিচার বন্ধ করে মুক্তি দিতে যে জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ খুনের কার্যক্রম চালাচ্ছে, এই ঘৃণ্য অপতৎপরতাকেও সুকৌশলে মিডিয়ায় দুই নেত্রীকে সমান দায়ী করে দুই নেত্রীর ওপর জনগণকে সমান বিরূপ করে তোলার দীর্ঘকালের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে- তা নিশ্চয়ই কোন মুক্তিযোদ্ধা-সাংবাদিক করতে পারে না। সাংবাদিকরা সত্যের পক্ষে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে অবস্থান নিয়ে খুনী, যুদ্ধাপরাধী-মিত্রকে তার যুদ্ধাপরাধী মিত্ররূপে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণকারীকে তার সত্য ও সঠিক স্বরূপে উপস্থাপন করবেন- জাতি এটিই আশা করে। সবশেষে বলব, ভারতের পার্লামেন্টে সংবাদপত্রের মতামত জরিপকে অসত্য, উদ্দেশ্যপূর্ণ, বানোয়াট, র‌্যাকেট হিসেবে উল্লেখ করে এগুলো বন্ধের দাবি করেছে। এ দাবি আমাদের করা দরকার, নতুবা মিডিয়া, যাকে চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়, তার চরিত্র হারাবে।

চল, ভাল হয়ে যাই। সুত্র


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।