আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

২৩ নভেম্বর, ২০১৩ : জননেতা মোহাম্মদ নাসিম ভার্সেস ওয়ার্ড ও ইউনিট এর সংগ্রামী নেতৃবৃন্দ এবং আমার পর্যবেক্ষণ

যাহা বলিতে চাই তাহা মুখে বাধো বাধো ঠেকে.

এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বাংলাদেশের রাজনীতির ধারা বহুধা বিভক্ত। কোন দলই তার দলীয় নিয়ম নীতিবোধে জাগ্রত নয়। যেন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সকল নেতা নেতৃরা চলাফেরা করে। প্রত্যেকের মনে অপরের জন্য যেন হলাহল নির্গত হয়। আমি আওয়ামী লীগের একজন মাঠপর্যায়ের নেতা হিসেবে খুব অল্প সময়ের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছি।

কিন্তু ঢাকা ১৫ আসনের এমপি জনাব আলহাজ্ব কামাল আহমেদ মজুমদারের অফিসে যেদিন পরিচিতি সভা হল সেদিন আমার মনে একটি প্রশ্ন প্রথম উদয় হল: মাঠপর্যায়ের নেতাদের বয়স এত বেশী কেন? আমিই বোধহয় সবচেয়ে কম বয়সী নেতা ছিলাম। আমার নিজের কথা এই মূহুর্তে বলা দরকার। আমি একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারী চাকুরীজীবির সন্তান। মধ্যবিত্ত পর্যায়ের এসব চাকুরীজীবিদের শুধু মাত্র নৈতিকতা বোধ ছাড়া টাকা পয়সা বেশী নাই। তাই সন্তানদের আর কিছু না হোক নীতিবান করে গড়ে তুলতে চেষ্টা করেন।

আর বেশীরভাগ সন্তানই পরবর্তী সময়ে সেই নীতির বাইরে যেতে পারে না। নীতিবোধের ধোয়া তুলে তারা তাদের জীবন পার করে। আমিও সেই দলের একজন। তাই সহজ, সত্য এবং সুন্দরের বাইরে যেতে পারি নাই এখনও। রাজনীতি অর্থাৎ রাজার নীতি।

দাবার কোটে যে খেলা হয় তাই আসলে রাজনীতি নয়। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হয়তো এই রাজাদেরই নীতিহীন কাজ করতে হয়। আমার কম বয়স বলেই হয়তো কিম্বা আমি ব্যক্তিগত ভাবে রাজনীতির বাইরেও আরও একটি পরিচয় থাকার কারণে বড় বড়ো আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। বিভিন্ন সময় খোদ প্রধান মন্ত্রী নিয়েও অনুষ্ঠান আয়োজন করেছি। আমি জানি কোন অতিথির সম্মান কতটুকু।

কিন্তু অবাক ব্যাপার হল রাজনীতিতে আমার সেই অভিজ্ঞতা একটুও কাজে লাগেনি। কারণ রাজনীতি আসলে সন্দেহ আর অবিশ্বাস এ পরিপূর্ণ। আমি যখন এই প্রোগ্রামটি আয়োজন করতে যাই তখন আমার ভাবনা ছিল একটি ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প করব যেটি উদ্বোধন করবে আমাদের বতর্মান এমপি জনাব আলহাজ্ব কামাল আহমেদ মজুমদার। কারণ পরিচিতি সভায় উনি বলেছিলেন ১৩ নং ওয়ার্ডের এই এলাকায় উনি আসার নিমন্ত্রন পাননি কখনই। কিন্তু যখন আমি এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের সভাপতি সহ জনাব দেলোয়ার হোসেন সাহেবের বাড়িতে যাই উনি সঙ্গে সঙ্গে জনাব এমপিকে ফোন করেন।

দিনটি ছিল শুক্রবার আমার স্পষ্ট মনে আছে। এমপি সাহেবকে নিয়ে প্রোগ্রাম আয়োজেনের জন্য ৮ দিন সময় যথেষ্ট ছিল। কিন্তু যখন আমরা এমপি সাহেবের সঙ্গে দেখা করি তখন তিনি আমাদের ভাবনায় ঘি ঢেলে তার আগুনের উজ্বলতাকে অনেক বাড়িয়ে দেন। তিনি বলেন জনাব মোহাম্মদ নাসিম হবে এই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি। জনাব নাসিম আমার অনেক পছন্দের একজন নেতা।

আমি ভিষণভাবে উৎফুল্ল হই। কিন্তু জনাব মোহাম্মদ নাসিমকে নিয়ে ৮দিনের মধ্যে অনুষ্ঠান আয়োজন সত্যিই অকল্পনীয় ছিল। এমপি সাহেব জানতে চাইলে আমি প্রথমে সময় চাইলেও আমাদের এক বড় ভাই সংগ্রামী নেতা বলে ওঠেন যে অল্প সময় হলেও এই প্রোগ্রাম আয়োজন করা সম্ভব। তখন আর আমার কোন উপায় না থাকায় আমিও তার সুরে সুর মেলাই। কিন্তু অনুষ্ঠান আয়োজনে এমপি সাহেবের অনুমোদন থাকলেও সংশ্লিষ্ট এলাকার নেতৃবৃন্দের অনেকেই এই অনুষ্ঠানের বিরোধিতা শুরু করে।

আমার অবাক হবার পালা শুরু হয়। আমি জানতে পারি যে, মাঠপর্যায়ের একটি কমিটি কখনই এত বড় অতিথিদের নিয়ে অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারে না। মাঠপর্যায়ের সংগঠন শুধু ওপরের নির্দেশ পালন করবে। আমি প্রথমবার হতাশ হই। আমার ২য় হতাশা হল মাঠ পর্যায়ের সংগঠন এই আয়োজন করায় ওপরের সারির নেতাদের ঈর্ষান্বিত মনোভাবের কারণে অনুষ্ঠান আয়োজনের সফলতা নিয়ে সন্দেহ দানা বেধে ওঠায়।

এটি স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, সাংগঠনিকভাবে এই আয়োজন সফল হবে না। কারণ সকলেই সহযোগিতার হাত বন্ধ করে দেয়। শুরু হয় হুমকি, ধামকি আর মিথ্যা বদনামের পালা। যা আমি নই তা বানিয়ে দেবার জন্য প্রানান্তকর প্রচেষ্টা আমাকে রাজনীতিতে হতাশ করে। এমন কি এই ভয়ও দানা বাধে যে হয়তো আমার বাড়িতেই বোমা হামলা হবে।

সকল ভয়ভীতি উপেক্ষা করে অনুষ্ঠান আয়োজনের সকল কর্ম সমাধা করার পরও দেখা যায় আরেক চিত্র। আবার প্রমান করে যে রাজনীতি হল কুটিল আর জটিল এবং এই কুটিলতা যার ভেতর যত বেশী সে ততটুকু অগ্রগামী। আমি অনুষ্ঠানের দিন সকল আয়োজন সম্পন্ন করে আমার ওপরের সারির নেতাদের বক্তৃতার মঞ্চ বানিয়ে দিয়ে সেখান থেকে সরে আসি। কারণ আমাদের চেহারায় উজ্বল্লতা না থাকায় তাদের চেহারা দিয়ে মঞ্চ আলোকিত করতে হয়। কিম্বা বলা যায় তারা সুকৌশলে কুট চাল ব্যবহার করে মঞ্চ দখল করে।

আমরা আমাদের বাবা মায়ের শেখানো মধ্যবিত্ত নীতিবোধের ভার বহন করে মঞ্চের বাইরে থেকে সকল সমস্যার সমাধার করি আর ইথারে শুনতে থাকি গুঞ্জন আমার কারণে আজ এটি সফল হল। উফ! জানেন না আয়োজনটি শেষ করতে আমাকে কতটুকু ধকল সহ্য করতে হয়েছে। এইসব বাক্যবানে আমি লজ্জিত হই, আমি অনুশোচনায় দগ্ধ হই। কতটুকু কষ্ট এদের সহ্য করতে হয়েছে। আমি কেন এদের এত কষ্ট দিলাম।

জনাব মোহাম্মদ নাসিম সাহেব বক্তৃতায় বলেন যে, বাটি চালান দিয়েও বিএনপি- র খোজ পাওয়া যাবে না। আর আমি ভাবি কতটুকু নিচে নামলে আমাকে রাজনীতিবিদ বলা হবে। আমি আমার সহযোগিদের কর্মে দগ্ধ হই। কিন্তু এত কিছুর পরেও এইটুকু আনন্দ পাই যে, আমি মানুষ, আমি মানুষ আমি মানুষ। আমি রাজনীতিবিদ নই।

আর হতে চাই না। আমি মানুষ তাই মানুষের কাছাকাছি থাকতে চাই। অনুষ্ঠান শেষে রাতে অনেকেই ফোন করে আমাকে বলে -অনুষ্ঠান ভাল হয়েছে। অনেকে বলে সাবধানে থেকো, তোমার আমার ভেতর ভাঙ্গন ধরাতে বিরোধীরা কিন্তু অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি তাদের কথা শুনি আর মনে মনে হাসি।

ওদেরকে আমার বোকা মনে হয়। ক্ষমতার লিপ্সায় ঠুলি পড়া ঘোড়ার মত ওদের এই ক্লান্তি হীন দৌড় আমাকে ওদের থেকেও বড় করে তোলে। ওদেরকে আমার পড়াশুনা করা নীতিহীন অশিক্ষিত মনে হয়। তাই যারা জেগে জেগে ঘুমিয়ে থাকে তাদের ঘুম ভাঙ্গানোর অপেক্ষা করা আমার উচিত নয়। আমি তাই আবার মানুষ হতে চাই...


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।