আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজ সেই ভয়াল ১৩ই নভেম্বর "ঢাকা সেনানিবাসের শহীদ মইনুল রোডের ৬নং বাড়ি "



ঢাকা সেনানিবাসের শহীদ মইনুল রোডের ৬নং বাড়ি , একটি সাধারন বাড়ি নয় । এই বাড়ি বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ঘোষকের বাড়ি , এই বাড়ি একজন সেক্টর কমান্ডারের বাড়ি , এই বাড়ি একজন সেনা প্রধানের বাড়ি , এই বাড়ি একজন রাষ্ট্র প্রধানের বাড়ি , এই বাড়ি ৩ তিনবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি , এই বাড়ি সাবেক এবং বর্তমান বিরোধীদলের প্রধানের বাড়ি , ইতিহাসের পাতায় নিবিড় সংযুক্ত এমন বাড়ি সত্যই বিরল । এটিকে মূল্যের তালিকায় ওজন করা, এক ধরনের সংকীর্ণতা ও বোকামী ছাড়া আর কিছুই নয়। এটি যেমন খালেদা জিয়ার কাছে অমূল্য রত্ন বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী চেতনার সুতিকারগার তেমনি বর্তমান আওয়ামী সরকার, এ বাড়ি থেকে খালেদা জিয়ার উচ্ছেদের টার্গেট ছিল, জিঘাংসার সর্বনিম্ন স্তর। এটিকে আওয়ামী লীগ বাড়ির তালিকায় না রেখে প্রতিশোধের গ্রহনের চরম তালিকার আন্তভূক্ত করেছে।

মুলত শেখ হাসিনা ব্যক্তিগত আক্রোশের শেষ পেরেক ঠুকলেন খালেদা জিয়ার প্রতি। গত ১৩ নভেম্বর ২০১০ মধ্যরাত থেকে নানা নাটকীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে তার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করা হয়। নামাযের আগে সাদা পোশাকের আইন-শৃংখলা বাহিনীর লোকজন বেগম জিয়ার সেনানিবাসের চারিদিকে অবস্থান নেয়। সকাল হওয়ার সাথে সাথে তাদের সাথে যোগ দেয় পুলিশ, র‌্যাব ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। পাশাপাশি ক্যান্টমেন্টের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীর লোকজন অবস্থান গ্রহণ করে।

জাহাঙ্গীর গেটসহ ক্যান্টমেন্টে প্রবেশের সকল রাস্তায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। জানা গেছে, সকাল আটটার দিকে আইন-শৃংখলা বাহিনীর লোকজন বেগম জিয়ার বাসায় যারা কাজ করেন তারাসহ তার আত্মীয় স্বজনদের বের করে দেয়। বের করে দেয়া হয় বেগম জিয়ার বাবুর্চিদেরও। সকাল ১১টার দিকে পুলিশ ও র‌্যাব খালেদা জিয়ার বাড়ির প্রধান ফটক ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময় তারা বাড়ির ভেতর ও বাইর থেকে মাইকে বেগম জিয়াকে বের হয়ে আসতে বলে।

তারা বলে, যদি বেগম জিয়া স্বাভাবিকভাবে বের হয়ে না আসেন তাহলে তারা জোর করে তাকে বের করে আনবেন। তাদের এ আহবানে বেগম জিয়া তার আইনজীবীদের সাথে কথা বলতে চান। কিন্তু উচ্ছেদকারীরা তাকে সে সুযোগ না দিয়ে বের হয়ে যেতে বলেন। বেগম জিয়া তাদের কথা মত বের হতে না চাইলে পুলিশ তার রুমের দরজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে। তারা খালেদা জিয়ার বাড়ির কর্মরত লোকজনদের আটক করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়।

এরপর ইচ্ছের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার রুমে প্রবেশ করে তাকে টেনে হেঁচড়ে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে আইন-শৃক্মখলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে গুলশান কার্যালয়ে পৌঁছে দেন। এ সময় বেগম জিয়া তার ব্যবহৃত কোন মালামাল সেখান থেকে আনতে পারেননি। প্রেসিডেন্ট জিয়া শুধু মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষকই নন, তিনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার এবং তদানীন্তন সেনাপ্রধান হিসেবে জাতীয় প্রতিরক্ষাবাহিনীকে অবক্ষয় ও ধ্বংসের কবল থেকে রক্ষা করে সেনাবাহিনী শৃক্মখলা ও স্থিতি ফিরিয়ে এনেছেন। জেনারেল জিয়ার হাতেই প্রতিরক্ষা বাহিনীর আধুনিকায়নের সূচনা।

প্রথমত ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ তদানীন্তন রাজনৈতিক শীর্ষ নেতৃত্ব যখন সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার বদলে পাকিস্তানী সামরিক জান্তার সাথে আপোষ আলোচনায় ব্যস্ত এবং শীর্ষ নেতৃত্ব যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে পাকিস্তানী সামরিক জান্তার হাতে বন্দিত্ব বরণ করেন, তখন পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ‘মেজর' জিয়া সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে প্রত্যক্ষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং এই সূত্রেই রাজনৈতিক স্বাধিকার সংগ্রাম সামরিকত্ব চরিত্র ধারণ করে ইতিহাসের বাঁক পরিবর্তন ঘটায়। ১৯৭৫-এর পট পরিবর্তন এবং পরবর্তী ৭ নবেম্বরের সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জেনারেল জিয়ার রাষ্ট্রনৈতিক নেতৃত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে জাতীয় ইতিহাসের আর একটি অধ্যায় উন্মোচিত হয়। কিন্তু বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযুদ্ধ তথা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় অগ্রগতির ধারা থেকে শহীদ জিয়াকে মুছে ফেলার চেষ্টা শুরু হয়। শহীদ জিয়ার স্মৃতি বিজড়িত শহীদ মঈনুল রোডের বাড়ি থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে উচ্ছেদ তারই একটা অংশ। আর এর সহযোগী হিসাবে কাজ করেছে দলে অনুচর হিসাবে নেতা নামে কিছু জানোয়ার ।

এই বাড়ির সাথে জড়িয়ে আছে শহীদ জিয়ার স্মৃতি এবং তার সন্তানদের বেড়ে ওঠার প্রসঙ্গ। বেগম খালেদা জিয়ার ভাবাবেগ এ কারণেই মানবিক ধারায় সিক্ত। গণ-মানুষ ও সিপাহী জনতার ঐতিহাসিক জাগরণে নেতৃত্ব দানকারী জেনারেল জিয়ার স্মৃতিঘেরা শহীদ মঈনুল রোডের এই বাড়িটির সাথে বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমিক-ইসলামী শক্তির ভাবাবেগটাও তাই অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে। এই বাড়ি থেকেই তিল তিল করে বেড়ে উঠেছে একজন সাধারণ গৃহ বধূ থেকে আজকের আপোষহীন দেশনেত্রী । ১৯৮১ সালের ৩০ মে সহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শাহাদাৎ বরন করার পরে স্বামীর কফিনের সামনে দাঁড়িয়েও খালেদা জিয়া ছিলেন অবিচল।

ওয়ান ইলেভেনের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন যখন তার জ্যেষ্ঠ পুত্রের মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে পঙ্গু করে দিয়েছিল তখনা তিনি কারা কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেননি। কনিষ্ঠ পুত্র হুইল চেয়ারে বসে যখন বুক ধরে কাতরাচ্ছিলেন তখনো খালেদা জিয়ার চোখে কেউ একবিন্দু অশ্রু দেখেনি। তিনি ওয়ান ইলেভেন নির্যাতিত এবং কারাগারে বন্ধি হওয়ার সময়ও আপসহীন নেত্রীর মতই দৃপ্ত পায়ে হেঁটে গিয়ে প্রবেশ করেছিলেন। সেই লৌহ মানবী নেত্রী যখন একটি সরকারি বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এসেই সংবাদ সম্মেলনে বসে কান্নায় আঁচলে মুখ ঢাকেন তখন বুঝতে বাকী থাকেনা এই সেনানিবাসের শহীদ মঈনুল রোডস্থ ৬ নাম্বার বাড়ি টি শুধুই কয়েকটি ঘরের সমষ্টি নয়। শুধুই আঙিনা জোড়া ফুলের বাগান অথবা ৮ বিঘা জমির বিশাল সীমানা অথবা রাত্রিবাসের ঠিকানা নয়।

ওই বাড়ির প্রতিটি ইট-পাথরে ছড়িয়ে আছে ৩৮ বছরের হাজারা স্মৃতি। ওইসব সব স্মৃতি অর্থমূল্য কেনা যায়? একদিকে একদিকে সরকার আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে দলের সকল রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে, কাজের দায় চাপানো হচ্ছে সেনাবাহিনীর কাঁধে। ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড সেনাপ্রধানের অধীনে হলেও এটি স্বায়ত্তশাসিত-স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। অথচ উচ্ছেদ অভিযানে তাদের কাউকে দেখা যায়নি। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আইএসপিআর প্রতিনিধিকে সক্রিয় ও সরব দেখা গেছে।

আইএসপিআর এর ক্ষনে ক্ষনে অবস্তান পরিবর্তন এবং নির্লজ্জ রাজনৈতিক স্ট্যান্ডবাজি সরকার জাতীয় সেনাবাহিনীকে সামনে রেখে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার এই নোংরা খেলায় উম্মাদিনি হয়ে উঠেছিল। "ইংল্যান্ড থেকে প্রকাশিত বিখ্যাত ইকোনমিস্ট পত্রিকার গত ১৮ নভেম্বর ২০১০ সংখ্যায় এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এতে বলা হয়, ঈদের ঠিক আগ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে তার সেনানিবাসের বাসভবন থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার ওপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে বাংলাদেশে ঘৃণার রাজনীতি ফিরে এসেছে। এতে আরো বলা হয়, বেগম জিয়ার ওপর শেখ হাসিনার প্রতিহিংসাপরায়ণতায় ভারত সরকারেরও সমর্থন রয়েছে।

ভারতও চায় জিয়া পরিবারের ধ্বংস। সেনাসমর্থিত দুই বছরের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও কারামুক্তির দুই বছরের বেশি সময় পর বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী দুই রাজনৈতিক পরিবারের নেতারা ফের ঘৃণা ও দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়েছেন। তবে এবার এটা প্রধানমন্ত্রী হচ্ছে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে। বেগম জিয়া প্রায় ৩০ বছর ধরে ঢাকা সেনানিবাসের যে বাড়িতে বসবার করে আসছিলেন, গত ১৩ নভেম্বর সেখান থেকে তাকে উচ্ছেদ করা হয়। ইকনমিক্স পত্রিকার লিঙ্ক অবশেষে বলতে চাই ১৩ নভেম্বরের ঘটনার মধ্য দিয়ে যে বিষবৃক্ষের চারা রোপণ করা হলো, তা মহীরুহের আকৃতি যখন নেবে তখন যে আর কী হতে পারে তা আমরা কল্পনা করতেও শঙ্কিত হচ্ছি।

সাথে সাথে এই কথাও বলতে চাই আপনার দলের যারা আইনি চাতুরতার ভাষায় আপনাকে বিভ্রান্ত করেছে তারা এখনো আপনার পাশে আপনে তাদের নেতা বানাবেন, এমপি বানাবেন , বানাবেন মন্ত্রী শুধু বেয়ারিশ কর্মী সমর্থকদের হৃদয়ের গহীনে দ্গ দ্গে ক্ষত হয়ে থাকবে ঢাকা সেনানিবাসের শহীদ মইনুল রোডের ৬নং বাড়িটি যা বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী দেশ প্রেমিকদের কাছে মসজিদ , মন্দির , গির্জা বা প্যাগডার ন্যায় অতি পবিত্র উপশানালয় । ”অশান্তি-কামী ছলনার রূপে জয় পায় মাঝ মাঝে, অবশেষে চির-লাঞ্ছিত হয় অপমানে আর লাজে! পথের ঊর্ধ্বে ওঠে ঝোড়ো বায়ে পথের আবর্জনা তাই বলে তারা ঊর্ধ্বে উঠেছে কেহ কভু ভাবিও না! ঊর্ধ্বে যাদের গতি, তাহাদেরি পথে হয় ওরা বাধা; পিচ্ছিল করে পথ, তাই বলে জয়ী হয় না ক কাদা!”

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।