আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সন্তানকে জিম্মি করে মাকে গণধর্ষণ -- আমি কি নিছক গল্প বলবো নাকি সত্য

তুমি আমি আমরা ......

--বিড়ির আসল মজা কই জানস ? --টাকায় অনেকগুলান পাওয়া যায় --দূর বকাচুদা , বিড়ির আসল মজা এর পাছায় । বিড়ির শেষ টানে যে জসিলা সুখ এরুম সুখ তুই আর কিছুতেই পাইবি না ... কথা শেষ হবার আগেই আজিজ মিয়া বিড়ির শেষ অংশে জোরসে টান লাগায় । এরপর তার বিড়িতে পোড়া ঠোঁট মাছের ঠোঁটের মতো গোল করে শাহীনের মুখ বরাবর এক রাশ ধোঁয়া ছাড়ে আর ক্যোঁৎ ক্যোঁৎ হাসে । আজ বাংলার বোতল আজিজকে ভালো মতো ধরেছে । আজিজ মিয়া এমুন আচরণে শাহীন মিয়া বিরক্ত হয় ।

একজনের বিড়ির ধোঁয়া আরেকজনের মুখে ছুড়ে দেয়া শাহীন মিয়ার মতে একধরণের অপমান । আজিজ্জা তাকে অপমান করছে । অবশ্য এটা নতুন না । আজিজ্জা সুযোগ পেলেই তাকে অপমান করে । এই তো গতপরশু রাতে গঞ্জে বুলু ফিলিম দেখতে গেল তারা দুই বন্ধু ।

‘ সুষমা লেডিস টেইলারস ‘ এর মালিক দর্জি ইকরাম মণ্ডলের ঘরে প্রতি সন্ধ্যায় বুলু ফিলিমের আসর বসে । এক কামরার টিনের ঘরে পর্দা ঝুলিয়ে দুই ভাগে ভাগ করা হয় । এক পাশে চলে দেশি বুলু ফিলিম , অন্য পাশে বিদেশী । দেশি শো ঘণ্টায় পনেরো টাকা আর বিদেশী ঘণ্টায় বিশ টাকা । শাহীন মিয়ার ইচ্ছে ছিল বিদেশী বুলু ফিলিমের ।

সারাদিন বন্দরে মাল টানা নেয়া করে লুঙ্গির কুঁচকিতে তার জমা ছিল একশো পঁচিশ টাকা । এক বোতল বাংলা কিনতে একশো দশ টাকা বেড়িয়ে গেল । পনেরো টাকা দিয়ে বিদেশী জিনিস দেখা যাবে না । ইকরাম মণ্ডল বহুত হারামি । টাকা পয়সায় বাপরেও ছাড় দেয় না ।

শাহীন মিয়া উপায় না দেখে আজিজ্জারে শুধু বলেছিল -- ওরে আজিজ্জা , পাচ টেহা ধার দে । আইজ বিদেশী দেখবার খায়েস হইছে । পাচ টেহায় টান পড়ছে । আমি পরে তোরে সুদ দিয়া দিমুনি । আর আজিজ্জা করল কি ! ভরা মজলিসে কইয়া দিল -- হালার বিগার দেখছুইন , কুঁচকিতে নাই টেহা ।

হালার আবার বিদেশী মাল দেখাবার খায়েস হইছে , বাদাইম্মমা কুনখানকার ! এই কথা বলেই ক্যোঁৎ ক্যোঁৎ করে সে কি হাসি । তার দেখাদেখি সব বুলু ফিলিমখোররাও শাহীন মিয়ার দিকে তাকিয়ে হাসি দেখায় । এক বুইরা আবার এক ইঞ্চি উপরে । সে চোখ টিফি দিয়ে কয় --ভাতিজা , দেশি মাল টাশে বেশি , আউট হইব ভালা । আইজ দেশি জিনিস ই দেখিক্কালাউ ।

কথা শেষ হবার আগেই আবার সবার ক্যোঁৎ ক্যোঁৎ হাসির শব্দ । হালার পুত আজিজ্জা রে আজিজ্জা ... একদিন আমারও চান্স আইব । ভাও মতো পাইয়া লই তোরে । ফাডাইয়ালবাম --অগ্রহায়নের আইজ চাইর তারিখ , এহনি শীত পইড়া গেছে । কিরে তোর শীত ধরে না , ঐ শাহীন্না কতা কস না কে ? আজিজ মিয়া গলায় ভালমতো মাফলার জড়াতে জড়াতে শাহীন মিয়াকে প্রশ্ন করে ।

শাহীন মিয়ারও ভালো শীত ধরেছে । কিন্তু আজিজ্জার কাছে তার শীত ধরবার কথা স্বীকার যেতে ইচ্ছা করছে না । --এইডা আর এমুন কি শীত । আমার তো লুঙ্গি আলাগ কইরা নদীর বাতাস ভিত্রে ডুকাইবার মন চাইতেছে । শাহীন মিয়ার খোঁচা মারা উত্তর ।

আজিজ আর শাহীন বসে আছে নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলার লক্ষণখোলা এলাকায় । একটি পরিত্যক্ত টিন শেডের গুদাম ঘরের পাহারাদার আজিজ মিয়া । প্রতিদিন সন্ধ্যায় শাহীন মিয়া আর আজিজ মিয়া গুদাম ঘরের সামনে বসে বোতল টানে আর বিড়ি ধরায় । হাতে টাকা পয়সা থাকলে চলে যায় সুষমা লেডিস টেইলারসে । হরতালের কারনে কয়েকদিন যাবৎ হাতে কাম কাজ কম ।

বন্দরে মালামাল ই আসে না । কাম থাকবো ক্যামনে । আজকের বোতলের টাকাও বাকিতে । মন মিজাজ কারও তেমন সুবিধার না । --ওরে শাহীন্না বিগার উঠে রে , যাবি নাকি সুষমায় ।

ইকরাম ওস্তাদের হাতে পায়ে ধইরা এক শো মাইরা আসি । আজিজ্জার কথা শাহীন মিয়ার মনে ধরে । আজিজ্জার ক্যামন বিগার উঠছে সেটা জানা নাই তবে শাহীন মিয়ার বেশম বিগার উঠছে কাল রাত থেকেই । হাত মুত কোন মতেই কিছু ফয়দা হইতাছে না । এর উপর কুঁচকিতে নাই টেহা ! বালের কপাল ।

শাহীন মিয়া নিজের কপাল ডান হাতের বুড়া আঙ্গুল নিয়ে ঘষতাছে এমন সময় তার নজরে আসলো শিরীন বানু । বহু দূর থেকে হেঁটে হেঁটে শিরীন বানু এই দিকেই আসচ্ছে । কোলে তার চার বৎসর বয়সী শিশু কন্যা । প্রতিদিনের মতো আজও কাজ শেষে লক্ষণখোলা এলাকায় পরিত্যক্ত টিন শেডের গুদাম ঘরের পাশের কাঁচা রাস্তা দিয়ে সে তার বাড়ি যাবে । প্রায় চার বছর আগে এই মেয়ের তালাক হয় ।

মেয়ের জামাই আছিল এক বিশ্ব বাটপার । তাদের ই দোস্ত আছিলো । শালা অল্পবয়সী শিরীন বানুকে দেখে পাগলা হইয়া তাকে বিয়া করে । শিরীন বানু’র তখন বয়স ছিল পনেরো বছর । বছর ঘুরতে না ঘুরতেই মেয়ের পেটে বাচ্চা আসলো ।

বাটপার বাপ বাচ্চার কথা শুনেই মেয়েকে দিয়া দেয় তালাক । আসলে অল্পবয়সী শিরীন বানুকে ভোগ করাই ছিল তার উদ্দেশ্য । পেটে আঁতকা বাচ্চা এসে গেছে । বাচ্চা পালার মুরোদ বা ইচ্ছা কোনটাই ভণ্ড বাপের নাই । তাই দিয়া দিছে তালাক ।

ঝামেলা ফিনিশ । যা তোর পেটের বাইচ্চা তুই সামাল দে । পরে জুয়ার আড্ডায় এইসব গল্প করে শিরীন বানুর জামাই আর তারা অনেক হাসি তামাশা করে । বেকুব মেয়েমানুষরে নিয়ে হাসি তামাশা ছাড়া আর কি বা করবার আছে ! শিশু কন্যার বয়সও চার বছর । শিরীন বানু একাই কন্যা বড় করছে ।

খাসা বেকুব । বাচ্চা ফেলাই দিলেই তো হয় । ল্যাঠা চুকে যায় । বাচ্চার বাপ যদি বাচ্চার ভরন পোষণের ভয়ে আঁতকা তালাক দিতে পারে শিরীন বানু কেন বাচ্চা ফেলাই দিতে পারে না ! শাহীন মিয়ার মাথায় এইটা কোনমতেই ডুকে না । দিনকে দিন শিরীন বানুর শরীর যেন খুলতেছে ।

এমুন রুপ যৌবন অত্র এলাকায় আর কারও নাই । বন্দরের কম করে হলেও ষোল সতেরো জন তারে রাতে থাকার আমন্ত্রণ জানাইছে । নগত ক্যাশে । মেয়ে রাজি হয় না । দেমাগ ।

--ঢঙ্গীডারে দেখছস ? শাহীন মিয়া বিড়ি টানতে টানতে আজিজ মিয়াকে প্রশ্ন করে । --এমুন তাজা ফুল সামনে দিয়া যাইতে থাকলে গন্ধ না লইয়া উপায় আছে রে বলদ ! আজিজ মিজা আবারো তার বিখ্যাত ক্যোঁৎ ক্যোঁৎ হাসি হাসে । সন্ধ্যা সাতটা বাজে । শীতের কারণেই হোক কিংবা কাজ কাম কম থাকার কারনেই হোক এলাকা একেবারেই নীরব । কি মনে হতে রসিকতার ছলে শাহীন মিয়া বলে বসল --কিরে আজিজ্জা আইজ না তোর বিগার উঠছে ।

সামনে দিয়াই তো পাখি ফুড়ুৎ মারতাছে , ধরবি ? আজিজ মিয়া বহুদিন যাবৎ এমুন একটা কথা কারও মুখে শুনতে চাচ্ছিল । পার্টনার ছাড়া এইসব কাম জমে না । শিরীন বানুকে রাতে দুষ্ট আমন্ত্রণ জানানো মানুষদের মধ্যে আজিজ মিয়া একজন । সে অনেকদিন যাবৎ মেয়েটাকে বাগে আনতে চেষ্টা করছে । হচ্ছে না ।

আজ যেন সুযোগ সামনে এসে ধরা দিল । লাফ দিয়ে আজিজ মিয়া উঠে দাড়ায় । -চল শাহীন্না , আইজ ছেমড়িরে খাইছি । আজিজ ও শাহীন মিয়া গায়ের চাদর ফেলে কোনাকুনি দৌড় লাগায় শিরীন বানুর পিছন বরাবর । তাদের চোখে এখন পশুর দৃষ্টি ।

অন্ধকারে দৌড়ে যেতে তাদের অসুবিধা হয় না । তার একেবারে নিঃশব্দে বিশ বছর বয়সী শিরীন বানুর পিছনে এসে দাড়ায় । কর্মক্লান্ত শিরীন বানু কিছু বুঝবার আগেই তার কোল থেকে এক ঝটকায় কেড়ে নেয়া হয় চার বৎসর বয়সী শিশু কন্যাকে । শিশু কন্যাটি মায়ের কোলে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে ছিল । আচমকা অচেনা হাতের ঝটকায় সে জেগে উঠে ।

ঘুম ঘুম চোখে দেখতে পায় তার মা’কে একজন মানুষ টেনে হিঁচড়ে নদীর পাড়ে নিয়ে যাচ্ছে । যে মানুষটি শক্ত করে তাকে পাজকোলে করে রেখেছে সে হিসহিস শব্দে তার মা’কে বলছে -- খবরদার চিল্লাবি না , খাড়ার উপ্রে বাইচ্চা মাইরা ফেলামু । অগ্রহায়নের চার তারিখ , সন্ধ্যা সাতটা । নারায়ণগঞ্জ লক্ষণখোলা এলাকার নদীর পাড়ে এক মা’কে তার চার বৎসর বয়সী শিশু কন্যাকে জিম্মি করে গণধর্ষণ করা হয় । আজিজ মিয়া , শাহীন মিয়া ছাড়াও সেই ভয়ংকর ধর্ষণযজ্ঞে শামিল হয় আরও কয়েকজন ।

মায়ের বোবা আর্তচিৎকারে অবুঝ শিশু কন্যাটি কাঁদে উঠে । কিন্তু তার কান্না শোনার মতো একটি মানুষও সেইসময় পাশে ছিল না । ছিল একদল হিংস্র পশু । ----------------------------------------------------------------------------- উপরের লিখাটিকে কি আমি একটি গল্প ই বলবো ? কারণ বাস্তবিক জীবনে এমন কিছু কক্ষনো হতে পারে না । এমন হিংস্র ঘটনা কেবল গল্পেই সম্ভব ।

কিন্তু না , এই গল্পের মূল শিকড় সম্পূর্ণ সত্য । সত্য আজিজ মিয়া , শাহীন মিয়া , সত্য শিরীন বানু ( ছদ্মনাম ) তার চার বৎসর বয়সী ফুটফুটে কন্যা শিশু । নিরেটের মতো সত্য অগ্রহায়নের চার তারিখ , সন্ধ্যা সাতটায় নারায়ণগঞ্জ লক্ষণখোলা এলাকার নদীর পাড়ে এক মা’কে তার চার বৎসর বয়সী শিশু কন্যাকে জিম্মি করে গণধর্ষণ করা হয় । নিউজ লিংক - সন্তানকে জিম্মি করে মাকে গণধর্ষণ! এই ভয়ংকর লোমহর্ষক ঘটনা হয়তো আমাদের অনেকেরই দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে । আসলে এমন ঘটনা তো দেশে অহরহ হচ্ছে ।

কয়টাই বা নজরে আসবে ? কিন্তু একটি বার কি ভেবে দেখেছেন – একটি শিশু যার দুনিয়া বলতে কেবল মাত্র মা , সেই শিশুর মনে তার মমতাময়ী মায়ের সেই বোবা আর্তচিৎকার কতোটা ভয়ংকর ক্ষতের সৃষ্টি করবে ভবিষ্যৎতে ? যেই মা , নিজের সন্তানকে নিয়ে সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করেছে , তার প্রতি সমাজের এরুপ অবিচার সেই মা কিভাবে মেনে নিবে ? সেই শিশু আর মা’কে জবাব দেয়ার মতো ভাষা কি আমাদের কারও কাছে আছে ? নারীদের একটি নিরাপদ সমাজ উপহার দিতে আমরা ব্যর্থ , এই অপরাধের দায়ভার কি কেউ এড়াতে পারবো ? প্রতিটি ধর্ষণের বিচার চাই । ধর্ষকের সাঁজা হোক – “ ফাঁসি “

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.