আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রযুক্তি আর ইন্টারনেট এর কারণে যে জিনিস গুলো বিলুপ্তের পথে

আসসালামু আলাইকুম
আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। প্রযুক্তি বিষয়ক আলোচনা নিয়ে আজকের লেখালেখি। তার আগে কিছু গল্প করে নেই।
পদ্মার রুপালি ইলিশ আর মাশকলাইয়ের ডাল। দুটি খাবার নিয়ে একটু ভাবুনতো।

.................ভেবেছেন নিশ্চয়ই। ১৫-২০ বছর আগের সময় আর এখনকার সময়ে এই দুটি খাবারের ব্যবধান নিয়ে আরেকটু ভাবুন। ..............ভেবেছেন নিশ্চয়ই। ব্যবধান কি পেলেন? ‍উত্তরটা এরকম ১৫-২০ বছর আগে এই দুটি খাবার চুলায় বসানো হলে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে এই দুটি খাবারের ঘ্রান এ বাড়ি সে বাড়ি করে সারা গ্রাম ছড়িয়ে পড়ত, আর আজ এই দুটি খাবার তৈরি হলে আমার ঘরে আমিই টের পাইনা। কেন খাবারের ঘ্রান নষ্ট হয়ে গেল ও খাবারের গুনাগুন নষ্ট হয় এর ব্যাখ্যা কমবেশ আমরা সবাই জানি।

এসবের ব্যাখ্যা আজকের আলোচনার বিষয় নয়। প্রেক্ষাপট বলার জন্যই এই আলোচনাটা করলাম।
আজ থেকে ১৫-২০ আগে আমরা নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক কিছুই ব্যবহার করতাম আমাদের জীবনযাত্রায় যেগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে আর অনেকগুলো বিলুপ্ত হওয়ার পথে।
জ্বি হ্যাঁ, এমন কিছু জিনিষ যা প্রযুক্তি আর ইন্টারনেট এর কারণে আজ বিলুপ্তের পথে এটাই আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু।
এবার আমরা একে একে দেখে নেই কোন কোন জিনিষগুলোর বেহাল অবস্থা প্রযুক্তি আর ইন্টারনেটের ক্রমবর্ধমান দাপটের কারনে।


আমরা সবাই জানি 1876 সালে আলেকজান্ডার গ্রাহামবেল টেলিফোন আবিস্কার করেন। কিন্তু যদি না জানেন জেনে নিন সর্বপ্রথম পাবলিক ফোন স্থাপিত হয় 1878 সালে। 1878 সালে একজন সহায়তাকারীর উপস্থিতিতে পাবলিক ফোনগুলো স্থাপন করা হতো হোটেলে লবিতে, রেলওয়ে স্টেশন, কোন জনবহুল মার্কেটের নিকট। প্রথম চলত কাস্টমার কল শেষ করার পর সহায়তাকারীর নিকট টাকা দিয়ে দিত। কিন্তু একসময় দেখা গেল এইভাবে ফোনকল করা সম্ভব নয় এবং সেটা বিরক্তিকরও।

এ ধারনা থেকেই কয়েন চালিত পাবলিক ফোন স্থাপন হয় সর্বপ্রথম 1889 সালে। প্রথমে পোষ্ট পে এবং পরে ফ্রি পে পাবলিক ফোন চালু হয় 1898 সালে যার নাম ছিল No. 5 Coin collector. 1905 সালে সর্বপ্রথম স্ট্রিট পাবলিক ফোন স্থাপিত হয়। 1950 সালে চালু হয় 3-স্লট ডায়াল পাবলিক ফোন যেটিতে ফোন কলার 10 পয়সার মুদ্রা, নিকেল ধাতুর মুদ্রা ও সিকি মুদ্রা দিয়ে কল করার সুবিধা পেলেন। আস্তে আস্তে েএটি জনপ্রিয় হয়ে উঠে এবং মিলিয়ন মিলিয়ন পাবলিক ফোন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। নিচের চিত্রটি দেখে একটু পরিচিত হয়ে নেই পাবলিক ফোনের সাথে-

কিন্তু এত জনপ্রিয় পাবলিক ফোন আজ বিলুপ্ত প্রায়।

এর অন্যতম কারন হলো ইন্টারনেটের আগমন এবং প্রসার। ইন্টারনেটের প্রসারের ফলে ই-মেইল, সোস্যাল মিডিয়া, ভয়েস চ্যাট করার বিভিন্ন এ্যাপলিকেশন, এর পর মোবাইল ফোনের কারনে যোগাযোগ চলে এসেছে  ঘড়ির কাটায়। একটি সেল ফোন হাতে থাকলে কেন আমরা রাস্তার ধারে পাবলিক ফোনে কথা বলব। ইন্টারনেটের দাপটে আর প্রযুক্তির নিত্যনতুন আবিষ্কারের ফলে পাবলিক ফোন বিলুপ্তির পথে।
তবে পাবলিক ফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান শেষ ব্যবহারকারী পর্যন্ত অপেক্ষা করতে রাজী আছে।

তাই হয়ত আমরা অল্প হলেও আরও কিছুদিন দেখতে পাব এই পাবলিক ফোন।
বেশ কিছুদিন আগেও ক্যাসেট ছিল আমাদের গান শোনার একমাত্র ভরসা। অথচ দেখুন আজ ক্যাসেট নেই বললেই চলে। সিডি, ডিভিডি দখল করে নিয়েছে ক্যাসেটের স্থান। তবে অনেক জনপ্রিয় এই সিডি ও ডিভিডিও নিজের অবস্থান ধরে রাখতে পারছেনা।

প্রযুক্তির নিত্যনতুন আবিষ্কারের কারনে এগুলোও আজ বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে।
এখন আমরা একটু পেছন ফিরে তাকাই। ১৯৫৮ সালে RCA Victor প্রথম স্টেরিও ক্যাসেট আবিস্কার করেন যার সাইজ ছিল ৫”x৭” এবং এটি ছিল প্রি রেকর্ড করা তাই এটি ব্যার্থ হয়। ১৯৬২ সালে নেদারল্যান্ড ভিত্তিক কোম্পানি ফিলিপস সর্বপ্রথম কমপেক্ট অডিও ক্যাসেট আবিস্কার করেন এবং বাজারজাত করেন। উন্নত মানের ১/৮ ইঞ্চি পলিষ্টার টেপ দিয়েই এটি তৈরি হয়।

রেকর্ড ও প্লেব্যাক স্পিড ছিল প্রতি সেকেন্ডে ১.৭/৮ ইঞ্চি । যখন ক্যাসেট পূর্নতা পায় তখন এর দুটি সাইডে ৩০/৪৫ মিনিট সময় প্লেব্যাক করা যেত।

এরপর ফিলিপস ও সনির যৌথ প্রচেষ্টা শুরু হয় ১৯৭০ সালের মাঝামাঝি সময়ে। ১৯৮২ সালে এই দুই কোম্পানির যৌথ প্রচেষ্টায় সিডি আসে বাজারে। এর পর আমরা সিডির জনপ্রিয়তা দেখলাম।

ক্যাসেট হারিয়ে গেল। সিডি বাজারের দখল নিল। এই সিডিও আজ প্রায় বিলুপ্ত প্রায়। সিডির ক্যাপাসিটি হচ্ছে ৭০০ MiB এবং সময়ের হিসেবে প্রায় ৮০ মিনিট।

এবারে একটু দেখে নেই কেন এগুলো বিলুপ্ত হচ্ছে।

এক সময়কার তুমুল জনপ্রিয় ক্যাসেট স্থান হারালো সিডি ও ডিভিডি আবিস্কার হওয়ার পর। আর প্রযুক্তির কল্যানে ও ইন্টারনেটের প্রসারে আমরা এখন অনলাইনে গান শুনি, মূভি দেখি। মোবাইলে গান শুনি, কেন সিডি কিনব? আর প্রযুক্তির সর্বশেষ সংযোগ এফ.এম রেডিও। বিশ্বব্যাপি এখন এফ.এম. রেডিওর জয়জয়কার। এক একটা মিউজিক ষ্টেশান এখন মানুষের পকেটেই থাকে।

এসব কারনেই সিডি, ক্যাসেট বিলুপ্তির পথে।
ইংরেজী দুটি শব্দ Rolling ও Index মিলেই Rolodex শব্দটি তৈরি। এটি হচ্ছে কোন তথ্যকে সংরক্ষন করার একটি মেশিন যেখানে কাগজে অথবা কার্ড এ তথ্য লিখে এই মেশিনে েগেঁথে রাখা হত। রোলোডেক্স এর চিত্রটি দেখুন-
১৯৭০ সালে ব্যবহৃত একটি রোলোডেক্স
Arnold Neustadter এবং Hildaur Neilsen ১৯৫৬ সালে এটি আবিষ্কার করেন আর ১৯৫৮ সালে প্রথম বাজারজাত করেন। একসময় ছিলনা কোন ভার্সুয়্যাল সোস্যাল নেটওয়ার্ক, ছিলনা কোন এড্রেস বুক, ছিলনা স্মার্ট ফোন, ছিলনা অনলাইন স্টোরেজ।

কিন্তু তখনও মানুষের ছিল ব্যবসায়িক ও ব্যক্তিগত তথ্য, ছিল ঠিকানা লিখে রাখার প্রয়োজনীয়তা, ছিল পাবলিক ফোন নাম্বারসহ আরও মনে রাখতে হবে এ ধরনের অনেক তথ্য। আর এ তথ্যগুলোই মানুষ কাগজে লিখে রোলোডেক্সে সংরক্ষন করত।
এই ডিভাইসটি আজ বিলুপ্ত শুধুই প্রযুক্তি আর ইন্টারনেটের কারনে। আজ আমাদের রয়েছে মোবাইল ফোন, স্মার্ট ফোন, নোটবুক, ট্যাব, কার্ড হোল্ডার, অনলাইন স্টোরেজ সহ তথ্য সংরক্ষন করার অনেক ব্যবস্থা। এগুলোই ইতিহাস করেছে এই Rolodex নামক ডিভাইসটিকে।


Encyclopedia শব্দটির বাংলা অর্থ বিশ্বকোষ/বিদ্যাকোষ/জ্ঞানকোষ। আমরা এটিকে বুঝব জ্ঞানজগতের সকল তথ্য সম্বলিত পুর্নাঙ্গ একটি রেফারেন্স বুক হিসেবে। Encyclopedia ’র অস্তিত্ব প্রায় ২০০০ বছর ধরে। আধুনিক বিশ্বকোষ ১৭ শতকে অভিধান থেকে আধুনিকায়ন করা হয়। বিশ্বকোষ সাধারনত এক বা একাধি ভলিউমে সংরক্ষিত ছিল।

Encyclopedia Britannica   এবং Enciclopedia universal ilustrada europeo-americana  একাধিক ভলি ‍উমে সংরক্ষিত  Encyclopedia. ১৭৫১ সালে Encyclopedia আবিস্কার করেন জার্মান নাগরিক Denis Diderot and Jon Le Rond D'Alembert.

ভলিউমভিত্তিক এই Encyclopedia এখন প্রায় যাদুঘরে। এখন Wikipedia নামে আমরা কম্পিউটারের বসেই এই বিশ্বকোষ পড়তে পারি। আরও মজার বিষয় হলো যে কেউ এতে নতুন তথ্য সংযুক্ত করতে পারে। ২০০১ সালে Wikipedia যাত্রা শুরু করে। ২০০৯ সাল নাগাদ ৩ মিলিয়ন ইংরেজি আর্টকেল সহ মোট ২৫০ ভাষায় ১০ মিলিয়ন আর্টকেল সমৃদ্ধ আজকের Wikipedia. ইতোমধ্যে সিডি ও ডিভিডি ধারক হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে েএই বিশ্বকোষের।

অনলাইনের মাধ্যমে আমরাতো হাতের কাছেই পাচ্ছি। তো কেন ভলিউম কিনব? এভাবেই এনসাইক্লোপেডিয়া আজ বিলুপ্ত প্রায়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে যেমনঃ চাকুরী, টিউশনি, বাড়ী ভাড়া, ক্রয়-বিক্রয় প্রভৃতি শিরোনামে খবরের কাগজে আমরা প্রচুর বিজ্ঞাপন দেখেছি। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রতিটি খবরের কাগজেই দেখা যেত। পত্রিকা অফিস অনেক মুনাফাও অর্জন করত এ ধরনের বিজ্ঞাপন থেকে।

ছবিটি দেখুন-

আর এখন এই ক্লাসিফাইড এডস প্রায় নেই বললেই চলে। কারন ইন্টারনেট ও প্রযুক্তির প্রসার। আজ অধিকাংশ বিজ্ঞাপন চলে গেছে করপোরেট ওয়েবসাইট এ। ব্যানার এড এর নতুন সংস্করন। এফ.এম. রেডিওতে, ওয়েবসাইটে, সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পন্যের প্রচার ও প্রসার করাকেই অনেক সুবিধার মনে হয়।

এছাড়া ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য তৈরি হয়েছে ই-কমার্স ওয়েবসাইট। আর এসবের কারনের ক্লাসিফাইড এডস বিলুপ্ত প্রায়।
১৯৪৯ সালে A. D. Weir ‍ডিসপোজেবল ক্যামেরা আবিস্কার করেন। প্রথমে এটি ফটো-প্যাক হিসেবে বিক্রি করা হত। অর্থ্যাত ফিল্ম ইন্স্টল করা থাকত।

পরে ৩৫ মিমি ফিল্ম বাজারে আসে যা দিয়ে এটিতে ছবি তোলা হত। ছবি তোলার পর ফিল্মটিকে প্রসেস করে ছবি আউটপুট হত। এরপর Fujifilm, Konica, Canon, Nikon এরকম আরো অনেক কোম্পানিই ডিসপোসেজল ক্যামেরা বাজারজাত করে। ১৯৯০ সালের দিকে এ ক্যামেরা অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করে। সিঙ্গেল ফটো ইউজার, বিয়ে বাড়িতে এটি অধিক হারে ব্যবহার হত।

চিত্রটি দেখুন-

কিন্তু একসময়ের জনপ্রিয় এই ক্যামেরা আজ ডিজিটাল ক্যামেরা, এসএলআর সহ আরও উন্নত মানের ক্যামেরা কাছে তাদের বাজার হারিয়েছে। আর সর্বশেষ বিভিন্ন কোম্পানির স্মার্ট ফোনগুলো আসার পর ডিসপোজেবল ক্যামেরার সমাধি রচিত হয়েছে।
Yard sale আরও বেশ কিছু নামে ডাকা হত যেমনঃ patio sale, rummage sale, tag sale, lawn sale, attic sale, moving sale, garbage sale, thrift sale, or junk sale বাংলায় আমরা এর অর্থ বুঝি কারো ব্যবহার করা জিনিষপত্র যা পুরাতন ও মোটামোটি ব্যবহার উপযোগী সেগুলো একত্রে বিক্রয় করার ব্যবস্থা। এধনের বিক্রয় ব্যবস্থায় বিক্রেতাকে কোন লাইসেন্স করা লাগেনা। বিক্রেতা এ পন্যগুলো সাধারনত পথচারীদেরকে বা যারা এ ধরনের জিনিস কিনতে চায় তাদেরকেই দেখাত।

বিক্রয় স্থান হিসেবে তারা বেছে নিত গ্যারেজ, কার পার্ক করার স্থান, রাস্তাঘাট, বাড়ীর উঠোন। বিক্রিত পন্যগুলোর তালিকায় থাকত কাপড়, খেলনা, বই, আসবাবপত্র, ঘরগৃহস্থলির বিভিন্ন জিনিস, খেলার সামগ্রী ইত্যাদি। চিত্রটি দেখুন-

বিশ্বের অনেক দেশেই এই বিক্রয় ব্যবস্থার এই পদ্ধতি খুব জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু আজ সময় পরিবর্তন হয়েছে। এই রীতি প্রায় বিলুপ্ত।

এর মুল কারন ইন্টারনেট। ই-কমার্স ওয়েবসাইট, সোস্যাল মিডিয়া মারকেটিং িএর ফলে এই ধরনের বিক্রয় ব্যবস্থার আর আয়োজন হয়না। তাই এই পদ্ধতি একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে যেতে খুব বেশি সময় বাকী নেই।
নগরায়নের ফলে একসময় বিদ্যুত, গ্যাস, ওয়াসা, টেলিফোন বিল সহ আরও অনেক বিল দেওয়ার রীতি প্রচলিত হলো। এক্ষেত্রগুলোতে কয়েক বছর আগেও আমরা দেখতাম লাইনের পর লাইনে দাড়িয়ে দীর্ঘ সময় ধরে বিল দেওয়ার অসহায় দৃশ্য।

এসকল বিল দিতে গিয়ে কষ্ট পাননি অথবা ভোগান্তির শিকার হননি এমন লোক পাওয়া কঠিন। একটু দেখি নেই নিচের ছবিটি। আপনার লাইনে দাড়ানোর দৃশ্য ভেসে উঠছে, তাইনা?

তবে বিশ্ববাসীর জন্য আশির্বাদ হয়ে প্রযুক্তি মানুষকে আরাম এনে দিয়েছে। আজ আর লাইনে দাড়িয়ে বিল দিতে হয়না। অনলাইনেই বিল দেওয়ার সকল প্রযুক্তি বিশ্বে চালু হয়েছে।

কিছু দেশ যেগুলো প্রযুক্তিতে কিছুটা পিছিয়ে আছে সেখানে হয়ত এখনও পদ্ধতিটি পুরোপুরি চালু হয়নি। তবে একথা একবাক্যে বলা যায়যে লাইনে দাড়িয়ে বিল দেওয়ার আগের এই নিয়ম একসময় পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
কর্মব্যাস্ত জীবনে কোলাহল আর হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের শেষে মানবদেহ যদি একটু অবসর পায় তাহলে অনেকের মনপাখি ঘুরে বেড়াতে চায় নিজের পছন্দসই স্থানে। এক্ষেত্রে অপরিচিত কোন স্থানে যাওয়ার প্ল্যান হলে আমাদের যে কাজটি প্রথমেই করতে হয় তা হলো গন্তব্যে যাওয়ার রাস্তা চিনে নিরাপদে সেখানে যাওয়া। এক্ষেত্রে একমাত্র গাইড ছিল রুট ম্যাপ যা দেখে দেখে গন্তব্যে যাওয়া যায়।

সময় পরিবর্তন হয়েছে অনেক। ম্যাপ হাতে নেওয়ার এই কাজটাকে একবারেই বাতিল করে দিয়েছে আমাদের গুগল ম্যাপ। ইন্টারনেট কানেকশান সহ ডিভাইস যা ইন্টারনেট উপযোগী সেগুলো ব্যাবহারেই সারাবিশ্ব ঘুরে বেড়ানো সম্ভব। কাগজের ম্যাপ হাতে নেওয়ার প্রয়োজন নেই বললেই চলে।

Yellow page হলো ব্যবসা সংক্রান্ত টেলিফোন ডিরেক্টরি।

ইংরেজি অক্ষর বিন্যাসে নয় ব্যবসায়ের ধরন অনুসারে সাজানো হয় এই ইয়েলো পেজ। ১৮৮৩ সালে এর নামকরন করা হয়। ১৮৮৬ সালে Reuben H Donnelley প্রথম অফিসিয়াল Yellow page প্রস্তুত করেন।

প্রযুক্তি আর ইন্টারনেটের কল্যানে এই বইটি আজ ব্যবহার হচ্ছেনা বললেই চলে। কার ইন্টারনেট আমাদের দিয়েছে সারা বিশ্বের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করার সুযোগ।

তাই বিশাল সাইজের এই বইটি অধিকারে রেখে নিজের বোঝা বাড়ানোর কাজটি কেউ করেনা। একদিন একসময়ের এই দরকারী বইটিও যাদুঘরে চলে যাবে নিশ্চিত।
Answering machine কে কয়েকটি নামে ডাকা যায় যেমনঃ answerphone, message machine, telephone answering machine ( TAM). এমন একটি ডিভাইস যা কোন ফোন কলার কল করলে কয়েকটি রিং বেজে ওঠার পর কলারকে একটি মেসেজ পাঠায় অতঃপর কলার তার বক্তব্য বলা শুরু করলে সে বক্তব্য ডিভাইসে রেকর্ড হয় এবং পরে শোনা যায়। এটি টেপ এনসারিং মেশিন যা ভয়েস রেকর্ড করে এবং প্লে করে। ১৮৯৮ সালে এটি আবিস্কার করেন Valdemar Poulsen. টেলিফোন কনভারসেশান রেকর্ড করার এ ডিভাইসটি Poulsen device নামে পরিচিত ছিল।

এ ডিভাইস ২ ধরনের ছিল একটি হলো টু ক্যাসেট এনসার মেশিন অপরটি সিঙ্গেল ক্যাসেট এনসার মেশিন। চিত্রটি দেখুন- 
প্রযুক্তির এ যুগে এ মেশিন পুরোপুরি বিলুপ্ত। ভয়েস শোনার জন্য অত্যাধুনিক মোবাইল ফোন, অনলাইনে কথা বলার জন্যও আছে অনেক পদ্ধতি যেগুলো নিয়ে আলোচনা নাইবা করলাম। তো এনসারিং েমেশিন থাকে কিভাবে?
telecopying, telefax, fax যেভাবেই আমরা বলি এই মেশিনটির সাথে আমরা কমবেশি পরিচিত। স্কটিশ মেকানিক Alexandar Bain ১৮৪৩ সালে ফ্যাক্স মেশিন আবিস্কার করেন।

সম্পুর্ন ডেভেলপ করার পর আমরা েইমেজ ও টেক্সট সম্বলিত কাগজ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় প্রিন্ট করা অবস্থায় খুব সহজেই পেয়ে যেতাম এ মেশিনের সাহায্যে। এই মেশিন তার কাজের সাহায্যে টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেমকে ব্যবহার করত। নিচের ছবিটি দেখুন-

পুরোপুরি না হলেও এ যন্ত্রটিও এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে। শুধুমাত্র শহরভিত্তিক প্রয়োজন ছাড়া এটি আর এখন ব্যবহার হয়না বললেই চলে। এর একমাত্র কার ই-মেইল।

ফ্যাক্স এর চাইতে কম খরছ, ঝামেলামুক্ত এবং অতি দ্রুততার সহিত তথ্য আদানপ্রদানের কারনে ই-মেইল দখল করে নিয়েছে ফ্যাক্স এর স্থান। একসময় এই ফ্যাক্স মেশিন হয়ে যাবে ইতিহাস।
Teletext or broadcasting teletext হচ্ছে টেলিভিশনে তথ্য আহরন সেবা। ১৯৭০ সালের শুরুতে যুক্তরাজ্যে John Adams নামক একজন ডিজাইনার এটি প্রথম তৈরি করেন। সঠিকভাবে সজ্জিত টেলিভিশনের পর্দায় টেক্সট ও ছবি পাঠিয়ে প্রদর্শন করাটাই টেলিটেক্সট এর কাজ।

প্রথম প্রথম সংবাদ, টিভি প্র্রোগ্রাম সিডিউল ও আবহাওয়ার সংবাদ প্রচার হত। বিবিসি কর্তৃক ১৯৭৩ সালে প্রথম টেলিট্রান্সমিশন করা হয়। নিচের চিত্রটি দেখুন-

তবে যখন ডিজিটাল টেলিভিশন পুরোপুরি আবিস্কার হয় তখন থেকে এই মেশিনটির বিলুপ্তি ঘটে। আর কখনই দেখা যায়নি এই যন্ত্রটিকে।
উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে ৮ম শতকে চীনের একজন নাগরিক Kaiyuan Za Bao সংবাদপত্র আবিস্কার করেন।

সংবাদপত্রের প্রয়োজনীয়তা আমরা স্কুল পর্যায়েই পড়েছি। তাই এর প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করলামনা। সংবাদপত্র কাগজেই ছাপানো হত। চিত্রটি দেখুন-

কিন্তু কাগজে ছাপানো খবরের কাগজের চাহিদা দিন দিন কমে যাচ্ছে। কারন সমুহের মধ্যে আছে কাগজের অপ্রতুলতা আর ইন্টারনেটের প্রসার।

এখন প্রায় প্রতিটি সংবাদপত্রের অনলাইন সংস্করন রয়েছে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে একটু বলি হকারের কাছ থেকে ২৫০ টাকার বিনিময়ে ১ মাসের পত্রিকা পাওয়া যায়। পত্রিকা পাচ্ছেন ১টি। আর অনলাইনে ২৫০ টাকা খরছ করলে আপনি সারা বিশ্বের যতগুলো পত্রিকা আছে সব পড়তে পারবেন। তো কেন ক্রয় করে সংবাদপত্র পড়তে যাবেন।

এভাবে একদিন আসতে খুব দেরি নেই যেদিন কাগজে ছাপানো খবরের কাগজ একবারে বিলীন হয়ে যাবে।
এটিকে Palmtop computer or personal data assistant বলা যেতে পারে। এটি একটি মোবাইর ডিভাইস। ইলেকট্রনিক ভিজ্যুয়াল ডিসপ্লে সম্বলিত এ স্মার্টফোন সদৃশ ডিভাইসে ইন্টারনেট কানেকশান দেয়ার ব্যবস্থা আছে। ওয়াইফাই এর মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ দেয়ার ব্যবস্থা আছে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডিসপ্লে টাচ স্ক্রীন হয়।  
১৯৮৪ সালে এটি প্রথম রিলিজ হয়। ১৯৯২ সালে এটি প্রথম ব্যবহার করেন অ্যাপল কম্পিউটারের সিইও। তবে বর্তমানে অত্যাধুনিক স্মার্ট ফোন আব্কিারের ফলে এর ব্যবহার কমে গেছে বললেই চলে। আর এভাবে চললে একদিন হয়ত পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে এটিকে।


আজ আর নয়। পুরো লেখাটি তথ্যমূলক। ছোটখাট কোন তথ্যভ্রম থাকলে টিউমেন্ট করে জানাবেন। সম্পাদনা করা হবে। ভালো লাগলে লাইক ও শেয়ার করতে ভুলবেননা।

পুরো লেখাটি কেমন হলো তা জানিয়ে মতামত দিন। আরও সুন্দর লেখা নিয়ে আসছি আবারও .............ততক্ষন অপেক্ষায় থাকুন।
কোন কিছু জানতে চাইলো যোগাযোগ করুনঃ
ফেইসবুকঃ এখানে
ধন্যবাদ সবাইকে।

সোর্স: http://www.techtunes.com.bd/     দেখা হয়েছে বার     বুকমার্ক হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.