আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

=== অপেক্ষা ===

বাস থেকে নামতেই মেয়েলি গলায় চিৎকার শুনলাম : এই মহি । ঘাড় ঘুরাতেই দেখি অনামিকা । : আরে অনামিকা যে ! কোত্থেকে ফিরছো ? : এই তো ক্লাস শেষ হলো । : বাড়ি ফিরছো ? : তা ছাড়া আর কই যাবো বলেই হেসে ফেলল অনামিকা । দেখলাম মুখের কোণের সেই সলাজ হাসিটা আগের মতই আছে ।

: অনেকদিন পর দেখা । : হুমম । কত বছর পর দেখা বলতো ? আমি বললাম - : এইত ৯/১০ বছর হবে : দাঁড়াও হিসেব করে বলে দিচ্ছি। ১১ বছর ৩ মাস , দিনের হিসাবটা আর করলাম না। : হুমম ! একদম আগের মতই আছ ।

: কেন তুমি কি বদলেছো ? : কেন দেখনা মোচ পেকেছে। মাথায় চুলও পেকেছে কয়েকটা। : তো এক চল্লিশ চলছে তাই না। তোমাকে কিনতু পয়ত্রিশ এর বেশি মনে হয় না । ডায়েট কর নাকি ? হেসে ফেললাম ।

জিজ্ঞাস করলাম - : বিয়ে করেছো ? মাটির দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকলো । : হাসছ কেন ? : ইচ্ছা হয়েছে । বলেই আমার চোখের দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকলো । তাকিয়ে দেখলাম ধীরে ধীরে ওর চোখ দুটো জলে ভরে উঠছে । বললো - : তোমার বউটা তো সুন্দর ।

দুটো ছেলে । প্রাইভেট ফার্ম এ বড় বেতনে চাকরি কর । সুখের সংসার । অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম । নিজেকে অপরাধী মনে হলো ।

কথা ফিরাতেই জিজ্ঞাস করলাম - : চশমা নিয়েছ কবে ? শাড়ির আচলে চোখ মুছতে মুছতে বলল - : এই তো ভার্সি টির চাকরিটা নেয়ার পর থেকে লাগছে। বললাম - : পিএইচডি শেষ করে যোগাযোগ করনি কেন ? : যোগাযোগটা আমার পক্ষ থেকে না তোমার পক্ষ থেকে হওয়া উচিত ছিল ? : বিয়েটা করেই তো পিএইচডি করতে যেতে পারতে ? : তাহলে পিএইচডি টা হত না । : কি ভাবে নিশ্চিত হলে ? : হয় তো হত না । আমি ব্যাখ্যায় যেতে চাচ্ছি না । তোমার কাছে পাঁচটা বছর আমি চেয়েছিলাম ।

চাওয়া টা কি খুব বেশি ছিল ? : আমি তোমাকে হারাতে চাইনি । ভয় ছিল এই পাঁচ বছরে তুমি হয়ত আমাকে ভুলে যাবে । : মহি, এই বিশ্বাসটুকু তুমি আমার উপর রাখতে পারলে না । এই আমাকে দেখো । আমি তো তোমাকে ভুলিনি ।

আশা ছিলো খবর নিবে । নাওনি । পিএইচডি র পর দেশে ফিরে শুনলাম বিয়ে করেছো। চুপ করে থাকলাম। শরীরের সব কষ্ট গুলো বুকের দিকে ধেয়ে আসছে দ্রুত, খুব দ্রুত ।

অনামিকার মুখের দিকে তাকানোর ক্ষমতা ধীরে ধীরে লোপ পেয়ে যাচ্ছে । ওকি বুঝতে পারছে আমার অবস্থা । হয় তো । না বুঝার কথা না । ওর ডাকে সম্বিত ফিরে এলো ।

: যা হবার তো হয়েছে । বাসায় এসো সময় করে। মার সাথে আছি । গেল বছর বাবা মারা গিয়েছেন। : ঠিকানা কি আগেরটাই ।

: হুমম । ইচ্ছে হলে ডিপার্টমেন্ট এ এসো। নাম বললেই হবে । : আচ্ছা । : কি ! সাহস আছে তো ? আসতে পারবে তো ? নাকি বউকে ভয় করো ।

বলেই হাসতে থাকলো অনামিকা । : ভয় নেই । তোমার বৌএর সাথে কোনদিন ই দেখা হবে না আমার । বলেই হাত দিয়ে আমার মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে দিলো । মনে পড়ল এটা প্রিয় একটা অভ্যাস ছিল ওর ।

ভুলে নি। বিদায়ের সময় হলেই একাজটা করত । : আচ্ছা আসি । দেখা হয়ে ভালো লাগলো । পারলে তোমার বাচ্চা দুটোকে নিয়ে এসো একবার ।

ধীরে ধীরে রাস্তার ওপারে চলে গেল ও । একটু মোটা হয়েছে। বয়স হয়েছে । কতো ? উনচল্লিশ । মনে হলো হাত তুলে আগের মত নাম ধরে ডাক দেই ।

পারলাম না । সেই অধিকার আজ আমার নেই । চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হলো - "অনামিকা আমিও তোমাকে ভুলিনি । আজও ভালবাসি । " বলতে পারলাম না একরাশ কষ্ট যেন গলায় দলা হয়ে আটকে আছে ।

( সবই কাল্পনিক) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।