আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ, নিহত ১

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের টানা ৭২ ঘণ্টা অবরোধের প্রথম দিন গতকাল শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে অবরোধকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পুলিশের এক কর্মকর্তাসহ ৪৮ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের সময় অবরোধকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে অর্ধশতাধিক ককটেল নিক্ষেপ করেন।
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ইসরাইল হোসেন নামের একজন নিহত হন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় অবরোধের সময় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি গাড়ি ও পুলিশের দুটি পিকআপ ভ্যানসহ আটটি যানবাহন ভাঙচুর ও তিনটিতে আগুন ধরিয়ে দেন অবরোধকারীরা।

এ সময় পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ২৫ জনকে আটক করে। পরে তাঁদের মধ্যে পাঁচজনকে এক মাসের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ঢাকার বাইরে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
ঝিনাইদহ: কোটচাঁদপুর উপজেলার হরিণদিয়া গ্রামের বাসিন্দা ইসরাইল শিবিরের কর্মী বলে জানিয়েছেন কোটচাঁদপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার জাহিদ হোসেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শটগানের অন্তত ১৫টি গুলি ছোড়ে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশসহ কমপক্ষে পাঁচজন আহত হন।

শিবিরের কর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে আজ রোববার কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর উপজেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করেছে ১৮-দলীয় জোট।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া: বেলা দেড়টার দিকে শহরের কান্দিপাড়া পাওয়ার হাউস রোড থেকে অবরোধকারী বিএনপির কর্মীরা কালীবাড়ি মোড়ে অবস্থানরত পুলিশকে লক্ষ্য করে অর্ধশতাধিক ককটেল ছোড়েন। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। ফলে দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় পুলিশের এক কনস্টেবলসহ অন্তত ১৫ জন বিএনপির নেতা-কর্মী আহত হন।


এ ছাড়া সংঘর্ষের সময় অবরোধকারীরা পাওয়ার হাউস রোডের সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস এলাকা, তোফায়েল আজম কিন্ডারগার্টেন ও শ্রীশ্রী জিওর আখরা এলাকায় টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেন।
তবে শহরের পাওয়ার হাউস সড়ক, কালীবাড়ি মোড়, টি এ রোড ও গোকর্ণ রোড এলাকায় পুলিশের পাশাপাশি পর্যাপ্ত বিজিবি মোতায়েন থাকতে দেখা গেছে। সদর মডেল থানার সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) শফিকুল ইসলাম জানান, সংঘর্ষের সময় আরিফ রব্বানি (২২) নামের পুলিশের এক কনস্টেবল আহত হয়েছেন।
কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া): সকালে কসবা-আখাউড়া সড়কের তেতৈয়া এলাকায় অবরোধ করে রাখেন ১৮ দলের নেতা-কর্মীরা। এ সময় ডিবি পুলিশের একটি গাড়ি ঘটনাস্থলে গেলে অবরোধকারীরা গাড়িটির গ্লাস ভাঙচুর করেন।

এ ছাড়া অবরোধকারীরা উপজেলার শান্তিপুর এলাকায় গাছ ফেলে অবরোধ করেন। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
খবর পেয়ে নবীনগর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. সফিউর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে গাছ সরিয়ে নিতে চাইলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ২০টি রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এতে ১০ জন আহত হন।


চাঁদপুর: ভোরে শহরের মঠখোলা এলাকায় অবরোধকারীরা লাইন থেকে অবরোধের ডিউটিতে যাওয়ার পথে পুলিশের একটি চলন্ত ভ্যানে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এ সময় পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম আহত হন। একই সময় হামলাকারীরা একটি অ্যাম্বুলেন্সেও ভাঙচুর চালায়। এ ছাড়া শহরের বিভিন্ন এলাকায় অবরোধকারীরা পাঁচটি যানবাহন ভাঙচুর ও সদরের চানরা বাজার এলাকায় এক মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন। সকালের আক্কাস আলী হাইস্কুলের সামনে ও মিশন রোড এলাকায় অবরোধকারী রেললাইনে আগুন ধরিয়ে দেন।

তবে শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ।
মৌলভীবাজার: দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার কাঁঠালতলী বাজারে ছাত্রশিবির ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশের এক সদস্যসহ ১০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১৬টি ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এ ছাড়া ঘটনাস্থল থেকে সংঘর্ষে জড়িত সন্দেহে নয়জনকে আটক করে পুলিশ। সংঘর্ষের সময় শিবিরের কর্মীরা পুলিশের ব্যবহূত একটি পিকআপ ভ্যান ভাঙচুর ও একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করেন।

থানার ওসি মো. আবুল হাসেম জানান, পুলিশ দেখেই শিবিরের কর্মীরা আক্রমণ শুরু করেন। এ কারণে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে শটগানের ১৬টি গুলি ছোড়া হয়।
সরিষাবাড়ী (জামালপুর): অবরোধ চলাকালে জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জামালপুর ফেরিঘাট এলাকায় পুলিশ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় বিএনপি ও যুবদলের পাঁচকর্মী আহত হন।
এ ছাড়া জামালপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়কের জয়বাংলা মোড়েও পুলিশের সঙ্গে বিএনপির কর্মীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

এসব ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ পাঁচজনকে আটক করে। পরে আটক ব্যক্তিদের এক মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
কুমিল্লা: দুপুরে বুড়িচং উপজেলার কালাকচুয়ায় পুলিশ ও অবরোধকারীর মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশের এক সদস্যসহ কমপক্ষে সাতজন আহত হয়েছেন। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শটগানের পাঁচটি গুলি ছোড়ে পুলিশ। একজনকে আটক করে পুলিশ।

রাত সোয়া সাতটার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সদর দক্ষিণ উপজেলার হাড়াতলি এলাকায় পণ্যবাহী একটি ট্রাকে আগুন দিয়েছেন অবরোধকারীরা।
নারায়ণগঞ্জ: সকাল সাড়ে ৬টার দিকে শহরের দেওভোগ এলাকায় শিবিরের নেতা-কর্মীরা মিছিল বের করেন। এ সময় তাঁরা সড়কে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়। দুপুর দুইটার দিকে শহরের উকিলপাড়া এলাকায় পিকেটাররা বেশ কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়।


ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার পাঁচরুখী এলাকায় সকাল সোয়া সাতটার দিকে টায়ার জ্বালিয়ে মহাসড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এ সময় সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে দুই দিক থেকে পুলিশ এসে ধাওয়া করলে নেতা-কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী সড়কের আড়াইহাজার উপজেলার ইলমদি এলাকায় সকালে সড়কের ওপর গাছের গুঁড়ি ফেলে ও পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন বিএনপির সমর্থকেরা। একপর্যায়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।