আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আসুন (অ) শালীন হই

আমি পত্রিকা পড়া বাদ দিয়েছি। আর ভাল লাগে না। কাগজ খুললেই হয় মারামারি নয় দুর্নীতি না হয় অন্য কোন অস্থিরতা। আমি জানি এটা আমি শুধু আমার নিজের ভাল লাগার জন্যই করছি। কিন্তু কিছু দিন থেকেই আমি ফেসবুকে ঢুকতেই ভয় পাচ্ছি।

আমার বন্ধু-মহল খুব আগ্রহ সহকারে দিল্লির ধর্ষিতা মেয়েটির ছবি, তার জীবনী কিংবা তার উপর ঘটে যাওয়া দুর্বিষহ অত্যাচারের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ বেশ ফলাও করে শেয়ার করছেন। বেশ ভয়ঙ্কর। ভাবলাম যাক এ সমস্যা আমাদের দেশে নেই। ভাগ্যের পরিহাস কিছুদিন পর জানতে পারলাম আমাদেরই এক বোনকে টাঙ্গাইলে গণ ধর্ষণ করা হয়েছে। কি নির্মম, কি নির্মম।

মেয়েটি নাকি পুরুষ দেখলেই ভয় পাচ্ছে তাকে হাই পাওয়ারের ঘুমের ওষুধ দিয়েও ঘুম পাড়ানো যাচ্ছে না। অবশেষে জানলাম দোষীদের ধরা হয়েছে যাদের মধ্যে তার একজন বান্ধবীও আছে। কি জঘন্য। ঘটনাটা এখানে থেমে থাকলেই আমি খুশি হতাম। যাক পশুগুলো ধরা পড়েছে।

কিন্তু আমি খুশি হতে পারলাম না। নানা ধরনের ধর্ষণের কাহিনী আসতে থাকলো। আমি বুঝতে চেষ্টা করলাম ঠিক কি হচ্ছে। শীত কি আমাদের ছেলেদের যৌন ক্ষমতা হঠাৎ বাড়িয়ে দিয়েছে। নাকি ভায়াগ্রার অনুমতি দেয়াতে আমাদের ছেলেরা তার ব্যাবহার পরীক্ষা করে দেখছে।

নাকি দিল্লির মত তারাও পত্রিকার হেডলাইনে আসার প্রাণান্ত চেষ্টা চালাচ্ছে। ছেলে হিসাবে নিজেকে খুব ছোট মনে হল। ভাবলাম যাক আমরা যারা শিক্ষিত তারতোও আর এটা করছে না। কিন্তু আমাকে হতাশ করল আমাদের ছেলেরা। সাভারের ঘটনায় আটক ছেলেদের কয়েকজন নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে।

আমি কিঞ্চিত রেগে গেলাম। চিৎকার করে বলতে চাইলাম শূয়রের জাত তোরা কি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িস না বেশ্যা-বিদ্যালয়ে পড়িস। কিন্তু পারলাম না। কারণ আমি নিজেকে একটু সুশীল ভাবি কিনা। সুশীল সমাজ নাকি একগালে চড় দিলে আরেক গাল পেতে দেয়।

এখনো পুরোপুরি সুশীল হতে পারিনি। মানে একগালে চড় খেলে আরেক গাল পেতে দেয়ার মত সুশীল হইনি আরকি। একগালে চড় খেলে গাল ঢলতে ঢলতে পালিয়ে বাঁচি আর কি। যেহেতু আমি আধা সুশীল তাই পুরো সুশীলদের অনুকরণ করার চেষ্টা করি। তাদের মতই আমিও পাশ কাটিয়ে গেলাম পুরো ধর্ষণের ঘটনাগুলো।

ভাবলাম আমাদের দেশে আন্দোলন করার লোকেরতো অভাব নেই। কোন কারণ ছাড়াই আমরা গাড়ি ভর্তি গাড়িতে আগুন দিতে পারি আর এতো বড় ঘটনা প্রতিবাদে আমাদের আন্দোলনকারীরা অবশ্যই কিছু একটা করবে। আমি অবশ্যই সেটাতে অংশগ্রহণ করবো। কিন্তু তেমন কিছুই দেখলাম না। আমাদের মিডিয়া ব্যাপারটা নিয়ে খুব বেশী উচ্চবাচ্যও করছে না।

বুঝতে পারলাম আমার এখনো অনেক কিছুই জানতে হবে পরিপূর্ণ সুশীল হওয়ার জন্য। ঘটনাগুলো এভাবেই হয়ত মেনে নিতে পারতাম বাকি সব ব্যাপারের মত। এদেশে থাকতে থাকতে আমাদের অনুভূতিগুলো যা হয়েছে তাতে এটা নিয়ে তেমন কিছু হবে না। ভেবেছিলাম ভুলে যাব। পারলাম না।

আমার ব্লগিয় কিছু ভাই এবং আমার মহাজ্ঞানী কিছু বন্ধু তারস্বরে চেঁচিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছে যে ধর্ষণের ঘটনাগুলো মেয়েদের কারণেই হয়েছে। তাদের যে পোশাক পরা দরকার তারা সে পোশাক পরেননা। তাদের যেভাবে থাকা দরকার তাদের সেভাবে থাকে না। তাইতো ধর্ষণের মত ঘটনা ঘটছে। আমি বোঝার চেষ্টা করলাম আসলে বিজ্ঞরা কি বলার চেষ্টা করছেন।

বুঝতে পারলাম উনারা বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে মেয়েদের শালীন পোশাক পরে থাকতে হবে। কিন্তু শালীন পোশাকের সংজ্ঞা আমি কোথাও খুঁজে পেলাম না। অনেকেই হয়ত বলবেন আমি আঁতলামো করছি। কিন্তু মোটেও না। জাতীয় পোশাক কি তা বের করার চেষ্টা করলাম।

তাতে যা আসলো তাতে খুব একটা খুশি হলাম না। শাড়ী এবং লুঙ্গি। দুটোই আমার কাছে অশ্লীল। পৃথিবীর কোথাও মনে হয় হুড-খোলা কোন পোশাক শ্লীল পোশাক হিসাবে আসতে পারে না। আমি কিছুটা বিভ্রান্ত হলাম।

বুঝতে চেষ্টা করলাম কেন শ্লীল পোশাকের কথা আসছে। এটা-তো ঝোপ জঙ্গলের পৃথিবী না। এটা মানুষের জগত। এখানে আমি বুঝতে পারি কখন আমাদের কাকে সম্মান করা উচিত। কখন কাকে গালি দেয়া উচিত।

কারণ এটাই স্বাভাবিক। আমাদের বোঝার জ্ঞান আছে। আমরাতো পশু না। ঝোপের মধ্যে চুপ মেরে থাকবো আর খাবার আসলেই ঝাঁপিয়ে পড়বো। আমরাতো মানুষ।

আমরা ইচ্ছে হলেই পাশের বাড়ির মেয়ের উপর হামলে পড়তে পারি না। কিন্তু কিছুটা অপ্রস্তুত হলাম। যারা বলছেন শালীন পোশাক পড়া উচিত তারা নিশ্চয় আমার থেকে বেশী বুঝে। তারা নিশ্চয় পাশের বাড়ির মেয়ের বুকের ওড়না সরে গেলে সেদিকে তাকিয়ে জিব চাটা শুরু করেন। অনেকটা শিয়ালের মুরগির খোয়ারের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ার মত।

আমার বিজ্ঞ বন্ধুরা মনে হয় শিয়ালের মত সুযোগে অপেক্ষায় থাকেন, কখন পাশের বাড়ির মেয়েটা একাকী রাতের বেলা কাজ শেষে বাসায় যাবে। তার পর তিনি বা তাহারা মেয়েটাকে গণ ধর্ষণ করবেন। এরপর তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে তুলতে বলবেন "আমার কোন দোষ নেই সব দোষ ওই মেয়েটার। সে কেন এতরাতে একাকী বাসায় যাচ্ছে। সে কেন লিপস্টিক পরেছে।

সে কেন চুল ছেড়ে দিয়ে হাঁটছিল। সে কেন সালোয়ার কামিজের বদলে জিন্স পরেছে। শীতের রাত হয়েছে তো কি হয়েছে তাকে অবশ্যই সালোয়ার কামিজ পরতে হবে মাথায় ঘোমটা দিতে হবে। আমরা নির্দোষ" আমরা চিন্তায় পড়ে গিয়ে হাত তালি দিবো। খুশিতে আমাদের চোখের কোন চিক চিক করবে।

আহারে কি হক কথাই না বলেছেন। সুশীলর বিভ্রান্ত হবেন। বলার চেষ্টা করবেন একি বলছেন আপনারা। আমাদের মত আধা সুশীলরা আরও বেশী বিভ্রান্ত হয়ে বলবো পুরো দেশটাই রসাতলে গেল। এরপরও যদি আমার ব্লগিয় এবং ফেসবুক বন্ধুদের শালীন পোশাকের ব্যাপারে চুলকানি থাকে তবে তারা এক কাজ করতে পারেন।

খিলগাঁও রেল-গেট যেতে পারেন। সেখানে একটা পাগলী আছে। উলঙ্গ থাকেন। আপনারা গিয়ে তাকে গণ ধর্ষণ করতে পারেন। সে কোথাও অভিযোগ করবে না।

আর আপনারা খুশি মনে বাক-বাকুম করতে করতে শালীন পোশাককে দোষারোপ করতে পারেন। যাহ শালা এটার তো পোশাকই নেই...... ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।