আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শুভ জন্মদিন জাদুকর !!



বাকের ভাই আর বদি দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার পাশে একটা দোকানের সামনে। তার সামনে বিশাল সাইনবোর্ড। তাতে বড় করে লেখা MR. BAKER. বদি গোলগোল চোখে এই সাইনবোর্ড দেখছে। সেই চোখে রাজ্যের বিস্ময়। তার মুখ আস্তে আস্তে হা হয়ে যাচ্ছে।

বাকের ভাইয়ের হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। তিনি রাস্তার এদিক ওদিক দেখছেন। কার্তিক মাসের শেষ দিকের বিকেলে ভালোই হাওয়া দিচ্ছে। সেই হাওয়াতে সিগারেট দ্রুত ছোট হচ্ছে। বাকের ভাই সিগারেটে শেষ টানটা দিয়েছেন আরো দু-তিন মিনিট আগে।

মুনা এতো দেরী করছে কেন? চারটা তো প্রায় বাজে। তাহলে কি সে রিকশা পাচ্ছে না? মেয়েছেলে সব ঠিক করতে পারে, তবে রিকশা ঠিক করতে পারে না। এই একটা সমস্যা। আগের সেই দিন থাকলে তিনি নিজে গিয়ে মুনার জন্যে রিকশা ঠিক করতেন। সেটা এখন সম্ভব না।

বাকের ভাই মুনার বাসা চেনেন না। বদির ডাকে বাকের ভাইয়ের সম্বিৎ ফিরলো। বদির কন্ঠে বিস্ময়। -দেখছেন ভাই, সাইবোর্ডে আপনের নাম লেখা!! নামে আগে মিশটার!! কি আচানক!! - হুমম। দোকানটা আমার পছন্দ হয়েছে।

দোকানের মালিককে মেডেল দেবার ব্যবস্থা নেও। যাও এখন। - ভাই মেডেল কই পামু? - আমি কি জানি! মেডেল জোগার কর। কথা কম। Less talk, More work. শুভ্রর বাবা মেরাজউদ্দিন সাহেব চিন্তিত মুখে ছেলের ঘরে বসে আছেন।

তার হাতে থাকা National Geographic ম্যাগাজিনের গা থেকে তারপিন তেলের গন্ধ আসছে। তাঁর নাক বারবার কুঁচকে যাচ্ছে। তিনি অপেক্ষা করছেন শুভ্রর জন্যে। শুভ্র গোসল করছে। শুভ্রর মা রেহানা প্রতিদিনের মতোই শ্যাম্পুর বোতল নিয়ে বাথরুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।

বাথরুমের দরজা সামান্য খোলা। শুভ্র বাথরুমের দরজা সম্পূর্ন বন্ধ করে গোসল করতে পারে না। পনেরো মিনিট পর শুভ্র বের হল। রেহানা ছেলের চুল মুছে দিলেন। শুভ্র বাইরে যাচ্ছে।

তবে গাড়ি নিয়ে বের হতে চাচ্ছে না। মেরাজউদ্দিন সাহেবের চিন্তার কারণ এটাই। শুভ্রর চোখের অবস্থা আগের চেয়ে অনেক খারাপ। ভয়াবহ খারাপ। টেনশনে তিনি বুকে চাপ অনুভব করছেন।

শুভ্র রেডি হয়ে গেছে। তাকে রাজপুত্রের মতোন লাগছে। বাবার দিকে এগিয়ে এসে শুভ্র তার সেই হাসিটা হাসল। হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, বাবা রিকশা ভাড়া দাও। মেরাজউদ্দিন সাহেব এক হাজার টাকার নোট বের করে এগিয়ে দিলেন ছেলের দিকে।

শুভ্র বলল, এটা না বাবা। ভাংতি দাও। আমার মনে হয় রিকশাওয়ালারা এক হাজার টাকার ভাংতি নিয়ে ঘোরে না। মেরাজউদ্দিন সাহেব দুটো পঞ্চাশ টাকার নোট এগিয়ে দিলেন। রেহানা বেগম শুভ্রর দ্বিতীয় চশমাটা ছেলের শার্টের পকেটে দিয়ে দিলেন।

শুভ্রর চশমা হারানোর বাতিক আছে। শুভ্র বের হয়ে গেল। মিসির আলির শরীর খারাপ। শীত আসছে, তাঁর শ্বাসকষ্টটাও বাড়ছে। সকাল থেকে বুক ধ্বক ধ্বক করছে।

চারপাশের জগৎ দুলছে। তবুও আজকে একটু বের হতে হবে। দীর্ঘদিন পর বাইরে গেলে শরীর কিভাবে রিঅ্যাক্ট করবে বুঝতে পারছেন না। তবে খালি বাসা থেকে তাঁর জিনিসপত্র চুরি হবে এটা নিশ্চিত। তবুও যাওয়া দরকার।

মিসির আলি তঁর খয়েরী রঙা চাদরটা গায়ে জড়ালেন। বাইরে শীতল হাওয়া দিচ্ছে। হিমু মেসে নেই। খোলা দরজা দিয়ে রূপা ভেতরে গিয়ে বসলো। মেসের পাশের ঔষধের দোকান থেকে হিমু সকালেই ফোন করেছিলো।

বলেছিলো নীল শাড়ি পড়ে রূপা যেন হাজির থাকে। দুজন একসাথে রিকশায় করে কোথাও যাবার কথা ছিলো। রূপা হিমুর কথামতোই নীল শাড়ি পড়ে এসেছে। তবে আজ রূপার হাতে কিছু নেই। তবে রূপার আশা, ফেরার পথে হিমুর দেয়া নীলপদ্মে তার হাত ভর্তি থাকবে।

রিকশা থেকে নেমে সে হাতভর্তি নীলপদ্ম নিয়ে চোখের ওপর নেমে আসা চুল সরাতে পারবে না। এ ব্যাপারে হিমু তাকে সাহায্য করবে। তবে একটু পর রূপার ফোন বেজে উঠলো। ওপাশে হিমু। সে তার মাজেদা খালার বাসা থেকে ফোন করেছে।

বাদল গোঁ ধরেছে তাদের সঙ্গে সেও যাবে। তাই হিমু বাদলকে নিয়ে আসছে। রূপার সাথে রিকশা করে একসাথে যাওয়া যাবে না একারণেই। রূপা ছলছল চোখে মেস থেকে বের হয়ে গেল। বাকের ভাই-মুনা-বদি, শুভ্র, মিসির আলি, হিমু-রূপা.... এদের সবাই আজ জন্মদিন।

দীর্ঘদিন পর এরা সবাই অনেক আনন্দিত। কার্তিক শেষের সোনালী বিকেলে এরা ঘর ছেড়ে বের হয়েছে হিমেল হাওয়া গায়ে মাখবার আশায়। এরই মধ্যে শহরজুড়ে তাদের মতো সাজে অনেক নকল হিমু, মিসির আলি, বাকের ভাই কিংবা রূপাকে দেখা যাচ্ছে। সবার মনে বাকের ভাই-মুনা-বদি, শুভ্র, মিসির আলি, হিমু-রূপাদের জন্যে ভালোবাসা,তাদের খুঁজে বের করার প্রচেষ্টা। তবে খুঁজে হয়তো লাভ নেই।

বাকের ভাই-মুনা-বদি, শুভ্র, মিসির আলি, হিমু-রূপা-রা অদৃশ্য। শীতের ছোট্ট বিকেলের পর ঝুপ করে নামা সন্ধ্যায় তারা ফিরে যায় কিছু যাদুর বইয়ের পাতায়। তাদের ঘরে। সেই ঘর তৈরী করে রেখেছেন একজন জাদুকর। The Magician. তিনি স্যার হুমায়ুন আহমেদ।

আমাদের সবার প্রিয় ‘গল্পকার’ । শুভ জন্মদিন জাদুকর !! শুভ জন্মদিন হিমু, মিসির আলি, শুভ্র, রূপা, বাকের ভাই আর মুনা-কে....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।