আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৩০ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী বাদ, আলোচনায় দীপু মনি

নির্বাচনকালীন সরকার থেকে বাদ পড়লেন পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা দুই প্রভাবশালী মন্ত্রী দীপু মনি ও মহীউদ্দীন খান আলমগীর। ঘটনাচক্রে তাঁরা দুজনই একই জেলা চাঁদপুরের বাসিন্দা।
অভিজ্ঞতার ঘাটতি থাকলেও দীপু মনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন প্রায় পাঁচ বছর। দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা প্রথম আলোকে বলেন, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আপ্রাণ চেষ্টা করেও তিনি নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় থাকতে পারেননি। তিনি বাদ পড়ায় দলের অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

দীপু মনি প্রধানমন্ত্রীর আস্থা হারিয়েছেন কি না, সে রকম আলোচনাও দলে আছে।
নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা চূড়ান্ত রূপ পেয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার। পুরোনো ৫১ সদস্যের মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েছেন ৩০ জন। তাঁদের মধ্যে ১৬ জন মন্ত্রী ও ১৪ জন প্রতিমন্ত্রী। তবে প্রধানমন্ত্রী তাঁর উপদেষ্টার সংখ্যা কমাননি, বরং বাড়িয়েছেন।

পুরোনো সাতজনের সঙ্গে আরও তিনজন নিয়োগ পাওয়ায় এখন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার সংখ্যা ১০।
২৯ সদস্যের নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় ২১ মন্ত্রী ও সাতজন প্রতিমন্ত্রী। তবে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে। এই মন্ত্রিসভা তুলনামূলক ছোট হলেও জাতীয় পার্টিরই ছয়জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও একজন উপদেষ্টা ঠাঁই পেয়েছেন।
নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভার প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, অনির্বাচিত কেউ এই মন্ত্রিসভায় নেই।

তাঁরা সবাই সাংসদ। পুরোনো মন্ত্রিসভায় টেকনোক্র্যাট কোটায় থাকা আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ ও শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়াকে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা করা হয়েছে। জাতীয় পার্টির নেতা জিয়াউদ্দিন আহমেদকেও উপদেষ্টা করা হয়েছে। এই ১০ উপদেষ্টার কেউই নির্বাচিত নন।

দীপু মনি কেন বিতর্কিত: প্রায় পাঁচ বছর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনকালে দীপু মনি যথেষ্ট বিতর্কিত ছিলেন।

সরকারের সঙ্গে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সম্পর্কের অবনতির পেছনে দীপু মনিকে দায়ী করেন আওয়ামী লীগেরই বড় বড় নেতা। আওয়ামী লীগে একটি কথা ব্যাপকভাবে প্রচারিত আছে যে, মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে পারিবারিকভাবে দীপু মনির সম্পর্ক খারাপ থাকায় তাঁর বিরুদ্ধে সরকারের শীর্ষ পর্যায়কে তিনি কাজে লাগিয়েছেন। এতে সরকার ও দলগতভাবে আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মনে করেন দলের নেতারা।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দীপু মনি সবচেয়ে বেশি দেশ ভ্রমণ করেছেন। গত প্রায় পাঁচ বছরে তাঁর বিদেশ সফরের সংখ্যা ১৮০।

এ সময় তিনি প্রায় ৬০০ দিন দেশের বাইরে ছিলেন। যেসব কর্মসূচিতে কোনো কর্মকর্তা গেলেই যথেষ্ট ছিল, সেখানে তিনি নিজেই গেছেন।

এ ছাড়া বিদেশি কূটনৈতিক মহলেও তাঁর গ্রহণযোগ্যতা দিন দিন কমছিল। একপর্যায়ে বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বেড়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানির মতো দেশের কূটনীতিকদের দীপু মনির ব্যাপারে জোরালো আপত্তি ছিল।

এমনকি ভারতের রাজনৈতিক মহলেও তাঁর ব্যাপারে অসন্তুষ্টি ছিল।

রাজনৈতিকভাবেও দীপু মনি বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠতে পারেননি। তাঁর নির্বাচনী এলাকা চাঁদপুর-৩ আসনে ক্ষমতাসীন দল উপদলীয় কোন্দলে বিপর্যস্ত। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর তিনজন সদস্য গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী, দীপু মনি এলাকায় জনপ্রিয়তার দিক থেকে খুব খারাপ অবস্থানে রয়েছেন। এ ছাড়া মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র বিজয় উপলক্ষে তিনি চাঁদপুরে সংবর্ধনা নিয়েছেন।

সরকারের সাফল্য ব্যক্তিগত সাফল্য হিসেবে প্রচারের চেষ্টা করায় দলের শীর্ষ পর্যায় তাঁর ওপর অসন্তুষ্ট হন বলে জানা গেছে। দলের অনেকেই মনে করছেন, দীপু মনির ওপর শীর্ষ নেতৃত্বের আস্থা আর আগের মতো নেই।

দীপু মনির বাদ পড়া প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, তাঁকে আগে বাদ দিলে হয়তো হইচই পড়ত। যেহেতু নির্বাচনকালীন সরকার ছোট হবে, তাই তাঁকে বাদ দিয়ে এলাকায় কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

মহীউদ্দীন খান আলমগীর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে ছিলেন আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় তিনি বিরোধী দলকে দায়ী করে বলেছিলেন, তাদের কর্মীরা স্তম্ভ ধরে নাড়াচাড়া করায় ভবন ধসে পড়েছে। সাজাপ্রাপ্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশকে জেল থেকে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায় সরকারের শীর্ষ পর্যায় তাঁর ওপর অসন্তুষ্ট হয়। পুলিশ সদর দপ্তরের সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক ভালো ছিল না। এ ছাড়া গণমাধ্যমে নানা বক্তব্যের জন্যও তিনি ছিলেন বিতর্কিত। তাঁর বাদ পড়া প্রসঙ্গে একজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিজের হাতে রাখবেন।

নির্বাচনকালীন সরকার থেকে বাদ পড়াদের মধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক মন্ত্রণালয়ের কিছু কার্যক্রমের জন্য সমালোচিত হয়েছেন। খাদ্য অধিদপ্তরের নিয়োগ নিয়ে খাদ্যমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বিতর্কিত হয়েছেন।

রেলের নিয়োগ কেলেঙ্কারির কারণে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সব মহলে সমালোচিত। বস্তাভর্তি টাকাসহ তাঁর এপিএস পিলখানায় আটক হওয়ার ঘটনায় তিনি মন্ত্রণালয় হারান। নরংসিদী পৌরসভার মেয়র লোকমান হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শ্রমমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদের ভাইয়ের সম্পৃক্ততার অভিযোগ ছিল।

এ ছাড়া ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী সাহারা খাতুন, ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম, সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, সমাজকল্যাণমন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদ, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী আফছারুল আমীন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ বাদ পড়েছেন।

প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে ভূমি প্রতিমন্ত্রী মুস্তাফিজুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এ বি তাজুল ইসলাম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শাহজাহান মিয়া, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান খান, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মজিবুর রহমান ফকির, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান, শিল্প প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আবদুল হাই এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজকে এই মন্ত্রিসভায় রাখা হয়নি।

সংবিধান অনুযায়ী, আগামী ২৪ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা দায়িত্ব পালন করবে।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।