আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুই দিন পেটে খাবার পড়েনি

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি হিসেবে আনন্দ-বেদনা, সুখ-দুঃখের পাশাপাশি অনেক মজার ঘটনাও আছে। তেমনি একটি মজার ঘটনার কথা উল্লেখ করছি। নভেম্বর মাস। প্রচণ্ড শীত। কেরানীগঞ্জের একটি প্রত্যন্ত এলাকা।

আমরা প্রায় দেড়শ মুক্তিযোদ্ধা দুই রাত একনাগাড়ে হেঁটে এক গ্রামে এসে হাজির হলাম। পা একেবারে অবশ হয়ে গেছে। দুই দিন পেটে খাবার পড়েনি। ক্ষুধার জ্বালায় সারা শরীর কাঁপছে। আমাদের অধিনায়ক মোস্তফা মাসুম মন্টু খাবার জোগাড় করতে বললেন।

কোথাও কোনো দোকানপাট নেই। কয়েকটি বাড়ির উঠোনে কিছু হাঁস-মুরগি চড়তে দেখলাম। বুঝতে পারলাম কিছু না পাই অন্তত ডিম তো পাব। এক বাড়িতে গিয়ে সেই বাড়ির মহিলাকে বললাম, আমাকে কয়েকটি ডিম দিন। তিনি বললেন, ডিম নেই।

চলে আসছিলাম। হঠাৎ পেছন ফিরে দেখি কয়েকটি ছেলে সেই মহিলার কাছ থেকে ডিম কিনে নিচ্ছে। মাথায় রক্ত চড়ে গেল। গায়ে জড়ানো চাদরের নিচে ছিল স্টেনগান। স্টেনগানের ট্রিগারে আঙ্গুল রাখলাম।

চেঁচিয়ে মহিলাকে বললাম, 'মিথ্যা কথা বললেন কেন?' তিনি বললেন, মিথ্যা বললাম কোথায়? তাকে বললাম, ওই ছেলেগুলোকে তাহলে কী দিলেন? মহিলা বললেন, ওগুলো তো 'বদা'। আমি বললাম, আমি তো ওটাই চেয়েছি। তিনি বললেন, তুমি বদা চাওনি, চেয়েছ অন্য কিছু। এতক্ষণে বুঝতে পারলাম ওরা ডিমকে বদা বলে। অবশেষে যে কয়টি ডিম পেলাম এনে ভাগ করে খেয়েছি।

মন্টু ভাই অধিনায়ক বলে তাকে আস্ত একটা ডিম দিয়েছিলাম। তিনি খেলেন না। বললেন, দেশ স্বাধীন হলে, বেঁচে থাকলে না হয় একসঙ্গে পেট ভরে খাব। আজ ভাগাভাগি করেই খাই।

 

 



অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।