আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এই গল্পটা চার চারবার স্বপ্নপোড়া একজন দূর্ভাগা মানুষের...



হেদায়েত আলীর জন্ম হয়েছে বাঁশ দিয়ে ঢেস দেওয়া ভাঙ্গা কুঁড়ে ঘরে। অভাব-অনটনের সংসারে বই-খাতা বিলাসিতা তবু আধ পেটে আর ছেঁড়া শার্টে হেদায়েত আলী মেট্রিক পাশ করেছিলেন। জীবিকার প্রয়োজনে তিনি ঢাকায় এসেছিলেন সেই আশির দশকে। সেই থেকে আজ অবদি এই বিলাসী নগরের পিচঢালা রাস্তার সাথে তাঁর গভীর সখ্যতা। কেননা হেঁটে হেঁটে অফিসে আসা কিংবা ফেরার দরুন কিছু টাকা সুখ হয়ে বেঁচে যায়! গত ২৫ বছরে তিনি রাজনীতির বহুরূপী হিংস্রতা দেখেছেন।

বড় আশা নিয়ে চার চারবার ভোট দিয়েছেন। এই চারবারই তিনি একটাই স্বপ্ন দেখেছিলেন। না হেদায়েত আলী কোটি কোটি টাকা কিংবা প্রাডো ল্যান্ড ক্রুজার অথবা বারিধারা-গুলশানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ফ্ল্যাটের স্বপ্ন দেখেননি। হেদায়েত আলীর স্বপ্নটা ছিলো ক্ষমতায় আসবে যারা তারা এই দেশটাকে ভালোবাসবে ঠিক মায়ের মত। রাষ্ট্র বদলাবে, বদলাবে খেটে-খাওয়া মানুষের ঘামে ভেজা জীবন।

কিন্তু হেদায়েত আলির স্বপ্ন পুড়েছে চারবারই... অবশেষে হেদায়েত আলী জেনেছেন রাজনীতিবিদরা কথা রাখতে জানে না! গত কয়েকদিন এরশাদের আচরনে হেদায়েত আলী আবার স্বপ্ন দেখছিলেন। এবার এরশাদ কঠোর হবেন। সব দল ভোটে আসবে। তিনি ভোটটা দেবেন ''বদলে'' যাওয়া এরশাদকে। মনে মনে হেয়ায়েত আলী বড় লজ্জ্বা পান।

কতবার তিনি এরশাদকে বেহায়া বলে গালি দিয়েছেন। ছিঃ! কিন্তু আজ? হেদায়েত আলী সেই পুরনো নির্লজ্জ্ব, ঘৃনিত এরশাদকেই দেখতে পান। হেদায়েত আলী ভেবে অবাক হোন- স্বপ্ন দেখতে তো পয়সা লাগে না কিন্তু স্বপ্ন পোড়ার দহন এতো তীব্র! এতো ভয়াবহ! বাংলা মোটরের অফিস থেকে হাঁটতে হাঁটতেই শেষ বিকেলে হেদায়েত আলী সোরওয়ার্দী উদ্যানে এসে একটা বেঞ্চে বসে পড়েন। প্রায় পঞ্চাশ বছর বয়সী এই মানুষটাকে আজ বড় অসহায় লাগে। একদিকে চেতনা ব্যবসায়ী অন্যদিকে ৭১ এর ঘাতকদের আশ্রয় দাতা, আরেক পাশে এরশাদের মত মিথ্যুক অন্য পাশে বামপন্হী ভন্ডের দল... হেদায়েত আলী আবার স্বপ্ন দেখতে চান কিন্তু তিনি কোন আশা দেখতে পান না।

মাঝ বয়সী হেদায়েত আলীর মাথাটা ঘুরে ওঠে। নিজেকে হেদায়েত আলীর একজন হেরে যাওয়া মানুষ বলে মনে হয়। বুকের ভেতরটা কেমন জানি শূন্য শূন্য লাগে। সন্ধ্যার আকাশে বিশাল চাঁদ। সেই চাঁদের আলোয় হেদায়েত আলী পার্কের বেঞ্চটায় অসহায় ভাবে বসে থাকেন।

চাঁদের আলো তাঁর শরীরে উপচে পড়ছে। অথচ হেদায়েত আলী টের পান না তাঁর চশমার কাঁচগুলো যে ঘোলা হয়ে গেছে! হেদায়েত আলী কাঁদছেন। কাঁদছেন একজন স্বপ্নপোড়া হেরে যাওয়া মানুষ। কে জানে হয়তো এই কান্নার সাক্ষী হতেই দ্বিগুন হয়ে যায় চাঁদের আলো!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।