✍ সকালের মিষ্টি রোদ অরুর পায়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে আর সেই সাথে রূপার
নুপুরের আলোয় সারা ঘর ছেয়ে গেছে। এই জানালাটায়
আসলে কি আছে তা অরু নিজেও বুঝেনা! সকালের আলো কখনো তার
মুখে এসে পরেনা| বিছানা ছেড়ে অরু জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়| এই
জানালায় দাঁড়িয়ে কতো বিকেল আর সকাল কাটিয়েছে তার
কী কোনো হিসেব আছে? রাস্তার পাশে দুতালা বাড়ি| কতো রকমের মানুষ দেখে রোজ! আর ওই
দেবদারু গাছটা! ওটাতো কালের সাক্ষী| চার বছর
আগে আশরাফকে ঐখানেই তো প্রথম দেখে| বৈশাখের এক মধ্য
দুপুরে ইয়া বড় এক ব্যাগ কাধে নিয়ে ঘামে জুবুথবু হয়ে ছিলো ছেলেটা|
চোখে আবার চশমাও ছিলো| অরুর খুব ইচ্ছে হচ্ছিল ছেলেটাকে এক
গ্লাস পানি খাওয়াতে কিন্তু তা তো আর হয় না| তার কিছুক্ষণ পরই পাশের বাসার জাহিদ ভাইয়ের সাথে ছেলেটা চলে গেলো| যাবার
আগে ব্যাগ খুলতে গিয়ে কিছু একটা নিচে পরে গেছে এইটা সে খেয়াল
করেনি| অরু সেখানে গিয়ে দেখে একটা কাগজ পরে আছে| খোলা ঠিক
হবেনা ভেবেও অরু কাগজটা খোলে| তারপর সে নিজেই অবাক হয়ে যায়,
এ-যে কবিতা! এমন সুন্দর করে কেউ কবিতা লিখে? পরদিন জাহিদ
ভাইকে কবিতাটা দিয়ে আসে আর কবিতা ভালো হয়েছে এইটাও বলে আসে| তার বেশ কিছুদিন পর জাহিদ ভাইয়ের মাধ্যমে তাদের পরিচয়
হয়| আশরাফের তখন পড়ালেখা শেষের পথে| লেখার হাত ভালো,
থিয়েটারে কাজ করে তবে ভীষণ অগোছালো আর একটু রাগিও বটে|
মা আর ছোট বোন এটাই তার সংসার| যেদিন প্রথম ওর
আবৃতি শোনে অরুর চোখে জল দেখেছিলো সেদিন বিকেলেই অরুর
পায়ে এই নুপুরটা পরিয়ে দিয়েছিলো| বলেছিলো, অরু তুমি দেখো এই নিঃশব্দ নুপুরের মতো আমি আজীবন ছায়া হয়ে তোমার পাশে থাকবো|
তারপর... কেটে গেছে চার বছর| ছেলেটা পাগলই বটে!! এই চার
বছরে সে যে কতো পাগলামি করেছে তার হিসেব নেই| যখনই
অরুকে দেখতে ইচ্ছে হতো চলে আসতো বাসার সামনে হউক দিন
বা রাত| অরুকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া, নদীর পাড়ে বসে সারা বিকেল
কাটিয়ে দেয়া, অরুর খোলা চুলের মুগ্ধতায় জেগে কাটিয়ে দেয়া রাত, কবিতা শোনানোর অজুহাতে হাত ধরা আরো কতো মধূর মধূর
খুনসুটি... ইদানিং কিছুই ভালো লাগছে না কারো| রোজ রোজ
অরুকে দেখতে ছেলে পক্ষ আসছে| ওর মা এবছর বিয়ে না দিয়ে ছাড়বেন
না| এদিকে আশরাফের চাকরিটা হয়েও হচ্ছে না| লিখতেও
পারছেনা কিছুই| আর কতো? এখন তো অরুকে তার পাশে চাই||
আশরাফের মায়ের বিয়েতে আপত্তি নেই কিন্তু, অরুর মায়ের কিছুতেই
মত নেই| বেকার ছেলের কাছে মেয়ে দেবেনা সোজা কথা| আর কোনো উপায় না থাকাতে দুজনে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে| আর মাত্র
কয়েকটা ঘন্টা তারপর এই দুজনের মাঝে আর কোনো দুরত্ব থাকবেনা|
বিকেল ৪টা আশরাফের কয়েকজন বন্ধু আর তারা দুজন
কাজী অফিসে বসে আছে| আশরাফ অরুর হাতটা শক্ত করে ধরে আছে,
একফোটা জল গড়িয়ে পরলো তার হাতে | কিছুক্ষণ পর অরুর
ফোনে একটা মেসেজ আসলো তার ছোটবোন পাঠিয়েছে| "বুবুই বাসায় ফেরার পথে আমার লাল ড্রেসটা নিয়ে আসিস
আজকে আনবি বলেছিলি. আর হে, মার ঔষধ শেষ নিয়ে আসিস|"
এক মুহুর্তের জন্য অরু ফিরে গেলো তার ফেলে আসা জগতে...
বাবা মারা যাবার পর মা সবকিছুকে কতো শক্ত করেই
না আগলে রেখেছিলেন| দাদাবাড়ি থেকে তো কিছুই দেয়া হয়নি তবুও
মা ভেঙ্গে পরেননি| মায়ের চাকরি, বাবার জমানো টাকা আর মামাদের সাহায্য সব মিলিয়ে ভালোই তো ছিলাম| ছোটবোন দুটাকে বড়
ভাইয়ের অভাব বোনের ভালোবাসা সব তো নিজেই পূরণ করতাম|
মা আমাকে ছাড়া চলবে কি করে? লোকে যখন
মাকে কথা শোনাবে তখন মা কি ঠিক থাকতে পারবে? ওদের
কি ভালো জায়গায় বিয়ে হবে? অরু?
-হুমম. কী ভাবছ? -আশরাফ? বলো.. কিছুক্ষণ আশরাফের চোখের
দিকে তাকিয়ে থাকে অরু| তারপর বলে,
- একটা কথা বলি? হে বলো..
- আমরা বিয়েটা না করি? কয়েকটা মাস পরে করি?
আশরাফ হাত টা আরো ভালো করে ধরে|
- হঠাৎ তোমার এমন মনে হলো যে? বাসার জন্য খারাপ লাগছে? - হুমম.. অনেক - ধরো বিয়েটা করে ফেললাম তখন
যদি মা বলে এভাবে যাবার আগে একবার বললে ও তো পারতি। তখন
কি আমার বলার কিছু থাকবে? আশরাফ, তোমাকে ঠকাচ্ছি না| কষ্ট ও
দিতে চাচ্ছি না কিন্তু কেনো জানি খুব কষ্ট হচ্ছে| তুমি ও
মা দুজনকেই অনেক ভালবাসি আমি| অরুর চোখ মুছে দিয়ে বুকে টেনে নেয় আশরাফ, এতো বছরেও
আমাকে চিনলে না তুমি?
শোন! তুমি যেভাবেই আছ
আমারি তো আছো| এভাবে পাশে থাকলেই আমার চলবে| শুধু খুব
করে ভালোবাসলেই আমার হবে...
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।