আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্প: জ্বীনের আছর !! (এ গল্পটি আমার পরলোকগত আম্মাকে উৎসর্গ করলাম)

আমরা শুধু আপন মানুষ খুঁজি, আপন মানুষদের খুঁজতে হয় না, তারা পাশেই থাকে !! মাছগুলো সস্তাই হয়েছে। তাছাড়া গ্রামের মতো ছোটমাছ ঢাকা শহরে খুব একটা দেখা যায় না। ঢাকা শহরের কাঁচা বাজারে রুই কাতলার কদর বেশী। তবে ছুরু মিয়া আজ ইচ্ছে করেই গুড়া মাছ কিনেছে। টিভিতে বলেছে ছোট মাছের পুষ্টি বেশী।

তার ছেলের বয়স দের বছর ছুঁই ছুঁই। আধো আধো কথা বলে। কচি মুখে যখন আব্বা ডাক শুনে সারাদিনের সব পরিশ্রম নিমিষেই ভুলে যায় সে। ছা-পোষা বেতনের সরকারী চাকুরী। বেতন আর কতো পায়।

কিন্তু গ্রামে ছুরু মিয়ার বেশ কদর, ঢাকা শহরে সরকারী চাকুরী। এ চাকুরীর জোড়েই বড় এক গৃহস্থালী ঘরের মেয়েকে বিয়ে করে ঘরে এনছে সে। গ্রামের ষোড়শী কিশোরী ফাতেমা, ছুরু মিয়ার সংসারে ভালই কষ্ট করছে। তবে টাকা-পয়সায় না হলেও মনের দিকে অনেক ধনী তার স্বামী-এই তার সন্তুষ্টি। সন্ধ্যাবেলা ছোট মাছ দেখে মেজাজ দেখাল ফাতেমা।

অবেলায় এ মাছগুলো কুঁটতে হবে তাকে। এমনিতেই সারাদিন খাটাখাটনি বাদেও ছেলেটা জ্বালিয়ে মারছে তাকে। ফাতেমার মা তার কাজের সুবিধার্থে তার ছোট বোন আসমাকে সাথে দিয়ে দিয়েছে। ছুরুর ছোট ভাই সেলিমকেও আনা হয়েছে ভাবীর ফরমাইস খাটার জন্য। ঢাকায় এনে আসমা এবং সেলিম কে স্কুলে ভর্তী করে দেয়া হয়েছে।

ফরমাইয়েসের সময় আসমা বা সেলিম কাওকেই পাশে পাওয়া যায় না। ফাতেমা বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে জোড়ে হাঁক দেয়-আসমা এদিকে আয় তো, বাবুকে ধরতো ! -তোমার বাবু তো আমার কাছে থাকে না। -তাহলে ওকে টিভির সামনে বসিয়ে দে -দুলাভাই খবর দেখতে বসেছে। -তাহলে যা ও কে সেলিমের কাছে দিয়ে আয়। মাছগুলো আমি কি একাই কাটবো? রান্না ঘরের একশ পাওয়ারের বাল্বের নিচে দুই বোন মাছ কাটে নিবির মনে।

বাইম, গুতুম, পুঁটি, চান্দা আর কয়েকটা কৈ মাছ। -আসমা, আমার মনে হয় সামনে কোন বিপদ আসবে। দুই দিন ধরে বাম চোখটা লাফাচ্ছে। - আপা, তোমার শুধু অলুক্ষনে কথা-বার্তা। - না রে, সেই স্বপ্নটা আবার দেখলাম।

বাসার সামনে অনেক মানুষ। -ওই যে, তোমার বাবু আবার কান্না শুরু করেছে। তুমি যাও, বাকী মাছগুলো আমিই কাটব না হয়। বাবুর অত্যাচার দিনকে দিন বেড়েই চলছে। একবার কান্না শুরু করলে থামবার জো নেই।

বাবুর চিৎকারে পাশের ফ্ল্যাটের কেউ শান্তিমতো রাতে ঘুমাতে পারে না। ছুরু মিয়া কমলার রস ফিডারে ভরে বাবুর মুখে চেপে ধরে। ভাবে, ক্ষিধে লেগেছে ছেলেটার। “খাও বাবা খাও, চল বাবা ম্যাকাইভার দেখব। ” ম্যাকাইভারের কথা শুনে কান্না একটু থামায় বাবু।

উনিশশ নব্বইয়ে বিটিভির জনপ্রিয় টিভি সিরিজের নাম ম্যাকাইভার। “আব্বা আ আ, ম্যাকাইভার, ম্যাকাইভার !!” সাদাকালো টিভির সামনে ম্যাকাইভারের মারামারি দেখে হাসে বাবু। কে বলবে একটু আগে তার চিৎকারে সারা ঘরে ঘুর্নিঝড় বয়ে গেছে। আঁচল দিয়ে কপাল মুছতে মুছতে সুজির বাটি নিয়ে আসছে ফাতেমা। বাবুর দুধ-সুজি আর কমলা যোগাড় করতে খুব কষ্ট হচ্ছে।

ডানো দুধের টিনের দাম গত সপ্তাহে আরো একধাপ বেড়েছে। টিনের পর টিন দুধ খাইয়েও এতটুকু ছেলের মন যোগানো যায় না। মা-কে আসতে দেখে হঠাৎ করেই ক্ষেপে যায় বাবু। হাতের কমলার রসভরা ফিডারটি অকারণেই ক্লান্ত পরিশ্রান্ত মায়ের কপালের দিকে ছুড়ে মারে বাবু। মেজাজ ঠিক রাখতে পারলনা ফাতেমা।

ছুটে এসে চটাশ করে পিঠে থাপ্পর মারে সে। গলা টিপে ধরতে ধরতে বলে-“এতোটুকু ছেলের জীদ দেখ। ওরে দাও আমার কাছে। আজ ও কে আমি ছাদের ট্যাংকির পানিতে চুবিয়ে মারবো। ” বাবুর চিৎকারে আবারো ঝড় উঠে ছুরু মিয়ার ছোট্ট সংসারে।

শনিবার সকালটা একেবারে নাকে মুখে ব্যস্ত। একদিন ছুটির পর আজ আবার অফিস আর স্কুল খোলা। ফাতেমা শেষ রাতে ঘুমিয়েছে। গতরাতে সারারাত কেঁদেছে বাবু। সবাই ঘুমাতে পারলেও একফোঁটা ঘুমাতে পারেনি ফাতেমা।

একবার আদর করে তো আরেক বার মারে। কোন কিছুতেই কাজ হয় না। অসম্ভব জেদী ছেলেটা। হবিগঞ্জের এক আজোঁ পাড়াগাঁয়ের শ্বশুর বাড়ি থেকে চিঠি এসছে একটা। ফাতেমার শিক্ষিত শ্বশুর গ্রামে জ্বীন বসানোর অনুষ্ঠান “আইঝড়া” বসিয়েছিল নাকি ! “আইঝড়া ওঝা” বলেছে বাবুর নাকি “আলগা দোষ” রয়েছে।

দেও দানব জাতীয় কিছু একটা বাবুর উপর ভর করেছে। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ওঝা দুইজন জ্বীনকে নিযুক্ত করেছে বাবুর সুরক্ষায়। সেই জ্বীন দুটি, ফাতেমা যখন কোরআন শরীফ পড়ে, তখন তার পাশে বসে থাকে। তবে বিশেষ সেই জ্বীনের প্রতি ফাতেমার খেয়াল নেই।

সকালে ছুরু রাস্তা থেকে বেশ দাম দিয়ে ডিমওয়ালা কার্ফু মাছ কিনেছে। তিন তলায় পানি নেই। কাটা মাছগুলো ধুতে নিচে যেতে হবে। সকাল নয়টায় কোনমতে স্বামীকে বিদায় করেছে সে। বাবু সেলিমের সাথে খেলছে।

আসমা স্কুলে চলে গিয়েছে। সেলিমের স্কুল বারটার শিফটে। চার তলা সরকারী কোয়ার্টার বিল্ডিং এর সামনে গোলাপ বাগান। কোয়ার্টার বিল্ডিং-এ পানি না থাকলে, সকল বাসিন্দাকেই গোলাপ বাগানের পানির টেপে যেতে হয়। মাছ ধোয়ার সময় ফাতেমা হঠাৎ লক্ষ্য করল তিন তলার ব্যালকনি দিয়ে বাবু উঁকি দিচ্ছে।

লাল ফতুয়া পরা বাবুর মুখ দিয়ে লালা ঝড়ছে, আধো আধো বুলিতে আম্মা, আম্মা আ আ !! কলজে নড়ে গেল ফাতেমার। বাবুকে দেখার জন্য সেলিমকে রেখে এসেছিল সে। জোরে সেলিম বলে ডাকছে ফাতেমা। গলা দিয়ে আওয়াজ বেড় হচ্ছেনা আর। ইতিমধ্যে বেলকনির কোনায় রাখা চেয়ারে উঠে পড়েছে বাবু।

গ্রীল না থাকায় লালা মাখানো হাসি হাসি মুখটা সহজেই দেখা যাচ্ছে। যে শিশুটির অত্যাচারে ফাতেমার জীবন ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছিল, সে শিশুটির নিরাপদ অবতরণে কোন এক ডানাওয়ালা পরী বা আইঝরা ওঝার জ্বীনকে আহ্বান জানালো হাত জোড় করে। এবার আর হাত দুটি এক রাখতে পারছে না সে। পড়ন্ত বুকের মানিককে কোলে আগলে রাখার জন্য জোড় করা হাত দুটি সম্প্রসারন করল সে। চোখ বন্ধ হয়ে আসছে।

মূর্ছা গেল ফাতেমা। সাভার সি এইচ এম এ মেজর হায়দার সিগারেট টানছেন। দৌড়ে এল রশীদ হাবিলদার, ছুরুর খুব কাছের বন্ধু। -স্যার, বিশমাইল থেকে আমার এক বন্ধু এসছে। তার ছেলে তিন তলা ছাদ থেকে পড়ে গেছে।

জরুরী এক্সরে করতে হবে। -তিন তলা থেকে পড়ে গেছে ! বেঁচে আছে কি? -জ্বী স্যার, বেঁচে আছে। এক তলার তাকে ধাক্কা খেয়ে ঠিক ঘাসের মধ্যে পড়েছে। এক হাত দূরেই ইট খাড়া করানো ছিল। -ও মাই গড।

বলেন কি? তারাতারি এক্সরে রূমে আনুন। এপাশ ওপাশ দুইপাশ এক্সরে করানোর পরেও কোন হাড় গোড় ভাঙ্গার রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। ছুরু মিয়ার কোলে কাঁদছে বাবু। রশিদ কয়েকটি সিভিটের পাতা হাতে ধরিয়ে দিল বাবুর। সঙ্গে সঙ্গে কান্না থেমে গেল তার।

আদুরে গলায় জিজ্ঞেস করে রশিদ-কি হয়েছিল তোমার বাবু? ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বাবু বলে-“নাল এক্তা মানুত আমাকে পেলে দিয়েতে। নীল এক্তা মানুত আমাকে দরে পেলেতে। আমি ম্যাকাইবার হয়ে গেতি। ” লাল নীল মানুষের কথা শুনে উপস্থিত সবাই হেসে উঠল। মাছগুলো সস্তাই হয়েছে।

তাছাড়া গ্রামের মতো ছোটমাছ ঢাকা শহরে খুব একটা দেখা যায় না। ঢাকা শহরের কাঁচা বাজারে রুই কাতলার কদর বেশী। তবে ছুরু মিয়া আজ ইচ্ছে করেই গুড়া মাছ কিনেছে। টিভিতে বলেছে ছোট মাছের পুষ্টি বেশী। তার ছেলের বয়স দের বছর ছুঁই ছুঁই।

আধো আধো কথা বলে। কচি মুখে যখন আব্বা ডাক শুনে সারাদিনের সব পরিশ্রম নিমিষেই ভুলে যায় সে। ছা-পোষা বেতনের সরকারী চাকুরী। বেতন আর কতো পায়। কিন্তু গ্রামে ছুরু মিয়ার বেশ কদর, ঢাকা শহরে সরকারী চাকুরী।

এ চাকুরীর জোড়েই বড় এক গৃহস্থালী ঘরের মেয়েকে বিয়ে করে ঘরে এনছে সে। গ্রামের ষোড়শী কিশোরী ফাতেমা, ছুরু মিয়ার সংসারে ভালই কষ্ট করছে। তবে টাকা-পয়সায় না হলেও মনের দিকে অনেক ধনী তার স্বামী-এই তার সন্তুষ্টি। সন্ধ্যাবেলা ছোট মাছ দেখে মেজাজ দেখাল ফাতেমা। অবেলায় এ মাছগুলো কুঁটতে হবে তাকে।

এমনিতেই সারাদিন খাটাখাটনি বাদেও ছেলেটা জ্বালিয়ে মারছে তাকে। ফাতেমার মা তার কাজের সুবিধার্থে তার ছোট বোন আসমাকে সাথে দিয়ে দিয়েছে। ছুরুর ছোট ভাই সেলিমকেও আনা হয়েছে ভাবীর ফরমাইস খাটার জন্য। ঢাকায় এনে আসমা এবং সেলিম কে স্কুলে ভর্তী করে দেয়া হয়েছে। ফরমাইয়েসের সময় আসমা বা সেলিম কাওকেই পাশে পাওয়া যায় না।

ফাতেমা বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে জোড়ে হাঁক দেয়-আসমা এদিকে আয় তো, বাবুকে ধরতো ! -তোমার বাবু তো আমার কাছে থাকে না। -তাহলে ওকে টিভির সামনে বসিয়ে দে -দুলাভাই খবর দেখতে বসেছে। -তাহলে যা ও কে সেলিমের কাছে দিয়ে আয়। মাছগুলো আমি কি একাই কাটবো? রান্না ঘরের একশ পাওয়ারের বাল্বের নিচে দুই বোন মাছ কাটে নিবির মনে। বাইম, গুতুম, পুঁটি, চান্দা আর কয়েকটা কৈ মাছ।

-আসমা, আমার মনে হয় সামনে কোন বিপদ আসবে। দুই দিন ধরে বাম চোখটা লাফাচ্ছে। - আপা, তোমার শুধু অলুক্ষনে কথা-বার্তা। - না রে, সেই স্বপ্নটা আবার দেখলাম। বাসার সামনে অনেক মানুষ।

-ওই যে, তোমার বাবু আবার কান্না শুরু করেছে। তুমি যাও, বাকী মাছগুলো আমিই কাটব না হয়। বাবুর অত্যাচার দিনকে দিন বেড়েই চলছে। একবার কান্না শুরু করলে থামবার জো নেই। বাবুর চিৎকারে পাশের ফ্ল্যাটের কেউ শান্তিমতো রাতে ঘুমাতে পারে না।

ছুরু মিয়া কমলার রস ফিডারে ভরে বাবুর মুখে চেপে ধরে। ভাবে, ক্ষিধে লেগেছে ছেলেটার। “খাও বাবা খাও, চল বাবা ম্যাকাইভার দেখব। ” ম্যাকাইভারের কথা শুনে কান্না একটু থামায় বাবু। উনিশশ নব্বইয়ে বিটিভির জনপ্রিয় টিভি সিরিজের নাম ম্যাকাইভার।

“আব্বা আ আ, ম্যাকাইভার, ম্যাকাইভার !!” সাদাকালো টিভির সামনে ম্যাকাইভারের মারামারি দেখে হাসে বাবু। কে বলবে একটু আগে তার চিৎকারে সারা ঘরে ঘুর্নিঝড় বয়ে গেছে। আঁচল দিয়ে কপাল মুছতে মুছতে সুজির বাটি নিয়ে আসছে ফাতেমা। বাবুর দুধ-সুজি আর কমলা যোগাড় করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। ডানো দুধের টিনের দাম গত সপ্তাহে আরো একধাপ বেড়েছে।

টিনের পর টিন দুধ খাইয়েও এতটুকু ছেলের মন যোগানো যায় না। মা-কে আসতে দেখে হঠাৎ করেই ক্ষেপে যায় বাবু। হাতের কমলার রসভরা ফিডারটি অকারণেই ক্লান্ত পরিশ্রান্ত মায়ের কপালের দিকে ছুড়ে মারে বাবু। মেজাজ ঠিক রাখতে পারলনা ফাতেমা। ছুটে এসে চটাশ করে পিঠে থাপ্পর মারে সে।

গলা টিপে ধরতে ধরতে বলে-“এতোটুকু ছেলের জীদ দেখ। ওরে দাও আমার কাছে। আজ ও কে আমি ছাদের ট্যাংকির পানিতে চুবিয়ে মারবো। ” বাবুর চিৎকারে আবারো ঝড় উঠে ছুরু মিয়ার ছোট্ট সংসারে। শনিবার সকালটা একেবারে নাকে মুখে ব্যস্ত।

একদিন ছুটির পর আজ আবার অফিস আর স্কুল খোলা। ফাতেমা শেষ রাতে ঘুমিয়েছে। গতরাতে সারারাত কেঁদেছে বাবু। সবাই ঘুমাতে পারলেও একফোঁটা ঘুমাতে পারেনি ফাতেমা। একবার আদর করে তো আরেক বার মারে।

কোন কিছুতেই কাজ হয় না। অসম্ভব জেদী ছেলেটা। হবিগঞ্জের এক আজোঁ পাড়াগাঁয়ের শ্বশুর বাড়ি থেকে চিঠি এসছে একটা। ফাতেমার শিক্ষিত শ্বশুর গ্রামে জ্বীন বসানোর অনুষ্ঠান “আইঝড়া” বসিয়েছিল নাকি ! “আইঝড়া ওঝা” বলেছে বাবুর নাকি “আলগা দোষ” রয়েছে। দেও দানব জাতীয় কিছু একটা বাবুর উপর ভর করেছে।

তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ওঝা দুইজন জ্বীনকে নিযুক্ত করেছে বাবুর সুরক্ষায়। সেই জ্বীন দুটি, ফাতেমা যখন কোরআন শরীফ পড়ে, তখন তার পাশে বসে থাকে। তবে বিশেষ সেই জ্বীনের প্রতি ফাতেমার খেয়াল নেই। সকালে ছুরু রাস্তা থেকে বেশ দাম দিয়ে ডিমওয়ালা কার্ফু মাছ কিনেছে।

তিন তলায় পানি নেই। কাটা মাছগুলো ধুতে নিচে যেতে হবে। সকাল নয়টায় কোনমতে স্বামীকে বিদায় করেছে সে। বাবু সেলিমের সাথে খেলছে। আসমা স্কুলে চলে গিয়েছে।

সেলিমের স্কুল বারটার শিফটে। চার তলা সরকারী কোয়ার্টার বিল্ডিং এর সামনে গোলাপ বাগান। কোয়ার্টার বিল্ডিং-এ পানি না থাকলে, সকল বাসিন্দাকেই গোলাপ বাগানের পানির টেপে যেতে হয়। মাছ ধোয়ার সময় ফাতেমা হঠাৎ লক্ষ্য করল তিন তলার ব্যালকনি দিয়ে বাবু উঁকি দিচ্ছে। লাল ফতুয়া পরা বাবুর মুখ দিয়ে লালা ঝড়ছে, আধো আধো বুলিতে আম্মা, আম্মা আ আ !! কলজে নড়ে গেল ফাতেমার।

বাবুকে দেখার জন্য সেলিমকে রেখে এসেছিল সে। জোরে সেলিম বলে ডাকছে ফাতেমা। গলা দিয়ে আওয়াজ বেড় হচ্ছেনা আর। ইতিমধ্যে বেলকনির কোনায় রাখা চেয়ারে উঠে পড়েছে বাবু। গ্রীল না থাকায় লালা মাখানো হাসি হাসি মুখটা সহজেই দেখা যাচ্ছে।

যে শিশুটির অত্যাচারে ফাতেমার জীবন ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছিল, সে শিশুটির নিরাপদ অবতরণে কোন এক ডানাওয়ালা পরী বা আইঝরা ওঝার জ্বীনকে আহ্বান জানালো হাত জোড় করে। এবার আর হাত দুটি এক রাখতে পারছে না সে। পড়ন্ত বুকের মানিককে কোলে আগলে রাখার জন্য জোড় করা হাত দুটি সম্প্রসারন করল সে। চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। মূর্ছা গেল ফাতেমা।

সাভার সি এইচ এম এ মেজর হায়দার সিগারেট টানছেন। দৌড়ে এল রশীদ হাবিলদার, ছুরুর খুব কাছের বন্ধু। -স্যার, বিশমাইল থেকে আমার এক বন্ধু এসছে। তার ছেলে তিন তলা ছাদ থেকে পড়ে গেছে। জরুরী এক্সরে করতে হবে।

-তিন তলা থেকে পড়ে গেছে ! বেঁচে আছে কি? -জ্বী স্যার, বেঁচে আছে। এক তলার তাকে ধাক্কা খেয়ে ঠিক ঘাসের মধ্যে পড়েছে। এক হাত দূরেই ইট খাড়া করানো ছিল। -ও মাই গড। বলেন কি? তারাতারি এক্সরে রূমে আনুন।

এপাশ ওপাশ দুইপাশ এক্সরে করানোর পরেও কোন হাড় গোড় ভাঙ্গার রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। ছুরু মিয়ার কোলে কাঁদছে বাবু। রশিদ কয়েকটি সিভিটের পাতা হাতে ধরিয়ে দিল বাবুর। সঙ্গে সঙ্গে কান্না থেমে গেল তার। আদুরে গলায় জিজ্ঞেস করে রশিদ-কি হয়েছিল তোমার বাবু? ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বাবু বলে-“নাল এক্তা মানুত আমাকে পেলে দিয়েতে।

নীল এক্তা মানুত আমাকে দরে পেলেতে। আমি ম্যাকাইবার হয়ে গেতি। ” লাল নীল মানুষের কথা শুনে উপস্থিত সবাই হেসে উঠল। (এ গল্পটির প্রেক্ষাপট সত্য। বাবু চরিত্রটি আমি।

আমার আব্বার নাম হাবিবুর রহমান। ফেমিলি নাম ছুরু। মায়ের নাম ফাতিমা রহমান। ৯ই জানুয়ারী, আমার আম্মার ২য় মৃত্যুবার্ষিকী। আম্মাকে খুব মনে পড়ে।

আমার আম্মার জন্য সবাই দোয়া করবেন। )  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.