আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

১৬ পরিবারের মানবেতর জীবন অনেকে আত্মগোপনে

নগরীর ত্রিশ গোডাউন এলাকায় কীর্তনখোলা নদীতে খেয়া নৌকা চালিয়ে জীবিকানির্বাহ করেন সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের চরআইচা কালীখোলা গ্রামের ধীরেন হালদার। তিলে তিলে জমানো টাকা দিয়ে একটি সেমিকাপা ঘর নির্মাণ করেন তিনি। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে সেখানে এক যুবক খুনের ঘটনার জের ধরে পরদিন সকালে যে ১৬টি বসতঘরে অগি্নসংযোগ করা হয় ধীরেনের ঘর তার একটি। ধীরেনের ঘরটি আশিংক পুড়ে যায়। ধীরেন বলেন, 'মুই কষ্ট কইর্যা ঘরহান উডাই ছিলাম।

হেই ঘরডাতে যহন আগুন দেছে, পলাইতে যাইয়াও জানের মায়া ছাইর্যা আগুন নিভাইছি। এই হানের হগলডি (সকলে) এহন মোর ঘরে থাহে। ' ক্ষতিগ্রস্ত নারায়ণ চন্দ্র হালদার বলেন, 'দেশ স্বাধীনের আগে রাজাকাররা এই বাড়ির ৪টি ঘর পোড়াইয়া দিছিল। ৪২ বছর পর আবার হেই দিনডার কথা মনে হইছে হেদিন (শুক্রবার)। তহন দিছিল রাজাকার।

আর এহন দেছে গ্রামের মানুষরা। ' তিনি বলেন, 'চরআইচা গেরামের এক থেকে দেড় হাজার মাইয়া, ব্যাডারা ও পোলাপান লাঠিসোঁটা লইয়া জাগৈর (ডাক দিয়ে) দিয়া মোগো বাড়ির দিকে আইছে। মোরা যে য্যামনে পাড়ছি পলাইছি। হামলাকারীরা একে একে কালীপদ হালদার, নারায়ণ হালদার, ধীরেন চন্দ্র হালদার, রামকৃষ্ণ, চিত্তরঞ্জন হালদার, গোপাল চন্দ্র হালদার, বীরেন চন্দ্র হালদার, হরে কৃষ্ণ হালদার, রিনা হালদার, কৃষ্ণকান্ত দাস, গোপাল দাস, বাবুল চন্দ্র দাস, সুমন চন্দ্র দাস, শ্যাম লাল দাস ও দীনেশ চন্দ্র হালদারের ঘর আগুন দিয়া পলাইয়া গ্যাছে। ' চিত্তরঞ্জন হালদার জানান, সকাল ১০টার দিকে পেট্রল নিয়ে এসে তারা সব ঘরে আগুন দিয়ে চলে যায়।

হামলার সময় চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম ছবি ও চারজন পুলিশ সেখানে ছিলেন। তাদের কোনো অনুনয় শোনেনি তারা। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায় ব্যাডমিন্টন খেলা নিয়ে বিরোধের জের ধরে চরআইচা গ্রামের সেলিম গাজীর ছেলে ঝালকাঠি সরকারি কলেজের ছাত্র পারভেজ গাজীকে (২০) কুপিয়ে হত্যা করার পর শুক্রবার সকালে বিক্ষুব্ধদের তাণ্ডবের পর অসহায় অবস্থায় রয়েছে ১৬টি পরিবার। অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প থাকার পরও তাদের সবার মুখে এখনো আতঙ্কের ছাপ। সহায়-সম্বল হারানোর বেদনায় এখনো তাদের চোখে অঝোরে ঝড়ছে জল।

জেলা প্রশাসন যে সহায়তা দিয়েছে তা খুবই সামান্য বলে দাবি তাদের। ক্ষতিগ্রস্ত গোপাল হালদার বলেন, কেউ কেউ বিভিন্ন বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। কেউ পুড়ে যাওয়া ঘরের সামনে বসে বিলাপ করছে। কেউ কেউ পুড়ে যাওয়া ছাই ভস্ম থেকে মূল্যবান কিছু খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছেন। অনেকে খোলা আকাশের নিচে এবং গাছতলায় চাদর-হোগলা বিছিয়ে সময় কাটাচ্ছেন।

ওই দিনের ঘটনায় তার ভাইয়ের কন্যা মিতু সরকারের পানচিনি অনুষ্ঠান ভেস্তে গেছে। মিতুর মা গীতা রানী সরকার বলেন, 'বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় খুনের খবর পাইয়া ঘর তালা মাইরা কোনো রহমের মাইয়া লইয়া পলাইয়া গেছি। আইয়া দেহি টিভি, ফ্রিজ, আলমারি, ওয়ারড্রপসহ সব মালামাল ভাঙচুর করেছে। মাইয়ার বিয়ার জন্য বানাইন্না স্বর্ণের জিনিসও লইয়া গেছে বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। ' গোপাল হালদার বলেন, 'যে ছেলেরা এ হত্যা ঘটাইছে, হ্যাগো বাড়িঘরে কোনো কিছু হয় নাই, যারা কিছু করে নাই তাদের ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়া হলো কেন?' গোপালের অভিযোগ, ঘটনার নায়ক হলো বাকেরগঞ্জের গোবিন্দপুর গ্রামের শংকর দাসের ছেলে পাভেল দাস এবং তার ভাই সোহাগ দাস।

তাদের নিজেদের গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। তারা কার্তিক মাস্টারের প্রয়াত ভাই গণেশ দাসের কন্যার ছেলে। প্রত্যক্ষদর্শীর উদ্ধৃতি দিয়ে গোপাল বলেন, যারা সোহাগ ও পাভেল-পারভেজসহ অন্যদের কুপিয়েছে তাদের গ্রেফতার করা যায়নি। এখন নিরীহদের আসামি করা হচ্ছে। কোনো বাড়িতে কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী নেই।

অনেকেই এখনো আত্দগোপনে এবং অনেকেই বিভিন্ন স্থানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানান গোপাল। মেট্রো পুলিশের বন্দর থানার ওসি রেজাউল ইসলাম বলেন, কোনো পক্ষ মামলা করেনি। রাতের মধ্যে (রবিবার) তারা মামলা করবে বলে জানিয়েছে। সেখানে পুলিশের একটি অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়াও থানার টহল দল সার্বক্ষণিক নজরদারি করছেন।

নিহত পারভেজের মামা আবুল জানান, ক্রিকেট খেলা নিয়ে পারভেজের ছোট ভাই পাভেলের সঙ্গে হিন্দুপাড়ার ধীমান-পীযূষদের বিরোধ ছিল। বৃহস্পতিবার রাতে মাতৃ প্রাইমারি বিদ্যালয়ের মাঠে ব্যাডমিন্টন খেলা নিয়ে পুনরায় তর্ক বাধে। এ সময় পাভেলকে পিটিয়ে আহত করে ধীমান-পীযূষসহ ১০-১২ জন। খবর পেয়ে পারভেজ, জহিরুল, শামিম ছুটে গেলে তাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরে ধীমান ও পীযূষ তার সহযোগী বিকাশ ও নন্দসহ ১০-১২ জন পারভেজকে মাঠে নিয়ে কুপিয়ে জখম করে।

তাকে রক্ষায় ভাই শামীম ও পাভেল এবং জহিরুল ইসলাম এগিয়ে গেলে তাদেরও কুপিয়ে জখম করা হয়। এদিকে ঝালকাঠি সরকারি কলেজের ছাত্র পারভেজ গাজী (২০) নিহতের ঘটনায় ১৩ জনকে আসামি করে পিতা সেলিম গাজী বাদী হয়ে ৪ দিন পর গতকাল বিকালে বরিশাল মেট্রোপলিটন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেছে। মামলার আসামিরা হলেন- কালীখোলা এলাকার পাভেল, ধীমান, পীযূষ, সোহাগ, রাজিব, রুহিদাস পাল, সুমন দাস, সাগর দাস ও বিমল (৩৫)। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা ৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।

 

 



সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।