আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

••• ছেলে ও মেয়ের বন্ধুত্ব নিয়ে কি ভাবছেন ? •••



“ছেলে-মেয়ের বন্ধুত্বকে বাঁকা চোখে দেখার পেছনে আমাদের সমাজব্যবস্থাকেই আসল কারণ হিসেবে মনে করি। একটি মেয়েকে কখনও একটি ছেলেকে বিপরীত লিঙ্গের মানুষ হিসেবে দেখতে শেখানো ঠিক নয়। ”-- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশন অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। (সূত্র : বিডি নিউজ ২৪ :১৮/১১/২০১৩) লেখাটা পুরোটা পড়ে যথেষ্ট হতাশ হলাম। এই কথাগুলো হঠাৎ শুনলে স্বল্প জ্ঞানের মানুষগুলোর মনে হতে পারে, এই না হলো উদার আর সুন্দর মনের পরিচয়।

কথাগুলো কিন্তু শুধু মেহতাব খানমের না, কথাগুলো এই সমাজের বহু তথাকথিত শিক্ষিত ও সুশীল সমাজের মনের কথা। প্রশ্ন, ইসলাম কি ছেলে-মেয়ের বন্ধুত্বের নামে অবাধ মেলামেশা আদৌ অনুমোদন করে? উত্তর হচ্ছে, না, করে না, এটা স্পষ্ট হারাম । এটা সেই হারাম পথ, যা নিয়ে রাসূল (সা ) বলেছেন, "কোন পুরুষই কোন নারীর সাথে একাকী থাকে না বরং সেখানে তৃতীয় একজন অবস্থান করে আর সে হচ্ছে শয়তান। " [সহীহ, তিরমিযী] এই শয়তানের লক্ষ্য একটাই, তাদের দ্বারা ধীরে ধীরে চূড়ান্ত গুনাহ সংঘটিত করা, যা তাকে জাহান্নামে শয়তানের বন্ধু বানাতে সাহায্য করবে। এটা সেই হারাম পথ, যা আল্লাহপাক উল্লেখ করেছেন কুরআনে-- "শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না।

সে নিঃসন্দেহে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। " [সুরা বাকারা: ১৬৮] কুরআনে অনেকবার আল্লাহপাক এই কথাটি বলেছেন- "শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। " কারন এখানেই বেশিরভাগ মানুষ শেষ পর্যন্ত ধরাটা খায়। কিভাবে?? ধরুন, সরাসরি আপনাকে কোন মেয়ে খারাপ প্রস্তাব দিলে আপনি বুঝে যাবেন হয়ত, আপনি ফিতনায় জড়াতে যাচ্ছেন, তাই সাবধান হয়ে যাবেন প্রথমেই। কিন্তু ব্যপারটা যদি স্লো মোশনে হয়?? ধরুন, একটা মেয়ের সাথে হঠাৎ আপনার মোবাইল বা ফেসবুকে বন্ধুত্ব শুরু হলে আপনি হয়ত পাত্তা দিবেন না বেশী।

ভাববেন, একটু কথা হলে ক্ষতি কি? এটাই হলো সেই শয়তানের দেখানো পথ, যা থেকে আপনার স্রষ্টা আপনাকে বারবার বাঁচতে বলেছেন কিন্তু আপনি টোপ গিলছেন শয়তানের। যার পরবর্তী ধাপগুলো হতে পারে সেই মেয়ের সাথে রাত জেগে চ্যাট করা, পরে মোবাইলে কথা বলা, কোন একদিন দেখা করা, তারপর একসাথে ঘুরে বেড়ানো এবং আবেগের বশে পরিশেষে লিটনের বা কোন এক ফ্ল্যাট। এমন ঘটনার উদাহরন আমাদের আশেপাশেই অসংখ্য । বর্তমানের ছেলেমেয়েদের ফ্রেন্ড কালচারটা এমন, একটা ছেলে একটা মেয়ের সাথে হাত ধরাধরি করে হাটছে, একজনের অপরজনের কান মলে দিচ্ছে কিংবা মাথায় চিমটি কাটছে। কেউ যদি জিজ্ঞেস করে তোমাদের মাঝে কি চলছে? সাথে সাথে অকপট জবাব, আমরা জাস্ট ফ্রেন্ড।

আমাদের মধ্যে ওসব নোংরা কোন ফিলিংস কাজ করে না। আচ্ছা ভাই, তাহলে তুমি কি নপুংসক? ফিলিংস কাজ করে না, মানে কি? ইসলাম ধর্ম বা মনোবিজ্ঞান, যেভাবেই যুক্তিতে যাও, প্রমাণিত হবে, তুমি একজন ডাহা মিথ্যাবাদী নাহয় একজন খাঁটি নপুংসক । চলুন দেখি, এতো খোলামেলা বন্ধুত্বের ব্যপারে আমাদের নবীজির দৃষ্টিভঙ্গী কি। রসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেন,"নিশ্চয়ই তোমাদের কারো মাথায় লোহার পেরেক ঠুকে দেয়া ঐ মহিলাকে স্পর্শ করা থেকে অনেক ভাল, যে তার জন্য হালাল নয়। " কথা খুব বেশী স্পষ্ট।

যাদের অন্তরে আল্লাহর কঠিন শাস্তির ভয় কাজ করে, তাদের জন্য এই হাদীসই যথেষ্ট , ছেলে-মেয়ের বন্ধুত্বের সংজ্ঞা ও দূরত্ব বোঝার জন্য। আল্লাহর বিধানকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দুটি ছেলে-মেয়ের মধ্যে শুধুমাত্র বন্ধুত্ব কি আদৌ সম্ভব?? মুখে যে যাই বলুক, বাস্তবতা কি বলছে?? নারী পুরুষের উম্মুক্ত মেলা-মেশা আর অশ্লীল বিনোদন ভরপুর আজকে সারা বিশ্বের অবস্থা এতটাই নিচে নেমে গেছে যে, পশুত্বকেও হার মানিয়েছে তারা। প্রতিদিন শুধু প্যারিস শহরে দশ হাজার সতী নারী সম্ভ্রম হারাচ্ছে। তার চেয়েও লজ্জার কথা হলো, ফ্রান্সের মেডিকেল বোর্ড ঘোষণা দিয়েছে, “ফ্রান্সবাসীকে এ জন্য গর্ব করা উচিৎ যে, অচিরেই ফ্রান্সে আর কোন সতী নারী পাওয়া যাবেনা”। অনেকের স্বপ্নের দেশ, সভ্যতার মানদন্ড(?) USA ও UK তে ৯০% মেয়ের সতীত্ব যায় স্কুল পাশের আগেই।

আর বোম্বেতে এই পরিসংখ্যান ৫০% এর উপরে। ধর্ষনের হার কি পরিমান বেড়েছে, বলাই বাহুল্য। কারন একটাই, সমঅধিকারের নামে শিক্ষাক্ষেত্রে, কর্মক্ষেত্রে নারী পুরুষের অবাধ মেলা-মেশা ও উদার বন্ধুত্ব । আল্লাহপাক বলেন- "যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে ব্যভিচার প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্য ইহকাল ও পরকালে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি রয়েছে। " [সুরা আন-নুরঃ ১৯] নারী-পুরুষের যৌন স্পৃহা প্রকৃতিজাত ।

ইসলাম এটিকে ধর্মের আওতায় এনেছে, পবিত্রতা ও বিশ্বাসের আওতায় এনেছে। বিবাহের মাধ্যমে এ স্পৃহাকে শুধু সুস্থতা দেয় নি বরং এটাকে ঈমানের এক অংশ করে দিয়েছে। সুস্থ সামাজিকতার জন্য ইসলামের বিধান অনুসারে নারী-পুরুষ সবার যথাযথ পর্দার বিধান মানা ও সময়মত বিবাহ হচ্ছে এসব ভয়াবহ সমস্যার মৌলিক সমাধান। আল্লাহপাক সকলকে বোঝার তৌফিক দিন, আমীন ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।