আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মা তোমার সন্তান ঠিক করো, ছেলে তোমার মন ঠিক করো, মেয়ে তোমার পোশাক

নামের সাথে কামের কিছু মিলতো থাকবোই দামিনী দিয়ে ঝড় শুরু, সে ঝড়ের তান্ডব এসে লেগেছে আমাদের দেশেও। বিষয়কি এমন ধর্ষনের খবর আগেও পড়তাম তখন গুরুত্ব দিতাম না, কিন্তু দামিনীর ঘটনার পরে আমাদের মনযোগ সেখানে বেড়েছে??? ইদানিং ব্লগে ধর্ষনের বিচার নিয়ে ধর্ষন নিয়ে ব্যপক আলোচনা উঠে এসেছে। যথারীতি ডিম আগে নাকি মুরগী আগে? এই তত্ত্বও এসেছে। অর্থাৎ ধর্ষনের জন্য ছেলেদের মানসিকতা দায়ী নাকি মেয়েদের পোশাক দায়ী। এ বিষয়ে ইভটিজিং নিয়ে অধমের ছোট্ট একটা লেখা ছিলো (Click This Link) আমার কাছে কেনো যেনো মনে হচ্ছে আমরা সমস্যার গোড়াতে না গিয়ে হইচই করছে।

এ বিষয়ে হোজ্বা নাসিরুদ্দিনের একটি কৌতুক মনে পড়ে গেলো- রাতের বেলাতে একটি লাইট পোষ্টের নিচে হোজ্বা মনযোগ দিয়ে কিছু খুজছে দেখে একজন বললো - হুজুর কী খুজছেন? - আমার টাকা হারিয়েছে সেটা খুজছি - কোন জায়গায় হারিয়েছে? - ঐ দুরে ঐখানে - তো এখানে খুজছেন কেনো? - আরে ওখানে তো অন্ধকার, তাই আলোতে খুজছি এভাবে যেমন হোজা তার টাকা খুজে পাবে না, তেমনি আমরা সারাদিন চিল্লা চিল্লী করলেও দেশে টিজিং ধর্ষন কমবে না যদি না আমরা সমস্যার গোড়াতে যাই। যে দেশে জন্ম থেকেই বাচ্চারা মানুষের উন্মুক্ত শরীর দেখে অভ্যস্ত, সেদেশে ধর্ষন হবারই কথা নয়, অথচ রেকর্ড বলছে সেখানেই ধর্ষন বেশি। যে সকল দেশে মেয়েরা গর্ব ভরে বলতে পারে শরীর আমার সিদ্ধান্ত আমার, আমরা স্বাধীন, ধর্ষন সেকল দেশেই বেশি। যে সকল দেশে শরীরের আলাদা মূল্য দেয়া হয়না, মানবতার জয়গান যেখানে সর্বত্র, অবাককর বিষয় সেখানেই ধর্ষন বেশি। আবার- তথাকথিক মোল্লাদের দেশগুলোতে ধর্ষনের হার পৃথিবীর সবচেয়ে কম।

উহু আমি আপনাদের ইসলামের দাওয়াত দিতে আসিনি এবং এটিও ভুলে যায়নি দেশে মুসলমান বাদে অন্য ধর্মের লোকও আছে। বর্তমান ঢাকায় রাত ১২ টার পরে আমার আপন ভাইও যদি টাকা ভর্তি ব্যাগ নিয়ে যাবার সময় ছিনতাই এর কবলে পড়ে তাহলে ছিনতাইয়ের জন্য আফছোছের পাশাপাশি ভাইকেও দোষ দিবো তার মূর্খতার জন্য, কেননা একমাত্র পাগল ছাড়া ঢাকার রাস্তায় রাত ১২টার পরে টাকার ব্যাগ নিয়ে কারো ঘোরার কথা না। এখন আমার ভাই যদি বলে আমি স্বাধীন দেশের নাগরিক, আমি রাত বারোটা কেনো আমি রাত ৩টার সময় হীরার বস্তা নিয়ে ঘুরবো এতে কার কি? ছিনতাইকারীর কোনো অধিকার নেই আমার সম্পদ লুট করার। আমি বলবো ভাই আমার, তার অধিকার নাই ছিনতাই করার কিন্তু সেতো তো সেটাকেই অধিকার মনে করছে। আইন তোমাকে সাহায্য করছে না, কাজেই তোমার নিরাপত্তা তোমাকেই করতে হবে।

হয় তুমিও অস্ত্র নিয়ে ঘুরো, না হয় পাহারাদার নিয়ে ঘুরো তা না পারলে নিজে সাবধান হও। ছিনতাইকারীরকে তোমার অধিকার বুঝাতে যেওনা। এবার বলি শ্রদ্ধেয় বোনেরা, যারা অনেকেই দেখি এখানে পোষ্ট দিচ্ছেন আমি কাপড় ছাড়া ঘুরলেও কারো অধিকার নেই আমাকে ধর্ষন করার। সম্মানিত বোন, তার অধিকারের দরকার নেই, আপনি ঘুরেন, এরপর দেখেন কি হয়। চোরের অধিকার নেই আমার সম্পদ চুরি করার, তবুও আমরা বাড়িতে তালা দিয়ে রাখি, ডাকাতের অধিকার নেই আমার টাকা লুট করার, তবুও আমরা টাকা ব্যাংকে রাখি।

এতোই যদি অধিকার বুঝেন তো বাড়ি খোলা রেখে ঘুমান, টাকার ব্যাগ দরজার গোড়ায় রেখে দরজা খোলা রাখুন। কে আপনাকে নিষেধ করছে????? মুল বিষয়ে আসি- প্রথমেই সবচেয়ে আলোচিত বিষয় নিয়ে আসি- মেয়েদের পোশাক: নির্দ্বিধায় বলা যায় সময়ের সাথে পোশাকে কিছুটা উগ্রতা এসেছে। এটি অন্য সংস্কৃতির প্রতি আমাদের অনূকরনপ্রিয়তা বড় দায়ী। আমরা আমেরিকার খারাপ জিনিস অনুসরন করি, ভারতের অশ্লীলতা অনুসরন করি কিন্তু তাদের দেশপ্রেম অনুসরন করি না। মেয়েদের অশালিন পোশাক টিজিং ধর্ষনে ভুমিকা রাখে কিন্তু অবশ্যই এটিই একমাত্র অথবা প্রধান কারন তা মোটেও নয়, বরং মোট কারনের শতকরা ২০ভাগ থেকে ৩০ ভাগের বেশি নয়।

অনেকেই বলেন একজন শিশু ধর্ষিত হচ্ছে, বৃদ্ধা হচ্ছে এমনকি হিজাব পরিহিতাও হচ্ছে, তাহলে পোশাকের ভুমিকা কি? পোশাকের ভুমিকা হচ্ছে, সমাজে যেমন সবাই সন্ত্রাসী নয় কিন্ত ৩ জন সম্ত্রাসীর কারনে একটি গোটা সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তেমনি একজন অশালীন পোশাকধারী কিছু মানসিক অসুষ্থদের মানসিকতাকে উস্কে দেয় যার ফল ভোগ করে নিরীহ কোনো মেয়ে। মুন্নী বদনাম হুয়ে বা মাই নেম ইজ শীলা দেখে উত্তেজিত যুবক ক্যাটরিনাকে হাতের কাছে পাবে না কিন্তু অবশ্যই গার্মেন্টেসএর মেয়েকে তার লালসার বলি বানাতে পারবে। আইটেম সং, কিংবা যৌনতা নির্ভর এক্স পারফিউমের এড দেখে যার মধ্যে যৌন সুড়সুড়ি জাগবে না তাকে অনুরোধ করা গেলো ভালো ডাক্তারের কাছে যাবার জন্য। কাজেই আপনি যদি দাবী করেন পোশাকহীন চলা আপনার অধিকার, তো আপনি এ অধিকারের বলে পোশাক ছাড়াই চলাচল করুন, কসম খোদার আমার আমার পক্ষ থেকে আপনি ১০০% নিরাপদ কিন্তু আপনারই মতো মানসিকভারসাম্যহীন যুবক আপনার উপর হামলে পড়বে না এই গ্যারান্টি আমি কেনো আপনার বাবাও দিতে পারবে না। দ্বিতীয় আলোচিত বিষয় হলো ছেলেদের মানসিকতা- একটি পশু আর মানুষের মধ্যে মোলিক পার্থক্য হলো মনুষত্ব।

আমার জানা নেই পশু তাদের পরিবার সিস্টেম মেনে চলে কিনা জানিনা, কিন্তু মানুষ করে। পৃথিবীর যে কেউ সবার আগে তার বাবা-মা ভাইবোন সন্তান কে গুরুত্ব দেয়। একজন বাবা কখনই তার কন্যার দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকায় না, অথচ বাবা কর্তৃক মেয়েকে ধর্ষনের ঘটনাও আমরা জানতে পারছি। এরা কোনো মতেই মানব সম্প্রদায়ের মধ্যে পড়ে না। আমি যদি আমার বোনের দিকে খারাপ দৃষ্টিতে না তাকাই, তাহলে কোন অধিকারে আরেকজনের বোনের দিকে কু দৃষ্টি দিবো? নিজের বোনের দিকে কেউ খারাপ ভাবে তাকালে আমরা তার চোখ তুলে নিতে চাই আর অন্যের সুন্দরী বোনকে দেখা আমরা অধিকার মনে করি।

এ সবই আমাদের মানসিক দৈন্যতার ফসল। পরিবারের মা-বাবার ভুমিকা- আমাদের মাঝ থেকে পারিবারিক শিক্ষা উঠেই গেছে বলা যায়। বাবা ব্যস্ত কর্মস্থলে, মা ব্যস্ত টিভি সিরিয়ালে। সেই সিরিয়াল যদি ভালো কিছু হয় তাহলে কথা ছিলো। পরকিয়া, একাধিক বিয়ে, অবাধ যৌনতা হলো সিরিয়ালগুলোর বিষয়, আমাদের পরিবারে মায়েরা সেগুলোই গোগ্রাসে গিলছে।

ছোট সন্তান ডরেমন দেখছে, বড়টা নেট এ বসে কি করছে কে খোজ রাখে। টিউটর রাখা, দামী ফোন, ল্যাটপট, ট্যাবলেট দিয়ে বাবা-মা তাদের দায়িত্ব শেষ করছেন। সন্তান কার সাথে মিশছে, মেয়ে, বান্ধবীর বাসায় না গিয়ে ছেলে বন্ধুর সাথে "লিটনের" ফ্লাটে যাচ্ছে কে খোজ রাখে? মিডিয়ার ভুমিকা- প্রথমআলো পত্রিকাতেই মনে হয় দেখেছিলাম, ইভটিজিং অথবা মাদকবিরোধী অনুষ্ঠানে ফ্যাশন শো এর নামে স্বল্পবসনা মেয়েদের দৌরাত্ব। মিডিয়ার কল্যানে যৌনতা এখন সবার কাছে পান্তা ভাত। নাটক, সিনেমা, এড যেখানেই যাবেন সেখানেই যৌনসুড়সুড়ি।

বুদ্ধি হবার বয়স থেকে শুরু, মৃত্যুর আগে রেহাই নেই। এখানে ধর্মগ্রন্থ পানি দিয়ে গুলে খাওয়ালেও ছেলে-মেয়েদের কি নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব??? ১৪ফেব্রুয়ারীতে ভালবাসা দিবস পালন করতে গিয়ে কত মেয়ে তার সতীত্ব হারাচ্ছে, কত ছেলে তার নৈতিকতা নষ্ট করছে তার ইয়ত্বা নেই। থার্টি ফাষ্র্ট বা ১৪ফেব্রুয়ারী এখন হোটেল গুলোতে কাপলদের উপচেপড়া ভীড়, যাদের অনেকেই তাদের প্রথম ভার্জিনিটি এখানেই সমাপ্তি টানতেছে। আমাদের মিডিয়া একাজে মহা উৎসাহ দিচ্ছে। নেট শাড়ী নামক শরীর দেখানো শাড়ী বর্তমান সময়ের ফ্যাশন বলে চালাচ্ছে, জাঙ্গিয়া দেখানো প‌্যানট পরা ছেলেদের স্মার্ট হিসেবে আখ্যায়িত করছে আবার এরাই ধর্ষনবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

যেভাবে সিগারেট কোম্পানীগুলো ধুমপান বিরোধী সংগঠনগুলোকে প্রমোট করে। সাপ হয়ে দংশন করে আবার ওঝা হয়ে ঝাড়ে। আইনের শাসন- যে দেশে ধর্ষনের সেন্ঞুরী উদযাপন করা হয়, যেদেশে নেত্রীরা বড় নেতার কাছে মেয়ে সাপ্লাই দেয়, যেখানে প্রকাশ্য দিবালোকে মিডিয়ার ক্যামেরার সামনে কুপিয়ে মানুষ খুনের পরেও স্বয়ংপ্রধানমন্ত্রী তা অস্বীকার করে, যে দেশে খুনের আসামী অবলীলায় রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পেয়ে যায়, যে দেশে ধর্ষনের আসামীর সাজা মওকুফের জন্য স্বয়ং স্বরাষট্রমন্ত্রী শুপারিশ করে, সে দেশে কেউ যদি কাপড় খুলে চলার অধিকার চায়, তো সে চলুক। শুরু হোক নিজেকে দিয়ে- আমার বোনের দিকে কেউ খারাপ নজরে তাকালে যেমন আমার কষ্ট লাগে, তেমন কষ্ট লাগুক অন্যের বোনের ক্ষেত্রেও। মা-বাবারা সচেতন হোক তার সন্তানের জন্য।

সবশেষে দেশে আইনের শাসন হোক। আইন শুধু কেতাবে থেকে লাভ নেই, তার প্রয়োগ প্রয়োজন। একজন ধর্ষনকারীর শিশ্ন কেটে কুত্তা দিয়ে খাওয়ানো হোক ১০০জন ধর্ষনকারী সতর্ক হবে। যে ঐ ধর্ষনকারীর জন্য মানবতা ফলাবে তাকেও একই শাস্তি দেয়া হোক। সবশেষে একটা কথাই বলবো- "আইনের শাসন ছাড়া মানবতার বানী ছড়িয়ে কোনো লাভ নেই"।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।