আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুই নেতার গোপন সাক্ষাৎ: মেঘের কিনারে রুপালি রেখা

মেঘের কিনারে রুপালি রেখা দেখা দিয়েছে। গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাজধানীর বনানী এলাকার একটা বাসায় গোপনে আলোচনায় বসেছিলেন। আশা উসকে দেয়, এ রকম আরও দুটো বিষয় এখানে আছে। এক. তাঁরা লোক-দেখানো আলোচনা করতে বসেননি। কারণ উভয় পক্ষের চেষ্টা ছিল বিষয়টা গোপন রাখার।

দুই. আলোচনাটা হয়েছে এক বিএনপি নেতার বাসভবনে। সৈয়দ আশরাফ সেখানে গেছেন। কাজেই আমরা মনে করতে পারি, সরকারের দিক থেকেও হয়তো বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার একটা আগ্রহ আছে।

আমরা বড় উদ্বেগ উত্কণ্ঠার মধ্যে আছি। কারণ আমরা জানি, যদি বিএনপি নির্বাচনে না যায়, তা হলে কী কী হতে পারে! সরকার একপক্ষীয় নির্বাচনের দিকে এগোবে।

তফসিল ঘোষণা করা হবে। সেদিন থেকেই শুরু হবে বিএনপি ও তার জোটের কর্মসূচি। সবচেয়ে সহজ কর্মসূচি হলো হরতাল। তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বাস-গাড়ি ইত্যাদিতে আগুন দেওয়া হবে। জানমালের ক্ষতি হবে।

তারপর আসবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন, মনোনয়ন বাছাইয়ের দিন, নির্বাচনের দিন। বিরোধী জোট একের পর এক কর্মসূচি দিতে থাকবে। দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়বে। যোগাযোগ স্থবির হবে। মানুষ দুর্ভোগ পোহাবে।

মানুষের কষ্ট হবে। মানুষ মারা যাবে। গাড়ি-বাড়িতে আগুন জ্বলবে। ক্ষতি হবে দেশের। নির্বাচন হয়তো ঠেকিয়ে রাখা যাবে না, কিন্তু সেই নির্বাচন দেশে-বিদেশে প্রশ্নবিদ্ধই থেকে যাবে।

ফলে যতদিন আবার একটা সব দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হয়, ততদিন গন্ডগোল লেগেই থাকবে।

এটা কি কোনো ভালো সমাধান হলো?
এর বিকল্প হলো, আলোচনা করা। সরকারি দল ও বিরোধী দল একটা সমঝোতায় আসবে। উভয় পক্ষকেই ছাড় দিতে হবে। শেখ হাসিনা তো বলেই দিয়েছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রিত্ব চান না, তিনি চান বাংলাদেশের মানুষ যেন কষ্ট না পায়।

ফলে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়াও সংবিধানের আলোকেই একটা গ্রহণযোগ্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ রয়ে গেছে।

বিএনপি ও তার জোটকে দুটো কথা মনে রাখতে হবে:
১. আওয়ামী লীগ চায় না বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিক। আওয়ামী লীগের চাওয়া বাস্তবায়ন করা তো বিএনপির কাজ নয়।

২. সর্বশেষ জনমত জরিপে বিএনপি এগিয়ে আছে। কাজেই বিএনপির উচিত হবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার প্রথম সুযোগটাকেই কাজে লাগানো।

নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করলেই বোঝা যাবে, এবার মানুষ কোন পক্ষ, তখন আর প্রশাসনের পক্ষে সম্ভাব্য পরাজিতের পক্ষ অবলম্বন করা সম্ভব হবে না।

আর অনেকের মধ্যেই যে আশঙ্কা আছে যে বিএনপি জোট ক্ষমতায় এলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করবে কি না, দেশ আবার জঙ্গিতে ছেয়ে যাবে কি না, কিংবা নারীরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন কি না—এই পরিপ্রেক্ষিতেও দুটো কথা বলা যায়: ১. যাঁরা এই আশঙ্কা করছেন, তাঁরা সেটা ভোটদানের সময় বিবেচনায় রাখুন। ২. মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এত ঠুনকো বস্তু নয় যে সরকার পরিবর্তনের ফলেই তা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এই দেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দেশ, এই দেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দেশই থাকবে। বরং সরকার পরিবর্তনের ফলে যে মুক্তিযুদ্ধের মৌল চেতনার বদল ঘটে না, রাজপথে সজাগ সক্রিয় সোচ্চার থেকেই সেটাকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারতে হবে।

গণতন্ত্র মানে কেবল নির্বাচন নয়, এ কথা সত্য। তবে নির্বাচনে যদি জনমতের প্রকৃত প্রতিফলন না ঘটে, তবে তাতে গণতন্ত্রের এক নম্বর ভিত্তিটাই থাকে না। কাজেই ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব, ভোট দেবার সময় আমাকে বেছে নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে, আর আমি যে ভোট দিচ্ছি সেই ভোট গণনা করতে হবে, এবং নির্বাচনের ফল প্রকৃত ভোটারদের দেওয়ার প্রকৃত ভোটের মাধ্যমেই কেবল নির্ধারিত হতে হবে’—এই দাবি থেকে আমরা সরে আসছি না।

তবে আমরা যা কিছুই করি না কেন, মনে রাখতে হবে, সবার ওপরে হলো দেশ, দেশের মানুষ। প্রতিটা মানুষের জীবন মূল্যবান, প্রতিটা মানুষের সম্পদ মূল্যবান, প্রতিটা মানুষের হাত, পা, আঙুল, চোখ মূল্যবান, প্রতিটা গাড়ি, প্রতিটা বাড়ি, প্রতিটা সম্পদই দেশের সম্পদ।

মানুষের ক্ষতি হয়, এমন সর্বনাশা পথ থেকে উভয় পক্ষই নিবৃত থাকুন।  

সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উভয়েই সজ্জন। উভয়েই পরিমিত কথা বলেন, উভয়েই প্রগতিশীল পটভূমিকা থেকে উঠে এসেছেন। এই দুজনের গোপন আলোচনা আমাদের প্রকাশ্য সমঝোতা এনে দিক, দিক চলমান সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান। দিনের শেষে সবাই শান্তি চাই, নিরাপদে ঘরে ফিরতে চাই, চাই আমাদের ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাক, খেলতে যাক, কিন্তু নিরাপদে ফিরে আসুক, চাই আমার জীবিকার ওপর যেন আঘাত না আসে, যেন বাংলাদেশ উন্নতির পথে এগিয়েই চলে।

এই গুরুদায়িত্ব যাঁদের কাঁধে, তাঁরা তাঁদের কর্তব্যের পবিত্রতা ও বিশালতা সম্পর্কে সচেতন, এটা বিশ্বাস না করতে পারলে আমরা যাব কই।

উভয় দলের নেতৃবৃন্দের কাছে আমাদের আকুল আবেদন, সময় ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই আপনারা সমঝোতায় পৌঁছান। আর সেজন্য চাই ছাড় দেবার মানসিকতা। এ দেশের মানুষ তাদেরই পছন্দ করে, যারা যত বিনয়ী, যত সুভাষ, যারা যত আত্মত্যাগে প্রস্তুত।



সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।