আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শেখ আর জিয়া পরিবারের স্বেচ্ছাচারিতা

আমরা এমন একটা পরিবেশ চাই, যেখানে শিশুরা তাদের পছন্দ-অপছন্দের ধাপগুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নিয়ে বড় হবে।

===ফয়সল সাইফ=== বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি নাটকের এক মহা হলঘর। রাষ্ট্রের রাজপথ থেকে শুরু করে যেকোনো জায়গা নাটক মঞ্চায়নের জন্য আকর্ষণীয়-মঞ্চ। এই রাষ্ট্রের কোটি কোটি জনগণ তাঁর দর্শক। আর লক্ষ লক্ষ ’স্বঘোষিত জনসেবক’ নামের পেশাদার রাজনীতিবিদরা এর অভিনেতা-অভিনেত্রী।

এই রাষ্ট্রযন্ত্রের নাট্যমঞ্চে যে নাটকটি প্রদর্শিত হচ্ছে সেটি অনেকটা উইলিয়াম শেক্সপিয়রের রোমিও-জোলিয়েট নাটকের মতো। যেখানে পার্থক্য শুধু রোমিও-জুলিয়েট নাটকের মূল উপাদান গভীর প্রেমের রসায়ন; আর এই নাটকের মূল উপাদান স্বার্থবাদী মিথ্যাচার। তা ছাড়া আর সবকিছুই ঠিক আছে। রোমিও-জোলিয়েট নাটকেও দুই পরিবার মন্টেগু এবং ক্যাপিউলেট’দের অনিঃশেষ ঝগড়া-ঝাটি। এখানেও দুই পরিবার শেখ এবং জিয়া’দের অনিঃশেষ ঝগড়া-ঝাটি।

এমতাবস্থায়ই তাঁদের দ্বারা চলছে এই-সেই ইত্যাদি ইত্যাদি। আমার মনে আছে সেই দুই পরিবারের ছিল কিছু চাকর-বাকর। মনিব’দের পথ ধরে, কোনোরূপ যুক্তি ছাড়াই তাঁরাও নিজেদের মধ্যে মারামারি-কাটাকাটি করত। যেমনটা বাঙালীর দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদরাও করে থাকে। আর এত বেশি সংখ্যক রাজনীতিবিদরা এই পাগলাটে কর্মটি করে, যা এক কথায় বিস্ময়কর।

এবং এর পেছনের যক্তিগুলো যে কত অর্থহীন তা নিয়ে ভাবলে আর বিস্মিত হওয়ারও সুযোগ থাকে না। মনে হয় সোজা উন্মাদদের পাশে গিয়ে জায়গা পাতলেই নিজের প্রতি সুবিচার হয়। তবে, এর পেছনের একটা কারণ সম্ভবত- আমরা যদি গত প্রায় ২৫৬ বছরের বাঙালীর জীবনচিত্রের ইতিহাস দেখি, তাহলে দেখতে পাই- এই জাতি তার প্রায় ২১৪ বছরই ছিল পরাধীন। তাঁরা শাসিত হতো বিদেশী শাসকদের দ্বারা। ফলে এদের অতি চালাক-চতুর মানুষগুলোর মধ্যে গড়ে উঠেছে একটা দাসত্বের মনোভাব।

এরা এ থেকে সহজেই বেরিয়ে আসতে পারছে না। এই সূত্র ধরে যদি আজকে বিবেচনা করা হয় সেই সব বাঙালীর অবস্থান, তাহলে এরা হলো ‘শেখ’ এবং ‘জিয়া’ পরিবারের দাস। হয় ইচ্ছায়, না হয় অনিচ্ছা সত্ত্বেও। এরা স্বার্থের জন্য পর্যায়ক্রমে ওপর থেকে ওপর পর্যন্ত, একেবারে শেষ সারিটার মন রক্ষার দাসত্বে নিয়োজিত। যেই সারিটা একই কাজ করে তাঁদের সর্বজনদের মনিব ‘শেখ’ এবং ‘জিয়া’ পরিবারের কাছে গিয়ে।

এই দুই পরিবারের মানুষজন ছাড়া এই দেশে আর কারো নিজস্ব কোনো মত নেই, চিন্তা নেই। দর্শকদের তো এমনিতেই থাকতে মানা। তবে যদি কোনো অভিনেতা-অভিনেত্রীর থাকেও, তাতেও রয়ে যায় ওই দুই পরিবারের মন তুষ্টির সীমাহীন প্রচেষ্টা। নইলে সংসদের অধিবেশনে দাঁড়িয়ে জনগণের প্রতিনিধিরা কেন স্ব স্ব প্রয়াত নেতাদের স্মরণলিপি পাঠ করে অহেতুক সময় নষ্ট করবেন? কেন গুরুত্বপূর্ণ ফ্লোরে দাঁড়ানোর সুযোগ লাভ করে- শেখ পরিবারে মন তুষ্টির জন্য ‘জিয়া’কে নমরূদ; আর জিয়া পরিবারের মন তুষ্টির জন্য ‘শেখ’কে ফেরাউন সাজানো হবে? আবার ভাঙা রাস্তায় চাকা হড়কে যাওয়া গাড়ীর মধ্যে বসে থাকা সরকারী দলের নেতা, কোনো রকমে প্রাণে বেঁচে গিয়েই সংবাদ মাধ্যমের সামনে গিয়ে কেন বলবেন- দেশের রাস্তাঘাট নিউইয়র্কের মতো হয়ে গেছে। গ্রীষ্মের তাপে সারাদিন বাসায় এসিতে বসে থাকা বিরোধীদলের নেতা, সংবাদ মাধ্যমের সামনে গিয়ে কেন বলবেন- গত চার রাতে বার হালি মোমবাতি জ্বালিয়ে শেষ করেছি।

এতটুকু বিদ্যুৎ পাইনি। কারণ, সবই ওই দুই পরিবারের মন রক্ষার চেষ্টা। সেটা যেভাবেই করা হোক না কেন; এমনকি সত্য-মিথ্যা যাই হোক। নাটকে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের যেমন সংলাপ বলার জন্য তোঁতা পাখি হতে হয়; তেমনি অতি চালাক বাঙালীরাও সবাই তোঁতা। আজকে গণতন্ত্র, সংবিধান, মুক্তিযোদ্ধের চেতনা, ধর্মানোভূতি, অপশাসন, দুর্নীতি, অবিচার, দলীয়করণ, টেন্ডারবাজী- সবকিছুর সাথে এসবের গভীর যোগসূত্র না থেকে পারেই না।

প্রায় ৪৩ বছর ধরে যেমন, স্বাধীন একটা জাতির শম্বুকের গতিতে এগিয়ে চলার পেছনে এই দুই পরিবারের স্বেচ্ছাচারিতার দায় আছে। তেমনই অতি চালাক বাঙালীদের তোঁতা পাখি মার্কা সংলাপ আওড়ানোরও দায় আছে। এর একটা ঊদাহরণ, গত ২৫ তারিখ নির্বাচন কমিশনের একদল পক্ষপাতদুষ্ট, মেরুদন্ডহীন কর্মকর্তা তোঁতা পাখির মতো নির্বাচনী তফসীল ঘোষণা করেছেন। তাঁরা যে এই সাংবিধানিক প্রতিষ্টানটির জন্য একদমই যোগ্য নন- সেটা আরো একবার অত্যন্ত অগোছাল এই নির্বাচনী তফসীল ঘোষণার মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছেন। এই তফসীলে তাঁরা প্রার্থী মনোনয়নের জন্য যে দিন ধার্য্য করেছেন- সেটা একেবারেই অবাস্তব।

নির্বাচনী তফসীল ঘোষণার পর থেকে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার জন্য দলগুলোর হাতে মাত্র এক সপ্তাহের মতো সময় রাখা হয়েছে। যেখানে আমাদের জানামতে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন কিনেছেন ২৬০০ এর বেশি প্রার্থী। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মনোনয়ন দেওয়ার জন্য তাঁদের প্রত্যেকেরই ইন্টারভিউ নিতে হবে। এখন যদি সবার দুই মিনিট করেও ইন্টারভিউ নেওয়া হয়, তাহলে- দিনে ১০ ঘন্টা করে ইন্টারভিউ নিলেও দরকার ১০ দিন সময়। তবে, যদি এক্ষেত্রে অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আগে থেকেই প্রার্থী বাচাই করা হয়ে থাকে- তাহলে অন্য কথা।

অবশ্য প্রার্থী মনোনয়নের প্রক্রিয়াটা যে অগণতান্ত্রিক সিলেকশনের মাধ্যমেই হবে, সেটা প্রধানমন্ত্রী আগেই বলে দিয়েছেন। শাহদীন মালিক এর একটা শিরোনাম টেনেছেন, যে দল যদি একটা কলাগাছকেও মনোনয়ন দেয়- তাহলে মার্কা দেখে এই কলাগাছকেই সমর্থকদের দলে দলে ভোট দিতে হবে। কী সুন্দর গণতান্ত্রিক চর্চা। এটা আসলে তা দিয়েও বোঝানো সম্ভব নয়। বলা উচিত এটা হলো- দেশ ও জাতির ওপর এক ব্যক্তির স্বেচ্ছাচারিতা।

আর তোঁতা পাখির দলের তার প্রতি সমর্থন দিয়ে যাওয়া। ব্যাপারটা এমন: ব্যক্তি বললেন- অনির্বাচিতদের দিয়ে এক মুহুর্তও দেশ চলবে না, তোঁতা পাখিরা বলতে শুরু করল- তাই ঠিক। ব্যাক্তি বললেন, তবে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন অনির্বাচিতদের দ্বারাই চলবে, তোঁতা পাখিরা বলতে শুরু করল- তাও ঠিক। ব্যক্তি বললেন- আমরা সংবিধান লঙ্ঘন করি না, তোঁতা পাখিরা বলতে শুরু করল- হুম সংবিধান লঙ্ঘন করি না। সংবিধান বলে- মন্ত্রীরা পদত্যাগপত্র দাখিল করার সাথে সাথেই তা কার্যকর হবে।

ব্যক্তি বললেন- না হবে না, তোঁতা পাখিরা বলতে শুরু করল- তা বটে, তা বটে। কেন হবে? ব্যক্তি বললেন- জাতিসংঘের অধিবেশনে যাওয়ার জন্য ৫-১০ জনের বেশি লোক প্রয়োজন না হলেও, গরীব জনগণের রক্ত বিক্রির টাকায় ১৪০ জনের বহর সাথে যাবে। কারণ বাকীরা কেনাকাটা করবে। তোঁতা পাখিরা বলতে শুরু করল- অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত কথা। এক চুলও ভূল নয়।

ব্যক্তি বললেন- আমরা গরীবদের রক্ত চোষে খাই না, তোঁতা পাখিরা বলতে শুরু করল- হুম, একদম খাই না। ব্যক্তি বললেন- সুষ্টু নির্বাচনের জন্য তত্ত্ববধায়ক সরকার দরকার, তোঁতা পাখিরা বলতে শুরু করল- তাই দরকার। ব্যক্তি বললেন- তত্ত্ববধায়ক সরকার ছাড়াই নির্বাচন সুষ্টু হবে, তোঁতা পাখিরা বলতে শুরু করল- এভাবেই সুষ্টু হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দরকার নেই। অন্যদিকে, শেয়ার বাজার ধস নামল।

ডেকে এনে মানুষকে নিঃস্ব করা হলো। অন্য ব্যক্তি বললেন- কান পড়া হাতি হয়ে বসে থাক। তোঁতা পাখিরা বলতে শুরু করল- ঠিক আছে কিছুই শুনব না। এমনকি দেখবও না। একদিন রেলের কালো বিড়াল ধরা পড়ল।

ব্যক্তি বললেন- বিড়াল দেখে লাভ নেই। তোঁতা পাখিরা বলতে শুরু করল- তাই তো। বিড়াল কালো না সাদা, তা দেখে কী লাভ? আবুলের জন্য পদ্মা সেতু হলো না। ব্যক্তি বললেন- তাতে আমার কী? চুপ থাক, ওসব বাদ দাও। তোঁতা পাখিরা বলতে শুরু করল- বোবার শত্রু নাই।

তাই কিছুই বলব না। আবুলের দোষে রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা। এবড়োখেবড়ো রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটে মানুষ মরে শেষ। ব্যক্তি বললেন- তাতে আমার কী? আমি তো ভাল আছি। তারপর হঠাৎ একদিন অতীত তিক্ততার সূত্র ধরে এক ব্যক্তি আর এক ব্যক্তিকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করলেন।

তখন ব্যক্তি বলে উঠলেন- কাল থেকে হরতাল, ভাঙচুর, আন্দোলন। তোঁতা পাখিরা বলতে শুরু করল- তাই ঠিক। আন্দোলন করতেই হবে। একজন মানুষকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। জনগণ (দর্শক) এটা মেনে নেবে না।

এ যে মহা অন্যায়। এভাবেই নাটকের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের কুৎসিত সব পারফর্মেন্সে চলছে নাটক। ইদানিং এক ব্যক্তি চাইছেন, অন্য ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে একটা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকতে। সে জন্য যা যা করা লাগে, যত মিথ্যা বলতে হয়, যত প্রতারণা করতে হয়; তিনি করছেন। এভাবে হয়তো সামনে নির্বাচন করে তিনি টিকেও যাবেন।

হতে পারে কালো একটা নির্বাচনের জন্য ভারত-রাশিয়া ছাড়া আমাদের আর বন্ধু রাষ্ট্র থাকবে না। এর সূত্র ধরে বিশ্ববাসী আরোপ করতে পারে আমাদের ওপর কঠোর অর্থনৈতিক অবরোধ। টাকার বিপরীতে ডলার গিয়ে দাঁড়াতে পারে ১ঃ১০০০০। তাতেই বা কী? এসবে তো আর ব্যক্তি ও তাঁর তোঁতা পাখিদের কিছু আসে-যায় না। তাঁদের জন্য তো গরীব জনগণের রক্ত আছেই।

অপর ব্যক্তি আবার ভাবছেন, এই রক্ত এখন তাঁর চুষা উচিত। কারণ তিনি পাঁচ বছর ধরে রক্ত না চুষেই আছেন। এই নিয়ে তাঁর কঠোর আন্দোলনের ডাক। জনগণ নামের দর্শকদের এগিয়ে আসার তীব্র আহ্বান। কিন্তু এই বোকা দর্শকরা কিছুতেই বুঝতে পারে না, যে তাঁরা কেন এগিয়ে আসবে? এখানে তাঁদের স্বার্থটা কী? এমনিতে তাঁদের দৃষ্টিতে দুই ব্যক্তির যে ভাবমূর্তি; তাঁতে এদের যে কেউ রক্ত চুষার ভূমিকায় গেলে দর্শকদের কিছু যায়-আসে না।

তাঁরা নির্লিপ্ত। তাঁরা বরং চায়, পালাক্রমে রক্ত চুষার স্বাদ ভোগ করেও যেন এরা শান্ত থাকে। কিন্তু দর্শকরা সেই শান্তিটুকুও পায় না। এটাই তাঁদের দূর্ভাগ্য। এটাই তাঁদের চাওয়ার সাথে দুই স্বেচ্ছাচারী পরিবারের নির্মম আচরণের দীর্ঘ দিবস-রজনীর ইতিহাস হয়ে থাকবে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।