আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হেফাজত-জামায়াতের অর্থের উৎস ও ব্যয়

বাংলা আমার দেশ

যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতে ইসলামী অর্থের উৎস বিভিন্ন মাধ্যম হয়ে তাদের কোষাগারে জমা হয়। এ ভাবে হেফাজতে ইসলাম তথা কওমি মাদ্রাসায়ও বিভিন্ন মাধ্যমে অর্থের যোগান আসে। মৌলবাদী গোষ্ঠীদের অর্থের বিভিন্ন মাধ্যম বর্ণনা করতে গিয়ে সর্বপ্রথম কোথা থেকে আরম্ভ করতে হবে তা নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কেননা তাদের এমন কোন মাধ্যম নেই যেখান থেকে অর্থের যোগান হয় না। হেফাজতে ইসলামের নেতারা তাদের কওমি মাদ্রাসার নামে চাঁদা সংগ্রহ, স্থানীয় প্রভাবশালীদের যাকাত ফিৎরা বার্ষিক চাঁদা সহ রমজান মাসের এককালিন চাঁদা বিভিন্ন ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদ, সমাজসেবক ও শিল্পপতিদের নিকট মাদ্রাসা নির্মাণ, মসজিদ নির্মাণ ও এতিমদের নামে বিভিন্ন সময় চাঁদা সংগ্রহ করে থাকেন।

হেফাজতে ইসলামের নেতাদের প্রত্যেকের কোন না কোনভাবে একটা মাদ্রাসা কিংবা একটা মসজিদের সাথে সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। সেই মাদ্রাসা ও মসজিদই চাঁদা সংগ্রহের একমাত্র মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আবার অনেক নেতা রয়েছে যারা অনেক মসজিদ মাদ্রাসা ও এতিম খানার পরিচালক। যাদের যত বেশি প্রতিষ্ঠান তাদের তত বেশি অর্থ-সংগ্রহের সুযোগ। দৈনিক-সাপ্তাহিক-মাসিক ও বার্ষিক চাঁদা ছাড়াও বিভিন্ন মৌসুমী চাঁদা সংগ্রহের বিশাল একটা অংশ হেফাজত নেতাদের পকেটে চলে আসে।

কোরবানির সময় চামড়ার টাকা, বিশেষ করে এই চামড়ার ব্যবসার টাকা হেফাজত নেতাদের বিশাল বাজেট। তারা নিজেরাও এতিমদের টাকা নিয়ে চামড়ার ব্যবসার নামে কোটি কোটি টাকা আয় করে। সেই সব আয়ের টাকা দিয়ে নিজেদের আরাম আয়েশ ব্যতিত যত দেশদ্রোহী জ্বালাও পোড়াও কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। কওমীপন্থী হেফাজত নেতারা আজকাল আগের মতো শুধু এই সব করে পুরনো ঐতিহ্য ধরে বসে আছে তা নয়। বর্তমানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন কিন্ডার গার্টেন, ইসলামী মহিলা মাদ্রাসা, ইসলামী ক্যাডেট মাদ্রাসার নামে আরেক অর্থের মাধ্যম হিসেবে শিক্ষা কারখানা খুলে বসে রয়েছে।

নিজের যতই গোড়ামি শিক্ষার অধিকারি হোক কিন্তু অন্যদেরকে আধুনিক শিক্ষার নামে টাকা আয়ের একটা উৎস খুলে ঠিকই সুবিধা ভোগ করছে। হেফাজত নেতাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে সমবায় সমিতির নামে মাল্টিলেভেল অনুকরণে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান খুলে অর্থ সংগ্রহ করছে। ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, বিভিন্ন রিয়েল স্টেট, গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের নামে টাকা সংগ্রহ করছে। হেফাজতে ইসলামের নেতারা বিদেশ থেকে বিভিন্ন সময় মাদ্রাসা, মসজিদ নির্মাণ ও এতিমদের ভরণ-পোষণের নামে যেূ সব টাকা সংগ্রহ করে থাকেন, তার কোন সঠিক হিসাব নেই। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের সৌদিয়া, কাতার, ওমান, জর্ডান, আরব-আমিরাত, মিশর, তুরস্ক, মালেয়শিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে হেফাজত নেতারা বিভিন্ন মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে থাকেন।

বিদেশ থেকে টাকা সংগ্রহের ক্ষেত্রে রয়েছে ভিন্নতা। তাদের বিভিন্ন প্রতিনিধি কিংবা সংগ্রহের রয়েছে। একেক নেতা একেক নিয়মে টাকা সংগ্রহ করে থাকেন। সারা বছর যেমন হেফাজত নেতারা ঐ সব দেশ থেকে টাকা সংগ্রহ করে থাকেন, ঠিক বিশেষ বিশেষ মুহূর্তেও টাকা সংগ্রহ করে থাকেন। হেফাজতে ইসলামের নেতারা তাদের সেই সব প্রতিনিধি ব্যতিত সরাসরিও অনেকে টাকা সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন দেশে সফর করে দাতা সংস্থা ও ব্যক্তির নিকট থেকে অর্থ সংগ্রহ করে উগ্র ও জঙ্গি কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকেন।

এ কাজে তাদের বেশি সহযোগিতা করে কওমি মাদ্রাসা থেকে পাশ করে যারা মধ্যপ্রাচ্যে চাকুরি করে তারাই। কওমি মাদ্রসার ঐ সব পড়–য়ারা আরবিতে পারদর্শী হওয়াতে একটু সুবিধা পায়। আরবিদের বুঝাতে সক্ষম হন। মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশ এমনেতো মসজিদ মাদ্রাসা এতিমদের কথা বললে যাকাত-ফিৎরা-দান-খয়রাত দু হাত খুলে করে দেন। কিন্তু ইসলাম রক্ষার নামে ধর্মের রক্ষার নামে ইসলাম ও ইমান রক্ষার আন্দোলনের কথা বললে তারা আরো বেশি অর্থের যোগান দেন।

হেফাজতে ইসলামের শীর্ষনেতারা নাস্তিক, মুরতাদদের হটানোর নামে, হেফাজতীর সমাবেশের নামে, ইসলাম রক্ষার নামে স্মরণকালের রেকর্ড ভঙ্গ করছে। এমন কোন আরব দাতা সংস্থা নেই যেখান থেকে ইসলাম রক্ষার নামে টাকা সংগ্রহ করেনি। কিন্তু সেই সব অর্থের খোঁজ-খবর রাখছে কয়জন। হেফাজত নেতারা বিভিন্ন সময় ঈমান ও ধর্ম রক্ষার নামে যে সব আওয়াজ তুলে আন্দোলন সংগঠিত করে থাকেন তার আসল লক্ষ্য হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দাতাসংস্থা ও ব্যক্তিদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করার একটা সুযোগ খোঁজা ছাড়া আর কিছু নয়। ধর্ম ব্যবসায়ী উগ্রবাদী হেফাজতে ইসলামের নেতারা নিজেদেরকে ইসলাম ধর্মের হেফাজতকারী বললেও মূলত তারা ধর্মকে ব্যবহার করে অর্থের হেফাজত এবং নিজেদের হেফাজত করা ছাড়া ভিন্ন কোন কিছু নেই।

কেবল মধ্যপ্রাচ্য নয় ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা ও লন্ডন থেকেও টাকা সংগ্রহের নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। হেফাজতে ইসলামের ভাগ্য আসলে ভালো বলতে হবে, কেননা হেফাজতের ঢাকা অবরোধের সময় রাতে শাপলা চত্বরে অভিযানের পর থেকে তাদের টাকা সংগ্রহের আরো একটা পথ প্রকাশ হয়ে যায়। কারণ অভিযানের পর হেফাজতে ইসলামের প্রতিনিধিরা তাদের দাতা গোষ্ঠীদের নিকট হাজার হাজার নেতাকর্মী নিহতের একটা বার্তা তাদের কানে পৌছে দিতে সক্ষম হয়েছে। যত বেশি নেতাকর্মী নিহত ততবেশি টাকা সংগ্রহ। নিহতের প্রত্যেকের পরিবারের পুনর্বাসনের নামে টাকা সংগ্রহের নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।

হেফাজতে ইসলামের নেতারা শাপলা চত্বরের অভিযানের আগে পর্যন্ত দেশ-বিদেশ হইতে যত অর্থ সংগ্রহ করছিল তার চেয়ে বহুগুণ বেশি অর্থ অভিযানের পরে সংগ্রহ করেন। নেতারা তাদের হাজার হাজার কর্মী নিহতের প্রচারের মূল উদ্দেশ্য ছিলো বিদেশ থেকে বেশি করে অর্থ সংগ্রহ করা। যার কারণে শাপলা চত্বরের অভিযান হেফাজতে ইসলামের নেতাদের জীবনে সোনায় সোহাগা হয়ে ধরা দেয়। হেফাজতে ইসলামের নেতাদের জীবনে টাকা সংগ্রহের এমন আরেকটা মাধ্যম কিংবা ইস্যু আবার কখন আসবে তারা কল্পনাও করতে পারছে না। আহত কয়েকজন হেফাজতকর্মীদের সাথে এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেল হেফাজতে ইসলামের বহু নেতা তাদেরকে টাকা দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সাক্ষাৎকার নিয়ে গেছে এর কোন খোঁজ খবর নিতে আর আসেনি।

যেই সব কর্মীরা হেফাজতের সমাবেশে গিয়ে বিভিন্ন সময় আহত হয়েছে তাদের নামেও বিভিন্ন সময় টাকা সংগ্রহ করে নিজেরাই পকেট ভরাট করা ছাড়া কিছু করেনি। টাকা আনা হয় শহীদের নামে, খায় নেতারা ঃ হেফাজতে ইসলামের আমীরের বিলাসবহুল চলাফেরা, হেলিকপ্টার বিমানে যাতায়াত, লক্ষ লোকের খাদ্য ও পানিয় সংগ্রহ সহ কোটি টাকার গাড়ী ভাড়া এবং দেশব্যাপী সাংগঠনিক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যে টাকা ব্যয় করেছেন করেছেন সেই টাকার উৎস ব্যায় করে অনুসন্ধানে জানা যায়, হেফাজতে ইসলাম তাদের সাংগঠনিক কার্য্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে গঠন করেছে বিষয় ভিত্তিক সাংগঠনিক সেল। নির্ধারিত বিষয়ের উপর পারদর্শীদের করা হয়েছে এসব সেলের প্রধান বা আহবায়ক। এভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শাখা অর্থ বিষয়ের সেলের প্রধান করা হয়েছে ফটিকছড়ির বাবুনগর মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা আইয়ুব বাবুনগরীকে এবং সহকারী করা হয়েছে সাবেক হরকাতুল জিহাদের নেতা কাতেব ইলিয়াছ ওসমানীকে। এছাড়াও অন্যান্য সদস্যরা হচ্ছে, ঢাকার মুফতি নুরুল্লাহ, জুনাইদ আল-হাবিব, মীর ইদ্রিচ প্রমুখ।

এদের দায়িত্ব হচ্ছে দেশ-বিদেশের বৃত্তশালী লোকদের সাথে যোগাযোগ করে বৃহৎ অংকের টাকা সংগ্রহ করা। গত ৫ মে’র পর থেকে রাজধানীর শাপলা চত্বরে হাজার হাজার লোক শহীদ হয়েছে, তাদের পরিবারকে সহায়তা এবং আহতদের চিকিৎসা দেওয়ার লাশে নতুনকরে টাকা সংগ্রহ করছে। বিশেষ করে দেশের বাহিরে অবস্থানরত প্রবাসীদের ৫ মে’র ঘটনায় মৃতের সংখ্যা হাজারেরও অধিক এমন বিভ্রান্তি ছড়িয়ে টাকা আনা। অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে সফল হয়েছে হেফাজত ৫ মে ঘটনার পর শহীদের পরিবার ও আহতদের চিকিৎসা দেওয়ার নামে দেশ-বিদেশ থেকে টাকা সংগ্রহ করে। এ টাকা নিয়ে চলে হরিলুটের খেলা।

শহীদ পরিবার ও আহতদের চিকিৎসার নামে টাকা সংগ্রহ করলেও সেই অর্থ পৌছেনি শহীদ পরিবার ও আহতদের নিকট। এটাকে কেন্দ্র করে একই সংগঠনের নেতাদের মধ্যে মামলা পর্যন্ত গড়িয়েছে। ৫মের পূর্বে ফরিদপুরের সমাবেশ থেকে সাভার ট্রাজেডির নামে টাকা উত্তোলন করেও সেই টাকা আত্মসাৎ করেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ন সম্পাদক ও ঢাকা মহানগরীর সদস্য সচিব মাওলানা জুনাইদ আল-হাবিব সহ সংশ্লিষ্ট নেতারা। এ নিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ফরিদপুর জেলা হেফাজত নেতা কর্তৃক জুনাইদ আল-হাবিবকে প্রধান আসামী করে মামলা দায়ের করেছে। মামলার কিছু দিন লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকলেও এব্যাপারে জুনাইদ আল- হাবিব এর কোন মত বা প্রতিবাদ করতে আমরা দেখিনি।

তার চুপ থাকা এবং প্রতিবাদ না করা থেকে বুঝা যায় অর্থ আত্মসাতের ঘটনা সত্য। হেফাজতের টাকা উত্তোলনের পদ্ধতির মধ্যে দেশ-বিদেশ মসজিদ মাদ্রাসা শিক্ষক ও ঈমাম মাদ্রাসার ছাত্র দেশীয় ধর্মীয় অনুভূতিশীল ব্যক্তি ও বিদেশ হচ্ছে উল্লেখযোগ্য। সবার নিকট থেকে টাকা উত্তোলন করলেও হেফাজতের শীর্ষ নেতারা কোন দিন চাঁদা দিয়েছে এমন নজির পাওয়া যায়নি। দেশ থেকে টাকা উত্তোলন করার পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে দেশব্যাপী হেফাজতের সকল কমিটি থেকে মাসিক বা বার্ষিক নির্ধারিত চাঁদা। দেশের কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের থেকে নির্ধারিত চাঁদা, টাকা সংগ্রহ বা শুভাকঙ্খীদের নিকট থেকে মাসিক বা এককালিন চাঁদা সংগ্রহ করা।

বিদেশ থেকে সংগ্রহের ক্ষেত্রে রয়েছে ভিন্নতা। বিদেশ থেকে টাকা উত্তোলনের জন্য রয়েছে হেফাজতের নিজস্ব প্রতিনিধি বা সংগ্রহকারী। বিশেষ বিশেষ মুহুর্তকে সামনে নিয়ে হেফাজতের প্রতিনিধিরা বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে সফর করে দাতা সংস্থা ও ব্যক্তি থেকে তারা অর্থ সংগ্রহ করে হেফাজতের উগ্র কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য নিয়ে আসে। এ কাজে তাদের সবচেয়ে বেশী সহযোগীতা করে থাকে কওমি মাদ্রাসায় পড়–য়া প্রবাসীরা। তারা মাদ্রাসায় লেখা-পড়া করার কারনে আরবীতে পারদর্শি হয়।

আর আরব দেশের আরবীদের সাথে ভালভাবে বুঝিয়ে কথা বলতে পারে। তাদের সার্বিক সহযোগীতায় প্রতিনিধিরা কাজ করে থাকে। তাছাড়াও সারা বছর এসব ছাত্ররা বিদেশের মাটিতে অবস্থান করে প্রবাসীদের নিকট থেকে টাকা সংগ্রহ করে হেফাজতের জন্য দেশে পাঠায়। বিদেশে টাকা সংগহের দায়িত্বরতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, আহমদ শফির ছেলে মাওলানা আনাছ মাদানী, বাবুনগর মাদ্রাসার শিক্ষক, হেফাজতের অর্থ সম্পাদক মাওলানা আইয়ুব বাবুনগরী, সহকারী অর্থ সম্পাদক মাওলানা কাতেব ইলিয়াছ ওসমানী, ঢাকা মহানগরীর সভাপতি মাওলানা নূর হোসেন কাসেমী ও সেক্রেটারী মাওলানা জুনাইদ আল- হাবিব, মাওলানা আব্দুল মালেক হালিম, চট্টগ্রাম মজাহেরুল উলুম মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা লোকমান হাকিম, মুফতি ইজাহারুল ইসলাম চৌধুরী, নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মাওলানা সেলিমুল্লাহ ও চট্টগ্রাম সেগুনবাগান মাদ্রাসা ও শিক্ষা কমপ্লেক্স’র পরিচালক হাফেজ তৈয়ব প্রমুখ। এদের দায়িত্ব হচ্ছে মৌসুম অনুযায়ী দেশের বাহিরে গিয়ে সাংগঠনিক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য টাকা সংগ্রহ করে আনা।

হেফাজতের বিভিন্ন ধর্মীয় কর্মসূচীর কথা বলে টাকা সংগ্রহ করলেও এই টাকার কোনো হিসাব থাকে না। যে যার মত করে ওই টাকার ভাগভাটোয়ারা করে থাকে। এজন্য কোনো জবাবদিহিতা করা লাগেনা। দেশ-বিদেশের টাকার একই অবস্থা। হেফাজতে ইসলাম দুবাই শাখার সভাপতি প্রবাসী মাওলানা রফিকুল ইসলাম জানান, হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠার পর থেকে এপর্যন্ত শুধুমাত্র আরব আমিরাত থেকে অর্ধকোটি টাকা পাঠানো হয়েছে।

৫মে ঢাকা অবরোধে শহীদ ও আহতদের চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে পাঁচ লক্ষ টাকা। হেফাজতে ইসলাম ওমান শাখার দায়িত্বশীল হাবিবুল্লাহ জানান, ওমান প্রবাসী বাঙ্গালীদের নিকট থেকে শহীদ পরিবার এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে তিন লক্ষ টাকা। সৌদিআরব শাখার দায়িত্বশীল মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন জানান, সেখান থেকেও প্রায় দশ লক্ষ টাকার মত পাঠনো হয়েছে সারাদেশে আহত- নিহতদের জন্য। কাতার শাখার দায়িত্বশীল সালেহ আহমদ বলেন, হেফাজত গঠন করার পর থেকে সর্বাধিক অর্থ পাঠানো হয়েছে কাতার থেকে। গত ৫মে ঢাকা অবরোধের সময় নিহত ও আহতদের চিকিৎসাসেবার জন্য পনের লক্ষ টাকা পাঠানো হয়েছে।

এভাবে পাকিস্তান, লন্ডন, আমেরিকা, ফ্রান্স ও কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে কোটি কোটি টাকা হেফাজতের নেতারা সংগ্রহ করেছে । কিন্তু এ টাকার কোন সুনির্দিষ্ট হিসাব কারো কাছে নেই বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন হেফাজত নেতা। বর্তমানেও দুবাই, সৌদিআরব, ওমান, কাতার, কুয়েত, পাকিস্তান, আমেরিকা, লন্ডন ও কানাডায় টাকা সংগ্রহ জন্য সফরে রয়েছে হেফাজতের একাধিক শীর্ষনেতা। ৫ মে’র শাপলা চত্বরের ঘটনা হেফাজতের জন্য আরেকটি সূযোগ। হাজার হাজার লোক শহীদ হয়েছে প্রচার তারা নিজেরাও চালিছেন, যদিও সুনির্দিষ্ট বিশ জনেরও তালিকা তারা প্রকাশ করতে পারেনি।

এই মিথ্যার আশ্রয় শুধু বহির্বিশ্বে থেকে টাকা পাওয়ার জন্য। শহীদের নামে দেশ-বিদেশ থেকে টাকা আনা হলেও শহীদ পরিবার বা আহতরা তার কিঞ্চিত পরিমাণও পায়নি। শহীদ পরিবারদের মাঝে পাঁচ-দশ হাজার টাকা করে দিলেও আহতদের কোনো টাকা দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ৫ মে শহীদ হওয়া কক্সবাজারের মতিউর রহমানের পরিবার আক্ষেপের সহিত বলেন, ঘটনার প্রথম দিকে অনেকে এসে আমাদের সাহস দিয়েছেন, আপনাদের জন্য বিদেশ থেকে টাকা এসেছে, আমাদের কেন্দ্রীয় নেতারা এসে দিয়ে যাবেন। কিন্তু ঘটনার প্রায় তিনমাস অতিক্রম হতে চললেও তার কোন বাস্তবতা পাওয়া যাচ্ছে না।

৬ তারিখ নারায়নগঞ্জ পুলিশ হেফাজত সংঘর্ষের ঘটনায় আহত রফিক উদ্দীন এখনো পা ধাবিয়ে চলতে হয়। দিনমজুর রফিক সমস্ত সহায় সম্বল হারিয়ে এখন পথের ভিকারী। বৌ-ছেলে নিয়ে কষ্টে দিনাপিত করছে বিনা চিকিৎসায়। পুলিশের ভয়ে পালিয়ে থাকা এবং অর্থের অভাবে চিকিৎসা করতে না পেরে এক প্রকার পঙ্গুত্ব বরণ করতে চলছে। ৬ তারিখ ছুটে গিয়েছিলো হেফাজতের অবরোধে।

সংঘর্ষের সময় অনেক চেয়েছিলো নিজেকে বাচাতে, কিন্তু হেফাজতের কর্মীদের বেপরোয়া আচরণের কারণে আঘাত প্রাপ্ত হয় রফিকের পা। আর আঘাত লাগে তার শরীরের বিভিন্ন অংশে। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারে। পুলিশের গ্রেপ্তারের ভয়ে হাসপাতালেও যেতে পারেনি রফিক। রফিক বলেন, সব ধোকাবাজ, আমি গরীব মানুষ, আহত হয়ে বাসা ছাড়তে হয়েছে গ্রেপ্তারের ভয়ে, টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে পারতেছি না, বৌ বাচ্চারা ঠিক মত দুবেলা খেতেও পারছি না।

৫ ও ৬ মে হেফাজতের নেতাদের আহবানে ঢাকায় এসে আহত হয়েছেন অনেকে। আহত নিহত হওয়ার পর আর কোন খবর নেয়নি কেউ কারো। ইসলামের নামে শহীদের নামে টাকা মেরে খাচ্ছে মাওলানা আহমদ শফীর ছেলে মাওলানা আনাছ মাদানী, খাদেম শফি, আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মঈনুদ্দীন রুহি, জুনাইদ আল-হাবিব, কাতেব ইলিয়াছ ওসমানী, হাফেজ তৈয়ব, আব্দুল মালেক হালিম ও মুফতি ওয়াক্কাছ। আহমদ শফীর ছেলে হিসেবে আনাছের একক কর্তৃত্বের কারনে হেফাজতের অনেক শীর্ষ নেতা আহমদ শফীর উপর নাখোশ। কিন্তু মুরুব্বি হিসেবে কেউ মুখ খুলতে পারছে না আহমদ শফীর সাথে যার সম্পর্ক বেশী তার সুবিধাও তত বেশী থাকে সবখানে।

তিনি একজন কিন্তু সবসময় খাদেম থাকে বিশ জন। দেশের শীর্ষ নেতাদের পেছনে ফেলে এসব খাদেম ও আত্মীয় স্বজনরা মঞ্চ দখল করে ছবি তোলার জন্য অস্থির হয়ে পড়ে। কওমীপন্থি হেফাজতে ইসলামের অর্থের উৎস আর জামায়াতের অর্থের উৎস কর একটা জায়গায় সামান্য মিল থাকলেও কিন্তু অন্যান্য বিষয়ে আকাশ পাতাল ব্যবধান। হেফাজতের সংগঠনের নিজস্ব অর্থের যোগান হয় সামান্য। কিন্তু জামায়াতের নিজস্ব অর্থের যোগান হয় অনেক অনেক বেশি।

জামায়তে ইসলামের দেশ-বিদেশে নিজেদের এমন কিছু মাধ্যম রয়েছে যেগুলো স্থায়ী। যেমন জামায়াতে ইসলামের অর্থ উৎসের কয়েকটি মাধ্যম বর্ণনা করা হয়। জামায়াতের নিজস্ব আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেমন-বেসরকারী ব্যাংক, বীমা, আর্থিক লিজিং কোম্পানি, মাল্টিপারপাস, সমবায় সমিতি ও আঞ্চলিক সমিতি। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান যেমন বিভিন্ন শপিংমল, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, খুচরা পাইকারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ঔষধ শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেমন ঔষধ করখানা, হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ঔষধের কাঁচামাল সংগ্রহের প্রতিষ্ঠান।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেমন বিভিন্ন কিন্ডার গার্টেন, কোচিংসেন্টার, স্কুল, কলেজ, মাদ্রসা ও বেসকারী বিশ্ববিদ্যালয়। যোগাযোগের বাহন, যেমন বিভিন্ন আইটেমের গাড়ি, ট্রাক, বাস, লঞ্চ, স্টিমার, জাহাজ, রোলার, তিন চাকার তেল গ্যাস চালিত গাড়ি। তাদের রয়েছে প্রচুর জায়গা জমি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান, যেমন রিয়েল এস্টেট ব্যবসা, প্লট, ফ্ল্যাট, জমি ক্রয়-বিক্রয় দালান নির্মাণ। ফুড প্রোডাকশান প্রতিষ্ঠান, যেমনÑকোমল পানীয় উৎপাদন কারখানা, শিশু খাদ্য উৎপাদন, নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য উৎপাদন প্রতিষ্ঠান সমূহ। তাদের রয়েছে গণমাধ্যম, যেমন নিজস্ব টেলিভিশন, দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক পত্রিকা ছাড়াও অহরহ প্রেস।

তাদের রয়েছে বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থা, বিশেষ করে ঋণদান কর্মসূচী, সমাজসেবামূলক সংস্থা। জামায়াতে ইসলামের অর্থের উৎসের মধ্যে দেশীয় এমন কোন খাত নেই যেখানে তাদের দখলদারিত্ব নেই। এককথায় বলতে গেলে জলে-স্থলে-আকাশ সীমায় জামায়াতে ইসলামের অর্থের উৎসের মাধ্যম রয়েছে। তাছাড়া তাদের সদস্যদের চাঁদা সংগ্রহ অন্যান্য দাতা, দানবীর, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবীদদের নিকট চাঁদা সংগ্রহ মসজিদ, মাদ্রাসা নির্মাণ এতিমদের জন্য যাকাত ফিৎরা দান খয়রাত এটাও তাদের জন্য বরাদ্ধ রয়েছে। রমজানের সময় ফিৎরা সংগ্রহ একটা বিশাল বাজেট।

কোরবানির সময় ফি সাবিলিল্লাহ নামের চামড়াগুলোও তাদের বায়তুলমালে জমা হয়ে যায়। অথচ ঐ সব অর্থের মালিক এক মাত্র এতিম। কিন্তু ঐ সব অসহায়দের হাতে ঐ টাকা পৌছেনা। এতিমদের নামের টাকা সংগ্রহে জামায়াত হেফাজত একই পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকেন। ব্যবধান কেবল জামাতীরা নিজেও খায় আবার বায়তুল মালেও দেয় কিন্তু হেফাজতীরা নিজেরা খায় বায়তুল মাল বলতে কিছু রাখেনা।

যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াতে ইসলামের বর্তমান এতো অর্থবিত্ত তাদের কিন্তু পূর্বের অবস্থা ছিল খুবই শোচনীয়। তবে ধীরে ধীরে জামায়াতে ইসলাম নেতাকর্মীরা দেশ-বিদেশের এমন কোন সেক্টর রাখেনি যেখান থেকে তারা অর্থ সংগ্রহ করেনি। এক সময় যেসব জামায়াত নেতাদের পায়ে এক জোড়া জুতা ছিল না তারা কিন্তু এখন কয়েকটা ব্যাংকের মালিক। তাদের আত্মকথা ভিত্তিক বিভিন্ন পুস্তক গ্রন্থ ও স্মরণিকা পাঠ করে। বিশেষ করে জামায়াতকে প্রাথমিকভাবে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি আয়ের দেশ আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেন।

সৌদি আরব তাদের মধ্যে অন্যতম। ধীরে ধীরে মধ্যপ্রাচ্যের সকল মুসলিম রাষ্ট্র ছাড়াও ইউরোপের কয়েকটি দেশেও জামায়াতীরা সুযোগ সুবিধা ভোগ করে, তার মধ্যে লন্ডন অন্যতম। যে সব বিদেশী রাষ্ট্র জামায়াতে ইসলামকে সাহায্য করেছিল বর্তমান ঐ সব দেশ জামায়াতের সাথে যৌথ ব্যবসায়ীক পার্টনার। জামায়াতে ইসলামীকে বিভিন্ন দেশ আর্থিক সহযোগিতা ছাড়া কিংবা অনুদান ব্যতিত আরো বেশি সুযোগ প্রদান করা হয় তাদের বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশে জামায়াতের তত্ত্ববধানে পরিচালিত হতো। এ রকম বহু দাতা সংস্থা এনাজিও, ফাউন্ডেশন অর্গানাইজেশন, মানবাধিকার সংস্থা জামায়াতের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়ে আসছে।

বৈদেশিক অর্থ সাহায্যের অধিকাংশ এসব সংগঠন অর্থ পায়। মধ্যপ্রাচ্য ছাড়াও বিভিন্ন পুঁজিবাদী উন্নত রাষ্ট্র থেকে জামায়াতে ইসলামী ঐ সব অর্থ থেকে তাদের সন্ত্রাসী সংগঠন পরিচালনা, কর্মীদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ, সংগঠনের জন্য অস্ত্র কেনা, সংগঠন পরিচালনা ছাড়াও বিভিন্ন দেশদ্রোহী জঙ্গী গোষ্ঠিকে লালন পালন করা ও দেশদ্রোহী কর্মকাণ্ডে ব্যয় করে থাকেন। উৎস : ১. শ্বেতপত্র : হেফাজত-জামায়াতের মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ৪০০ দিন ২. ইসলামী ছাত্র শিবির ২৫ বছরের পূর্তি উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণীকা, ২০০৪

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।