আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কম্পিউটার প্রোগামিং ,আন্তর্জাতিক প্রাঙ্গনে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ কে ভালোবাসি
কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এর প্রতিযোগীতামূলক আয়োজন গুলো হয়ে থাকে ACM নামক সংস্থার নিয়ন্ত্রণে। ACM এর পরিপূর্ণ অর্থ হচ্ছে Association for Computer Machinery. প্রতিযোগীতাগুলোতে মূলত প্রোগ্রামরদের সামর্থ্য বাড়ানোর টনিক হিসেবে কাজ করে। প্রতিযোগীতায় প্রোগ্রামররা টিম হিসেবে অংশগ্রহন করে , তিনজন প্রোগ্রামার এবং একজন কোচ। সাধারণত ৫ ঘন্টা সময়ের ভিতরে ১০ টি প্রোগ্রামিং সমস্যা থাকে। প্রোগামিং ল্যাঙ্গুয়েজ হিসেবে সাধারণত C, C++ , java ব্যাবহার করা হয়ে থাকে।

যার যেটাতে সুবিধে হয়। ছবিতে তিনটি সিম্বল দেয়া আছে , প্রথম সবুজ বর্গাকার ঘর এর অর্থ হচ্ছে প্রতিযোগী প্রবলেম পড়ছে এবং চিন্তা করছে , তারপরের হলুদ বাতির মানে হচ্ছে প্রতিযোগী সমাধানের পদ্ধতি খুঁজে পেয়েছে , তারপরের বেলুন সম্বলিত প্রতীকটির অর্থ হচ্ছে সে সমাধান করতে পেরেছে এবং কিছুক্ষণের মধ্যে ভলান্টিয়ার একটি বেলুন তার চেয়ারে বেঁধে দিয়ে যায় । প্রতি সমাধানের জন্য একটি বেলুন দেয়া হয়। একবার সর্বোচ্চ তিনটা বেলুন বাসায় নিয়ে আসতে পেরেছলাম , আমার ভাগে পড়েছিল একটা! সাধারণত সবচেয়ে বেশী সমাধানের ভিত্তিতে র‍্যাঙ্কলিষ্ট আপডেট হতে থাকে এবং সবাই তা দেখতে পায় , তবে ভুল সাবমিশানের জন্য ২০ মিনিট করে পেনাল্টি পয়েন্ট কাটা হতে থাকে , কেউ যদি পরে সমাধান করেও পেনাল্টি পয়েন্ট কম থাকে তাহলে পেনাল্টি পয়েন্ট কম থাকার সুবাধে র‍্যাঙ্কলিষ্টে উপরে অবস্থান করবে। প্রথম চার ঘন্টা সাথে সাথেই র‍্যাঙ্কলিষ্ট আপডেট হতে থাকে , প্রতিযোগাতার প্রান ধরে রাখার জন্য শেষ একঘন্টা র‍্যাঙ্কলিষ্ট ফ্রিজ করে রেখে দেয়া হয় , তবে এই সময়ে সব টিম নিজেদের মত করে সমাধান করবে , র‍্যাঙ্কলিষ্টের প্রকৃত অবস্থান জানতে অপেক্ষা করতে হবে ৫ ঘন্টার টাইমফ্রেম শেষ হবার জন্য।

এই ধরণের প্রতিযোগীতাগুলো আমাদের দেশে সারা বছর ব্যাপি বিভিন্ন ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সাইন্স বিভাগের আয়োজনে ACM এর তত্ত্বাবধানে হয়ে থাকে(IUPC- Inter University Programing Contest.)। প্রতিবছর একবার করে আয়োজিত হয় ncpc - National Collegiate Programing Contest. এই প্রতিযোগীতাগুলোতে কমপক্ষে ৮০ টি দল অংশ নিয়ে থাকে। সারা দেশের সব পাবলিক এবং বেশীরভাগ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গড়ে ২ টি করে দল সাধারণত অংশ নেয়। এর জন্য প্রস্তুতি নেয়ার জন্য দলগত প্রস্ততির পাশাপাশি ব্যাক্তিগতভাবেও প্রস্তুতি নিয়ে থাকে । ব্যাক্তিগত প্রস্তুতির জন্য অনলাইন জাজিং সিস্টেমের আওতায় বেশ কয়টি সাইট আছে , যেখানে প্রোগ্রামাররা প্র্যাক্টিস করে থাকে ।

Acm প্রোগ্রামারদের অন্য যে কোন প্রোগ্রামারদের চেয়ে বেশী দক্ষ হবার সুযোগ থাকে । সারা বছর বুদ্ধিভিত্তিক নানা ধরণের সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে তারা এই দক্ষতা অর্জন করে , চাকুরীর বাজারে তাই ওদের চাহিদা বেশী হয়ে থাকে , তাছাড়া আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ থেকে গুগল , মাইক্রোসফটের মত জায়গায় যোগ দেয়ার জন্য নিজেকে প্রমাণ করার জন্য সর্বোত্তম ফ্লাটফর্ম। প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ এবং প্রাপ্তিঃ >>আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের কিছু গর্ব করার মত প্রাপ্তি এসেছে acm programing এর হাত ধরে । International collegiate programming contest এর বিচারক প্যানেলে দীর্ঘদিন যাবৎ আছেন “ শাহরিয়ার মঞ্জুর ( ইষ্ট ওয়েষ্ট ইউনিভার্সিটি )” । >>ব্যাক্তিগত প্র্যাক্টিস সাইট uva online judge এ সবচেয়ে বেশী সমাধানের গৌরব টি এখনো ধরে রেখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের “জানে আলম জান ”।

>>মালেশিয়ার বেশীরভাগ অনলাইন কন্টেষ্টের প্রবলেম সেট এবং জাজিং গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ প্যানেল করে আসছে । ICPC: International collegiate programing contest. প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত হয়ে থাকে । এর জন্য কোয়ালিফাইং রাউন্ড হয় সারা বিশ্বে। এশিয়ার ১৭ টি শহরে আয়োজিত হয় icpc . প্রতিটা সাইট থেকে চ্যাম্পিয়ন এবং রানার্স আপ World Final এ অংশ নেয়ার সুযোগ পায়। ১৯৫৬ সালে প্রথম বারের মত কানাডায় আয়োজিত হয় ।

বাংলাদেশে প্রথম বার ১৯৯৭ icpc আয়োজন করার সুযোগ পায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি । সেবার বাংলাদেশ থেকে প্রথম বারের মত world final এ অংশ নেয়ার সুযোগ পায় “বুয়েট বেঙ্গল টাইগারস” দলটি। তারা সেবার World Final e ২৪ তম হয় । তারপর থেকে প্রতিবছর ই কমপক্ষে একটি দল বাংলাদেশ প্রতিনিধিত্ব করে আসছে । ঢাকা সাইটে সবচেয়ে মাথা ব্যাথার নাম চায়না এবং ভারতের কিছু দল ।

যারা ঢাকা সাইট থেকে অংশ নিতে আগ্রহী । যদিও বিগত সাল গুলোতে বাংলাদেশের দুটো দল প্রথম দুটি স্থান ধরে রাখতে সমর্থ হয়েছে। এর বাইরে যারা অল্পের জন্য ঢাকা সাইটে ৪র্থ কিংবা ৫ম হয়ে যাচ্ছে তারা আবার ভারতে এবং মালয়েশিয়াতে অংশ নিচ্ছে । ২০১৩ সালে ভারতের অমৃতাপুর থেকে শাহাজালাল বিশ্ববিদ্যালয় World final এর টিকেট পাবার গৌরব অর্জন করেছে। ২০১২ সালে বাংলাদেশ থেকে অংশ নেয়া দল দুটি একসাথেঃ ২০১৩ ওয়ার্ল্ড ফাইনালে অংশ নেয়া “বুয়েট চোকার”ঃ বুয়েট চোকার।

বাম দিক থেকে কোচ ড. কায়কোবাদ, নাজমুল হাসান রিয়াদ, মোঃ হাফিজ উদ্দিন এবং প্রসেনজিৎ বড়ুয়া লিংকিন। ফটো কার্টেসি - ICPC। ২০১৩ সালের ওয়ার্ল্ড ফাইনালে অংশ নেয়া শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ঃ সেইন্ট পিটার্সবার্গে ২০১৩ এর ACM ICPC ওয়ার্ল্ড ফাইনালসে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(sust _ palindrome )। ফটো কার্টেসি - শহীদুল ইসলাম। ছোটবেলা থেকে প্রতিযোগীতা মূলক অনলাইন প্রোগামিং কনটেষ্টের আতঙ্ক “টুরিষ্ট ” এখন ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট।

টুরিস্ট (দাঁড়ানো) এবং তার টিম সেইন্ট পিটার্সবার্গ ন্যাশনাল রিসার্চ ইউনিভার্সিটি। ফটো কার্টেসি - ICPC News। বাংলাদেশের পতাকা বুকে নিয়ে বিশ্বমঞ্চেঃ Sust_ palindrome দলনেতা ফরহাদ ভাইয়ের কাছ থেকে নেয়া ওয়ার্ল্ড ফাইনালের কিছু ছবিঃ সামনের বছর আয়োজিত হতে যাচ্ছে ২০১৪ সালের ওয়ার্ল্ড ফাইনালঃ সে লক্ষ্যে ৩০শে নভেম্বর , শনিবার ( ২০১৩ ) ঢাকা রিজিওনাল সাইটে ওয়ার্ল্ড ফাইনালের টিকেটের জন্য লড়বে ৫৬ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২০ টি দল। আশা করি এবারো দেশের পতাকা বুকে নিয়ে সম্মান বয়ে আনবে। ঢাকা রিজিওনাল সাইটে অংশ নেয়া সকল দলের প্রতি রইলো অজস্র শুভকামনা ।

বছর দুয়েক আগে এক্সাইটিং এই লাইফস্টাইল পর্যাপ্ত মনোসংযোগের অভাবে পেছনে ফেলে আসলেও ICPC আসলেই কেমন জানি আবার শুরু করতে মন চায় , যে কারণে এই পোষ্টের অবতারণা । পরপর দুবার অল্প কিছু পেনাল্টি পয়েন্ট এর কারণে ওয়ার্ল্ড ফাইনালে না যেতে পারলেও বাংলাদেশে প্রোগামিং জগতে নিজেদের খুব ভালো করে চিনিয়েছেন SUB_ epsilon (একবার ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ান ). বাম পাশ থেকে ওয়াহিদ ভাই , মশিউর লিংকন ভাই এবং ইরফান ভাই। অতিরিক্ত ফাঁকিবাজির কারণে মশিউর ভাইকে(বর্তমানে বাংলাদেশ বিচারক প্যানেলের একজন) ট্রেইনার হিসেবে পেয়েও ওনাকে নিজের জন্য যথার্থভাবে কাজে লাগাতে পারিনি। স্মৃতির পাতা থেকেঃ আমার ক্যারিয়ারের প্রথম ন্যাশনাল কন্টেষ্ট ,ইষ্ট ওয়েস্ট এ , উইথ অল ৩ টিম। সাস্ট আইপিসিতে অতিরিক্ত পেনাল্টি খেয়ে মন খারাপ।

সামনের শনিবারের আইসিপিতে অংশ নেয়া সকল দলের প্রতি রইলো আগাম শুভেচ্ছা , চ্যাম্পিয়ন এবং রানার্স আপ আশা করি দুটোই বাংলাদেশের দল হবে । বরাবরের মত তারা এবারো দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে উড়ে যাবে । তাদের জন্য ও শুভকামনা । হ্যাপি কোডিং!!
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।