আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কেমন আছেন 'ওরা ১১ জন'?

মুক্তিযুদ্ধের প্রথম চলচ্চিত্র 'ওরা ১১ জন' মুক্তি পায় ১৯৭২ সালের ১৩ আগস্ট। চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করেন মাসুদ পারভেজ (সোহেল রানা) এবং পরিচালনায় ছিলেন চাষী নজরুল ইসলাম। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এ চলচ্চিত্রে ১১ জন মুক্তিযোদ্ধার ভূমিকায় অভিনয় করেন- খসরু, কাজী ফিরোজ রশীদ, মঞ্জু, হেলাল, ওলীন, আবু, আতা, বেবী, মুরাদ, আলতাফ ও সিদ্দিক জামাল নান্টু। প্রযোজক ও পরিচালক সূত্রে জানা যায়, চলচ্চিত্রের এই ১১ অভিনয় শিল্পীর সবাই ছিলেন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। কেউই পেশাদার অভিনয় শিল্পী ছিলেন না।

তবে পরবর্তীতে খসরু আরও চারটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এগুলো হলো সংগ্রাম, নকল মানুষ, বাদশা এবং রাজার হলো সাজা। খসরুর পাশাপাশি আলতাফ ও সিদ্দিক জামাল নান্টুও নিয়মিত অভিনয়ে আসেন। আলতাফ প্রায় ৩০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৭৮ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি।

অন্যদিকে সিদ্দিক জামাল নান্টু অভিনয়ের পাশাপাশি চলচ্চিত্র প্রযোজনাও করেছিলেন। ২০০৮ সালে নান্টুও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

আলতাফ ও নান্টু ছাড়াও 'ওরা ১১ জন' চলচ্চিত্রের ১১ মুক্তিযোদ্ধা চরিত্রের অভিনয় শিল্পী বেবী ও মুরাদ বেঁচে নেই। মঞ্জু, হেলাল, ওলীন, আবু ও আতা বর্তমানে কোথায় আছেন বা কেমন আছন সে সম্পর্কে প্রযোজক মাসুদ পারভেজ ও পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম কিছুই জানেন না বলে জানান। উভয়ে বলেন, তারা পরবর্তীতে ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন বলে জানতাম।

কিন্তু দীর্ঘদিন কোনো যোগাযোগ না থাকায় তাদের সম্পর্কে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। তাছাড়া এই পাঁচ জন আর কোনো চলচ্চিত্রে অভিনয় না করায় এফডিসিতেও তাদের সম্পর্কে কোনো তথ্য রাখা হয়নি। বর্তমানে শুধু খসরু ও কাজী ফিরোজ রশীদ সম্পর্কেই বলতে পারি। নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলাম জানান, খসরু বর্তমানে পল্টন লেনের নিজ বাসায় আছেন। কয়েক বছর আগে তার হৃদযন্ত্রের বাইপাস সার্জারি হয়।

চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি এখন পূর্ণ বিশ্রামে আছেন। নির্মাতা চাষী নজরুল বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধে খসরুর অবদানের কথা কোনো সরকারই স্মরণ করেনি। এই ক্ষোভ শুধু মুক্তিযোদ্ধা অভিনেতা খসরুর একার নয়। আমাদের সবার। বর্তমান সরকার চাইলেই খসরুকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সম্মান জানাতে পারে।

'

প্রযোজক মাসুদ পারভেজ বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন খসরু ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্র ছিলেন। তিনি ছাত্রলীগ করতেন। আমি তখন ইকবাল হলে থাকতাম। যুদ্ধের সময় খসরু সেখানে আসতেন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আলাপ-আলোচনা হতো। এক পর্যায়ে মোস্তফা মহসীন মন্টুর নেতৃত্বে আমরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি।

কেরানীগঞ্জে যুদ্ধ করার সময় আমি, খসরুসহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে ড. কামাল হোসেন ছিলেন। যুদ্ধ শেষে যখন 'ওরা ১১ জন' চলচ্চিত্রটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেই তখন এর কেন্দ্রীয় চরিত্রে খসরুকে নেব বলে ঠিক করি। কারণ ওর শারীরিক গঠন ছিল চমৎকার। খসরুই পরবর্তীতে মুরাদ ও নান্টুকে এই চলচ্চিত্রের জন্য নিয়ে আসেন।

মুক্তিযোদ্ধা-অভিনেতা খসরু বলেন, 'ওরা ১১ জন' চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে পেরে ভালো লেগেছিল।

কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের কথা এখন আর মনে করতে চাই না। কারণ কোনো সরকারই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমাকে মূল্যায়ন করেনি। যুদ্ধের পর অনেককেই খেতাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি আমার অবদানের জন্য 'বীরশ্রেষ্ঠ' খেতাবের দাবি করতে পারি। কারণ শুধু '৭১-এ যুদ্ধ করিনি।

১৯৬২ সাল থেকে বঙ্গবন্ধুর একজন আদর্শের সৈনিক হিসেবে তার ডাকে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলাম। খসরু ছাড়া 'ওরা ১১ জন' চলচ্চিত্রের ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা চরিত্রে অভিনয়কারী কাজী ফিরোজ রশীদ বর্তমানে রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.