আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক অবিশ্বাসী রাতে আমি আর সেই মেয়েটি, অতপর….

‘’Love killed my soul, My body seeks revenge’’

১. তুমি এ পর্যন্ত কতজন নারীকে স্পর্শ করেছো? প্রথম দেখাতেই এমন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে মেয়েটি। শত জনকে হতে পারে অথবা একজনকেও নয়। দূর থেকে ভালোবেসে যাবো একথা এখন আবেদন হারিয়েছে, বর্ষা। একজনকে ভালোবাসলে বা স্পর্শ করলে অন্যজনকে করা যাবে না এ কথাও এখন সেকেলে। ভালোবাসার মানুষকে স্পর্শ করা মানে নারীকে শরীরী দৃষ্টিতে দেখা নয়।

স্পর্শ আর ভোগ দখল একই অর্থ বহন করে না। জানো, আমি একটি ছেলেকে ভালবাসি। কিন্তু রিলেশন পেনডিং। মনে হয় টিকবে না। আন্ডারস্টান্ডিং হয় না।

রিলেশন পেন্ডি মানে কি,বর্ষা? সম্পর্ককে আবার ঝুলিয়ে রাখা যায় কিভাবে? আমি ওর সাথে ব্রেক আপ করতে চাই । ওকে দুরে সরিয়ে রাখতে চাই। কিন্তু ছেলেটি আমাকে ইমোশনালি ব্লাকমেইল করে। হাত পা কাটে। নিজের ক্ষতি করে।

২. আচ্ছা তুমি কি কোন মেয়ের সঙ্গে সেক্স করেছো? নাকি ভার্জিন? ওহ গড.!!!কি আজিব প্রশ্ন করে মেয়েটি। শোন,এ যুগে খাদ্যের পরে বহুল বিক্রিত পণ্য সেক্স। চাইলেই হাতের নাগালে পাওয়া যায়। প্রযুক্তির এ যুগে এসে ভার্জিন শব্দটি ক্রমশই তার গুঢ় অর্থ হারাচ্ছে। আমি বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে সেক্স করতে চাই।

শুনেছি বিয়ের পরেও স্বামীরা নাকি লয়েল থাকেনা স্ত্রীর প্রতি। তাহলে আমার থেকে কি লাভ বলো? সর্ম্পক ঠিক হলে আমি বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে সেক্স করবো। সেক্স!!! বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে। বলো কি !!তাহলে কি বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে সবকিছু করা জায়েজ। ছেলেবেলায় স্কুললাইফে মেয়েদের মধ্যে একটা ধারণা লক্ষ্য করতাম আর তা হলো, শরীর একজনকেই দিতে হয়।

বৈধ সম্পর্ককেই কেবল মাত্র শরীর দিয়ে ভালবাসতে হয়। শরীর দেওয়াটা ছিল তখন শর্ত সাপেক্ষ । বিবাহ করার শর্তে একটি ছেলে একটা মেয়ের শরীরে অবগাহনের সুযোগ পেত। এখন আর বিবাহের শর্ত লাগে না। ভালবাসার আবেগে স্বেচ্ছায় শরীরী প্রেমে হাবুডুবু খায়।

আবার একটু কনজারভেটিভ মেয়ে হলে ছেলেটি নানা উপায়ে মেয়েটার শরীর নিয়ে নেয় ধীরে ধীরে। তারপর মেয়েটাকে অন্ধকারে রেখে একদিন বিয়ে করে অন্য মেয়েকে। সতীত্বের ধারণাটা খুব অদ্ভুত। একটা ভার্জিন মেয়ে যদি ভার্জিনিটি তার প্রেমিককে বা অন্য কাউকে দেয়, যে পুরুষ সেটা পেল তার কাছেও মেয়েটা আর ফ্রেশ থাকে না। তখন ছেলেটা বিয়ের জন্য আর একটা ফ্রেশ মেয়েকে খোঁজে যে মেয়েটারও ভার্জিনিটি হয়ত নিয়ে চলে গেছে আর একটা ছেলে।

৩. মাসখানেক পর….. জানো, আজকে আমার মন খুব খারাপ। আমাকে কোথাও ঘুরতে নিয়ে চলো। পড়ন্ত বিকালে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে বরে হলাম দুজন। সময়ে কিভাবে যে কেটে গেল। বুজতে পারেনি।

অনেক রাত হয়ে গেলো। হোস্টেলের গেইট আটকে দিবে এখন। কি করি বলো। তোমার রুমে কি থাকা যাবে ? মানে কি? তুমি আমার রুমে থাকবে। মধ্যরাত।

এবার ঘুমানোর পালা। পাশে সুন্দরী একটা মেয়ে। আমাকে একটু ঘুম পাড়িয়ে দেওনা। আমার মন ভালো নেই। ময়নাপাখির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।

চাদের মৃদু আলোতে তাকে মনে হয়েছিল যেন নাটোরের বনলতা সেন। শোন,আমাকে এভাবে স্পর্শ করো না। তুমি থাকতে পারবেনা। কি বলো। সত্যিই কি তাই।

হতেও পারে। এই অবিশ্বাসী রাত কখনও কখনও পরকে আপন আবার আপনকে্ও পর করে দেয় । রাত বাড়তে থাকে। চারদিকে নীরবতা। রাত যে কিভাবে কেটে গেল বুজতে পারলাম না।

ভোরের আলো জানালায় এসে পড়লো । ঘুম ভেঙ্গে গেলো । ৪. জানো,সেদিনের রাতের পর থেকে আমি তোমার প্রতি অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছি। এসব কি বলো বর্ষা। একটি রাত তাহলে পরকে অনেক আপন করে নিতে পারে।

রাত সত্যিই অবিশ্বাসী!! আসলে মুগ্ধতা, ভালোলাগা, ভালোবাসা, শরীরী সম্পর্ক এসব কোনো সংস্কার মানে না। এদের চলার পথ নিজস্ব ও অবারিত। আমি সারাজীবন তোমার পাশে থাকতে চাই। আমি তোমার ক্লান্ত বিধ্বস্ত জীবনে প্রাণ ফিরিয়ে আনতে চাই। আমি তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে চাই।

সত্যিই বলছো বর্ষা। তুমি আমার পাশে থাকবে তো? নাকি সময়ের স্রোতে হারিয়ে যাবে। অন্য কারো ভালবাসার জোয়ারে ভেসে যাবে। ৫. আজকে তোমার সাথে বের হবো। আমাকে কোথায় ঘুরতে নিয়ে চলো।

তোমাকে নদীর তীরের কাশবনে নিয়ে যাবো। ইট পাথরের চারদেয়ালে থেকে বন্দী মনটাকে একটু সময়ের জন্য খোলা হাওয়ায় ছেড়ে দিয়ে প্রকৃতির কোমলতাকে স্পর্শ করতে চাই কাশবনে গিয়ে। জানো, বুড়িগঙ্গার ওপারে কাশফুলে ছেয়ে গেছে। সেখান থেকে ঢাকা শহরের দালানগুলো কাশফুলের উপরে ভাসমান মনে হয়। আজ তোমাকে নিয়ে কাশবনে হারিয়ে যাবো।

৬. তুমি আমাকে একটু ভালোবাসনা। সারাদিন শুধু ব্যস্তই থাকো। অভিমানী সুর মেয়েটির কণ্ঠে। দেখ , জীবনের দৌড়ে অনেকটা ক্লান্ত,অনেকটা বিধ্বস্ত। অনেক কিছু মনে না নিতে পারলেও মেনে নিতে হয়।

জানো, শরীরী টানের চেয়ে মনের টান অনেক বেশি শক্তিশালী। মন সেদিকে যেতে চায়, কেউ তাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারে না। মনের দৌড়ের কাছে পৃথিবীর সবকিছু পরাভূত হয়। শরীরের আবেদন কেবলই ক্ষণিকের। একজন প্রতিবন্ধী পুরুষও সুযোগ পেলে নারীর শরীর খুবলে খাবার ক্ষমতা রাখে।

কিন্তু নারীকে ভালোবাসতে পারে কজন বলো। একজন কলগার্ল শরীর দেয় সবাইকে, কিন্তু ভালোবাসে একজনকে। শরীরী অত্যাচারের মধ্যেও মন কাঁদে কেবল ভালোবাসার মানুষটির জন্য, যে প্রেমিক হয়তো তাকে কখনো স্পর্শ করেনি, অথবা জানে না তার প্রেমিকা টাকার বিনিময়ে শরীর উচ্চমূল্যে বিক্রি করে। ৭. মাস দুয়েক পরে দুজন রাঙ্গামাটি । আহ ! কত সুন্দর শহর।

শহরের প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করে। এত সুন্দর প্রকৃতির মাঝে ইচ্ছে করে হারিয়ে যাই। হোটেলের বারান্দায় দাড়িয়ে কাপ্তাই লেকের অপার দৃশ্যে মন ভরে যায়। দিন গড়িয়ে রাত আসে। এই শোনো, আমার না বমি বমি আসছে।

বলো কি এসব? মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। জানো, আমি মনে হয় প্রেগন্যান্ট হয়ে গেছি। আচ্ছা তোমার জন্য একটা প্রেগন্যান্সি টেস্ট নিয়ে আসবো রাতে। মন খারাপ কেন?? এই দেখো টেস্ট রিপোর্ট। আমি প্রেগন্যান্ট ।

বলো কি তুমি। আমার তো বিশ্বাস হয় না। তবে সেদিন ওষুধে কাজ হয়নি? তাহলে কি প্রকৃতির অসীম ক্ষমতার কাছে বিজ্ঞানও ব্যর্থ। অণাগত সন্তানকে কি সমাজ মেনে নিবে? নাকি তাকে নিষ্ঠূরভাবে হত্যা করতে হবে। না, তাহ হতে পারে না।

মানুষ হত্যা তো মহাপাপ। তাও আবার একটি নিষ্পাপ মানুষকে। যে কিনা ধরণীর অপার সৌন্দর্য দেখার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে। বর্ষা, আমরা কি করবো? আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাও। আমি অ্যাবরশন করতে পারবোনা।

ওষুধ কিনে দেও। কিন্তু ওষুধে যদি কাজ না হয়? ওষূধে কাজ না হলে আমি মারা যাবো। তবুও অ্যাবরশন করবো না। বর্ষা, তার চেয়ে তুমি আমি বিয়ে করে ফেলি। সমাজের কাছ থেকে স্বীকৃতি আদায় করি।

তবু্ও একটি প্রাণ হত্যার পাপ থেকে তো বাঁচতে পারবো। না আমি পারবো না। সন্তানকে বহন করার মতো সামর্থ আমার নাই। বয়স মাত্র ১৯ শেষ । আমি এ সন্তানের ভার নিতে পারোবনা।

ধর্মের দৃষ্টিকোণ থেকে ঠিক না বিয়ের আগে সন্তান নেওয়া। ৮. আমাকে মেডিকেলে নিয়ে চলো তাড়াতাড়ি। আজকে নয় কালকে নিয়ে যাবো। অফিস থেকে ছুটি নিয়ে নেই। তারপর তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো।

অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে মেয়েটি। আমার জীবন ঝুকিতে আর তুমি অফিস নিয়ে ভাবছো। ভাল, আমার প্রতি তোমার কোন ভালবাসা নেই। আমাকে নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না। এরকম কেয়ারলেস মানুষকে নিয়ে জীবন চলে না।

আমি তোমার সাথে থাকতে চাই না। কি বলো এসব? আমি কি তোমাকে ভালবাসি না?। হতে পারে জীবনের দৌড়ে ব্যস্ত থাকায় পুরোপুরি পারি না। না, তোমার মত এরকম উদাসীন, কেয়ারলেস ছেলেকে নিয়ে লাইফ চলে না। আমি আর তোমার সাথে থাকবো না।

ওকে,তুমি যেটা ভালো মনে করো। যেখানে তুমি হ্যাপি থাকবে সেখানেই তোমার যাওয়া উচিত। কেউ চলে যেতে চাইলে তাকে ধরে রাখা যায় না। এরপর সপ্তাহখানেক দুজনের মধ্যে কত কিছু হয়ে গেল। পাশাপাশি মৃত্যু হলো এক নিষ্পাপ প্রাণেরও।

তারপর দুজন দুই মেরুতে। ১০. অবাক লাগে, শত রাগ অভিমানের পরও এত কাছের ছিলাম আমরা দুজন। সামান্য কিছুর কারণে ধীরে ধীরে আমরা দুরে সরে গেছি। একটা সময় ছিলো যখন একজনের জন্য আরেকজন এগিয়ে গিয়েছি। কথা না বলে এক মুহূর্ত থাকতে পারতাম না।

আজ দুজন পরিচত স্ট্রেঞ্জার। একই শহরের একই গলিতে মাত্র ২০ গজ দুরত্বে থাকি। তবুও কারো সঙ্গে অনেকদিন দেখা হয়না, কথা হয় না। হয়ত আর কোনদিন দেখাও হবে না। পাশ দিয়ে হেটে গেলেও কেউ কাউকে ডাকবোনা।

এই শহরেই হয়ত দুজন বাস করবো, তবুও কারো সঙ্গে কথা হবেনা । সময়ের ব্যবধানে হয়ত একজন অন্যজনের কাছে হয়ে যাবো ধূসর স্বপ্নের মতো। তবুও ভালবাসা তো আর ফিরিয়ে নেওয়া যায় না। মানুষের জীবনে সম্পর্ক হয়তো তৈরি হয় সময়ের চাহিদা অনুযায়ী। আবার কিছু সর্ম্পক রক্ষা হয় শুধু দায়বদ্ধতা থেকেই।

মানুষ খুব আবেগ প্রবণ প্রাণী। আবেগের কারণেই হাজার খারাপ ব্যবহারের পরও মা সন্তানের জন্য কাঁদে,এই আবেগের জন্যই সন্তান পথ চেয়ে বসে থাকে বাবার অপেক্ষায়। আবেগের জন্যই স্ত্রী অপেক্ষায় থাকে সন্ধ্যা বেলা তার স্বামী অভিমান ভাঙ্গাবে। মাঝে মাঝে ভুলে যাই,যে মানুষটা আজ অনেক কষ্ট দিচ্ছে,হয়ত সেই মানুষটা কোন একদিন ভাল কোন সময়,সুন্দর কোন স্মৃতি দিয়েছে। যে মানুষটা আজ বলছে, আমি তোমাকে ভালবাসি না।

সেই মানুষটা হয়ত কোনদিন আমাকে ছাড়া একটি মুহূর্তও চিন্তা করেনি। ১১. ঢাকা শহরের নিত্য দিনের বদলাতে থাকা আবহাওয়ার মতোই এখন বদল যাচ্ছে সম্পর্কের ধাঁচ। গেল কয়েক বছর ধরে এই শহরে আগের মত মানসিকতা, লংটার্ম রিলেশনশিপ,প্রেম-ভালবাসা সবই এখন ব্যাকডেটেড হয়ে যাচ্ছে। যা ঘটছে তা হলো ক্ষনিকের পরিচয়, তারপর চেনা আলাপ কিংবা হয় প্রেম নয় বন্ধুত্বের সুতো ধরে অনেকটা গভীরে চলে যাওয়া একে অপরের মনের। এমনকি শরীরেরও ।

তারপর একদিন বিনা নোটিশে হাওয়া হয়ে যাওয়া। এটাই এই শহরের প্রেম কিংবা বহুগামিতা । কেউ কেউ এক সম্পর্ক বেশিদিন টেনে নিয়ে বোঝা বাড়াতে চাইছে না, আবার কেউ এমনিই বোর হয়ে গেছেন যে, পেতে চাইছেন ভিন্ন স্বাদের মানুষের সান্নিধ্য। কলেজ লাইফে কাশফী নামে বান্ধবী ছিল। একহালি ছেলের সঙ্গে প্রেম করে বেড়াতো।

একদিন জিজ্ঞেস করলাম, এত মানুষকে কীভাবে ভালোবাস? মেয়েটির সোজা সাপটা জবাব,আমি কাউকে কখনও বলিনা যে,আমি তোমাকে ভালোবাসি,শুধু তাদের সঙ্গে একটু ভালোভাবে কথা বলি। এটাকেই যদি ভালোবাসা মনে করে,তাহলে আমার করার কিছু নেই। উড়ো সম্পর্কের নকশি কাঁথার ভীড়ে তাই কোন বিশেষ একজনকে নিয়ে এই শহর এই সময় এখন আর ভাবছে না, বরং ব্ল্যাক বোর্ডে চক দিয়ে যখন যে নাম লেখা কিংবা যখন তখন মোছাটাই বেশি পছন্দ। তাই প্রেমগুলো ঠিক যেন শীতকালে দূর্বা ঘাসের ডগায় ভোরের আলোয় চিক চিক করা শিশির বিন্দুর মতো…….. উৎসর্গ: আমার ময়নাপাখিকে। অনেক কাছে থেকেও যে অনেক দুরে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।