আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এসো কোয়ান্টামের রাজ্যে – ৭ (অথবা, তুমি কোন পথে যে এলে)

১। কোয়ান্টামের রাজ্যে রাজা আছেন অনেকজন। তারমাঝে রহস্যের রাজা ছিলেন জর্মনদেশী ভার্নার হাইজেনবার্গ। আইসবার্গের গুঁতোয় টালমাটাল হয়ে টাইটানিক যেমন ডুবেই যায়, হাইজেনবার্গের গুঁতোয় চিরচেনা বিজ্ঞানের জাহাজখানাও হঠাৎ টলমল করে উঠেছিল বৈকি। তবে বিজ্ঞানীরা তাকে ডুবতে দেননি।

বাস্তবকে তাঁরা বাস্তব বলেই মেনে নিয়েছেন। আর এই বাস্তবতার নাম ‘অনিশ্চয়তা’। ইদানীং অবশ্য দেশে হাইজেনবার্গের প্রকৃত সমঝদার একজনকেই পাচ্ছি। তিনি সাবেক লেজেহোমোয়ের্শাদ। উনার বক্তব্য পরিষ্কার হলে অবস্থান অনিশ্চিত হয়ে যায়, আর অবস্থান নিশ্চিত হলে বক্তব্য অস্পষ্ট হয়ে যায়।

যাহোক, পাঠকেরা বহুদ্দিন ধরেই হাইজেনবার্গের গল্প শোনবার জন্য পপকর্ণ খেতে খেতে গ্যাস্ট্রিক আলসার বাধিয়ে ফেলছেন। অথচ ধাঁ করে সেখানে এসে পড়তেও পারছিলাম না। এ এক উভয় সংকট। হাইজেনবার্গের গল্প না শোনালে জাতীয় বেঈমান হয়ে যাব, আবার আগেই বলে ফেললে পরবর্তী গল্প নিয়ে একটা সাংবিধানিক সংকট এসে হাজির হবে। আজ সকালে* দুটো জিনিস ক্লিয়ার হয়েছে।

প্রথমটার কথা বলা যাবেনা, শরমের কথা কি জনে জনে বলে বেড়াব নাকি? দ্বিতীয়টা হল, আলুতে তারেকালীর সাক্ষাৎকার পড়ে মাথা একদম ক্লিয়ার হয়ে গেছে। (হাসিব ভাই অবশ্য উনারে নিয়া তেনা প্যাঁচানোর চেষ্টাও করেছেন, খালি ‘রেটোরিক হিসাবে’ এক দুইটা পটকা-পুটকা ওইদিকে মারতে কইলেন না ক্যা এইডা বুঝি নাই, হাত থাকতে... নাহ, থাক। ) তাই আজ আর দেরি নাই। আজ কোয়ান্টাম জগতের রহস্যপুরুষ হাইজেনবার্গের গল্প।
[ * লেখা শুরু করেছিলাম আসলে গতকাল দুপুরে, আলসেমি আর খবরের জ্বালায় টাইপ শেষ করতে করতে পুরো একদিন লেগে গেল।

]
২। হাইজেনবার্গের গল্প শুরুর আগে অল্প একটু ভুমিকা দিয়ে নেই। সেটা হল ভরবেগের গল্প। ভরবেগ মানে হল ‘ভর’ আর ‘বেগ’ একসাথে ঘুটা ঘুটা দিলে যা হয় সেইটা। তা, সেটা খায়? নাকি মাথায় দেয়? বলছি দাঁড়ান।

ভরবেগ মানে হল কোনো জিনিসের ধাক্কা দেয়ার ক্ষমতার একটা পরিমাপ। একটা বুলেট আর কতই বা ভারি? ৫০ গ্রাম। আমি যদি খালি হাতে সেটা আপনার দিকে ছুঁড়ে দেই, আপনি নির্ঘাত হাসিমুখে সেটা খপ করে ধরে ফেলবেন, খালিহাতেই। এবার সেটাকে খালিহাতে না ছুঁড়ে যদি বন্দুকে ভরে ছুঁড়ি। কি, রাজি হবেন? খালি হাতে সেটা ঠেকাতে? এবারে বুলেটের যে জিনিসটাকে আপনি ভয় পাচ্ছেন সেটাই ভরবেগ।

অথবা ধরেন একটা বাইসাইকেল নিয়ে খুউব আস্তে আপনার দিকে সোজা চালিয়ে আসলাম। আপনি পাত্তাই দেবেননা, গায়ের ওপর এসে পড়লে বড়জোর হাত দিয়ে হ্যান্ডেলবার চেপে ধরে আলগোছে থামাবেন। এবার একই গতিতে একটা রাস্তা সমান করার রোলার চালিয়ে যদি আসি? ওকি! পালাচ্ছেন কেনো? এবারেও রোলারের যে জিনিসটাকে ভয় পেলেন তার নাম ভরবেগ। প্রথম উদাহরনের দ্বিতীয় উদাহরনে বুলেটের বেশী ভরবেগের জন্য দায়ী ছিল তার বেগ (অথচ, ভর কিন্তু আগেরটাই)। আর দ্বিতীয় উদাহরণে, রোলারের বেশি ভরবেগের জন্য দায়ী তার ভর (অথচ, বেগ কিন্তু সাইকেলের সমানই)।

অর্থাৎ, ভর আর বেগ মিলে যে (অনির্বাচনী) জোট বাঁধে (বিজয় জোট না আবার) সেটাই ভরবেগ। যারই গুঁতোগুঁতির ক্ষমতা আছে, তারই ভরবেগ আছে। এমনকি ইলেকট্রনেরও, তা সে যতই ক্ষুদ্র হোক না কেন।
৩। খুব মোটা দাগে নড়াচড়া হতে পারে দু’রকম।

এক হতে পারে- নাক বরাবর সোজা যাওয়া কিংবা আসা, যার কেতাবি নামঃ ‘রৈখিক গতি’। আরেক রকম হতে পারে- এক জায়গায় বনবন করে ঘুরতে থাকা, যার কেতাবী নামঃ ‘কৌণিক গতি’। রৈখিক গতিতে মাপা হয় কতদুর গেল, কতজোরে গেল ইত্যাদি। আর কৌণিক গতিতে মাপা হয়, কতখানি ঘুরল, কতজোরে ঘুরল এইসব। একটু আগে যে ভরবেগের কথা বলেছিলাম সেটা হল রৈখিক গতির সাথে সম্পর্কিত ভরবেগ বা ‘রৈখিক ভরবেগ’।

একই ভাবে আরও এক প্রকার ভরবেগ আছে যার নাম ‘কৌণিক ভরবেগ’, এটি সম্পর্কিত ঘুরপাক খাবার সঙ্গে। খুব হাল্কা একটা ফ্যানকেও কি ফুলস্পিডে চলার সময় খালি হাতে থামাতে সাহস পাবেন? কিংবা, খুউব আস্তে ঘুরতে থাকা একটা ঢাউস সাইজের নাগরদোলাকে? যে কারনে পারবেননা তার নামই কৌণিক ভরবেগ। যাবতীয় ঘুরন্ত বস্তুরই আছে একটি কৌণিক ভরবেগ। হেলিকপ্টারের প্রপেলর, গড়িয়ে দেয়া বল, ঘুরতে ঘুরতে নামা ঝাঁপাড়ু- সব্বার। এমনকি পৃথিবী, চাঁদ কিংবা গ্রহগুলো যেহেতু ঘুরছে, তাদেরও আছে কৌণিক ভরবেগ।

ঠিক তেমনই ভাবে কৌণিক ভরবেগ আছে পরমাণুতে আটক ইলেকট্রনেরও, কারন সে বাঁই বাঁই করে ঘুরে চলেছে তার অনুমোদিত কক্ষপথে। নীলস বোর তাঁর মডেলে ইলেকট্রনের কৌণিক ভরবেগকেই আসলে ‘টুকরো টুকরো’ অর্থাৎ ‘কোয়ান্টায়িত’ করেছিলেন।
৪। আশেপাশে মাপার মত যা কিছু আমরা দেখি তা মাপা যায় বিভিন্নভাবে। কাউকে মাপা যায় সরাসরি, কাউকে আবার অন্য কারও সাহায্যে।

আপনার উচ্চতা জানতে চাইলে চট করে একটা স্কেল বসিয়ে মেপে ফেলা যাবে। কিংবা, ভর জানতে চাইলে আপনাকে দাঁড়িপাল্লায় (ইয়ে, জামায়াতের টায় না, সাধারণটায়) তুলে মাপমত বাটখারা চাপালেই হবে। একবারেই কাজ শেষ। এখন যদি আপনার গতি মাপতে চাই, তখন? সবার আগে আপনাকে তাড়া তিয়ে দৌড়ের ওপর রাখতে হবে। তারপর একই সাথে আপনি কতদূরে গেলেন সেটা যেমন মাপতে হবে, ঘড়ি ধরে কতক্ষনে গেলেন সেটাও মাপতে হবে।

ম্যালা হ্যাপা। এখন, ‘কতদুরে’ আর ‘কতক্ষণে’ দুটোর একটাকেও বাদ দিলেই কিন্তু আর আপনার গতি মাপা যাচ্ছে না। (সামনে আপেক্ষকিতা নিয়ে নতুন সিরিজ শুরু করব ভাবছি, সেখানে গতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা থাকবে। আপাতত এটুকুই থাক। ) এমন আরো অনেককিছুই আছে যাদের সরাসরি মাপা যায় না।

অন্য কয়েকটা জিনিস মেপে তা দিয়ে হিসাবপত্র করে তবেই মাপা যায়। এমনই এক বিটকেল জিনিস হল, ইলেক্ট্রনের ভরবেগ। একে সরাসরি মাপবার উপায় নেই। তাকে মাপতে সাহায্য লাগে ইলেকট্রনের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের (তরঙ্গদৈর্ঘ্য কি একটু পরেই বলছি)। এখন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের মাপেই যদি গলদ থেকে থাকে, তবে ভরবেগের তো দফারফা।

আপনার বেগ মাপার সময় যদি মাঝপথে ঘড়ি বন্ধ হয়ে যায়, তবে কি আর বেগ মেপে ওঠা যাবে? কেবল দৌড়াদৌড়িটাই সার।
৫। তরঙ্গদৈর্ঘ্য বড্ড খটমটে নাম, তবে জিনিসটা আসলে পানির চেয়েও সোজা। কোথাও ঢেউ তৈরি হলে কি হয়? একটা উঁচু আর একটা নিচু- এই সেটটাই বারবার ঘুরে ফিরে আসতে থাকে না? ঠিক একটা উঁচু আর একটা নিচু নিয়েই কিন্তু একটা আস্ত ঢেউ, আর এর দৈর্ঘ্যটাই তার তরঙ্গদৈর্ঘ্য। এখন ধরেন একমাথা বাঁধা একটা দড়ির একমাথা ধরে অপর-নিচ করতে লাগলেন (ছবি দ্রষ্টব্য)।

এতে উৎপন্ন হল কয়েকটা ঢেউ। এখন কয়টা আস্ত ঢেউ হয়েছে সেটা গুনে ফেললেই কেল্লাফতে। দড়িটা কতটুকু লম্বা জেনে নিয়ে তাকে ঢেউয়ের সঙ্খ্যা দিয়ে ভাগ করলেই ওইকিক নিয়মে যেটা পেয়ে যাবেন, তা হল একটা ঢেউয়ের (একটা উঁচু + একটা নিচু) দৈর্ঘ্য- অর্থাৎ ‘তরঙ্গদৈর্ঘ্য’। এখন যদি জিজ্ঞাসা করিঃ “কইঞ্ছেন দেহি, ঢেউখান দড়ির ঠিক কোথায়?” এবার কিন্তু মাথা শর্ট সার্কিট হয়ে যাবে। কারন ঢেউটা আছে তো পুরো দড়ি জুড়েই।

আচ্ছা, এবার দড়ির খোলা মাথাটায় একটা ঝটকা দেন। দেখা যাবে একটা মাত্র উঁচু বা নিচু (বা তার অংশবিশেষ) এক মাথা থেকে অন্য মাথায় চলে যাচ্ছে (ছবি দ্রষ্টব্য)। এবার কিন্তু ৩২ দাঁত কেলিয়ে (তারেকাণু হলে ২৮ দাঁত) মোটামুটি নির্দিষ্ট করেই বলতে পারবেন যে- ঢেউটা ঠিক কোথায় আছে। কিন্তু এবারে তরঙ্গদৈর্ঘ্য বের করতে যান- ঠেলাটা বুঝবেন। কারন ঢেউয়ের যে টুকরোটা যাচ্ছে সেটা একখানা, আধখানা নাকি পৌনে একখানা সেটা নিশ্চিত হবার সুযোগ কম।

অর্থাৎঃ “তরঙ্গদৈর্ঘ্য যত স্পষ্ট, অবস্থান ততই অস্পষ্ট। আর উল্টোভাবে, অবস্থান যতই সুনির্দিষ্ট, তরঙ্গদৈর্ঘ্য ততই অনির্দিষ্ট। ” সংক্ষেপে, এই দুটি বাক্যই হাইজেনবার্গের সেই বিখ্যাত ‘অনিশ্চয়তার নীতি’। মূল রূপটিতে অবশ্য তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বদলে ভরবেগের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ, ইলেকট্রনের ভরবেগ যত সুনির্দিষ্টভাবে জানা যাবে, তার অবস্থান ততই অনির্দিষ্ট হয়ে পড়বে।

দোষটা কিন্তু ঘুরেফিরে সেই তরঙ্গদৈর্ঘ্যেরই, কারন ইলেকট্রনের ভরবেগ জানতে চাইলে মাপতে হবে তার তরঙ্গদৈর্ঘ্যকেই।
৬। এক পর্বে আলোদের বৃত্তকাওয়াজের গল্প বলেছিলাম মনে আছে? ঠিক একই জিনিস কিন্তু ইলেকট্রনের বেলাতেও ঘটে। অর্থাৎ ইলেকট্রনকে দুটো ফুটো দিয়ে পার করতে গেলেও ফুটোর সামনে ঢেউয়ের মত কম-বেশি পাওয়া যায়। অনেকগুলো ইলেকট্রনের জন্য এই ঘটনা ঘটলেও ততটা সমস্যা ছিলনা- মুশকিল হল একটা ইলেকট্রনের জন্যও যখন এই ঘটনা ঘটে তখন।

অবস্থাটা কেমন একটু বুঝিয়ে বলি। ধরেন ঘরের দরজা জানালা দুটোই খোলা। এখন বাতাস বইলে তার কিছু অংশ জানালা দিয়ে আর কিছু অংশ দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকবে খুবই স্বাভাবিক। এবার, আপনি ঘরে ঢুকতে চাইলে কি করবেন? হয় দরজা দিয়ে আসবেন, নইলে জানালা দিয়ে, তাইতো? (মানছি, সাধারণত আমরা জানালা দিয়ে ঢুকি না, তবে এক-দু’বার ঢুকতে তো আর দোষ নেই) এখন ব্যাপারটা যদি এমন হয় যে- আপনি আপনার বাম পা আর ডান হাত খানাকে জানালা দিয়ে পাঠিয়ে বাকী শরীরটুকু দরজা দিয়ে ঢোকালেন, তাহলে বাড়ির লোকে আতকে উঠবেনা? একখানা একলা ইলেকট্রনও যখন এই কাজটা করবার চেষ্টা করল, অর্থাৎ একই জিনিস একই সাথে দুটো আলাদা ফুটো দিয়ে একই সময়ে ঢোকবার চেষ্টা করল (ব্যাটা লম্পট কাঁহিকা) তখন বিজ্ঞানীরাও আঁতকেই উঠেছিলেন। আগেই বলেছিলাম বিজ্ঞানীরা জন্মের ঘাড়ত্যাঁড়া।

তাঁরা দুই ফুটোতেই র্যানবের কড়া পাহারা বসালেন। কিন্তু সবই বৃথা।
৭। আমরা দেখি কিভাবে সে গল্প তো আগেই বলেছি। আলো কোথাও গুঁতো খেয়ে ফেরত আসলে তবেই না তাকে দেখতে পাই।

এখানেও ঠিক একই চেষ্টা করা হয়েছিল। অর্থাৎ ইলেকট্রন যে ফুটো দিয়েই যাকনা কেন, সেখানে আলোর ব্যাবস্থা ছিল। অর্থাৎ কিনা ইলেকট্রন যে পথে যাবে, সেদিক থেকে খানিকটা আলো ঠিকরে দেবে, আমরাও বেশ বুঝব- সে ওপরের ফুটো দিয়ে গেল, নাকি নিচের। এ পর্যন্ত ঠিকই ছিল, গোল বাঁধাল আলোর গুঁতোগুঁতি করবার স্বভাব। কারন, যদি বেশি কম্পাঙ্কের (অর্থাৎ বেশি শক্তির) আলো পাঠানো হয় তখন সে বেশ পরিষ্কার সিগন্যাল পাঠায়, কিন্তু গুঁতিয়ে দফারফা করে দেয় ইলেকট্রনের গতিপথের।

আর কম কম্পাঙ্কের (অর্থাৎ কম শক্তির) আলো পাঠালে ইলেকট্রনের যাত্রাপথে তেমন হেরফের হয়না বটে, কিন্তু এতই আবছা সিগন্যাল আসে যে ঠিক ঠাহর করে উঠতে পারা যায়না সিগন্যালটা এল কোন ফুটো থেকে। আবার সেই একই সমস্যা- ‘ইলেকট্রনের গতিপথ ঠিক রাখতে গেলে কোন ফুটো দিয়ে যাবে সেটা ভালভাবে জানা যাচ্ছে না। আবার কোন ফুটো দিয়ে যাবে সেটা ভালভাবে জানতে গেলে গতিবিধি পালটে যাচ্ছে। ’ হাইজেনবার্গ নিশ্চয় সাহানা বাজপেয়ীর কন্ঠে রবিবুড়োর এই গানখানা শোনেননি। তাহলে সারা দিন এই গান শুনতেই থাকতেন।


৮। ভেবেছিলাম বিজ্ঞানের গল্পে সূত্র-সমীকরণের কচকচি ঢোকাব না। কিন্তু হাইজেনবার্গের বিখ্যাত সূত্রটা দেবার লোভ সামলাতে পারলাম না। (ছবি দ্রষ্টব্য) এখানে, ডেল্টা এক্স হল গিয়ে অবস্থানের অনিশ্চয়তা, আর ডেল্টা পি হল ভরবেগের অনিশ্চয়তা। সমান চিহ্নের বাম পাশের এইচ হল সেই বহুল ব্যাবহৃত প্ল্যাঙ্ক ধ্রুবক।

ভাগ্যিস যার মান খুবই ছোট, তাই এই অনিশ্চয়তা খালি কোয়ান্টামের ক্ষুদ্র জগতেই বলবৎ। এই জিনিসের মান বড় হলে বিশাল হ্যাপা ছিল। শ্রদ্ধেয় জাফর ইকবাল স্যারের জবানীতে* বলি-
আবার তুমি যদি ট্রেনে ওঠার জন্য অত্যন্ত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হও এবং যখন সেটা ঠিক তোমার সামনে আসবে তখনই ট্রেনে উঠতে যাও তাহলেও মহাবিপদে পড়বে। কারন ট্রেনটা যখন ঠিক তোমার সামনে এসে দাঁড়াবে তখন তুমি ট্রেনের অবস্থান নিশ্চিতভাবে জান, যার অর্থ ট্রেনটার ভরবেগ (কাজেই তার বেগ) পুরোপুরি অনিশ্চিত হয়ে যাবে। ট্রেনটা দাঁড়িয়েও তাহকতে পারে, অচিন্ত্যনীয় বেগে ছুটেও যেতে পারে, সেটা সম্পর্কে তুমি কিছুই জানোনা।


তবে আমাদের জন্য সেটা সমস্যা হয়না, h-এর মান খুব ছোট, তাই শুধু অণু-পরমাণুকে অনিশ্চয়তার সূত্র নিয়ে মাথা ঘামাতে হয়- আমাদের মাথা ঘামাতে হয় না। ”
[ * কোয়ান্টাম মেকানিক্স/ মুহম্মদ জাফর ইকবাল, পৃষ্ঠা নং-৬৬ ]
৯। শেষ করি শ্রদ্ধেয় শিক্ষক এ এম হারুন অর রশীদের মূল্যায়ন* উদ্ধৃত করে। স্যার লিখেছেন-
এখানে বর্নিত প্রথম দলটির অগ্রপথিকের জন্মদিন গিয়েছে কিছুদিন আগেই, প্রয়াত এই ব্যাক্তিকে নিয়ে আর কিছু বললাম না। তবে আশংকার কথা এই যে, দ্বিতীয় দলটির সদস্যসঙ্খ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে উত্তরোত্তর।

তবে সেজন্য ভয়ের কিছু নেই। শ্রদ্ধেয় ‘মোতাহের হোসেন চৌধুরী’ বলেছিলেনঃ “অন্ধকারের ওপর লাঠিপেটা করে লাভ নেই, আলোক জ্বালালেই অন্ধকার দূরীভূত হবে। ” আর এই আলোক জ্বালিয়ে রাখতে হবে কিন্তু আমাদের সবাইকে, নিজের তাগিদেই। মনে রাখবেন- আমাদের জ্ঞানের আলো যত জ্বলজ্বল করে দীপ্যমান থাকবে, তাদের সুসংহত অবস্থান ততই অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
[ * পদার্থবিজ্ঞানের কয়েকজন স্রষ্টা/ এ এম হারুন অর রশীদ, পৃষ্ঠা নং-৩৩ ]


সোর্স: http://www.sachalayatan.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।