আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চার সিন্ডিকেটের কেলেঙ্কারিতে সব ম্লান, দলীয় লোকজন দূরে

জামায়াত প্রভাবিত সাতক্ষীরায় মহাজোট সরকার আমলে পদ্মাপারের একমাত্র ক্যাবিনেট মন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া ডা. আ ফ ম রুহুল হক ছিলেন সবার শ্রদ্ধার। একই সঙ্গে তার কাছে দক্ষিণের মানুষের প্রত্যাশাও ছিল অনেক। গত পাঁচ বছরে দলীয় লোকজনকে দূরে রেখেছেন। যে উন্নয়ন কাজ করেছেন তা ম্লান হয়ে গেছে তারই স্বজন এবং স্ত্রীর আস্থাভাজন চার সিন্ডিকেটের কেলেঙ্কারির কারণে।

মন্ত্রী হওয়ার পর যতবার নিজ গ্রাম নলতায় এসেছেন ততবারই দলীয় লোকদের দূরে রেখেছেন।

সচরাচর বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরা পৌঁছে নলতায় রাত যাপন, পরদিন নলতা খান বাহাদুর আহছানিয়া মিশন মসজিদে জুমার নামাজ আদায়, বিকালে নিজ বাড়িতে অথবা বৈকালিক ভ্রমণ পয়েন্টে দলীয় নেতা কর্মীদের নামে নিজের আত্দীয়স্বজনদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ, চলমান সিন্ডিকেটগুলোর খোঁজখবর নিয়ে সাতক্ষীরা ত্যাগ করেছেন শনিবার অথবা রবিবার। কিছু এলাকায় বিদ্যুতের সংযোগ স্থাপন উদ্বোধন করে বাহবা নিলেও সেসব এলাকায় বিদ্যুৎ পেঁৗছেনি এখনো।

মন্ত্রী থাকাকালে একবারের জন্যও ভোমরা স্থল বন্দরে যাননি। গত পাঁচ বছরে সাতক্ষীরার হাসপাতালগুলোর ডাক্তারদের তটস্থ রেখেছেন। শত কোটি টাকা ব্যয়ে জাপানি জিনিসপত্র ক্রয়ের নামে চায়না জিনিসপত্র কিনে লুটপাট করা হয়েছে কয়েক কোটি টাকা।

পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিয়ে তাদের যোগসাজশে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করেছে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ভগ্নিপতি সাতক্ষীরা শহরের নাজমুল আরেফিন মিল্টু। যিনি মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের সময়ও চিংড়ি ঘেরের ম্যানেজার ছিলেন। গত সাড়ে ৫ বছরে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সহায়তায় এবং প্রভাব খাটিয়ে স্বনামে-বেনামে হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। লাখ লাখ টাকা নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের চাকরি ব্যাণিজ্যও করেছেন তিনি। সাতক্ষীরায় পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ হয়েছে মন্ত্রীর ছত্রছায়ায় তার নিয়ন্ত্রণে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ফ্ল্যাট বাড়িও কিনেছেন তিনি। এলাকায় প্রচার ও অভিযোগ রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের সব কিছু নিয়ন্ত্রণ হয়েছে মন্ত্রীর স্ত্রী ইলা বেগম, মন্ত্রীর ভগ্নিপতি নাজমুল আরেফিন মিল্টু, রায়হান-মনি সিন্ডিকেট, দোলন-সেতু ও এপিএস কোকন সিন্ডিকেট এর মাধ্যমে। আর এই শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কারণে সাতক্ষীরাতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী (সদ্য বিদায়ী) রুহুল হকের সব ভালো কাজ ম্লান হয়ে গেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণে ৪টি সিন্ডিকেট পরিচালিত হয়েছে। একটি পরিচালনা করেছেন তার ভগ্নিপতি নাজমুল আরেফিন মিল্টু ও তার আত্দীয়স্বজন।

অন্যটি দেবহাটার পারুলিয়ার রায়হান-মনি সিন্ডিকেট। নলতার দোলন-সেতু এবং মন্ত্রীর এপিএস ছাত্রদল নেতা মোশায়েত আলি খোকন ও পিএস মাসুদ সিন্ডিকেট। স্বাস্থ্য বিভাগে চাকরির নামে লাখ লাখ টাকা লোপাট হয়েছে এই চার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল ভবন নির্মাণসহ নানা উন্নয়ন কাজে দুর্নীতি ও লুটপাটের সব ঘটনা ঘটিয়েছে ওই ৪ সিন্ডিকেট। ১৯৯৬ সালে তার নিজ এলাকা নলতায় একটি বেসরকারি হাসপাতাল নির্মাণ উদ্বোধনে আসেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা ড. আলাউদ্দিন।

তখনো সাতক্ষীরার মানুষের জানা ছিল না ডা. রুহুল হক আওয়ামী লীগ করেন। ২০০১ এর নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে সাতক্ষীরা-৩ আসন থেকে চার হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। ২০০৮ এর নির্বাচনে আট হাজার ভোটের ব্যবধানে জামায়াত প্রার্থীকে হারিয়ে জয়ী হলেও তার নিজগ্রাম এবং কেন্দ্রে তিনি বারবার ফেল করেছেন। ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের তার আত্দীয়স্বজনরা ভোট এলেই তিনি এসে জানান আমাকে ভোটটা দিলে মন্ত্রী হবো। তার এই অনুরোধ রক্ষায় ভোট দিয়েছি।

তিনি মন্ত্রী হয়েছেন। কিন্তু বেমালুম ভুলে রয়েছেন সেসব নেতা-কর্মী ও স্বজনদের কথা। মন্ত্রীর ভিন্ন দলপ্রীতির আরেক দৃষ্টান্ত তার এপিএস মো. মোশায়েত আলি খোকন। ছাত্রজীবনে কালিগঞ্জ মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রদলের এই ক্যাডার খোকন ডা. রুহুল হকের ঢাকার ক্লিনিক ট্রমা সেন্টার ও বাড়ির কর্মচারী ছিলেন।

তার স্ত্রীর আস্থাভাজন ও বিশ্বস্ততার কারণেই মূলত ছাত্রদল নেতা খোকন এপিএসের চাকরি পান। আর পিএস আবু মাসুদ জামায়াতের লোক। তার বাড়িও মন্ত্রীর এলাকা নলতায়। মন্ত্রীর এপিএস খোকনও আজ কোটি কোটি টাকার মালিক। ঢাকাতে কিনেছেন ফ্ল্যাট বাড়ি।

মন্ত্রী হওয়ার পর তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলে জড়িয়ে পড়েন। আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ডা. মোকলেসুর রহমান এবং উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তাকিম গ্রুপের মধ্যে তিনি বিভাজন করে রেখেছেন। অপরদিকে দেবহাটা উপজেলায় তার নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়েছে মনি-রায়হান সিন্ডিকেট। মনিরুজ্জামান মনি দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং আবু রায়হান একই দলের সাংগঠনিক সম্পাদক। সেখানেও তৈরি করে রেখেছেন গ্রুপিং।

সীমান্তে চোরাচালান ও হুন্ডি সিন্ডিকেট পরিচালনা ছাড়াও ভারতীয় গরু পাচারের খাটাল পরিচালিত হয়েছে তাদের দ্বারা। মন্ত্রিত্ব থেকে বাদ পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই আবু রায়হানকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। এলাকায় প্রচার রয়েছে যে ডা. রুহুল হকের কারণেই অকালে প্রাণ হারাতে হয়েছে আবু রায়হানকে। এর আগে সাতক্ষীরার দেবহাটায় জামায়াতের সহিংসতায় নিহত হয় শ্রমিক লীগ নেতা আলমগীর হোসেন ও সখিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল আজিজ। দেবহাটা যুবলীগের সভাপতি রতনসহ একাধিক নেতা-কর্মীকে জামায়াত-শিবিরের হামলায় পঙ্গুতের শিকার হতে হয়েছে।

যুবলীগের সভাপতি আসাদুলের হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের হামলার শিকার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতার পরিবারের খোঁজখবর তো দূরের কথা তাদের সঙ্গে তিনি দেখাও করেননি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।