আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাজনৈতিক সহিংসতা না সাবোটাজ ! আন্দাজে আর কত ঢিল !

তারা বলে সম্ভব না, আমি বলি সম্ভাবনা

প্রিয় পাঠক, লক্ষ্য করুন ! বিরোধী দলের টেনেটুনে সাড়ে তিনদিন অবরোধের তখন শেষ সন্ধ্যা ! ঘটনাস্থল ঢাকা ক্লাব এর বিপরীতে, শিশুপার্কের সামনে - ঢাকার সবচেয়ে সুরক্ষিত এলাকাগুলোর অন্যতম তাহরীর স্কয়ারখ্যাত ঐতিহাসিক শাহবাগ চত্বরের সন্নিকটে পুলিশ কনেট্রাল রুমের মাত্র ১০০ গজের মধ্যেই ঘটল সাম্প্রতিক অবরোধকালের সহিংসতম ঘটনাটি। এতে এখন পর্যন্ত একজনের মৃত্যু এবং আরও ১৮ জন জীবন্ত দগ্ধ হয়েছে। এমন জণাকীর্ণ এলাকায় , পুলিশের নাগের ডগার ওপর দিয়ে এ ধরণের হামলা করে অপরাধীরা পার পেয়ে যাওয়ায় মনের মধ্যে শংকা জেগেছে, সন্দেহ দানাবেধে উঠেছে। এমন ঘটনার শিকার আমিও হতে পারি, আপনিও হতে পারেন। আজ সন্ধ্যায় শাহবাগের যখন এই পোট্রোল বোমা হামলা হলো, তখন আমি গুলশান থেকে এধরণেরই একটি পাবলিক বাসে করে ঘরে ফিরছিলাম।

বাস থেকে কারওয়ান বাজারে নেমে কয়েক পা হাটতেই বিকট শব্দে কতগুলো ককটেল ফুটলো। দ্রুত নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিলাম। তবে, ঢাকায় এখন কোথায় নিরাপদ স্থান আর কোথায়ই নিরাপত্তা, সেটা কারোরই হয়তো জানা নেই। জননিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়টি এড়িয়ে যাবার কোন কারণও খুঁজে পাচ্ছিনা। কোন রাজনৈতিক মন্তব্য করতে চাইনা।

চাইনা জ্ঞান পাপী ও দলকানার মত কারো ওপর অন্যায়ভাবে অমূলক দায় চাপিয়ে দিতে। এহেন জঘন্য অপকর্ম যে্ই করুক না কেন, তাদের দ্রুত গেফতার করার দাবী জানানোই এ্ই লেখার প্রধান উদ্দেশ্য। কিন্তু কার কাছে দাবী জানাবো। বর্তমানে দেশে কোন সরকর আছে বলে তো মনেই হয়না। নিজস্ব বিশ্লেষণ অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করা এবং অন্যদের ভাবনা-চিন্তা জানার আগ্রহও রয়েছে এই লেখার পেছনে।

ইদানিংকালে, সোস্যাল মিডিয়া - তথা ফেসবুক, টুইটার, ব্লগের কল্যানে সাংবাদিক সহ নানা পেশার মানুষদের রাজনৈতিক মতাদর্শ, সংকীর্ণ চিন্তা-ভাবনা, অদূরদর্শীতা যেমন দেখতে পারছি, তেমনি দেশ-জাতি নিয়ে সঠিক চিন্তাশীল দূরদর্শী বহু মানুষের সাথেও পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছি। কোন একটা ঘটনা ঘটলেই, টেবিলে বসেই ঝট-পট, আব্দুল গাফফার চৌধুরী মার্কা রেডিমেট এবং মনগড়া মন্তব্য ঝেড়ে দেওয়া হচ্ছে অহরহ। যেমন - 'এটা ওই দলের লোক ঘটিয়েছে', 'এটা ওরা না করলে আর কারা করবে', 'আমার বিশ্বাস এটা ওরাই ঘটিয়েছে', 'এমন ঘটনা ঘটিয়ে কি ওরা এটা আদায় করতে পারবে'...এমন নানারূপের, নানা রঙ্গের মন্তব্য। অনুমান নির্ভর ও তথ্য-প্রমানবিহীন মন্তব্য করে তাদের মনগড়া বিশ্বাসকে অন্যদের মনেও প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কেউ কেউ অর্থহীন বিতর্কেও লিপ্ত হয়।

আবার সত্য উদঘাটিত হলে মুখে কুলুপ। তখ্ন এসব প্রসঙ্গে বাড়ির কাছ দিয়েও যায়না। তখন তাদের স্টাটাসে উঠে আসে - ফুলের সৌরভ মাখা প্রেমময় কবিতা, ক্রিকেট, অনন্ত জলিল ইত্যাদি। দল নির্ভর কর্পোরেট মিডিয়ায় ক্রমাগত অনুগত রাজনৈতিক দল ও মতাদর্শের বুলি আওড়ে যাচ্ছে। কোন বিষয়েই পূর্বাপর না ভেবে দলাকানা অনুগত কর্মীর মত বস্তুনিষ্টতাকে কবর দিয়ে মনগড়া কাহিনী রচনা করেই চলছে।

সংবাদ পরিবেশনে নীতি-নৈতিকতার কোন বালাই নেই। কেউ সত্য বলতে চাইলে, সদলবলে তাকে চেপে ধরে কণ্ঠরোধের চেস্টা করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে বরিশালে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়ি পোড়ানো, পাবনায় মন্দির ভাঙ্গা সহ বেশকিছু ঘটনা সাবোটাজ হিসেবে ইতোমধ্যেই প্রমানিত। যেমনটি সপ্তাহ দুয়েক আগের আজিমপুর এলাকায় বাসে অগ্নিকান্ডের ঘটনা। এর পরপরই নিউএজ সম্পাদক নুরুল কবীর টেলিভিশনের লাইভ টকশো অনুষ্ঠানে ঘটনাটিকে সাবোটাজ হিসেবে আখ্যা দিয়ে এর সপক্ষে প্রমান উপস্থাপনের ঘোষনা দিয়েছিলেন।

ঘটনার এতদিন পরেও পুলিশ বাহিনী বিষয়টির সুষ্ঠ তদন্ত করতে পারেনি বা করেনি। যতটুকু জেনেছি, দেশের মোট পুলিশ বাহিনীর বড় একটি অংশ এখন ঢাকার নিরাপত্তায় নিয়োজিত। এর সঙ্গে প্রতিবেশি রাষ্ট্রের একটি বাহিনীও ঢাকায় সক্রিয় রয়েছে, এমন কথাও বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। আমাদের রাজনীতির ভাগ্য লিখনে তৎপর আছে, কাছে-দূরের আরও কিছু রাষ্ট্র। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, ঢাকার রাজনীতি নিয়ে আলোচনা- সিদ্ধান্ত হয় দিল্লী, ওয়াশিংটন, বেইজিং এ।

যাই হোক, প্রশ্ন হলো এ ধরণের নৃশংস ঘটনা কারা ঘটিয়েছে?কেন ঘটিয়েছে? আমার বিশ্লেষন সহজ-সরল। তিনটি শক্তি এর পছেনে সক্রিয় থাকতে পারে - ১. সরকার বিরোধী শক্তি - জনমনে আতং সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ঘটাতে পারে। এরফলে কেউ পাবলিক বাসে চলাফেরা করবেনা। গাড়ী চালকেরা জানের মায়ায় বাস রাস্তায় নামাবেনা। আন্দোলন সফল হবে।

২. সরকারী শক্তি - এমন নির্মম ঘটনা ঘটিয়ে পাবলিক সেন্টিমেন্ট নিজেদের পক্ষে নেয়ার চেস্টা করতে পারে। বিরোধীদের মনোবল দুর্বল করতে এবং আগামীতে এধরণের হরতাল, অবরোধ কর্মসূচী দেয়ায় নিরুৎসাহিত করতে এমনটি করতে পারে। ৩. বহি:দেশীয় শক্তি - আরেকটি ওয়ান ইলেভেন ঘটাতে কিংবা কোন একটি পক্ষকে সহায়তা করার জন্য এমন নির্মম ঘটনা ঘটাতে পারে। এর বাইরে আর কোন কারণ আমি খুঁজে পাইনা। খোজার দায়িত্বও আমার না।

কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে - জনগণের টাকায় প্রতিপালিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। কিন্তু দেশে সত্যি কি এমন কোন বাহিনীর অস্তিত্ব আছে! বাসা-বাড়ি, রাস্তা থেকে সাধারণ মানুষদের গ্রেফতার, রিমান্ডের নামে নির্যাতন, ঘুষ বাণিজ্য, দুর্ণীতি, অনিয়মের মাধ্যমে টাকার পাহাড় গড়া আর দলীয় কর্মীদের মত আচরন ছাড়া ওদের আর কীই বা কাজ আছে? গতকালের ঘটনার বিশ্লেষনে দেখা যায় - বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বিহঙ্গ পরিবহনের ওই বাসটি গুলিস্তান থেকে মিরপুরের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। মৎস ভবন থেকে যাত্রী নামিয়ে শাহবাগ মোড়ে যাওয়ার আগেই শিশুপার্কের কাছে মটরসাইকেল আরোহী দুই যুবক পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে মারে। গেটের কাছেই সেটি বিস্ফোরিত হয়। এই অবস্থায় চালক গাড়ি চালিয়ে সামনে এগুনোর চেষ্টা করলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক বিভাজনের সঙ্গে ধাক্কা খায়।

বাস হেলপার রফিকুল ইসলাম জানান, চলন্ত বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। এই সময় গেটের কাছে বিস্ফোরণের পর দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে থাকে। প্রথমে চালক মাহবুব টের পাননি। পরে চিৎকার শুনে বাস থামিয়ে ফেলেন তিনি। চালকের অবস্থা আশংকজনক।

এদিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একজন জানান, শিশুপার্কের সামনে বাসটি পৌছলে, তারা হঠাৎ করেই বাসের সামনে আগুন দেখতে পান। সেই আগুন ক্রমশ: ভেতরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার লাইটপোস্ট ভেঙে সড়ক বিভাজকের ওপর উঠে যায়। অন্য যাত্রী রাহাদুল জানান, জানালার পাশের সিটে বসা ছিলাম। হঠাৎ আগুন দেখে চিৎকার দিয়ে উঠি।

কুলকিনারা না পেয়ে জানালার গ্লাস ভেঙ্গে নিচে লাফ দেই। উল্লেখ্য , প্রেসক্লাব থেকে শিশু পার্ক হয়ে শাহবাগ মোড় পর্যন্ত সেসময় ৮টি পয়েন্টে পুলিশ ছিল। এরমধ্যে রয়েছে - ১. প্রেসক্লাবের সামনে ২. ঈদ্গাহ ময়দানের সামনের গলচত্তরে ৩. পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সামনে (মৎস্য ভবন সংলগ্ন) ৪. রমনা পার্কের মৎস্য ভবন সংলগ্ন গেটে ৫. ইঞ্জিনিয়ারস ইন্সটিটিউটের সামনে ৬. শিশু পার্কের সামনে ৭. পুলিশ কন্ট্রোল রুমের সামনে ৮. শাহবাগ মোড়ে ৯. শাহবাগ থানায় ৩০ জন যাত্রী বের হন যাদের মধ্য ১৯জন অগ্নিদগ্ধ হন। সাথে সাথে বাসটিতে আগুনও দেয়া হয়। সম্পূর্ণ ঘটনা ঘটাতে অন্তত ২ মিনিট সময় লাগবে বলে প্রতীয়মান হয়।

পায়ে হেঁটে কোনও পুলিশ উপরের ৫,৬ ও ৭ নং জায়গা থেকে ২ মিনিটের মধ্যে বাসের কাছে আসতে পারতেন, হাতেনাতে ধরতে পারতেন। টহল গাড়ি ছিল ৩ ও ৮ নং জায়গায়, যেখান থেকে গাড়িতে আসতে ৩০ সেকেন্ড লাগে। এতো পুলিশ পুরা জায়গা ঘেরাও করে সার্চ করলে অবশ্যই দোষীদের ধরা যেত, কিন্তু কেউ ধরা পড়েনি। এখন পুলিশ যদি এমন সহজ শিকার না ধরতে পারে তাহলে, আমাদেরকে দুটি সিদ্ধান্তে পৌছতে হবে - ১. এমন অকালকুষ্মন্ড পুলিশ বাহিনীর কোন প্রয়োজন নেই, যারা নিরীহ জনগনের জীবনের নিরাপত্তা দিতে পারেনা। ২. এমন আজন্মা পুলিশদের ইউনিফর্ম পরে জাতির সঙ্গে প্রতারণা করার কোন অধিকার নেই, ওরা ইউফর্ম খুলে ওদের অনুগত রাজনৈতিক দলের হয়ে মিছিল মিটিং করুক আর ঘরে বসে নিজেদের লোম ছিড়ুক।

৩. ওদের হাতে দেশ নিরাপদ নয়, ওদের ঝেটিয়ে বিদায় করে, দেশ প্রেমিক পুলিশরা যেন মানুষের নিরাপত্তার দায়িত্ব কাধে তুলে নেয়। আর্মিতে ক্যু হয়, পুলিশে এরকম কিছু হলে হলে কী হয়। অন্তত: কিছু কুলাঙ্গারদের হাত থেকে জাতি মুক্তি পায়। এমন আমড়া কাঠের ঢেকি মার্কা পুলিশ আমরা চাইনা। তারচেয়ে চলূন নিজেদের উদ্যোগে জনগনের নিরাপত্তায় নিবেদিত হই।

- নিজেদের স্মার্ট ফোনগুলি সচল ও কার্যকর রাখি। - দোকান, বাসা বাড়িতে সম্ভব হলে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা সেট করি। - পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায় মহল্লায়, গ্রামে গ্রামে প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তুলি। দেখি দলকানা পুলিশ ছাড়া আমাদের চলে কী না। আমাদের প্রতিদিনকার জীবনে শান্তি বিধানে পুলিশের অবদান কতটুকু ??? সদুত্তর থাকলে আওয়াজ দেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।