আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজ হিমুর খৎনা।

কথা প্যাঁচাই না।

আমার নাম হিমু। আজ আমার সুন্নতে খৎনা। বেল্লালের মতে- খৎনা খুবই মারাত্মক একটা কাজ। একজন ভয়ঙ্কর দর্শন লোক ছোট পুটলি হাতে আসবে।

এই পুটলির ভেতর সব ধরনের অস্ত্র থাকে। তারপর পুটলি থেকে একটা ছুরি বের করবে। এরপর বলবে- -বাবু সোনা, বলতো আকাশে কয়টা চড়ুই? আমি গম্ভীর মুখে বলবো- --চড়ুই পাখি অনেক দ্রুত উড়ে যায়। তাই গোনা যাবে না। -আচ্ছা তাহলে বলোতো আকাশে কয়টা চিল? --এই সময়ে চিল আকাশে উড়ে না।

- তাই নাকি? তাহলে বলো কাক কয়টা? কাক তো সব সময়ই থাকে তাই না? --কাক আকাশে নাই। পাশের বাসার ছাদে বসে আছে। -আচ্ছা ঐটাই গুনে বলো কয়টা আছে? লোকটা কিছুটা বিরক্ত হবে। আমি কাক গোণায় মনোযোগ দেব। একটা, দুইটা, তিনটা...ঘ্যাচাং! ব্যস... আমার নুনু কাটা শেষ! কাটা নুনুর অংশটা হাতে নিয়ে গম্ভীর মুখে বেল্লাল আমার দিকে তাকায়।

আমি পুরাপুরি শিউরে উঠি। বেল্লাল ফালতু কথা বলে না। সে খুবই জ্ঞানী ছেলে। বেল্লালের মা আমাদের বাসায় কাজ করে। বেল্লাল প্রথম যেদিন আমাদের বাসায় আসে সেদিন আব্বু ওকে জিজ্ঞাসা করলো- -কিরে তোর নাম কি? --বেল্লাল।

-বেল্লাল তো নাম না। ওটা হবে বিল্লাল। কিংবা বিলাল। বুঝলি? --জ্বে। -নাকে হাত দিয়েছিস কেন? খাচ্চর ছেলে... হাত নামা।

আর কখনো নাকে হাত দিবি না, বুঝলি? --জ্বে। -বয়স কত তোর? --খালুজান, এইবার এগারোতে পড়বো। –বুয়া আগ বাড়িয়ে বলে। -ও। তাইলে তো তুই হিমুর বয়সী।

শোন বুয়া, তোমার ছেলের যদি এই বাসায় থাকতে হয়, তাহলে ভালোভাবে থাকতে হবে। ভদ্র হয়ে থাকতে হবে। আর নাকে হাত, পাছায় হাত... এইসব অভ্যাস বাদ দিতে হবে। আমি চাইনা আমার ছেলে ওর থেকে কোন বদ অভ্যাস পাক। বুঝলা? -- জ্বি খালুজান।

বুঝছি। বুয়া জোরে জোরে মাথা নাড়ে। -তুই চাইলে পড়ালেখাও করতে পারবি, বুঝলি? --জ্বে। -আচ্ছা তোর ভালো নাম কি? --বেল্লাল হোসেন। -আবার বলে বেল্লাল! বললাম না তোর নাম বিল্লাল।

এখন থেকে তোর নাম বিল্লাল হোসেন, বুঝলি? বল তোর নাম কি? -- বেল্লাল হোসেন। বেল্লাল নাকে হাত দিয়ে চলে যায়। সেই থেকে বেল্লালের সাথে আমার মেশা নিষেধ। কিন্তু আমি কোন সমস্যায় পড়লে বেল্লালের কাছে না গিয়ে পারি না। কারণ বেল্লাল ছাড়া আর কেউ আমাকে কোন সমস্যার সমাধান দিতে পারে না।

আমার সাম্প্রতিক সমস্যা হলো আজ আমার খৎনা হবে। প্রথমে এটা আমার কাছে কোন সমস্যাই ছিলো না। আমার খৎনা হবে সেটা নিয়ে আমি বেশ আনন্দিতই ছিলাম। আনন্দিত না হয়ে উপায় নেই। বাসা ভর্তি লোকজন।

একটু পরপর আমি লজেন্স, চুইংগাম পাচ্ছি। খালামনিরা টুকুস টুকুস করে গালে চুমা খাচ্ছে। ভালো মন্দ রান্না হচ্ছে। চারিদিকে কেমন একটা উৎসব উৎসব ভাব। বড়খালু আমার জন্য একটা লুঙ্গি কিনে এনেছে।

লুঙ্গি উপহার পেয়ে আমি ভিষণ লজ্জ্বা পেলাম। সবাই বেশ খানিক্ষণ হাসাহাসিও করলো। আমি লজ্জ্বা পেয়ে ছাদে চলে আসলাম। আমাদের বাড়িওয়ালার দুটা সুন্দরী মেয়ে আছে। রুমা আর ঝুমা।

দুজনেই কলেজে পড়ে আর সারাদিন ছাদে ঘুরে বেড়ায়। রুমাপু ঝুমাপু আমাকে দেখলেই নানা রকম দুষ্টামী করে। আজ আমাকে দেখা মাত্রই ঝুমাপু বললো- --ওমা! হিমু সাহেব যে... -হুম। --তোমার নাকি আজকে হবে? -কি হবে? --ওমা! জানোনা বুঝি?! হি হি... রুমাপু ঝুমাপু খানিকক্ষণ খুব হাসে। -খৎনা হবে- এতে এত হাসির কি আছে? আমার কথা শুনে ওরা আরো জোরে হেসে উঠে।

হাসতে হাসতে একেবারে লুটোপুটি খায়। উনাদের অমন হাসি দেখেই আমার খটকা লাগে। আমি এক দৌড়ে নিচে চলে আসি। এসেই সোজা বেল্লালের কাছে। রুমাপু ঝুমাপু কেন হাসলো সেটা আমার জানতেই হবে।

কাটা নুনুর অংশটা ধরে বেল্লাল এখনো আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বেল্লালের কাছ থেকে খৎনার বর্ণনা শুনে আমি কিছুক্ষণ চুপ হয়ে রইলাম। কি বলবো খুজে পাচ্ছিলাম না। --আচ্ছা নুনুই কাটবে কেন? অন্য কিছু কাটা যায় না? - না। তুই শেষ।

-- অন্য কিছু। মানে ধরো হাতের নখ, পায়ের নখ, কিংবা চুল। চাইলে আমি চুল সব ফেলে দিতে পারি। - না। কাম হইবো না।

ঐটাই কাটবো। তুই শেষ আজকে। -- না কাটলে কি হবে? - বিয়া হইবো না। তুই পুরাই শেষ। তুই শেষ, তোর সোনাও শেষ।

-- আমি যদি না কাটতে চাই? তাও কাটবে? - হ। -- নুনু কাটলে কি বেশি ব্যাথা লাগে? - হ। --পুরাটাই কি কেটে ফেলবে? -না। খালি আগা কাটবো। এমনে টাইন্যা ধরবো, তারপরে ঘচাৎ।

কিভাবে কাটবে সেটা বেল্লাল অভিনয় করে দেখায়। আমি বুঝতে পারছি না আমাকে এত কষ্টের একটা কাজ কেন করতে হবে! না করলেই বা ক্ষতি কি? আমার না হয় বিয়ে নাই হলো। বিয়ে করার ব্যাপারে আমার তেমন কোন আগ্রহই নেই। এটা আম্মুকে বোঝাতে পারলে হয়তো লাভ হবে। ভাবতে ভাবতে আমি রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াই।

রান্নাঘরে আম্মু আছে। কিন্তু রান্নাঘর পর্যন্ত যেতে না যেতেই আবার বেল্লালের সাথে দেখা। ও রান্নাঘরের মুখে একটা বটি হাতে দাঁড়িয়ে আছে। বটিতে রক্ত লাগানো। -এই তুমি বটি দিয়ে কি করবে? বটিতে রক্ত কিসের? -- সোনা কাটা প্যাট্টিস করি।

- সেকি! কারটা কাটলে? বটিতে রক্ত কেন? --তোরটা আমি কাটুম। আমি বিমর্ষ হয়ে চলে আসি। বেল্লালের কথার উপর কিছু বলার নেই। সারাটা দিন আমার কেমন যেন কাটে। বিকালে ছাদেও যাইনি।

ছাদে গেলেই রুমাপু ঝুমাপু আবার দুষ্টামী শুরু করবে। বিকালে ঘুমিয়ে দুঃস্বপ্ন দেখলাম। বেল্লাল একটা বিশাল ছুরি নিয়ে আমার পেছন পেছন দৌড়াচ্ছে। আমি পুরাপুরি ন্যাংটা। বেল্লাল শুধু একটা কথা বলছে- তুই শেষ।

তোর সোনাও শেষ। ঘুম ভাঙ্গতেই দেখি আব্বু এক লোককে নিয়ে হাজির। এই লোক আমার খৎনা করাবে। যারা খৎনা করে তাদের হাজাম বলে। বেল্লালের কথামত এই হাজামের ভয়ঙ্কর চেহারা হবার কথা।

কিন্তু ইনার চেহারা মোটেও সেইরকম না। আমাকে দেখে একটু হাসলেন। ঘরের দরজায় দেখি বেল্লাল দাঁড়ানো। বেল্লাল ওই লোকের দিকে কঠিনভাবে তাকিয়ে আছে। হাজাম আংকেল ভিতরে বসে নাস্তা খাচ্ছেন।

নাস্তা খেয়ে আসার পরই ‘কাটা’ হবে। আমি লুঙ্গি পড়ে ঘরে বসে আছি। আমার হাত-পা কাপছে। একটু পরই আমার নুনু কেটে ফেলা হবে। পাশের ঘর থেকে রুমাপু ঝুমাপুর গলার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।

আমার খালামনিরা জানালা দিয়ে উকিঝুকি মারছে। আমি কষ্ট পাবো সেদিকে কারো খেয়াল নেই। সবাই ‘ঘ্যাচাং’ দেখতে চায়। এর মাঝে দেখি বেল্লাল এসে হাজির। - তুমি এই ঘরে কি করো? - তোর কাটা দেখুম।

তুই শেষ। বেল্লাল মুচকি হাসতে থাকে। এর মাঝে বাবা চলে আসেন। সাথে হাজাম আংকেল। --বাবা তুমি ভয় পাচ্ছ না তো? -হু।

--ভয়ের কিছু নেই বাবা। অল্প একটু ব্যাথা পাবে। তারপর-ই শেষ। -না কাটলে হয় না? --না বাবা। এটাকে তো মুসলমানি বলে।

না কাটলে মুসলমান হওয়া যাবে না। আমার সাথে কথা বলতে বলতে আংকেলের বেল্লালের উপর চোখ পড়ে। বেল্লাল আমার দিকে তাকিয়ে করুণার হাসি হাসছে। --কি হলো, তুমি হাসছো কেন? -এমনেই। --তোমার নাম কি? -বেল্লাল।

--বয়স কত? -এগারো। --তোমার মুসলমানি হয়েছে? -জাইন্না। বেল্লাল চলে যায়। আংকেল ভ্রু কুঁচকে তাকান। বাবা আসতেই উনারা কি যেন ফিসফিস করেন।

বাবা কিছুক্ষণ ভাবেন। তারপর বুয়াকে ডেকে পাঠান। তাদের মাঝে কি কথা হয় আমি শুনতে পাই না। শুধু দেখি বুয়া জোরে জোরে মাথা নাড়ে। বাবার সাথে সায় দেয়।

দূরে দাড়ানো বেল্লাল শুধু কঠিন চোখে তাকিয়ে থাকে। রাত ১০টা। আমি আর বেল্লাল পাশাপাশি শুয়ে আছি। বেল্লালের খৎনা করার সময়ে ওর চিৎকারে পুরা বিল্ডিংয়ের মানুষ চলে এসেছিল। এখন সে কিছুটা শান্ত।

আমার পাশে শুয়ে আছে। মাঝে মাঝে গোঙ্গানি দিয়ে মুখে ফেনা ভাঙ্গছে। -বেল্লাল এখন তোমার কেমন লাগছে? --আমি শেষ। আমারে কাইট্টা হালাইছে। কাইট্টা তামা কইরা লাইছে।

আমি শেষ। আমি পুরাই শেষ। আমি আর কিছু বললাম না। বেল্লালের কথার উপর কিছু বলার নেই।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৮ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।