আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শাবি ও যবির আলোচিত “গুচ্ছ পদ্ধতি” নিয়ে তুলকালাম কান্ড, এটি ভাল না খারাপ??


( শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং যশোর বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচিত গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে তুলকালাম কান্ড হয়ে গেল গত দু’দিন। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না যে এই ‘গুচ্ছ পদ্ধতি’টা কী, এবং এর ভালমন্দ দিকগুলো কি কি? বিষয়গুলো স্পষ্ট করতে একটু চেষ্টা করবো। গুচ্ছ পদ্ধতি কী: গুচ্ছ পদ্ধিততে ভর্তি পরীক্ষার মানে হল, এক সাথে একই ধরনের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ বা স্কুলের ভর্তি পরীক্ষা নেয়া। এটির মুল উদ্দেশ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের ভোগান্তি কমানো। অনেক দিন ধরে দেশের মেডিকেল কলেজগুলোতে এমন ভর্তি পরীক্ষা চলে আসছে।

এতে দেশের সব মেডিকেলের জন্য শিক্ষার্থীরা একদিনে নিজ নিজ এলাকায় পরীক্ষা দেন। পরে ফলাফলের ভিত্তিতে সরকারি কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত র্যংকিং অনুযায়ী কলেজে শিক্ষার্থীরা মেধাক্রম অনুসারে ভর্তি হন। এতে শিক্ষার্থীদেরকে ঘুরে ঘুরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো করে পরীক্ষা দিতে সপ্তাহের পর সপ্তাহ কাটাতে হয় না। গুচ্ছ পদ্ধতির সুফল: বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনের পর দিন দৌড়ে পরীক্ষা দিতে গিয়ে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের যে হয়রানি ও আর্থিক অপচয় হয় তা কমে যাবে এ পদ্ধতি প্রয়োগ হলে। এ পদ্ধতিতে বিশ্বিবিদ্যালয়ে পরীক্ষায় সমস্যা কেন: মেডিকেল কলেজগুলো শুধু এক ধরনের সাবজেক্ট (চিকিৎসাশাস্ত্র) থাকায় সেগুলোর র্যংকিং নির্ধারণ কঠিন কোন ব্যাপার নয়।

আবার নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অধিনে থাকায় সরকারের নির্ধারিত কলেজ র্যংকিং ( তাতে কিছুটা ভুলবাল হলেও) মেনে নিতে কলেজ কর্তৃপক্ষ বাধ্য। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে এমন র্যংকিং নির্ধারিত করা অসম্ভব প্রায়। কারণ, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবজেক্ট সংখ্যা, ধরণ, মান, এমনকি কারিকুলাম কোনো ভাবেই মিলে না। যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগকে চাকরি ক্ষেত্রে খুব গুরুত্ব দেয়া হয় সেটি ফার্মাসি বিভাগ তেমন নামকরা নয়। আবার কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থীদের ‘বাজারদর’ চড়া হলে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর তেমন মুল্য দেয়া হয় না।

এভাবে আরও অনেক ব্যাপার আছে। তাছাড়া সবচেয়ে মারাত্মক বিষয় হল, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্তশাসিত হওয়ায় তাদেরকে সরকার নির্ধারিত কোন র্যংকিং মানতে বাধ্য করা যায় না। এই একই কারণে গত দু’বছর ধরে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ চেষ্টা করেও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা গুচ্ছ পদ্ধতিতে আনতে পারেন নি। কোন বিশ্ববিদ্যালয় র্যংকিং য়ে আরেকটির পেছনে থাকতে চায় না (ছোট খাটো কয়েকটি বাদ দিয়ে)। শাবির আলোচিত গুচ্ছ পদ্ধতিটি কেমন: গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষার ভাল উদাহরণ এখনো পর্যন্ত আমাদের সামনে ‘বর্তমানের মেডিকেল পরীক্ষা পদ্ধতি’।

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অবিকল এ পদ্ধতি প্রয়োগ বাস্তবে সম্ভব হয়নি, যেটা আগেই বলা হয়েছে। তাই শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের শিক্ষকরা একটু ভিন্নবাবে সেটা করার চেষ্টা করেছেন। তাদের পদ্ধতিটা এরকম: প্রতি শিক্ষার্থী চাইলে ২টা (শাবি ও যবি) ভার্সিটির আলাদা আলাদা ফর্ম কিনতে পারবে। আবার ইচ্ছা করলে ১ টা ভার্সিটির ফর্মও কিনতে পারে। পরীক্ষা হবে একই দিন একই প্রশ্নে, সিলেট ও যশোরে।

এই পরীক্ষার মার্কের উপর ভিত্তি করে দু’টো ভার্সিটির জন্য আলাদা মেরিট লিস্ট, আলাদা রেজাল্ট হবে। যে শিক্ষার্থী একটা ভার্সিটির ফর্ম কিনবে তার একটা ভার্সিটির মেরিট লিস্টে নাম আসবে। যে দুইটার ফরম কিনবে তার নাম দুই ভার্সিটির মেরিট লিস্টে আসবে। যেখানে তার পছন্দ সেখানে আসন খালি থাকা সাপেক্ষে ভর্তি হতে পারবে। শাবির গুচ্ছ পদ্ধতির নেতিবাচক দিক: সাধারণভাবে চিন্তা করলে গুচ্ছ পদ্ধতি অবশ্যই একটি সমর্থনযোগ্য উদ্যোগ।

কিন্তু শাহাজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তাবিত পদ্ধতিটিতে একটি বড় প্রক্রিয়াগত ত্রুটিসহ এর আনুসাঙ্গিক আরও অন্তত দু’টি নেতিবাচক দিক রয়েছে (হয়তো আরও থাকতে পারে)। এক: (প্রক্রিয়াগত ত্রুটি)- এ পদ্ধতিতে পরীক্ষা হলে- অপেক্ষাকৃত কম রেপুটেড প্রতিষ্ঠানটি যে এলাকায় সেখানকার কর্তা ব্যক্তিদের মাধ্যমে পরীক্ষায় জালিয়াতি হওয়ার আশংকা থেকে যায়। যেমন, শাবি এবং যবির মধ্যে শাবি অনেক বেশি নামি ইউনিভার্সিটি। দু’টি ইউনিভাসিটি মফস্বল শহরে হওয়ায় সেগুলোর নিজ নিজ প্রশাসনের গুরুত্বপুর্ণ পদগুলোতে স্থানীয় লোকদের প্রাধান্য থাকাটাই স্বাভাবিক, এবং বাস্তবেও তাই আছে। এখন দেখা যাবে, যবির একজন পরীক্ষক মন্টু সাহেব, যার বাড়ি যশোর এলাকায়, ভর্তি পরীক্ষার হলে তার এলাকার দশজন শিক্ষার্থীকে অনৈতিকভাবে ভাল ফলাফলের জন্য সহায়তা করলেন।

মন্টু সাহেবের ইচ্ছা, ভাল ফলাফল করিয়ে তার এলাকার ছেলেগুলোকে অপেক্ষাকৃত ভাল বিশ্ববিদ্যালয় শাবিতে ভর্তির সুযোগ করে দেয়া। বাংলাদেশের বর্তমান সমাজ বাস্তবতায় “আঞ্চলিকতার” যে দাপট তাতে এ ধরনের ঘটনা যে ঘটবে তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। দুই: দেশের বিভিন্ন এলাকায় স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-হাসপাতাল ইত্যাদি সেবামুলক প্রতিষ্টান স্থাপনের মূল উদ্দেশ্য থাকে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষকে সেবা দেয়া, তাদের উন্নতি সাধন। বরিশালের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোন এক গ্রামে একটি স্কুল স্থাপন করার উদ্দেশ্য নিশ্চয়ই এটা হয় না যে, সেটি দিয়ে কুড়িগ্রাম বা রাজশাহীর কোনো গ্রামের লোকজনকে শিক্ষিত করে তোলা হবে! বরিশালের স্কুল-কলেজ-ভার্সিটিগুলো সেই এলাকার লোকজনকে শিক্ষিত করে তোলার জন্যই স্থাপন করা হয়েছে। পৃথিবীর সব জায়গাতেই এমন হয়।

সমন্বিত উন্নয়নের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। আর অন্য এলাকা থেকে কেউ এসে ভর্তি হয়ে ক্লাস করতে চাইলে নিশ্চয়ই সে সুযোগও থাকে। তবে সেটা মুখ্য নয়। হ্যাঁ, যদি কোনো মফস্বলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয় পর্যায়ে সুনাম অর্জন করে ফেলেএ তখন সেটিতে অন্য এলাকার শিক্ষার্থীদেরও অধিকার বাড়ে, যদিও সেটি স্থানীয়দের অধিকার ক্ষুন্ন করে নয়। শাবি আজ দেশের (বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্রাইটেরিয়ায়) প্রধান ইউনিভার্সিটি, তাই সেটিতে এখন জাতীয় অধিকার প্রতিষ্টিত।

কিন্তু জাতীয় পর্যায়ের সবাইকে এখানে অধিকার দিতে গেলে যদি স্থানীয়দের আর ভর্তির জায়গাই না থাকে তবে তো এটি প্রতিষ্টার উদ্দ্যেশ্য ভেস্তে গেল, অন্ত সিলেটে আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের আগ পর্যন্ত। তিন: আরেকটা সতন্ত্র ব্যাপার সিলেটের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সেটি হচ্ছে, বিভিন্ন কারণে সিলেটের লোকজন তাদের সন্তানদেরকে সিলেটের বাইরে সাধারণত যেতে দেন না। সেটা পড়াশোনা, চাকরি, বিয়ে-শাদি ইত্যাদি যে কোনো ক্ষেত্রেই বলা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাল সাবজেক্টে চান্স পেয়েও সিলেটের বাইরে যাবে না বলে শাবিতে সাধারণ সাবজেক্টে ভর্তি হওয়া আমার একাধিক বন্ধু-বান্ধবি রয়েছে! আমি নিজেসহ অনেকে আমাদের সিলেটিদের এমন মানসিকতার কট্টর সমালোচক, এবং আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেককে সিলেটের গন্ডির বাইরে বের করে আনতে চেষ্টা করেছি।

কিছু ক্ষেত্রে সফল হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যর্থ ছিলাম। আসলে এ প্রবণতা সহজে মিলিয়ে যাবার মতো নয়। কথা হচ্ছে, স্বাভাবিকভাবে শাবির পরীক্ষা হলে যতজন শিক্ষার্থী অংশ নিত, গুচ্ছ পদ্ধতিতে হলে সেখানে যশোর বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজারও যোগ হবে। এখন পরীক্ষার ফলাফল বের হলে দেখা যাবে বাড়তি পরীক্ষার্থীদের (যশোরের) অনেকে শাবিতে চান্স পেয়ে সেখানে ভর্তি হতে চলে আসবে। কিন্ত সিলেটের অনেক শিক্ষার্থী যশোরে চান্স পেয়েও সেখানে যাবে না।

অথবা যশোরের অতিরিক্ত শিক্ষার্থী থেকে যে ক’জন শাবিতে চান্স পাবে ততজন সিলেটি শিক্ষার্থী চান্স পাওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়ার সুযোগ থাকছে। নোট: সচেতন সিলেটবাসী’ নামক সংগঠনের পক্ষ থেকে উপরোক্ত কথাগুলোই বলতে চেষ্টা করা হয়েছে। এখানে কথিত “সিলেটি’ “নন-সিলেটি” কোনো ব্যাপার জড়িত নয়। তাদের বক্তব্যের কোথাও কোনো ধরনের কোটা বরাদ্ধের (সিলেটের শিক্ষার্থীদের জন্য) দাবি ছিল না। এই ভুয়া দাবির খবর প্রচার (আসলে অপপ্রচার) করা ভর্তি পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা এক ‘বিখ্যাত’ ভিন্ন ফায়দা লুটার চেষ্টার অংশ।

এতে ওই ব্যক্তির সামাজিক ও আর্থিক লাব লোকসানের ব্যাপার জড়িত রয়েছে ( সংগৃহীত ) Click This Link শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং যশোর বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচিত গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে তুলকালাম কান্ড হয়ে গেল গত দু’দিন। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না যে এই ‘গুচ্ছ পদ্ধতি’টা কী, এবং এর ভালমন্দ দিকগুলো কি কি? বিষয়গুলো স্পষ্ট করতে একটু চেষ্টা করবো। গুচ্ছ পদ্ধতি কী: গুচ্ছ পদ্ধিততে ভর্তি পরীক্ষার মানে হল, এক সাথে একই ধরনের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ বা স্কুলের ভর্তি পরীক্ষা নেয়া। এটির মুল উদ্দেশ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের ভোগান্তি কমানো। অনেক দিন ধরে দেশের মেডিকেল কলেজগুলোতে এমন ভর্তি পরীক্ষা চলে আসছে।

এতে দেশের সব মেডিকেলের জন্য শিক্ষার্থীরা একদিনে নিজ নিজ এলাকায় পরীক্ষা দেন। পরে ফলাফলের ভিত্তিতে সরকারি কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত র্যংকিং অনুযায়ী কলেজে শিক্ষার্থীরা মেধাক্রম অনুসারে ভর্তি হন। এতে শিক্ষার্থীদেরকে ঘুরে ঘুরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো করে পরীক্ষা দিতে সপ্তাহের পর সপ্তাহ কাটাতে হয় না। গুচ্ছ পদ্ধতির সুফল: বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনের পর দিন দৌড়ে পরীক্ষা দিতে গিয়ে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের যে হয়রানি ও আর্থিক অপচয় হয় তা কমে যাবে এ পদ্ধতি প্রয়োগ হলে। এ পদ্ধতিতে বিশ্বিবিদ্যালয়ে পরীক্ষায় সমস্যা কেন: মেডিকেল কলেজগুলো শুধু এক ধরনের সাবজেক্ট (চিকিৎসাশাস্ত্র) থাকায় সেগুলোর র্যংকিং নির্ধারণ কঠিন কোন ব্যাপার নয়।

আবার নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অধিনে থাকায় সরকারের নির্ধারিত কলেজ র্যংকিং ( তাতে কিছুটা ভুলবাল হলেও) মেনে নিতে কলেজ কর্তৃপক্ষ বাধ্য। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে এমন র্যংকিং নির্ধারিত করা অসম্ভব প্রায়। কারণ, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবজেক্ট সংখ্যা, ধরণ, মান, এমনকি কারিকুলাম কোনো ভাবেই মিলে না। যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগকে চাকরি ক্ষেত্রে খুব গুরুত্ব দেয়া হয় সেটি ফার্মাসি বিভাগ তেমন নামকরা নয়। আবার কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থীদের ‘বাজারদর’ চড়া হলে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর তেমন মুল্য দেয়া হয় না।

এভাবে আরও অনেক ব্যাপার আছে। তাছাড়া সবচেয়ে মারাত্মক বিষয় হল, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্তশাসিত হওয়ায় তাদেরকে সরকার নির্ধারিত কোন র্যংকিং মানতে বাধ্য করা যায় না। এই একই কারণে গত দু’বছর ধরে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ চেষ্টা করেও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা গুচ্ছ পদ্ধতিতে আনতে পারেন নি। কোন বিশ্ববিদ্যালয় র্যংকিং য়ে আরেকটির পেছনে থাকতে চায় না (ছোট খাটো কয়েকটি বাদ দিয়ে)। শাবির আলোচিত গুচ্ছ পদ্ধতিটি কেমন: গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষার ভাল উদাহরণ এখনো পর্যন্ত আমাদের সামনে ‘বর্তমানের মেডিকেল পরীক্ষা পদ্ধতি’।

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অবিকল এ পদ্ধতি প্রয়োগ বাস্তবে সম্ভব হয়নি, যেটা আগেই বলা হয়েছে। তাই শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের শিক্ষকরা একটু ভিন্নবাবে সেটা করার চেষ্টা করেছেন। তাদের পদ্ধতিটা এরকম: প্রতি শিক্ষার্থী চাইলে ২টা (শাবি ও যবি) ভার্সিটির আলাদা আলাদা ফর্ম কিনতে পারবে। আবার ইচ্ছা করলে ১ টা ভার্সিটির ফর্মও কিনতে পারে। পরীক্ষা হবে একই দিন একই প্রশ্নে, সিলেট ও যশোরে।

এই পরীক্ষার মার্কের উপর ভিত্তি করে দু’টো ভার্সিটির জন্য আলাদা মেরিট লিস্ট, আলাদা রেজাল্ট হবে। যে শিক্ষার্থী একটা ভার্সিটির ফর্ম কিনবে তার একটা ভার্সিটির মেরিট লিস্টে নাম আসবে। যে দুইটার ফরম কিনবে তার নাম দুই ভার্সিটির মেরিট লিস্টে আসবে। যেখানে তার পছন্দ সেখানে আসন খালি থাকা সাপেক্ষে ভর্তি হতে পারবে। শাবির গুচ্ছ পদ্ধতির নেতিবাচক দিক: সাধারণভাবে চিন্তা করলে গুচ্ছ পদ্ধতি অবশ্যই একটি সমর্থনযোগ্য উদ্যোগ।

কিন্তু শাহাজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তাবিত পদ্ধতিটিতে একটি বড় প্রক্রিয়াগত ত্রুটিসহ এর আনুসাঙ্গিক আরও অন্তত দু’টি নেতিবাচক দিক রয়েছে (হয়তো আরও থাকতে পারে)। এক: (প্রক্রিয়াগত ত্রুটি)- এ পদ্ধতিতে পরীক্ষা হলে- অপেক্ষাকৃত কম রেপুটেড প্রতিষ্ঠানটি যে এলাকায় সেখানকার কর্তা ব্যক্তিদের মাধ্যমে পরীক্ষায় জালিয়াতি হওয়ার আশংকা থেকে যায়। যেমন, শাবি এবং যবির মধ্যে শাবি অনেক বেশি নামি ইউনিভার্সিটি। দু’টি ইউনিভাসিটি মফস্বল শহরে হওয়ায় সেগুলোর নিজ নিজ প্রশাসনের গুরুত্বপুর্ণ পদগুলোতে স্থানীয় লোকদের প্রাধান্য থাকাটাই স্বাভাবিক, এবং বাস্তবেও তাই আছে। এখন দেখা যাবে, যবির একজন পরীক্ষক মন্টু সাহেব, যার বাড়ি যশোর এলাকায়, ভর্তি পরীক্ষার হলে তার এলাকার দশজন শিক্ষার্থীকে অনৈতিকভাবে ভাল ফলাফলের জন্য সহায়তা করলেন।

মন্টু সাহেবের ইচ্ছা, ভাল ফলাফল করিয়ে তার এলাকার ছেলেগুলোকে অপেক্ষাকৃত ভাল বিশ্ববিদ্যালয় শাবিতে ভর্তির সুযোগ করে দেয়া। বাংলাদেশের বর্তমান সমাজ বাস্তবতায় “আঞ্চলিকতার” যে দাপট তাতে এ ধরনের ঘটনা যে ঘটবে তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। দুই: দেশের বিভিন্ন এলাকায় স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-হাসপাতাল ইত্যাদি সেবামুলক প্রতিষ্টান স্থাপনের মূল উদ্দেশ্য থাকে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষকে সেবা দেয়া, তাদের উন্নতি সাধন। বরিশালের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোন এক গ্রামে একটি স্কুল স্থাপন করার উদ্দেশ্য নিশ্চয়ই এটা হয় না যে, সেটি দিয়ে কুড়িগ্রাম বা রাজশাহীর কোনো গ্রামের লোকজনকে শিক্ষিত করে তোলা হবে! বরিশালের স্কুল-কলেজ-ভার্সিটিগুলো সেই এলাকার লোকজনকে শিক্ষিত করে তোলার জন্যই স্থাপন করা হয়েছে। পৃথিবীর সব জায়গাতেই এমন হয়।

সমন্বিত উন্নয়নের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। আর অন্য এলাকা থেকে কেউ এসে ভর্তি হয়ে ক্লাস করতে চাইলে নিশ্চয়ই সে সুযোগও থাকে। তবে সেটা মুখ্য নয়। হ্যাঁ, যদি কোনো মফস্বলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয় পর্যায়ে সুনাম অর্জন করে ফেলেএ তখন সেটিতে অন্য এলাকার শিক্ষার্থীদেরও অধিকার বাড়ে, যদিও সেটি স্থানীয়দের অধিকার ক্ষুন্ন করে নয়। শাবি আজ দেশের (বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্রাইটেরিয়ায়) প্রধান ইউনিভার্সিটি, তাই সেটিতে এখন জাতীয় অধিকার প্রতিষ্টিত।

কিন্তু জাতীয় পর্যায়ের সবাইকে এখানে অধিকার দিতে গেলে যদি স্থানীয়দের আর ভর্তির জায়গাই না থাকে তবে তো এটি প্রতিষ্টার উদ্দ্যেশ্য ভেস্তে গেল, অন্ত সিলেটে আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের আগ পর্যন্ত। তিন: আরেকটা সতন্ত্র ব্যাপার সিলেটের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সেটি হচ্ছে, বিভিন্ন কারণে সিলেটের লোকজন তাদের সন্তানদেরকে সিলেটের বাইরে সাধারণত যেতে দেন না। সেটা পড়াশোনা, চাকরি, বিয়ে-শাদি ইত্যাদি যে কোনো ক্ষেত্রেই বলা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাল সাবজেক্টে চান্স পেয়েও সিলেটের বাইরে যাবে না বলে শাবিতে সাধারণ সাবজেক্টে ভর্তি হওয়া আমার একাধিক বন্ধু-বান্ধবি রয়েছে! আমি নিজেসহ অনেকে আমাদের সিলেটিদের এমন মানসিকতার কট্টর সমালোচক, এবং আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেককে সিলেটের গন্ডির বাইরে বের করে আনতে চেষ্টা করেছি।

কিছু ক্ষেত্রে সফল হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যর্থ ছিলাম। আসলে এ প্রবণতা সহজে মিলিয়ে যাবার মতো নয়। কথা হচ্ছে, স্বাভাবিকভাবে শাবির পরীক্ষা হলে যতজন শিক্ষার্থী অংশ নিত, গুচ্ছ পদ্ধতিতে হলে সেখানে যশোর বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজারও যোগ হবে। এখন পরীক্ষার ফলাফল বের হলে দেখা যাবে বাড়তি পরীক্ষার্থীদের (যশোরের) অনেকে শাবিতে চান্স পেয়ে সেখানে ভর্তি হতে চলে আসবে। কিন্ত সিলেটের অনেক শিক্ষার্থী যশোরে চান্স পেয়েও সেখানে যাবে না।

অথবা যশোরের অতিরিক্ত শিক্ষার্থী থেকে যে ক’জন শাবিতে চান্স পাবে ততজন সিলেটি শিক্ষার্থী চান্স পাওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়ার সুযোগ থাকছে। নোট: সচেতন সিলেটবাসী’ নামক সংগঠনের পক্ষ থেকে উপরোক্ত কথাগুলোই বলতে চেষ্টা করা হয়েছে। এখানে কথিত “সিলেটি’ “নন-সিলেটি” কোনো ব্যাপার জড়িত নয়। তাদের বক্তব্যের কোথাও কোনো ধরনের কোটা বরাদ্ধের (সিলেটের শিক্ষার্থীদের জন্য) দাবি ছিল না। এই ভুয়া দাবির খবর প্রচার (আসলে অপপ্রচার) করা ভর্তি পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা এক ‘বিখ্যাত’ ভিন্ন ফায়দা লুটার চেষ্টার অংশ।

এতে ওই ব্যক্তির সামাজিক ও আর্থিক লাব লোকসানের ব্যাপার জড়িত রয়েছে ( সংগৃহীত ) Click This Link
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.