আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

Bangladesh: Islam is talking: London



ব্রিক লেন ও আশপাশের অঞ্চলে ইহুদিদের মূল ব্যবসা যেমন বেকারি ও গয়নার দোকান, এগুলো যথাক্রমে বাংলাদেশি রেস্তোরাঁ ও শাড়ীর দোকানে পরিণত হয়। প্রশস্ত সিনেগাগগুলোর (ইহুদি উপাসনালয়) অনেকগুলোই পরিণত হয় বাংলাদেশিদের কাপড়ের কারখানায়। ফোরনিয়ার স্ট্রিট ও ব্রিক লেনের সংযোগস্থলে অবস্থিত অধুনা গ্রেট লন্ডন মস্ক, যেটি ঐ অঞ্চলে জামে মসজিদ হিসেবে বেশি খ্যাত, এই ভবনটিই আগে স্পাইটালফিল্ড সিনেগাগ হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিল। উল্লেখ্য যে এই ভবনটি লন্ডনের পরিবর্তনশীল অভিবাসী সমাজের একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত হয়। ভবনটি ১৭৪৩ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল একটি ফরাসি প্রটেস্ট্যান্ট গির্জা হিসেবে।

১৮১৯ সালে এই গির্জাকে মেথডিস্ট চ্যাপেলে পরিণত করা হয়। উনিশ শতাব্দীতে লন্ডনে ইহুদি অভিবাসীদের সংখ্যা বাড়তে থাকলে এই ভবনেই ১৮৯৮ সালে স্পাইটালফিল্ড সিনেগাগ স্থাপন করা হয়। পরে জামে মসজিদ স্থাপনের আগে মসজিদ কর্তৃপক্ষ ভবনটি কিনে নেন। ব্রিক লেন অঞ্চলে আগে থেকেই বর্ণবাদী সন্ত্রাসের নজির ছিল, পরে বাংলাদেশি অভিবাসীরাও যার শিকার হয়েছেন। মূলত ১৯৩০ সালে ফ্যাসিস্ট রাজনীতিক অসওয়াল্ড মোসলের নেতৃত্বে এই সন্ত্রাসের সূত্রপাত হয়।

তিনি ব্ল্যাক শার্ট নামক একটি দল পরিচালনা করতেন, যেটি ঐ সময়ে অঞ্চলে ইহুদিদের অভিবাসনের বিরুদ্ধে সক্রিয় ছিল। বাংলাদেশিদের উত্থান ঘটার পরও কাছাকাছি বেথনাল গ্রিন অঞ্চলে ন্যাশনাল ফ্রন্ট নামক সংগঠন অভিবাসন-বিরোধী কর্মকান্ড পরিচালনা করছিল। এছাড়া কিছু শ্বেতাঙ্গ তরুণ স্কিনহেড পরিচয়ে সংগঠিত হয়ে ঐ অঞ্চলের বাংলাদেশি অভিবাসীদে উপর বিভিন্ন সন্ত্রাসী হামলা চালাতো। এই হামলাগুলোর মধ্যে ছিল বাংলাদেশি শিশুদেরকে উত্যক্ত করা, তাদের দেখলে গায়ে থুতু ছিটানো, পথেঘাটে কর্মজীবি নারীদের উপর আক্রমণ করা, বাংলাদেশি মালিকানাধীন ঘরবাড়ি ও দোকানপাটে আক্রমণ ও ভাংচুর ইত্যাদি। এ সময়ে বাংলাদেশি শিশুদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও স্কুলগমন ব্যহত হতে থাকে।

মা-বাবারা বর্ণবাদী আক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতে শিশুদেরকে বাড়িতে অবস্থান করতে বাধ্য করতেন। বর্ণবাদী হামলার আশংকায় কর্মজীবি ও বহির্গামী বাংলাদেশি নারীরা একা চলাফেরা থেকে বিরত থাকতেন এবং যেখানেই যেতে কয়েকজন একসাথে যেতেন। বর্ণবাদীদের দ্বারা অগ্নিসংযোগের আশংকায় ঘরবাড়ি, দোকানপাট নির্বিশেষে বাংলাদেশি মালিকানাধীন যেকোন ভবনে বিশেষ অগ্নিনির্বাপক সতর্কতা অবলম্বন করা হত। এই সময় বাংলাদেশি অভিবাসীদের ব্যবহারের মধ্য দিয়ে লন্ডনে অগ্নিসহ চিঠির বাক্সের প্রচলন ঘটে। ৪ মে, ১৯৭৮ তারিখে ২৫ বছর বয়সী বাংলাদেশি বস্ত্র শ্রমিক আলতাব আলী তিন ব্রিটিশ কিশোরের আক্রমণে নিহত হন।

বর্ণবাদী এই হামলাটি অ্যাডলার স্ট্রিট ও ওয়াইটচ্যাপেল রোডের সংযোগস্থলে ঘটে, যখন আলতাব কাজ থেকে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন। এই হত্যাকান্ডের পর বাংলাদেশি অভিবাসীরা ঘুরে দাঁড়ান। তারা বিক্ষোভ সমাবেশ করে পুরো ব্রিক লেন অঞ্চল বন্ধ করে দেন। তাদের মূল দাবী ছিল ন্যাশনাল ফ্রন্ট নামক বর্ণবাদী যুব সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা। বর্ণবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশি তরুণরা বাংলাদেশ ইয়ুথ মুভমেন্ট গঠন করেন।

১৪ মে তারিখে সাত হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি আলতাব আলীর কফিন নিয়ে হাইড পার্কের উদ্দেশ্যে মিছিল বের করেন। এরই মাঝে কিছু বাংলাদেশি তরুণ ন্যাশনাল ফ্রন্টের বিরুদ্ধে স্থানীয় ছোট ছোট দল গড়ে তুলেন এবং বর্ণবাদী ব্রিটিশ তরুণদের চিহ্নিত করে তাদের উপর একাধিক হামলা চালান। সেই থেকে আলতাব আলীর নামটি বর্ণবাদবিরোধী ও মানবাধিকার লংঘনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তার হত্যাকান্ডের পর বাংলাদেশিদের ঐ বিক্ষোভ ছিল বর্ণবাদের বিরুদ্ধে দক্ষিণ এশীয় কোন জনসমষ্টির প্রথম সংগঠিত আন্দোলন। এই আন্দোলন অধুনা ব্রিটিশ বাংলাদেশি সমাজের ঐক্য ও স্বকীয়তাবোধেরও শিকড়ের গভীরে অবস্থান করছে।

ঐ ঘটনার পর হত্যাকান্ডের স্থান অর্থাৎ অ্যাডলার স্ট্রিট সংলগ্ন একটি উদ্যানের নাম দেওয়া হয় আলতাব আলী পার্ক। ১৯৯৩ সালে এককালের বর্ণবাদী, বর্তমানে অতিডান রাজনৈতিক দল ব্রিটিশ ন্যাশনাল পার্টির আক্রমণে কিছু বাংলাদেশি ছাত্র প্রচন্ড আহত হলে বাংলাদেশিরা অনুরূপ আন্দোলন গড়ে তুলে তার জবাব দেন। ১৯৮৮ সালে হার্টফোর্ডশায়ারের সেইন্ট অ্যালবানস শহরের পৌর কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের সিলেট শহরের সাথে আনুষ্ঠানিক ভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করে। সিলেট হতে আগত বাংলাদেশিরা সেইন্ট অ্যালবানস শহরের বৃহত্তম অভিবাসী সমাজ হওয়াতে শহর কর্তৃপক্ষ তাদের সন্মানে এই আনুষ্ঠানিকতার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ২০০১ সালের এপ্রিলে লন্ডন বোরো অফ টাওয়ার হ্যামলেটস নগর পরিষদ স্পাইটালফিল্ডের সংসদীয় আসনের নাম আনুষ্ঠানিক ভাবে পরিবর্তন করে 'স্পাইটাল ফিল্ড ও বাংলাটাউন' নাম প্রদান করে।

এই নাম প্রদানের দিনটি ঐ অঞ্চলের রাস্তাঘাট ও ল্যাম্পপোস্টে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার লাল ও সবুজ রং ব্যবহার করে উদযাপন করা হয়। উল্লেখ্য ইতমধ্যেই ঐ অঞ্চলের প্রতি পাঁচজন অধিবাসীর তিনজন ছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুদ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।